মনিরুজ্জামান মনির
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো। এই দীর্ঘ পথচলায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে এসেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে আরএনবির এস্কর্ট ডিউটি বন্ধ ও বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে কারণ দর্শানোর নির্দেশনা যে বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, তা শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন নয়Ñ বরং আইনি, সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিক থেকেও গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঐতিহাসিক ভিত্তি
রেলওয়ের ইতিহাসে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি একটি পুরোনো অনুশীলন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলে ১৮৫৪ সালে রেল চালু হওয়ার পরপরই রেলওয়ে সম্পদ, যাত্রী ও মালামাল রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের প্রথা চালু হয়। ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স’ গঠন করে, যার উত্তরসূরি হিসেবেই স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। পরবর্তীতে বাহিনীর কাঠামো ও দায়িত্ব আরও শক্তিশালী করতে ২০১৬ সালে প্রণীত হয় ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬’, যার ফলে এই বাহিনী একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনীতে রূপ নেয়।
বাহিনীর আইনানুগ ও সাংবিধানিক অবস্থান
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর’ সংজ্ঞায় যেসব বাহিনী অন্তর্ভুক্তÑ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এখন তাতে অন্তর্ভুক্ত। ২০১৬ সালের আইন অনুযায়ী- এ বাহিনীকে একটি স্বীকৃত আইনগত কাঠামোর আওতায় এনে শুধু রেলওয়ের নিরাপত্তা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছেÑ বাহিনীটি সংবিধানের আলোকে গঠিত এবং পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে বাহিনীর কাজ ও কর্তব্যকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আইনে ছিল না।
বাহিনীর কমান্ড কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট বাহিনীর প্রধান, যিনি সরকারের (রেলপথ মন্ত্রণালয়) অধীনে নিয়োজিত। ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী বাহিনীর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সরকার বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের হাতে। যদিও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বাহিনীর কর্মকা- তদারকির সুযোগ পান, তিনি কোনো সদস্যকে বদলি, দায়িত্ব হস্তান্তর কিংবা এস্কর্ট ডিউটি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনি ক্ষমতাবান নন।
এখানে একটি মৌলিক প্রশাসনিক রীতি প্রাসঙ্গিক: একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আইনশৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক হলেও পুলিশ সুপারের বদলি বা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দিতে পারেন না। ঠিক তেমনিভাবে জিএমও আরএনবির কর্মপন্থা নির্ধারণে আদেশ দিতে পারেন না।
এস্কর্ট ডিউটির আইনগত বাধ্যবাধকতা
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬-এর ১১(খ) ধারা অনুসারে বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব ‘রেল চলাচলে যেকোনো বাধা দূর করা’। ট্রেন নিজেই একটি চলমান, অস্থাবর রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং এর চলাচলের সময় যাত্রী ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। এস্কর্ট ডিউটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে এই নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত হয়।
উল্লেখ্য, বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ, অবৈধ যাত্রী ওঠানামা ঠেকানো, রাজস্ব সংরক্ষণে সহায়তা প্রদানÑএসবই বাহিনীর অবিচ্ছেদ্য দায়িত্ব, যদিও জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা শুধু টিকিট চেকার বা টিটিইদের হাতে রয়েছে।
চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি বন্ধ : আইন ও সংবিধানের পরিপন্থি সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সেই নির্দেশ চিফ কমান্ড্যান্ট বাস্তবায়ন করায় একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি হয়েছে। এটি বাহিনীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি, আইনগত কর্তব্য ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। বাহিনী আইন-২০১৬-এর ১১ ধারা অনুযায়ী এ আদেশ সরাসরি বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের গাফিলতি
আইন প্রণীত হয়েছে ২০১৬ সালে, অথচ প্রয়োজনীয় বিধিমালা এখনও প্রণীত হয়নি। ফলে বাহিনীর কার্যপ্রণালী, বদলি, পদোন্নতি, তদন্ত, দায়িত্ব প্রদানÑসবই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘটছে। এই ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্ববহির্ভূত সিদ্ধান্ত বারবার দেখা যাচ্ছে।
বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি
শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যদি আইনি স্বীকৃতি ও দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় এবং তা দূরীকরণে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বাহিনীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা জন্ম নেয়। ইতিহাস সাক্ষী, এরকম অব্যবস্থাপনার ফল কী ভয়াবহ হতে পারে। ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পটভূমিতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছেÑ ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষোভ সময়মতো প্রশমিত না হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
করণীয় ও সুপারিশ
* রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬ অনুযায়ী জরুরিভিত্তিতে বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
* আইনি কাঠামোর বাইরে কোনো দায়িত্ব পালনের নির্দেশ জারি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
* রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারগণ যেন শুধুমাত্র তদারকির ভূমিকা পালন করেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
* চলন্ত ট্রেনে আরএনবি সদস্যদের উপস্থিতি আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে।
* আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে বাহিনীর মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিরসন করতে হবে।
* আইন, প্রশাসন ও বাস্তব প্রয়োগÑ এই তিন স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বাহিনীর কার্যক্রমকে আইনি রূপরেখায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অস্তিত্ব শুধু রেলওয়ের সুরক্ষায় নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক। কোনো বাহিনীর ওপর অকারণ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, আইনবহির্ভূত আদেশ কিংবা দায়িত্ব পালনে বাধা আরোপ করা শুধু বেআইনি নয়Ñ এটি সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘনও বটে! সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের উচিত অবিলম্বে বাহিনীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে, একটি সমন্বিত ও সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তা না হলে, রেলওয়ে তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন সংকটের জন্ম হতে পারে।
[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি]
মনিরুজ্জামান মনির
