alt

উপ-সম্পাদকীয়

সাংবাদিক নির্যাতন ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ

শেখর ভট্টাচার্য

: বুধবার, ০২ জুন ২০২১

সংবাদমাধ্যমের মূল কাজ হলো, জনগণের নিকট তথ্য সরবরাহ করা। সংবাদপত্রকে আমরা অন্য অর্থে তথ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বলতে পারি। সংবাদপত্র বা সার্বিকভাবে গণমাধ্যম জনগণ ও সেবা প্রদানকারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান জনগণের পক্ষ থেকে সেবা প্রদানকারীর জবাদিহিতা নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক কাঠামো যখন কিছুটা দুর্বল, গণতন্ত্রের বিকাশ যখন প্রত্যশিত মাত্রায় হয়ে উঠে না তখন জনগণকে তথ্য প্রদানে সংবাদ পত্রের ভূমিকা আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতে সংবাদমাধ্যম জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসনের ভিত্তিকে সবল করতে পারে। সুশাসন নিশ্চিত হলে গণতন্ত্রও ও শক্তিশালী রূপ লাভ করে। জনবান্ধব সরকার, সংবাদপত্রের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে যখন জবাবদিহি নিশ্চিত হয় তখন সংবাদপত্রকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে থাকে। সংবাদমাধ্যম যত বেশি তথ্য প্রদান করবে, সরকার তত বেশি জনআকাক্সক্ষা পূরণে সচেতন হবে এবং এভাবে একটি সরকারের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পথও সুগম হতে পারে।

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো ‘জনসেবামূলক মন্ত্রণালয়ে’ কী এমন থাকতে পারে, যে জন্য মনে হয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে? যেখানে অপরাধের বিষয়টিই সুস্পষ্ট নয়, সে অপরাধের জন্য তাকে তিন দিন কারাগারে আটক থাকতে হলো। এটাকে কি একটা বার্তা হিসেবে ধরে নেয়া যায়? এত বড় একজন নামী সাংবাদিকের এ রকম হেনস্তার পরে যদি কেউ সচিবালয়ে রিপোর্ট করতে যায়, তার মাথায় কি এই ঘটনা আসবে না, যে তারও এ রকম হতে পারে? রোজিনা ইসলামের জন্য দেশে বিদেশে সাংবাদিক, সাধারণ জনগণ এমন কি জাতিসংঘ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল তা ছিল অভূতপূর্ব। অভূতপূর্ব কেন? এর নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। অনেকেই মনে করেন প্রথম আলোর মতো একটি প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় সংবাদ পত্রের সাংবাদিক হওয়ার কারণে তাকে আটক করার পর এত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আবার অনেকে বলেন রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে সব সাংবাদিক ইউনিয়নের একাত্মতার কারণে সরকার বাধ্য হয়েছে তাকে জামিন দিতে আবার অনেকের ধারণা সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে সাংবাদিক বান্ধব ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতার করতে নিজেরাই তাকে জামিন দেয়ার জন্য নমনীয় হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে কোন প্রেক্ষিতে এবং কোন মন্ত্রণালয়ের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল। আমরা জানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাকালে বহুমুখী, দুর্নীতির জন্য আলোচিত একটি মন্ত্রণালয়। আর রোজিনা ইসলাম হলেন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। এ ক্ষেত্রে তার সফলতা দেশে বিদেশে তাকে সুখ্যাতি ও স্বীকৃতি দিয়েছে প্রচুর। বাংলাদেশে যেহেতু আমরা বিরোধী দলের কাছ থেকে যে কোন কারণেই হোক সরব, এবং জনাকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি পাই না, তাই রোজিনা ইসলামের মতো সাংবাদিকরা যখন অনুসন্ধানের মাধ্যমে জনগণের সামনে দুর্নীতির বাক্সকে উন্মুক্ত করে তুলেন তখন তারা পাঠক কর্তৃক অনেক সমাদৃত হয়ে উঠেন।

