alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

: শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

(শেষাংশ)

পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবী তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন ও ইতিহাসের অধ্যাপক ড মোহর আলী ৮ জুলাই ‘লন্ডন টাইমস’ পত্রিকায় এক পত্রের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের জীবনের নিরাপত্তা নেই’ কথাটার প্রতিবাদ জানান। গণহত্যার কথাও অস্বীকার করেন তারা।

উল্লেখ্য, গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জনসম্মুখেই বলেছিলেন, “পাকিস্তানি বাহিনী যদি বাঙালী নারীদের শ্লীলতাহানি করে তবে তাদের কোন পাপ হবে না, কারণ ইসলাম রক্ষার জন্য জিহাদে নিয়োজিত। তাদের জন্য এই কাজ ‘মুতা’ বিবাহের পর্যায়ে পড়ে”। এই বুদ্ধিজীবীদের কারো কারো সাথে রাও ফরমান আলির সরাসরি যোগাযোগ ছিল এবং রাওয়ের নির্দেশে অনেকেই কাজ করতেন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা প্রণয়নেও সাহায্য করতেন তারা।

সারকথা হচ্ছে, একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পিছনে এই পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, কর্মস্থলে যেমন এই পাকিস্তানপন্থীরা থেকে গিয়েছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেকেও থেকে যান। গোপনে সেখান থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে থাকেন। তাদের কাজের ধরণটা ছিল এরকম মুক্তিযুদ্ধের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করেছেন, গেরিলাদের আশ্রয়দান করেছেন, সেবা শুশ্রুষা করেছেন, লুকিয়ে ঔষধপত্র বিতরণ করেছেন ও তথ্য সরবরাহ করেছেন। তাদের কাজের কিছু নমুনা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন আহমেদ প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সর্বাত্মক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে। আত্মীয় -স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে গোপনে অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য জোগাড় করে পৌঁছে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তার এমন কর্মকাণ্ডের কারণে নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি বাহিনী আরও কয়েকজন অধ্যাপকের সাথে তাকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়।

তার কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় কবি সুফিয়া কামালের মন্তব্যে, ‘ভুলবো কি করে গিয়াসউদ্দীনের কথা? মাথায় গামছা বেধে লুঙ্গি পরে গিয়াস প্রায়ই রাতে চুপিসারে পিছনে পথ দিয়ে দেয়াল টপকে আসতো রিকশাওয়ালা সেজে। চাল নিয়ে যেত বস্তায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে। প্রতিবেশী অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাবার আগে আমার কাছে রেশন কার্ড রেখে গিয়েছিলেন। সেই কার্ডে আমি চাল চিনি উঠিয়ে রাখতাম। সেগুলো গিয়াস নিয়ে যেত। গিয়াসের ওপর পাক সেনা রাজাকারদের চোখ ছিল অতন্দ্র। ১৪ ডিসেম্বর ওকেও রাজাকাররা হত্যা করেছে’।

বিখ্যাত উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’র লেখক অধ্যাপক আনোয়ার পাশা গোপনে প্রচার-পত্রিকা প্রকাশ করে বিলিয়ে দিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে নতুন টাইপরাইটার কিনেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে চাঁদা পাঠাতেন নিয়মিত। একাত্তরের সেই উত্তাল সময়ে বসেই তার উপন্যাসে তিনি ধারণ করতে পেরেছিলেন সে সময়টাকে।

সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত সমকালীন প্রতিা আন্দোলনের সাথেই মুনীর চৌধুরীর সম্পৃক্ততা ছিল। যদিও দাউদ পুরষ্কার লাভ এবং পাক সরকারের বিদেশ সফরের তালিকায় তার নাম থাকা নিয়ে তাকে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তবুও ১৯৬৭ সালের দিকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র বিরোধী প্রচার শুরু করলে তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেই প্রতিবাদ লিপির প্রথম স্বাক্ষর প্রদানকারী ব্যক্তি ছিলেন মুনীর চৌধুরী।

