alt

উপ-সম্পাদকীয়

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

এম মনির উদ্দিন

: মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

দেশের বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যারা দেশের সার্বিক কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে, যাদের ঘাম ঝরা পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন দিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান চলছে, কেমন আছে সেই অপুষ্টিতে ভোগা স্বাস্থ্যহীন অবহেলিত কৃষক? রাষ্ট্র বা সরকার তাদের খবর না নিলেও পরিশ্রমি এই কৃষকেরাই তাদের জমিতে ফলানো ভাল মানের কৃষি পণ্যটি বাজারে নিয়ে যায় অন্যকে খাওয়ানোর জন্য আর তাদের পরিবার বিক্রয়ের অনুপযোগী কৃষি উৎপাদন দিয়েই চালায় তাদের নিত্যদিনের খাবার। গাছে উৎপাদিত সবচেয়ে ভালো ফলটি কৃষক বাজারে নিয়ে যায় একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় আর তাদের এই সুযোগকে আমরা কাজে লাগাই এবং কম দামে তা কিনে এনে পুলকিত বোধ করি। আমরা নিজেদের সংসার ভালোভাবে চালানোর জন্য কম খরচে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পেতে চাই ঠিক তেমনি দেশের অসহায় কৃষকেরাও তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যটি ভালদামে বিক্রয় করে তাদের সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে চায় যেহেতু কৃষিই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। দেশের সকল মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কৃষক পরিবারের ব্যয়ও। কারণ তারা আমাদের সমাজেরই অংশ বা আমাদেরই আত্মীয়স্বজন।

দেশের এই প্রান্তিক কৃষকগোষ্ঠী কেমনে চালাচ্ছে তাদের জীবন সংসার তার খবর নিশ্চয়ই অনেকেই আমরা রাখি না। তবে বাজারে কোন কৃষিপণ্য বিশেষ করে মাছ, সবজি, ডিম, চাল সরবরাহ কম থাকলে পত্রপত্রিকা, টিভি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। বিপরীতভাবে বাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহ বেশি থাকলে এর কারণে দাম অত্যন্ত কমে যায় এবং কৃষক লোকসান গোনে। যেমন, গেল শীতে কৃষক ১ টাকা কেজি দরে ফুলকপি বিক্রয় করেছে, কেউবা মনের কষ্টে জমিতেই ফুলকপি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, কেউবা রাস্তায় ফেলে দিয়েছে কিন্তু দেশের খুব কম পত্র-পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল তা প্রচার করেছে।

একইভাবে কৃষক যখন আলু বা পেঁয়াজ উৎপাদন করার পর বাজারে বিক্রয় করে তাদের উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেনি তখনো কিন্তু কেউ তা আমলে নেয়নি না বা প্রচার করেনি অথবা কৃষকের এই ফুলকপি, পেঁয়াজ বা আলু উৎপাদনের পেছনের কাহিনী কেউ শুনছে না। বরং, এক শ্রেনীর ভোক্তার অনুভুতিটা এমনই যে, ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ, ২০ টাকা কেজি আলু, সামান্য দামে নানাবিধ সব্জি কিনতে পেরে তারা বেশ খুশি। মজার বিষয় হলো, কৃষকের হাত থেকে পেয়াঁজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পেয়াঁজের কেজি ৬০-৭০ টাকায় পৌঁছেছে এবং একইভাবে আলুর দামও হয়তো কয়েকদিন পর যখন কৃষকের হাতে থাকবে না তখন কেজি ১০০ টাকায় পৌঁছাবে। ভোক্তা কমদামে তার খাদ্যপণ্য কিনতে পেরে অবশ্যই খুশি হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে আমদানি করা বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বিশেষ করে সয়াবীন পামওয়েল তেল, চিনি ইত্যাদি পণ্যের একটি নির্দিষ্ট খুচরা মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারন করে দেয়া হয় যদিও সরকারের দুর্বল পদক্ষেপের কারনে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে থাকে এবং এক্ষেত্রে সরকার কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। একইভাবে আমদানি করা বিভিন্ন ডালেরও সরকার কর্তৃক দাম নির্ধারন করে দেয়া হয়। এর ফলে আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে একটি নির্দিষ্ট অংকের মুনাফা করে থাকে। কিন্তু, দেশের প্রান্তিক কৃষক যখন তার কৃষিপণ্য উৎপাদন করে বাজারে নিয়ে আসে তখন তার কৃষিপণ্যটি উৎপাদন করতে কত খরচ হয়েছে তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো ভালভাবে অবগত থাকে তবে দুঃখজনক হলো যে, কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের কোন দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করে দেয়া হয় না। ফলে, কৃষক যখন তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে আসে তখন তার দাম নির্ধারন করে স্থানীয়, ফড়িয়া, পাইকার, আড়তদার, মহাজন ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা। এর কারণে কৃষক তার প্রতিটি কৃষিপণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে তার ন্যায্য দাম না পেয়ে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছে।

