alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে আপনার জমির ভুয়া, মিথ্যা কিংবা জাল দলিল তৈরি করে আপনার জমির স্বত্ব দাবি করেন বা দখল করতে চান, কিংবা যার জমি বিক্রি করার অধিকার নেই-তিনি যদি ভুয়া দলিল তৈরি করে দেন কিংবা দলিলটি প্রতারণা করে হাসিল করে নেন, প্রতারণাপূর্বক দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন-অর্থাৎ মিথ্যা, বানোয়াট, জাল, সৃজিত বা সম্পাদিত দলিল দ্বারা যদি আপনার স্বত্ব বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে আপনি ওই দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করে প্রতিকার নিতে পারেন।

আবার ফৌজদারি আদালতেও ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এ মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। সেই সঙ্গে জাল দলিল প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায়ও মামলা করতে পারেন।

দেওয়ানি আদালতে মামলার ক্ষেত্রে জাল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করে ভুয়া প্রমাণ করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় দিলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠাতে হবে। এরপর সেই কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালামবইতে লিপিবদ্ধ করে রাখবে।

আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। প্রচলিত ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৩৯ ধারায় বলা আছে-আপনি যদি কোনো দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে মনে করেন এবং উক্ত ভুয়া দলিলটি বাতিল না হলে আপনার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে আপনি বাতিল ঘোষণার জন্য মামলা করতে পারেন। এ আইনের ৪০ ধারার অনুসারে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আংশিক দলিল সৃজিত হলে আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। আর যদি আপনি জমি থেকে বেদখল হয়ে যান, তাহলে দলিল বাতিলের পাশাপাশি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারবেন।

তবে মনে রাখতে হবে-‘তামাদি আইন’-এর ৯১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাল দলিল উদ্ঘাটনের বিষয়টি আপনি যেদিন জানবেন, সেদিন থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে।

এ সময় অতিক্রম করলেও ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৪২ ধারা অনুসারে ‘ডিক্লারেশন সুইট’ বা ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে ভিন্নভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। আর বাদী যদি নালিশি ভূমি থেকে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বেদখল হন, তাহলে একই আইনের ৮ ধারানুযায়ী স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও খাস দখলের মামলা করতে পারেন এবং প্রার্থনায় দলিল বাতিল চাইতে পারেন। পাশাপাশি ৪২ ধারায় পৃথক ঘোষণাও চাইতে পারেন। আদালত মনে করলে জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারেন।

এ মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর। যিনি কোনো দলিলকে জাল বা জোরপূর্বক সম্পাদিত বলে দাবি করবেন, তাকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা এবং ২৬ ডিএলআর ৩৯২ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

শুধু দেওয়ানি আদালতেই নয়-জাল দলিল প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে আপনি ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের বিচারক চাইলে মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কোনো বিশেষায়িত সংস্থা বা সরকারি কোনো কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারেন। তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমাণিত হলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- প্রদান করতে পারেন। তবে ভুয়া দলিল বাতিল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেওয়ানি আদালতেই যেতে হবে।

জেনে রাখা ভালো-যেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই আদালতেই পৃথক মামলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে ৫৭ ডিএলআর ৭২৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অর্থাৎ আপনি জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেন এবং একইসঙ্গে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে দলিল বাতিল করতে পারেন।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে আপনার জমির ভুয়া, মিথ্যা কিংবা জাল দলিল তৈরি করে আপনার জমির স্বত্ব দাবি করেন বা দখল করতে চান, কিংবা যার জমি বিক্রি করার অধিকার নেই-তিনি যদি ভুয়া দলিল তৈরি করে দেন কিংবা দলিলটি প্রতারণা করে হাসিল করে নেন, প্রতারণাপূর্বক দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন-অর্থাৎ মিথ্যা, বানোয়াট, জাল, সৃজিত বা সম্পাদিত দলিল দ্বারা যদি আপনার স্বত্ব বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে আপনি ওই দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করে প্রতিকার নিতে পারেন।

আবার ফৌজদারি আদালতেও ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এ মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। সেই সঙ্গে জাল দলিল প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায়ও মামলা করতে পারেন।

দেওয়ানি আদালতে মামলার ক্ষেত্রে জাল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করে ভুয়া প্রমাণ করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় দিলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠাতে হবে। এরপর সেই কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালামবইতে লিপিবদ্ধ করে রাখবে।

আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। প্রচলিত ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৩৯ ধারায় বলা আছে-আপনি যদি কোনো দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে মনে করেন এবং উক্ত ভুয়া দলিলটি বাতিল না হলে আপনার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে আপনি বাতিল ঘোষণার জন্য মামলা করতে পারেন। এ আইনের ৪০ ধারার অনুসারে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আংশিক দলিল সৃজিত হলে আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। আর যদি আপনি জমি থেকে বেদখল হয়ে যান, তাহলে দলিল বাতিলের পাশাপাশি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারবেন।

তবে মনে রাখতে হবে-‘তামাদি আইন’-এর ৯১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাল দলিল উদ্ঘাটনের বিষয়টি আপনি যেদিন জানবেন, সেদিন থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে।

এ সময় অতিক্রম করলেও ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৪২ ধারা অনুসারে ‘ডিক্লারেশন সুইট’ বা ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে ভিন্নভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। আর বাদী যদি নালিশি ভূমি থেকে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বেদখল হন, তাহলে একই আইনের ৮ ধারানুযায়ী স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও খাস দখলের মামলা করতে পারেন এবং প্রার্থনায় দলিল বাতিল চাইতে পারেন। পাশাপাশি ৪২ ধারায় পৃথক ঘোষণাও চাইতে পারেন। আদালত মনে করলে জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারেন।

এ মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর। যিনি কোনো দলিলকে জাল বা জোরপূর্বক সম্পাদিত বলে দাবি করবেন, তাকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা এবং ২৬ ডিএলআর ৩৯২ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

শুধু দেওয়ানি আদালতেই নয়-জাল দলিল প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে আপনি ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের বিচারক চাইলে মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কোনো বিশেষায়িত সংস্থা বা সরকারি কোনো কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারেন। তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমাণিত হলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- প্রদান করতে পারেন। তবে ভুয়া দলিল বাতিল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেওয়ানি আদালতেই যেতে হবে।

জেনে রাখা ভালো-যেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই আদালতেই পৃথক মামলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে ৫৭ ডিএলআর ৭২৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অর্থাৎ আপনি জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেন এবং একইসঙ্গে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে দলিল বাতিল করতে পারেন।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top