পরের বছর সংস্কারের নামে বাংলা বর্ণমালা বিলোপের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি তারও প্রতিবাদ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ১৯৬৬-তে পাকিস্তান সরকারের দেওয়া সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন।

খেতাব বিসর্জনের এই প্রতিবাদ স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার সমর্থনকে জানান দেয় না? তবু উপরোক্ত সে সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে মুনীর চৌধুরীর মৃত্যুর পর অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, তাকে কেন মারল? সে জবাবে আনিসুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আপনাদের চেয়ে ওরা তাকে ভালো চিনেছিল বলে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন এবং এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তারা স্বাভাবিকভাবেই শাসকদের রোষানলে পড়েন। আগস্ট মাসের দিকে পাঁচজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তারা হলেন- ড আবুল খায়ের, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক কে এম সাদউদ্দিন, অধ্যাপক আহসানুল হক ও অধ্যাপক শহিদুল্লাহ। পরবর্তীতে অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক জহুরুল হককে গ্রেফতার করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও টিক্কা খান প্রফেসর মুনীর চৌধুরী, ড নীলিমা ইব্রাহিম, ড সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ড এনামুল হককে সাবধান করে দেন।

আলবদরেরা যে তালিকা ধরে ধরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল সেখানে অন্যদের সাথে ড সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তালিকাতে আমার নামও ছিল, ঠিকানা জানতো না বলে বেঁচে গেছি।

ড. মুহম্মদ হাবিবুল্লাহকে পদচ্যুত করা হয় এবং ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে পদচ্যুত ও ছয় মাসের আটকাদেশ দেয়া হয়। পাকিস্তানি দালাল বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এই বুদ্ধিজীবীদেরকে ‘যমদূত’ নামে চিঠি দিয়ে নিয়মিত হুমকি প্রদানও করতেন।

বিখ্যাত সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার দেশে থেকে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্যেই। যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। শহিদুল্লাহ কায়সারই তাজউদ্দীন আহমদের কাছে এপ্রিলের দিকে কিছু উপদেশ ও নির্দেশনা প্রেরণ করার জন্য মইদুল হাসানকে ভারত পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর এই মইদুল হাসানের ওপর আরও বড় দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল; তার ভাষায়, ‘যা আমার চিন্তা ও কর্মসূচি আপাদমস্তক পাল্টে ফেলে’।

উল্লেখ করতে হয় এখানে ‘শিলালিপি’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিনা পারভীনের কথা। ১৪ ডিসেম্বর তিনিও শহিদ হয়েছিলেন আলবদরের হাতে। তৎকালীন সময়ে তার পত্রিকা স্বাধীনতার স্বপক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল এবং ‘শিলালিপি’ পত্রিকার বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে তিনি সাহায্য করতেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের; কখনো খাবার পাঠিয়ে, কখনো ওষুধ পাঠিয়ে, কখনোবা অর্থের যোগান দিয়ে।

‘শিলালিপি’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিনা পারভীনও ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হয়েছিলেন আলবদরের হাতে। ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বীরা বিদেশের মাটিতে আশ্রয় না নিয়ে দেশে নিজেদের কর্মস্থলে থেকে যান। তারা গোপনে একটা হাসপাতাল করে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। ডা. আলীম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় তার স্ত্রীর বক্তব্যে, “মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিল তার একটা বড় রকমের দায়িত্ব। প্রায়ই ছেলেরা, মুক্তিযোদ্ধারা বাসায় আসতো। আবার আলীম নিজেও যেতো ওদের চিকিৎসা করতে। ওদের গোপন হাসপাতাল ছিল। ডাক্তার ফজলে রাব্বি এবং আরও অনেকেই ওখানে গিয়ে ওদের চিকিৎসার কাজ করতেন।