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো। এই দীর্ঘ পথচলায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে এসেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে আরএনবির এস্কর্ট ডিউটি বন্ধ ও বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে কারণ দর্শানোর নির্দেশনা যে বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, তা শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন নয়Ñ বরং আইনি, সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিক থেকেও গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঐতিহাসিক ভিত্তি
রেলওয়ের ইতিহাসে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি একটি পুরোনো অনুশীলন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলে ১৮৫৪ সালে রেল চালু হওয়ার পরপরই রেলওয়ে সম্পদ, যাত্রী ও মালামাল রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের প্রথা চালু হয়। ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স’ গঠন করে, যার উত্তরসূরি হিসেবেই স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। পরবর্তীতে বাহিনীর কাঠামো ও দায়িত্ব আরও শক্তিশালী করতে ২০১৬ সালে প্রণীত হয় ‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬’, যার ফলে এই বাহিনী একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনীতে রূপ নেয়।
বাহিনীর আইনানুগ ও সাংবিধানিক অবস্থান
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর’ সংজ্ঞায় যেসব বাহিনী অন্তর্ভুক্তÑ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এখন তাতে অন্তর্ভুক্ত। ২০১৬ সালের আইন অনুযায়ী- এ বাহিনীকে একটি স্বীকৃত আইনগত কাঠামোর আওতায় এনে শুধু রেলওয়ের নিরাপত্তা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছেÑ বাহিনীটি সংবিধানের আলোকে গঠিত এবং পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে বাহিনীর কাজ ও কর্তব্যকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আইনে ছিল না।
বাহিনীর কমান্ড কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট বাহিনীর প্রধান, যিনি সরকারের (রেলপথ মন্ত্রণালয়) অধীনে নিয়োজিত। ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী বাহিনীর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সরকার বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের হাতে। যদিও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বাহিনীর কর্মকা- তদারকির সুযোগ পান, তিনি কোনো সদস্যকে বদলি, দায়িত্ব হস্তান্তর কিংবা এস্কর্ট ডিউটি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনি ক্ষমতাবান নন।
এখানে একটি মৌলিক প্রশাসনিক রীতি প্রাসঙ্গিক: একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আইনশৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক হলেও পুলিশ সুপারের বদলি বা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দিতে পারেন না। ঠিক তেমনিভাবে জিএমও আরএনবির কর্মপন্থা নির্ধারণে আদেশ দিতে পারেন না।
এস্কর্ট ডিউটির আইনগত বাধ্যবাধকতা
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬-এর ১১(খ) ধারা অনুসারে বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব ‘রেল চলাচলে যেকোনো বাধা দূর করা’। ট্রেন নিজেই একটি চলমান, অস্থাবর রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং এর চলাচলের সময় যাত্রী ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। এস্কর্ট ডিউটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে এই নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত হয়।
উল্লেখ্য, বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ, অবৈধ যাত্রী ওঠানামা ঠেকানো, রাজস্ব সংরক্ষণে সহায়তা প্রদানÑএসবই বাহিনীর অবিচ্ছেদ্য দায়িত্ব, যদিও জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা শুধু টিকিট চেকার বা টিটিইদের হাতে রয়েছে।
চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি বন্ধ : আইন ও সংবিধানের পরিপন্থি সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সেই নির্দেশ চিফ কমান্ড্যান্ট বাস্তবায়ন করায় একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি হয়েছে। এটি বাহিনীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি, আইনগত কর্তব্য ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। বাহিনী আইন-২০১৬-এর ১১ ধারা অনুযায়ী এ আদেশ সরাসরি বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের গাফিলতি
আইন প্রণীত হয়েছে ২০১৬ সালে, অথচ প্রয়োজনীয় বিধিমালা এখনও প্রণীত হয়নি। ফলে বাহিনীর কার্যপ্রণালী, বদলি, পদোন্নতি, তদন্ত, দায়িত্ব প্রদানÑসবই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘটছে। এই ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্ববহির্ভূত সিদ্ধান্ত বারবার দেখা যাচ্ছে।
বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি
শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যদি আইনি স্বীকৃতি ও দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় এবং তা দূরীকরণে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বাহিনীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা জন্ম নেয়। ইতিহাস সাক্ষী, এরকম অব্যবস্থাপনার ফল কী ভয়াবহ হতে পারে। ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পটভূমিতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছেÑ ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষোভ সময়মতো প্রশমিত না হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
করণীয় ও সুপারিশ
* রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬ অনুযায়ী জরুরিভিত্তিতে বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
* আইনি কাঠামোর বাইরে কোনো দায়িত্ব পালনের নির্দেশ জারি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
* রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারগণ যেন শুধুমাত্র তদারকির ভূমিকা পালন করেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
* চলন্ত ট্রেনে আরএনবি সদস্যদের উপস্থিতি আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে।
* আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে বাহিনীর মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিরসন করতে হবে।
* আইন, প্রশাসন ও বাস্তব প্রয়োগÑ এই তিন স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বাহিনীর কার্যক্রমকে আইনি রূপরেখায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অস্তিত্ব শুধু রেলওয়ের সুরক্ষায় নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় আইন ও শৃঙ্খলার প্রতীক। কোনো বাহিনীর ওপর অকারণ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, আইনবহির্ভূত আদেশ কিংবা দায়িত্ব পালনে বাধা আরোপ করা শুধু বেআইনি নয়Ñ এটি সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘনও বটে! সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের উচিত অবিলম্বে বাহিনীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে, একটি সমন্বিত ও সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তা না হলে, রেলওয়ে তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন সংকটের জন্ম হতে পারে।
[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি]