alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলুপ্ত দিবস-২০২৪। ১৯৪৯ সালের ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি কেনাবেচা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয় (সিদ্ধান্ত ৩১৭/৪)। উক্ত কনভেনশন গৃহীত হওয়ার দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলুপ্ত দিবস’। ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি বেচাকেনা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয়। এই দিনটি স্মরণে প্রতি বছর পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসত্ব বিলোপ দিবস। এই কনভেনশন গৃহীত হওয়ার প্রায় আশি বছর পার হলেও দাসপ্রথা যে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমনটি বলা যায় না; বরং নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকে দাসত্ব বা ক্রীতদাস প্রথাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে।

আদিম মানুষ নব্য প্রস্তর যুগে প্রবেশের সময় থেকেই অর্থাৎ কৃষিকাজ শুরুর সময় থেকেই দাসব্যবস্থার শুরু। প্রাচীনকালে হাম্বুরাবি নামের ব্যাবিলনের এক শাসক আইন করে দাসপ্রথা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই আইনে গৃহনির্মাণ, শস্য উৎপাদনসহ নানা কাজে জোর করে শ্রমিক নিয়োগের নিদর্শন পাওয়া যায়। এরপর বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সভ্যতাতেই দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল। বিশেষত গ্রিক সভ্যতায় এর ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক। অ্যারিস্টটলসহ অনেক বোদ্ধাই তখন বলেছিলেন, দাসত্ব একটি প্রাকৃতিক বিষয়। প্রকৃতিগতভাবেই কেউ কেউ দাস হয়ে জন্মগ্রহণ করে। ১৪৭২ সালে পর্তুগিজ বণিকেরা প্রথম দাস চুক্তি করে। ১৬৬৩ সালে ভার্জিনিয়ার আদালত রায় ঘোষণা করে, যে মা যদি দাস হয় তার সন্তানও দাস বলে বিবেচিত হবে। বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ও মুসলিম সভ্যতার সময়েও দাসব্যবসা ব্যাপকতা লাভ করেছিল। আফ্রিকায় দাস ব্যবসা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ঘানা, মালিসহ এমন কিছু দেশের প্রায় ৩ শতাংশ জনগণই ছিল দাস। এশিয়াতেও দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল, তবে তা অনেক পরে এই মহাদেশে প্রবেশ করে।

অতীতে কোন কোন সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করাও আইনসঙ্গত ছিল। সেইসব বর্বরতা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি, এটা ঠিক। তবে ক্রীতদাস প্রথার যে আধুনিক রূপান্তর, তার থেকে মুক্তির উপায় বের করতে হবে। মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় দাসপ্রথার বিলুপ্তি হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখনও বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। সমাজবিদরা বলছেন, দাসপ্রথার ভয়াবহতা এখন না থাকলেও এর রূপান্তর ঘটেছে কিন্তু তা সমাজে আজও বিদ্যমান। সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক বিশ্বে আগের মতো সরাসরি দাস ব্যবসা না থাকলেও মানবপাচার অব্যাহত রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছেÑ দাসপ্রথার ভয়াবহতা এখন না থাকলেও এর রূপান্তর ঘটেছে, কিন্তু সমাজে তা এখনও বিদ্যমান। তাদের মতে, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দাস রয়েছে। তারা হচ্ছে, আমরা যাদের কাজের লোক বলি। তারা আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগে বিছানা থেকে ওঠে, শুতে যায় আমরা শুতে যাওয়ার পরে। তাদের কোন কর্মঘণ্টা নেই, নেই নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো। ছুটি নেই। অনেক বাড়িতে তাদের ভালোমতো খাবার দেয়া হয় না। অনেকে নিজেদের জন্য ভালোটা আর কাজের মানুষদের জন্য কমদামের চাল বরাদ্দ করেন। এসব কিছুই তো প্রকান্তরে দাসপ্রথার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করি না। কারণ তাহলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত হব। তাই এই প্রথা বজায় থাকছে। তাছাড়া সম্পদশালী ভূমিমালিকের জমি চাষে ‘কৃষক ক্রীতদাস’ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। রয়েছে শিশুশ্রম বিশ্বের অনেক দেশেই। বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সি শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৬৩ লাখের উপরে। ৮০ লাখ ১৭ বছরের নিচে শিশুশ্রমিক। আছে পতিতাবৃত্তি ও জোরপূর্বক বিয়ের প্রবণতা। এগুলো দাসত্ব প্রথার আওতায় পড়ে। তাই বলাই যায় দাসপ্রথা সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি।

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ মানবপাচার, যৌনদাস, জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে ও যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো। সবচেয়ে বড় কথা, মানবপাচার হয়ে গেছে এখন আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। একে ক্রীতদাস প্রথার নতুন রূপ বলেই অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯১ সালে বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকান অঞ্চলে প্রথমে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে, ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তারপরেও এখনও বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে মুক্ত শ্রমের ব্যবহার বৃদ্ধি, শিল্পায়নে ক্রমিক অগ্রগতি এবং ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ হতে মানবতাবাদী আন্দোলনসমূহ দাসপ্রথাকে ধীরে ধীরে জনগণের কাছে অপ্রিয় ও সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা দাসপ্রথা হতে মুক্ত হয়।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলুপ্ত দিবস-২০২৪। ১৯৪৯ সালের ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি কেনাবেচা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয় (সিদ্ধান্ত ৩১৭/৪)। উক্ত কনভেনশন গৃহীত হওয়ার দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলুপ্ত দিবস’। ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি বেচাকেনা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয়। এই দিনটি স্মরণে প্রতি বছর পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসত্ব বিলোপ দিবস। এই কনভেনশন গৃহীত হওয়ার প্রায় আশি বছর পার হলেও দাসপ্রথা যে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমনটি বলা যায় না; বরং নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকে দাসত্ব বা ক্রীতদাস প্রথাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে।

আদিম মানুষ নব্য প্রস্তর যুগে প্রবেশের সময় থেকেই অর্থাৎ কৃষিকাজ শুরুর সময় থেকেই দাসব্যবস্থার শুরু। প্রাচীনকালে হাম্বুরাবি নামের ব্যাবিলনের এক শাসক আইন করে দাসপ্রথা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই আইনে গৃহনির্মাণ, শস্য উৎপাদনসহ নানা কাজে জোর করে শ্রমিক নিয়োগের নিদর্শন পাওয়া যায়। এরপর বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সভ্যতাতেই দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল। বিশেষত গ্রিক সভ্যতায় এর ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক। অ্যারিস্টটলসহ অনেক বোদ্ধাই তখন বলেছিলেন, দাসত্ব একটি প্রাকৃতিক বিষয়। প্রকৃতিগতভাবেই কেউ কেউ দাস হয়ে জন্মগ্রহণ করে। ১৪৭২ সালে পর্তুগিজ বণিকেরা প্রথম দাস চুক্তি করে। ১৬৬৩ সালে ভার্জিনিয়ার আদালত রায় ঘোষণা করে, যে মা যদি দাস হয় তার সন্তানও দাস বলে বিবেচিত হবে। বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ও মুসলিম সভ্যতার সময়েও দাসব্যবসা ব্যাপকতা লাভ করেছিল। আফ্রিকায় দাস ব্যবসা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ঘানা, মালিসহ এমন কিছু দেশের প্রায় ৩ শতাংশ জনগণই ছিল দাস। এশিয়াতেও দাসব্যবস্থার প্রচলন ছিল, তবে তা অনেক পরে এই মহাদেশে প্রবেশ করে।

অতীতে কোন কোন সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করাও আইনসঙ্গত ছিল। সেইসব বর্বরতা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি, এটা ঠিক। তবে ক্রীতদাস প্রথার যে আধুনিক রূপান্তর, তার থেকে মুক্তির উপায় বের করতে হবে। মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় দাসপ্রথার বিলুপ্তি হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখনও বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। সমাজবিদরা বলছেন, দাসপ্রথার ভয়াবহতা এখন না থাকলেও এর রূপান্তর ঘটেছে কিন্তু তা সমাজে আজও বিদ্যমান। সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক বিশ্বে আগের মতো সরাসরি দাস ব্যবসা না থাকলেও মানবপাচার অব্যাহত রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছেÑ দাসপ্রথার ভয়াবহতা এখন না থাকলেও এর রূপান্তর ঘটেছে, কিন্তু সমাজে তা এখনও বিদ্যমান। তাদের মতে, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দাস রয়েছে। তারা হচ্ছে, আমরা যাদের কাজের লোক বলি। তারা আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগে বিছানা থেকে ওঠে, শুতে যায় আমরা শুতে যাওয়ার পরে। তাদের কোন কর্মঘণ্টা নেই, নেই নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো। ছুটি নেই। অনেক বাড়িতে তাদের ভালোমতো খাবার দেয়া হয় না। অনেকে নিজেদের জন্য ভালোটা আর কাজের মানুষদের জন্য কমদামের চাল বরাদ্দ করেন। এসব কিছুই তো প্রকান্তরে দাসপ্রথার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করি না। কারণ তাহলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত হব। তাই এই প্রথা বজায় থাকছে। তাছাড়া সম্পদশালী ভূমিমালিকের জমি চাষে ‘কৃষক ক্রীতদাস’ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। রয়েছে শিশুশ্রম বিশ্বের অনেক দেশেই। বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সি শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৬৩ লাখের উপরে। ৮০ লাখ ১৭ বছরের নিচে শিশুশ্রমিক। আছে পতিতাবৃত্তি ও জোরপূর্বক বিয়ের প্রবণতা। এগুলো দাসত্ব প্রথার আওতায় পড়ে। তাই বলাই যায় দাসপ্রথা সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি।

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ মানবপাচার, যৌনদাস, জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে ও যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো। সবচেয়ে বড় কথা, মানবপাচার হয়ে গেছে এখন আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। একে ক্রীতদাস প্রথার নতুন রূপ বলেই অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯১ সালে বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকান অঞ্চলে প্রথমে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে, ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তারপরেও এখনও বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে মুক্ত শ্রমের ব্যবহার বৃদ্ধি, শিল্পায়নে ক্রমিক অগ্রগতি এবং ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ হতে মানবতাবাদী আন্দোলনসমূহ দাসপ্রথাকে ধীরে ধীরে জনগণের কাছে অপ্রিয় ও সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা দাসপ্রথা হতে মুক্ত হয়।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top