গত বছর বাজারে পর্যাপ্ততা না থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে আলুর দাম বাড়তে থাকে। এর কারণে, এ বছর কৃষকেরা ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আলুর চাষ করে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বড় আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা যখন সুযোগ বুঝে বীজসহ নানা কৃষি উপকরণের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমুহ নীরব থাকে। এ বছর, আবহাওয়া অনুকুল থাকায় আলুর ফলন ভালো হয় কিন্তু কৃষকেরা আলুর দাম না পেয়ে লোকসানে পড়ে। আর, এর ফায়দা লুটে নেয় মহাজন, পাইকার, আড়তদার এবং বেসরকারি কোল্ডস্টোরেজগুলো। কৃষকেরা যাতে কোল্ড স্টোরেজে ভিড়তে না পারে তার জন্য, যে কোল্ড স্টোরেজে ৪ টাকা কেজি হিসেবে আলু রাখা যেত সেই কোল্ড স্টোরেজ মালিকগন একলাফে প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ খরচ ৮ টাকা নির্ধারন করে। শুধু তাই নয়, কৃষকেরা এ যাবত কোল্ড স্টোরেজে বস্তা হিসেবে আলু রাখতে পারতো যেখানে তারা প্রতি বস্তায় ৬২ কেজি আলু রাখলেও ৫০ কেজির খরচ দিতে হতো। এবার থেকে তা বন্ধ করে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি রাখার জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই যে, অনিয়ম ঘটছে কৃষকের ক্ষেত্রে অথচ এগুলো দেখার কেউ নাই এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে একেবারেই নীরব।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ঝাওহাটি গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া জানালো যে, এ মৌসুমে তিনি ৭৫ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন এবং ফলনও ভালো হয়েছিলো কিন্তু বাজারে প্রতিমন পেঁয়াজ তাকে বিক্রয় করতে হয়েছে মাত্র ৯০০ টাকা মন (৪০ কেজি) হিসেবে তার উপর প্রতিমন পেঁয়াজে তোলা হিসেবে দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ৫ কেজি। তাকে আমি বলেছিলাম, পেঁয়াজ এখন বিক্রয় না করে ঘরে ভালভাবে রেখে দিয়ে ২-৩ মাস পরে বিক্রয় করলে ভালো দাম পেতেন। উত্তরে ফরিদ মিয়া বুক ভরে আসা গলায় জানালো, সারের দোকানদারের কাছে প্রায় লাখ টাকা বাকি এবং বাকিতে সার, ঔষধ কিনতে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দিতে হয়। যাই হোক, দোকানদারের টাকা পরিশোধ করার জন্য আমাকে সব পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হয়েছে। কাজেই বেশি দাম পাওয়ার জন্য ঘরে পেঁয়াজ রাখার কোন সুযোগ নাই।

