সিরাজ প্রামাণিক
কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে আপনার জমির ভুয়া, মিথ্যা কিংবা জাল দলিল তৈরি করে আপনার জমির স্বত্ব দাবি করেন বা দখল করতে চান, কিংবা যার জমি বিক্রি করার অধিকার নেই-তিনি যদি ভুয়া দলিল তৈরি করে দেন কিংবা দলিলটি প্রতারণা করে হাসিল করে নেন, প্রতারণাপূর্বক দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন-অর্থাৎ মিথ্যা, বানোয়াট, জাল, সৃজিত বা সম্পাদিত দলিল দ্বারা যদি আপনার স্বত্ব বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে আপনি ওই দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করে প্রতিকার নিতে পারেন।
আবার ফৌজদারি আদালতেও ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এ মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। সেই সঙ্গে জাল দলিল প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায়ও মামলা করতে পারেন।
দেওয়ানি আদালতে মামলার ক্ষেত্রে জাল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করে ভুয়া প্রমাণ করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় দিলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠাতে হবে। এরপর সেই কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালামবইতে লিপিবদ্ধ করে রাখবে।
আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। প্রচলিত ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৩৯ ধারায় বলা আছে-আপনি যদি কোনো দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে মনে করেন এবং উক্ত ভুয়া দলিলটি বাতিল না হলে আপনার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে আপনি বাতিল ঘোষণার জন্য মামলা করতে পারেন। এ আইনের ৪০ ধারার অনুসারে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আংশিক দলিল সৃজিত হলে আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। আর যদি আপনি জমি থেকে বেদখল হয়ে যান, তাহলে দলিল বাতিলের পাশাপাশি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারবেন।
তবে মনে রাখতে হবে-‘তামাদি আইন’-এর ৯১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাল দলিল উদ্ঘাটনের বিষয়টি আপনি যেদিন জানবেন, সেদিন থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে।
এ সময় অতিক্রম করলেও ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৪২ ধারা অনুসারে ‘ডিক্লারেশন সুইট’ বা ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে ভিন্নভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। আর বাদী যদি নালিশি ভূমি থেকে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বেদখল হন, তাহলে একই আইনের ৮ ধারানুযায়ী স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও খাস দখলের মামলা করতে পারেন এবং প্রার্থনায় দলিল বাতিল চাইতে পারেন। পাশাপাশি ৪২ ধারায় পৃথক ঘোষণাও চাইতে পারেন। আদালত মনে করলে জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারেন।
এ মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর। যিনি কোনো দলিলকে জাল বা জোরপূর্বক সম্পাদিত বলে দাবি করবেন, তাকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা এবং ২৬ ডিএলআর ৩৯২ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
শুধু দেওয়ানি আদালতেই নয়-জাল দলিল প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে আপনি ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের বিচারক চাইলে মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কোনো বিশেষায়িত সংস্থা বা সরকারি কোনো কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারেন। তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমাণিত হলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- প্রদান করতে পারেন। তবে ভুয়া দলিল বাতিল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেওয়ানি আদালতেই যেতে হবে।
জেনে রাখা ভালো-যেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই আদালতেই পৃথক মামলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে ৫৭ ডিএলআর ৭২৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অর্থাৎ আপনি জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেন এবং একইসঙ্গে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে দলিল বাতিল করতে পারেন।
[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সিরাজ প্রামাণিক
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে আপনার জমির ভুয়া, মিথ্যা কিংবা জাল দলিল তৈরি করে আপনার জমির স্বত্ব দাবি করেন বা দখল করতে চান, কিংবা যার জমি বিক্রি করার অধিকার নেই-তিনি যদি ভুয়া দলিল তৈরি করে দেন কিংবা দলিলটি প্রতারণা করে হাসিল করে নেন, প্রতারণাপূর্বক দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন-অর্থাৎ মিথ্যা, বানোয়াট, জাল, সৃজিত বা সম্পাদিত দলিল দ্বারা যদি আপনার স্বত্ব বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে আপনি ওই দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মোকদ্দমা করে প্রতিকার নিতে পারেন।
আবার ফৌজদারি আদালতেও ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এ মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। সেই সঙ্গে জাল দলিল প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায়ও মামলা করতে পারেন।
দেওয়ানি আদালতে মামলার ক্ষেত্রে জাল দলিলটি আদালতে উপস্থাপন করে ভুয়া প্রমাণ করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় দিলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠাতে হবে। এরপর সেই কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালামবইতে লিপিবদ্ধ করে রাখবে।
আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। প্রচলিত ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৩৯ ধারায় বলা আছে-আপনি যদি কোনো দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য বলে মনে করেন এবং উক্ত ভুয়া দলিলটি বাতিল না হলে আপনার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাহলে আপনি বাতিল ঘোষণার জন্য মামলা করতে পারেন। এ আইনের ৪০ ধারার অনুসারে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আংশিক দলিল সৃজিত হলে আংশিক বাতিলের মামলাও করা যাবে। আর যদি আপনি জমি থেকে বেদখল হয়ে যান, তাহলে দলিল বাতিলের পাশাপাশি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারবেন।
তবে মনে রাখতে হবে-‘তামাদি আইন’-এর ৯১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাল দলিল উদ্ঘাটনের বিষয়টি আপনি যেদিন জানবেন, সেদিন থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে হবে।
এ সময় অতিক্রম করলেও ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’-এর ৪২ ধারা অনুসারে ‘ডিক্লারেশন সুইট’ বা ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে ভিন্নভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। আর বাদী যদি নালিশি ভূমি থেকে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে বেদখল হন, তাহলে একই আইনের ৮ ধারানুযায়ী স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও খাস দখলের মামলা করতে পারেন এবং প্রার্থনায় দলিল বাতিল চাইতে পারেন। পাশাপাশি ৪২ ধারায় পৃথক ঘোষণাও চাইতে পারেন। আদালত মনে করলে জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারেন।
এ মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর। যিনি কোনো দলিলকে জাল বা জোরপূর্বক সম্পাদিত বলে দাবি করবেন, তাকে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনের ১০১ ধারা এবং ২৬ ডিএলআর ৩৯২ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
শুধু দেওয়ানি আদালতেই নয়-জাল দলিল প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে আপনি ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের বিচারক চাইলে মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কোনো বিশেষায়িত সংস্থা বা সরকারি কোনো কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারেন। তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমাণিত হলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- প্রদান করতে পারেন। তবে ভুয়া দলিল বাতিল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই দেওয়ানি আদালতেই যেতে হবে।
জেনে রাখা ভালো-যেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই আদালতেই পৃথক মামলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে ৫৭ ডিএলআর ৭২৭ পৃষ্ঠায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অর্থাৎ আপনি জাল দলিল প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেন এবং একইসঙ্গে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে দলিল বাতিল করতে পারেন।
[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]