আসলে কারফিউ উঠে গেলেই আলীমের কাজ আরম্ভ হতো। গাড়ির বনেট ভর্তি করে ও ওষুধ সংগ্রহ করতো বিভিন্ন ফার্মেসি আর ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে। এগুলো আবার গোপন ঘাটিতে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতো। মুক্তিবাহিনীর জন্য ও বহু টাকা চাঁদাও তুলেছে। কিন্তু গোপনে এতো যে কাজ করতো, সে কথা ও কারো কাছে বলতো না। এমনকি আমার কাছেও না। আলীমের মৃত্যুর পর ওর ডাক্তার বন্ধু-সহকর্মীরা এসে আমাকে এসব বলেছেন”।

ডা. আলীম চৌধুরী তার প্রতিবেশীর অনুরোধে যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন এক অসহায় ব্যক্তিকে। পরবর্তীতে দেখা যায় সে ‘ব্যক্তি’টিই আলবদরের নেতা মাওলানা মান্নান। মান্নান ও তার শিষ্যদের হাতে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন ডাক্তার আলিম চৌধুরী।

আলোচনার খাতিরে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা ঢাকা শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের অল্প কিছু কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দিয়েছি। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান ছিল এরকমই। সেই সাথে আইনজীবী, ডাক্তার, সাহিত্যিক, শিল্পী - সবাই যার যার অবস্থান থেকে লড়ে গিয়েছেন। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষকেরাও গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছেন, কখনো আশ্রয় দিয়ে কখনো আর্থিক সাহায্য দিয়ে। বিভিন্ন এলাকাতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এই শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য।

উদাহরণস্বপরুপ, কুষ্টিয়া দর্শনা কলেজের অধ্যক্ষ লতাফত হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদে সীমান্ত পার হতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতেন, নিজের বাসা ও কলেজকে যোদ্ধাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে বিভিন্ন খবর ও খাবার দুটোই সংগ্রহ করতেন। এ জন্যেই যুদ্ধের নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে তারা পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, শহিদ হয়েছেন।

বুদ্ধিজীবীদের এ ভূমিকা কি আমরা কোনোভাবে অস্বীকার করতে পারব? না। তাহলে বর্তমানে কেন প্রশ্ন উঠছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যখন আপনি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার উপায়টাকে নির্দিষ্ট কিছু কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখে দেন তখনই সমস্যার উদ্ভব হয়। আমরা যখন ধরে নিচ্ছি যে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করার পর সকলেই প্রতিবাদস্বরূপ চাকরি ছেড়ে দিবেন কিংবা ভারতে চলে যাবেন কিংবা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তখনই প্রশ্নগুলো ওঠে। তাই শুরুতেই বলেছিলাম ‘অবদান’ এর বিস্তৃত পরিসরের কথা।

একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য, বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশ কাজই করতেন গোপনে; অনেক সময়ে পরিবারের মানুষ জানতেন না।

ডা. আলিম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার স্ত্রী জানতে পারেন তার মৃত্যুর অনেক পরে। হয়তোবা অনেক বুদ্ধিজীবীর অনেক কাজই আমাদের আড়ালে রয়ে গেছে এখনো। এটাও বুঝতে হবে, এই বুদ্ধিজীবীদের অবদান আমি আপনি জানি আর নাই জানি পাকিস্তানিরা ঠিকই জানত, নিয়মিত খবরও রাখত।

তাই দেখা যাচ্ছে তাদেরকে নিয়মিত নোটিশ দেয়া হয়েছে, হুমকি দেয়া হয়েছে এবং পরিশেষে তালিকা করে মেরে ফেলে দেয়া হয়েছে বধ্যভূমিতে।

[লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি; সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন]

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

সবার বাংলাদেশ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ : প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক স্থিতি

চিকিৎসা যখন অসহনীয় ব্যয়, তখন প্রতিবাদই ন্যায়

মস্কোর কৌশলগত পুনর্গঠন

“সব শিয়ালের এক রা’ মারা গেল কুমিরের ছা”

ছবি

বিচূর্ণ দর্পণের মুখ

নিজের চেতনায় নিজেরই ঘা দেয়া জরুরি

ঋণ অবলোপনের প্রভাব

ভেজাল গুড়ের মরণফাঁদ: বাঙালির ঐতিহ্য, জনস্বাস্থ্য ও আস্থার নীরব বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

জোটের ভোট নাকি ভোটের জোট, কৌশলটা কী?