শুধু ফরিদ মিয়াই নয়, দেশের সকল কৃষকই সার, বীজের ডিলার থেকে বেশী দামে সার, বীজ কিনে, স্থানীয় মহাজন, এনজিও থেকে উচ্চসুদে ঋন নিয়ে ফসল ফলিয়ে সাথে সাথে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রয় করার জন্য তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফসল বিক্রয় করে বাকী অথবা সুদে আনা ঋনের টাকা পরিশোধ করা। আর কোন নির্দিষ্ট দাম নির্ধারিত না থাকায় পানির চেয়েও কমদামে কৃষককে তার কষ্টে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রয় করে ঘরে ফিরতে হয়। এইভাবে দেশের প্রান্তিক কৃষকেরা শুধু ফসল ফলিয়েই যায়, বিক্রয় করার পর মহাজন, দোকানদার আর এনজিওর ঋণ শোধ করার পর তার হাতে নিজের সংসারের খরচ চালানোর জন্য আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। শুধুমাত্র মূলধনের অভাবেই দেশের কৃষক ফসল ফলিয়েও উপযুক্ত বাজারদর না পেয়ে আস্তে আস্তে কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকের অনেকেই কৃষিকাজ বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে যা দেশের আগামীদিনের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা বহন করে।

কৃষিকাজ তথা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এর প্রভাবে বন্যা, খরা, সাইক্লোন ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিভিন্ন সময় নানাবিধ দুর্যোগের কারনে কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারে না এবং এর জন্য কৃষক কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পায় না। এইভাবে দেশের কৃষিকাজের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত কৃষক একের পর এক ফসল উৎপাদন করে তার ন্যায্য বাজার মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে গুনতে অনেকটাই ক্লান্ত এবং হতাশ। এর কারণে কৃষিকাজ থেকে অনেক কৃষকই ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কৃষি পরিবারের বিশেষ করে তরুণ ছেলেরা আর কৃষিতে থাকছে না যার প্রতিফলন দেখা যায় শহরগুলোতে অটো রিকশা চালনাসহ নানাবিধ অকৃষি খাতে তরুণদের উপস্থিতি।

আমরা জানি, বিএডিসি কৃষক পর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজ সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন ফসলের বীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে উৎপাদন করে তা বীজ ডিলারদের মাধ্যমে সারাদেশে কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় করে। এই কর্মসূচির আওতায় বিএডিসি আলু বীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষকের মাধ্যমে উৎপাদন করে থাকে। এক্ষেত্রে বিএডিসি কৃষকদের আলুবীজ উৎপাদনকে সফল করার জন্য বীজ আলু, সার এবং অন্যান্য উপকরণ ক্রয় ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে অতি অল্পসুদে আলু উৎপাদনের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়। কৃষক আলু বীজ উৎপাদনের পর বিএডিসির কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে আসে। কৃষকের আলু বীজের মোট দাম থেকে ঋণ নেয়া অর্থ উৎপাদনকালীন সময়ের সুদসহ বিএডিসি ব্যাংকে দিয়ে বাকি পাওনা টাকা কৃষকের হাতে তুলে দেয়। এতে করে কৃষকদের ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে ভুগতে হয় না বা মহাজন, এনজিও থেকে চড়াসুদে ঋণও নিতে হয় না। অনুরূপ ব্যবস্থা যদি দেশের সকল কৃষকের জন্য করা যেত, তাহলে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করা যেত।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে না পারলে আগামীদিনে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান আমদানি করে মেটানো সম্ভব নয়। দেশের চাষের জমি কমছে আর মানুষ বাড়ছে। আর এই কম পরিমান জমি থেকে বেশি পরিমাণ ফসল উৎপাদনের জন্য একদিকে যেমন কৃষির নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকের দোরগড়ায় পৌঁছাতে হবে তেমনি কৃষকের ফসল ফলানোর জন্য বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি দিতে হবে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতেকরে কৃষকের লাভ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে চলে না যায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আর কৃষকের প্রতিটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে যাতে কৃষক ফসল ফলিয়ে লাভবান হতে পারে। তাহলেই শুধু দেশের কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রেখে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

[লেখক : কৃষিবিদ]

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

স্নায়ুরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

শাসনব্যবস্থা : জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

এম মনির উদ্দিন

মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

দেশের বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যারা দেশের সার্বিক কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে, যাদের ঘাম ঝরা পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন দিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান চলছে, কেমন আছে সেই অপুষ্টিতে ভোগা স্বাস্থ্যহীন অবহেলিত কৃষক? রাষ্ট্র বা সরকার তাদের খবর না নিলেও পরিশ্রমি এই কৃষকেরাই তাদের জমিতে ফলানো ভাল মানের কৃষি পণ্যটি বাজারে নিয়ে যায় অন্যকে খাওয়ানোর জন্য আর তাদের পরিবার বিক্রয়ের অনুপযোগী কৃষি উৎপাদন দিয়েই চালায় তাদের নিত্যদিনের খাবার। গাছে উৎপাদিত সবচেয়ে ভালো ফলটি কৃষক বাজারে নিয়ে যায় একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় আর তাদের এই সুযোগকে আমরা কাজে লাগাই এবং কম দামে তা কিনে এনে পুলকিত বোধ করি। আমরা নিজেদের সংসার ভালোভাবে চালানোর জন্য কম খরচে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পেতে চাই ঠিক তেমনি দেশের অসহায় কৃষকেরাও তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যটি ভালদামে বিক্রয় করে তাদের সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে চায় যেহেতু কৃষিই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। দেশের সকল মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কৃষক পরিবারের ব্যয়ও। কারণ তারা আমাদের সমাজেরই অংশ বা আমাদেরই আত্মীয়স্বজন।

দেশের এই প্রান্তিক কৃষকগোষ্ঠী কেমনে চালাচ্ছে তাদের জীবন সংসার তার খবর নিশ্চয়ই অনেকেই আমরা রাখি না। তবে বাজারে কোন কৃষিপণ্য বিশেষ করে মাছ, সবজি, ডিম, চাল সরবরাহ কম থাকলে পত্রপত্রিকা, টিভি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। বিপরীতভাবে বাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহ বেশি থাকলে এর কারণে দাম অত্যন্ত কমে যায় এবং কৃষক লোকসান গোনে। যেমন, গেল শীতে কৃষক ১ টাকা কেজি দরে ফুলকপি বিক্রয় করেছে, কেউবা মনের কষ্টে জমিতেই ফুলকপি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, কেউবা রাস্তায় ফেলে দিয়েছে কিন্তু দেশের খুব কম পত্র-পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল তা প্রচার করেছে।

একইভাবে কৃষক যখন আলু বা পেঁয়াজ উৎপাদন করার পর বাজারে বিক্রয় করে তাদের উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেনি তখনো কিন্তু কেউ তা আমলে নেয়নি না বা প্রচার করেনি অথবা কৃষকের এই ফুলকপি, পেঁয়াজ বা আলু উৎপাদনের পেছনের কাহিনী কেউ শুনছে না। বরং, এক শ্রেনীর ভোক্তার অনুভুতিটা এমনই যে, ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ, ২০ টাকা কেজি আলু, সামান্য দামে নানাবিধ সব্জি কিনতে পেরে তারা বেশ খুশি। মজার বিষয় হলো, কৃষকের হাত থেকে পেয়াঁজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পেয়াঁজের কেজি ৬০-৭০ টাকায় পৌঁছেছে এবং একইভাবে আলুর দামও হয়তো কয়েকদিন পর যখন কৃষকের হাতে থাকবে না তখন কেজি ১০০ টাকায় পৌঁছাবে। ভোক্তা কমদামে তার খাদ্যপণ্য কিনতে পেরে অবশ্যই খুশি হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে আমদানি করা বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বিশেষ করে সয়াবীন পামওয়েল তেল, চিনি ইত্যাদি পণ্যের একটি নির্দিষ্ট খুচরা মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারন করে দেয়া হয় যদিও সরকারের দুর্বল পদক্ষেপের কারনে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে থাকে এবং এক্ষেত্রে সরকার কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। একইভাবে আমদানি করা বিভিন্ন ডালেরও সরকার কর্তৃক দাম নির্ধারন করে দেয়া হয়। এর ফলে আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে একটি নির্দিষ্ট অংকের মুনাফা করে থাকে। কিন্তু, দেশের প্রান্তিক কৃষক যখন তার কৃষিপণ্য উৎপাদন করে বাজারে নিয়ে আসে তখন তার কৃষিপণ্যটি উৎপাদন করতে কত খরচ হয়েছে তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো ভালভাবে অবগত থাকে তবে দুঃখজনক হলো যে, কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের কোন দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করে দেয়া হয় না। ফলে, কৃষক যখন তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে আসে তখন তার দাম নির্ধারন করে স্থানীয়, ফড়িয়া, পাইকার, আড়তদার, মহাজন ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীরা। এর কারণে কৃষক তার প্রতিটি কৃষিপণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে তার ন্যায্য দাম না পেয়ে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছে।