প্রমাণ তো করতে হবে আমরা হাসিনার চেয়ে ভালো

ছবি

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

যুক্তরাজ্যে ভর্তি স্থগিতের কুয়াশা: তালা লাগলেও চাবি আমাদের হাতে

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ

জাতীয় রক্তগ্রুপ নির্ণয় দিবস

জাল সনদপত্রে শিক্ষকতা

সাধারণ চুক্তিগুলোও গোপনীয় কেন

ছবি

শিশুখাদ্যের নিরাপত্তা: জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রথম শর্ত

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

(শেষাংশ)

পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবী তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন ও ইতিহাসের অধ্যাপক ড মোহর আলী ৮ জুলাই ‘লন্ডন টাইমস’ পত্রিকায় এক পত্রের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের জীবনের নিরাপত্তা নেই’ কথাটার প্রতিবাদ জানান। গণহত্যার কথাও অস্বীকার করেন তারা।

উল্লেখ্য, গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জনসম্মুখেই বলেছিলেন, “পাকিস্তানি বাহিনী যদি বাঙালী নারীদের শ্লীলতাহানি করে তবে তাদের কোন পাপ হবে না, কারণ ইসলাম রক্ষার জন্য জিহাদে নিয়োজিত। তাদের জন্য এই কাজ ‘মুতা’ বিবাহের পর্যায়ে পড়ে”। এই বুদ্ধিজীবীদের কারো কারো সাথে রাও ফরমান আলির সরাসরি যোগাযোগ ছিল এবং রাওয়ের নির্দেশে অনেকেই কাজ করতেন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা প্রণয়নেও সাহায্য করতেন তারা।

সারকথা হচ্ছে, একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পিছনে এই পাকিস্তানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, কর্মস্থলে যেমন এই পাকিস্তানপন্থীরা থেকে গিয়েছিল, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেকেও থেকে যান। গোপনে সেখান থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে থাকেন। তাদের কাজের ধরণটা ছিল এরকম মুক্তিযুদ্ধের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করেছেন, গেরিলাদের আশ্রয়দান করেছেন, সেবা শুশ্রুষা করেছেন, লুকিয়ে ঔষধপত্র বিতরণ করেছেন ও তথ্য সরবরাহ করেছেন। তাদের কাজের কিছু নমুনা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন আহমেদ প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সর্বাত্মক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে। আত্মীয় -স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে গোপনে অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য জোগাড় করে পৌঁছে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তার এমন কর্মকাণ্ডের কারণে নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি বাহিনী আরও কয়েকজন অধ্যাপকের সাথে তাকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়।

তার কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় কবি সুফিয়া কামালের মন্তব্যে, ‘ভুলবো কি করে গিয়াসউদ্দীনের কথা? মাথায় গামছা বেধে লুঙ্গি পরে গিয়াস প্রায়ই রাতে চুপিসারে পিছনে পথ দিয়ে দেয়াল টপকে আসতো রিকশাওয়ালা সেজে। চাল নিয়ে যেত বস্তায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে। প্রতিবেশী অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাবার আগে আমার কাছে রেশন কার্ড রেখে গিয়েছিলেন। সেই কার্ডে আমি চাল চিনি উঠিয়ে রাখতাম। সেগুলো গিয়াস নিয়ে যেত। গিয়াসের ওপর পাক সেনা রাজাকারদের চোখ ছিল অতন্দ্র। ১৪ ডিসেম্বর ওকেও রাজাকাররা হত্যা করেছে’।

বিখ্যাত উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’র লেখক অধ্যাপক আনোয়ার পাশা গোপনে প্রচার-পত্রিকা প্রকাশ করে বিলিয়ে দিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে নতুন টাইপরাইটার কিনেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে চাঁদা পাঠাতেন নিয়মিত। একাত্তরের সেই উত্তাল সময়ে বসেই তার উপন্যাসে তিনি ধারণ করতে পেরেছিলেন সে সময়টাকে।

সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত সমকালীন প্রতিা আন্দোলনের সাথেই মুনীর চৌধুরীর সম্পৃক্ততা ছিল। যদিও দাউদ পুরষ্কার লাভ এবং পাক সরকারের বিদেশ সফরের তালিকায় তার নাম থাকা নিয়ে তাকে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তবুও ১৯৬৭ সালের দিকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র বিরোধী প্রচার শুরু করলে তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেই প্রতিবাদ লিপির প্রথম স্বাক্ষর প্রদানকারী ব্যক্তি ছিলেন মুনীর চৌধুরী।

পরের বছর সংস্কারের নামে বাংলা বর্ণমালা বিলোপের উদ্যোগ নেওয়া হলে তিনি তারও প্রতিবাদ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ১৯৬৬-তে পাকিস্তান সরকারের দেওয়া সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন।

খেতাব বিসর্জনের এই প্রতিবাদ স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার সমর্থনকে জানান দেয় না? তবু উপরোক্ত সে সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে মুনীর চৌধুরীর মৃত্যুর পর অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, তাকে কেন মারল? সে জবাবে আনিসুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আপনাদের চেয়ে ওরা তাকে ভালো চিনেছিল বলে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন এবং এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তারা স্বাভাবিকভাবেই শাসকদের রোষানলে পড়েন। আগস্ট মাসের দিকে পাঁচজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তারা হলেন- ড আবুল খায়ের, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক কে এম সাদউদ্দিন, অধ্যাপক আহসানুল হক ও অধ্যাপক শহিদুল্লাহ। পরবর্তীতে অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক জহুরুল হককে গ্রেফতার করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও টিক্কা খান প্রফেসর মুনীর চৌধুরী, ড নীলিমা ইব্রাহিম, ড সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ড এনামুল হককে সাবধান করে দেন।

আলবদরেরা যে তালিকা ধরে ধরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল সেখানে অন্যদের সাথে ড সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তালিকাতে আমার নামও ছিল, ঠিকানা জানতো না বলে বেঁচে গেছি।

ড. মুহম্মদ হাবিবুল্লাহকে পদচ্যুত করা হয় এবং ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে পদচ্যুত ও ছয় মাসের আটকাদেশ দেয়া হয়। পাকিস্তানি দালাল বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এই বুদ্ধিজীবীদেরকে ‘যমদূত’ নামে চিঠি দিয়ে নিয়মিত হুমকি প্রদানও করতেন।

বিখ্যাত সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার দেশে থেকে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্যেই। যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। শহিদুল্লাহ কায়সারই তাজউদ্দীন আহমদের কাছে এপ্রিলের দিকে কিছু উপদেশ ও নির্দেশনা প্রেরণ করার জন্য মইদুল হাসানকে ভারত পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর এই মইদুল হাসানের ওপর আরও বড় দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল; তার ভাষায়, ‘যা আমার চিন্তা ও কর্মসূচি আপাদমস্তক পাল্টে ফেলে’।

উল্লেখ করতে হয় এখানে ‘শিলালিপি’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিনা পারভীনের কথা। ১৪ ডিসেম্বর তিনিও শহিদ হয়েছিলেন আলবদরের হাতে। তৎকালীন সময়ে তার পত্রিকা স্বাধীনতার স্বপক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল এবং ‘শিলালিপি’ পত্রিকার বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে তিনি সাহায্য করতেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের; কখনো খাবার পাঠিয়ে, কখনো ওষুধ পাঠিয়ে, কখনোবা অর্থের যোগান দিয়ে।

‘শিলালিপি’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিনা পারভীনও ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হয়েছিলেন আলবদরের হাতে। ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বীরা বিদেশের মাটিতে আশ্রয় না নিয়ে দেশে নিজেদের কর্মস্থলে থেকে যান। তারা গোপনে একটা হাসপাতাল করে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। ডা. আলীম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় তার স্ত্রীর বক্তব্যে, “মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিল তার একটা বড় রকমের দায়িত্ব। প্রায়ই ছেলেরা, মুক্তিযোদ্ধারা বাসায় আসতো। আবার আলীম নিজেও যেতো ওদের চিকিৎসা করতে। ওদের গোপন হাসপাতাল ছিল। ডাক্তার ফজলে রাব্বি এবং আরও অনেকেই ওখানে গিয়ে ওদের চিকিৎসার কাজ করতেন।