গত বছর বাজারে পর্যাপ্ততা না থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে আলুর দাম বাড়তে থাকে। এর কারণে, এ বছর কৃষকেরা ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আলুর চাষ করে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বড় আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা যখন সুযোগ বুঝে বীজসহ নানা কৃষি উপকরণের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমুহ নীরব থাকে। এ বছর, আবহাওয়া অনুকুল থাকায় আলুর ফলন ভালো হয় কিন্তু কৃষকেরা আলুর দাম না পেয়ে লোকসানে পড়ে। আর, এর ফায়দা লুটে নেয় মহাজন, পাইকার, আড়তদার এবং বেসরকারি কোল্ডস্টোরেজগুলো। কৃষকেরা যাতে কোল্ড স্টোরেজে ভিড়তে না পারে তার জন্য, যে কোল্ড স্টোরেজে ৪ টাকা কেজি হিসেবে আলু রাখা যেত সেই কোল্ড স্টোরেজ মালিকগন একলাফে প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ খরচ ৮ টাকা নির্ধারন করে। শুধু তাই নয়, কৃষকেরা এ যাবত কোল্ড স্টোরেজে বস্তা হিসেবে আলু রাখতে পারতো যেখানে তারা প্রতি বস্তায় ৬২ কেজি আলু রাখলেও ৫০ কেজির খরচ দিতে হতো। এবার থেকে তা বন্ধ করে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি রাখার জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই যে, অনিয়ম ঘটছে কৃষকের ক্ষেত্রে অথচ এগুলো দেখার কেউ নাই এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে একেবারেই নীরব।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ঝাওহাটি গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া জানালো যে, এ মৌসুমে তিনি ৭৫ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন এবং ফলনও ভালো হয়েছিলো কিন্তু বাজারে প্রতিমন পেঁয়াজ তাকে বিক্রয় করতে হয়েছে মাত্র ৯০০ টাকা মন (৪০ কেজি) হিসেবে তার উপর প্রতিমন পেঁয়াজে তোলা হিসেবে দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ৫ কেজি। তাকে আমি বলেছিলাম, পেঁয়াজ এখন বিক্রয় না করে ঘরে ভালভাবে রেখে দিয়ে ২-৩ মাস পরে বিক্রয় করলে ভালো দাম পেতেন। উত্তরে ফরিদ মিয়া বুক ভরে আসা গলায় জানালো, সারের দোকানদারের কাছে প্রায় লাখ টাকা বাকি এবং বাকিতে সার, ঔষধ কিনতে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দিতে হয়। যাই হোক, দোকানদারের টাকা পরিশোধ করার জন্য আমাকে সব পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হয়েছে। কাজেই বেশি দাম পাওয়ার জন্য ঘরে পেঁয়াজ রাখার কোন সুযোগ নাই।

শুধু ফরিদ মিয়াই নয়, দেশের সকল কৃষকই সার, বীজের ডিলার থেকে বেশী দামে সার, বীজ কিনে, স্থানীয় মহাজন, এনজিও থেকে উচ্চসুদে ঋন নিয়ে ফসল ফলিয়ে সাথে সাথে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রয় করার জন্য তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফসল বিক্রয় করে বাকী অথবা সুদে আনা ঋনের টাকা পরিশোধ করা। আর কোন নির্দিষ্ট দাম নির্ধারিত না থাকায় পানির চেয়েও কমদামে কৃষককে তার কষ্টে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রয় করে ঘরে ফিরতে হয়। এইভাবে দেশের প্রান্তিক কৃষকেরা শুধু ফসল ফলিয়েই যায়, বিক্রয় করার পর মহাজন, দোকানদার আর এনজিওর ঋণ শোধ করার পর তার হাতে নিজের সংসারের খরচ চালানোর জন্য আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। শুধুমাত্র মূলধনের অভাবেই দেশের কৃষক ফসল ফলিয়েও উপযুক্ত বাজারদর না পেয়ে আস্তে আস্তে কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকের অনেকেই কৃষিকাজ বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে যা দেশের আগামীদিনের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা বহন করে।

কৃষিকাজ তথা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এর প্রভাবে বন্যা, খরা, সাইক্লোন ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিভিন্ন সময় নানাবিধ দুর্যোগের কারনে কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারে না এবং এর জন্য কৃষক কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পায় না। এইভাবে দেশের কৃষিকাজের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত কৃষক একের পর এক ফসল উৎপাদন করে তার ন্যায্য বাজার মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে গুনতে অনেকটাই ক্লান্ত এবং হতাশ। এর কারণে কৃষিকাজ থেকে অনেক কৃষকই ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কৃষি পরিবারের বিশেষ করে তরুণ ছেলেরা আর কৃষিতে থাকছে না যার প্রতিফলন দেখা যায় শহরগুলোতে অটো রিকশা চালনাসহ নানাবিধ অকৃষি খাতে তরুণদের উপস্থিতি।

আমরা জানি, বিএডিসি কৃষক পর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজ সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন ফসলের বীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে উৎপাদন করে তা বীজ ডিলারদের মাধ্যমে সারাদেশে কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় করে। এই কর্মসূচির আওতায় বিএডিসি আলু বীজ চুক্তিবদ্ধ কৃষকের মাধ্যমে উৎপাদন করে থাকে। এক্ষেত্রে বিএডিসি কৃষকদের আলুবীজ উৎপাদনকে সফল করার জন্য বীজ আলু, সার এবং অন্যান্য উপকরণ ক্রয় ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে অতি অল্পসুদে আলু উৎপাদনের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়। কৃষক আলু বীজ উৎপাদনের পর বিএডিসির কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে আসে। কৃষকের আলু বীজের মোট দাম থেকে ঋণ নেয়া অর্থ উৎপাদনকালীন সময়ের সুদসহ বিএডিসি ব্যাংকে দিয়ে বাকি পাওনা টাকা কৃষকের হাতে তুলে দেয়। এতে করে কৃষকদের ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে ভুগতে হয় না বা মহাজন, এনজিও থেকে চড়াসুদে ঋণও নিতে হয় না। অনুরূপ ব্যবস্থা যদি দেশের সকল কৃষকের জন্য করা যেত, তাহলে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করা যেত।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে না পারলে আগামীদিনে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান আমদানি করে মেটানো সম্ভব নয়। দেশের চাষের জমি কমছে আর মানুষ বাড়ছে। আর এই কম পরিমান জমি থেকে বেশি পরিমাণ ফসল উৎপাদনের জন্য একদিকে যেমন কৃষির নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকের দোরগড়ায় পৌঁছাতে হবে তেমনি কৃষকের ফসল ফলানোর জন্য বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি দিতে হবে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতেকরে কৃষকের লাভ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে চলে না যায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আর কৃষকের প্রতিটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে যাতে কৃষক ফসল ফলিয়ে লাভবান হতে পারে। তাহলেই শুধু দেশের কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রেখে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

[লেখক : কৃষিবিদ]

back to top