আসলে কারফিউ উঠে গেলেই আলীমের কাজ আরম্ভ হতো। গাড়ির বনেট ভর্তি করে ও ওষুধ সংগ্রহ করতো বিভিন্ন ফার্মেসি আর ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে। এগুলো আবার গোপন ঘাটিতে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতো। মুক্তিবাহিনীর জন্য ও বহু টাকা চাঁদাও তুলেছে। কিন্তু গোপনে এতো যে কাজ করতো, সে কথা ও কারো কাছে বলতো না। এমনকি আমার কাছেও না। আলীমের মৃত্যুর পর ওর ডাক্তার বন্ধু-সহকর্মীরা এসে আমাকে এসব বলেছেন”।

ডা. আলীম চৌধুরী তার প্রতিবেশীর অনুরোধে যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন এক অসহায় ব্যক্তিকে। পরবর্তীতে দেখা যায় সে ‘ব্যক্তি’টিই আলবদরের নেতা মাওলানা মান্নান। মান্নান ও তার শিষ্যদের হাতে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন ডাক্তার আলিম চৌধুরী।

আলোচনার খাতিরে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা ঢাকা শহরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের অল্প কিছু কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দিয়েছি। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান ছিল এরকমই। সেই সাথে আইনজীবী, ডাক্তার, সাহিত্যিক, শিল্পী - সবাই যার যার অবস্থান থেকে লড়ে গিয়েছেন। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষকেরাও গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছেন, কখনো আশ্রয় দিয়ে কখনো আর্থিক সাহায্য দিয়ে। বিভিন্ন এলাকাতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এই শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য।

উদাহরণস্বপরুপ, কুষ্টিয়া দর্শনা কলেজের অধ্যক্ষ লতাফত হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদে সীমান্ত পার হতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতেন, নিজের বাসা ও কলেজকে যোদ্ধাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে বিভিন্ন খবর ও খাবার দুটোই সংগ্রহ করতেন। এ জন্যেই যুদ্ধের নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে তারা পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, শহিদ হয়েছেন।

বুদ্ধিজীবীদের এ ভূমিকা কি আমরা কোনোভাবে অস্বীকার করতে পারব? না। তাহলে বর্তমানে কেন প্রশ্ন উঠছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যখন আপনি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার উপায়টাকে নির্দিষ্ট কিছু কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখে দেন তখনই সমস্যার উদ্ভব হয়। আমরা যখন ধরে নিচ্ছি যে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করার পর সকলেই প্রতিবাদস্বরূপ চাকরি ছেড়ে দিবেন কিংবা ভারতে চলে যাবেন কিংবা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তখনই প্রশ্নগুলো ওঠে। তাই শুরুতেই বলেছিলাম ‘অবদান’ এর বিস্তৃত পরিসরের কথা।

একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য, বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশ কাজই করতেন গোপনে; অনেক সময়ে পরিবারের মানুষ জানতেন না।

ডা. আলিম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার স্ত্রী জানতে পারেন তার মৃত্যুর অনেক পরে। হয়তোবা অনেক বুদ্ধিজীবীর অনেক কাজই আমাদের আড়ালে রয়ে গেছে এখনো। এটাও বুঝতে হবে, এই বুদ্ধিজীবীদের অবদান আমি আপনি জানি আর নাই জানি পাকিস্তানিরা ঠিকই জানত, নিয়মিত খবরও রাখত।

তাই দেখা যাচ্ছে তাদেরকে নিয়মিত নোটিশ দেয়া হয়েছে, হুমকি দেয়া হয়েছে এবং পরিশেষে তালিকা করে মেরে ফেলে দেয়া হয়েছে বধ্যভূমিতে।

[লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি; সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন]

back to top