রোজিনা ইসলাম, রাজনৈতিক দলের পক্ষপাত মুক্ত থেকে তার রিপোর্টগুলো প্রকাশ করেছিলেন। তার পেশাদারিত্ব অসাধারণ। বাংলাদেশের আলোচিত দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়ম অনেক সাহসীভাবে তিনি তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। রোজিনা ইসলাম দেশ কাঁপানো যে সব গুরুতর দুর্নীতি, অনাচার ও অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করে নন্দিত হয়েছেন, সেগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় তাকে কেন টুঁটি চেপে ধরে নির্যাতন করতে হয়। তার আলোচিত প্রতিবেদনগুলো হলো, খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ডের আসামি জোসেফের সাজা হ্রাস ও পরে মওকুফ, বহুল আলোচিত লক্ষ্মীপুরের সাবেক পৌর মেয়র তাহেরপুত্রের রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্তি, অন্তত অর্ধডজন সচিবের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিক্ষেত্রে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ, ক্রেস্টের সোনায় ১২ আনাই খাদ, কারাগারের ভেতরের দুর্নীতি, মহামারির সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটানা মাসখানেক অফিস না করা, একই মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক দুর্নীতির খবরÑএগুলোর সবই তাকে দুর্নীতিবিরোধী পাঠকের কাছে নন্দিত করে তুলেছে।

করোনা অতিমারির মধ্যেও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খুব বড় সংকটের সম্মুখীন হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দুরদৃষ্টি সময়োচিত পদক্ষেপ আমাদের এখনও অনেক প্রতিবেশী দেশের থেকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রেখেছে। করোনাকালে জীবন ও জীবিকার ভারসাম্যমূলক অবস্থানের নীতি গ্রহণ করে তিনি যেমন জীবনকে সুরক্ষা দিতে পেরেছেন একই ভাবে জীবিকাকেও একটি গ্রহণ যোগ্য পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মনে রাখতে প্রধানমন্ত্রী একটি দল নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সেই দলের কোথাও ফুটো থাকলে তার সমস্ত অর্জনের গায়ে কালিমার ছাপ পড়ে। আর যারা, ‘ঘোলা জলে মাছ শিকারে’ ব্যস্ত আছেন তাদের মনে রাখতে হবে, দুর্নীতির জন্য তাদের কোন না কোনভাবে জবাদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের যে উন্নয়ন সে উন্নয়নকে ম্লান করে দেয়ার তৎপরতা এখনই বন্ধ করতে হবে।

গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত। এই স্বচ্ছতাই পারে সরকারে উজ্জ্বলতর ভাবমূর্তি জনগণের কাছে তুলে ধরতে। জনপ্রতিনিধিরা যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, একইভাবে সরকারি আমলারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সরকারি আমলারা জনগণের ভৃত্য হিসাবে চাকরিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন; কিন্তু নিয়োগের পর পর ক্ষমতা, প্রতিপত্তির প্রভাবে তারা নিজেরাই জনগণের প্রভুতে রূপান্তরিত হয়ে পড়েন। আমলারা নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে চলে যান। আমদের অধিকাংশ আমলাদের কোথাও না কোথাও দ্বিতীয় আবাস আছে। কানাডার ‘বেগম পারাতে’ আমলাদের নিজস্ব বাসস্থানের সংখ্যা বেশি এ’ বিষয়টি আমার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। যাদের পৃথিবীর উন্নত দেশে দ্বিতীয় বাসস্থান আছে, তাদের জবাদিহি, স্বচ্ছতা যে খুব বেশি পরিমান থাকবে, তা’ আশা করা যায়না। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের সরকারর এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তাদের যথাযথ জবাদিহি নিশ্চিত করা।

সংবাদমাধ্যমের বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এ ক্ষেত্রে সরকারকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করতে পারে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ সরকার সম্পর্কে ভুল ধারণা নিরসন করতে সহায়তা করতে পারে সহজেই। আমরা চাই যারা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমে আসুক। জনগণের তথ্য জানার অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারলে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং সরকারও জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় হতে সক্ষম হবে। গণতন্ত্রের দ্রুত বিকাশ, উন্নয়নকে টেকসই করা এবং জাতীয় ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতর করার লক্ষ্যে চাই স্বাধীন গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ।

[লেখক : উন্নয়ন গবেষক]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সাংবাদিক নির্যাতন ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ

শেখর ভট্টাচার্য

বুধবার, ০২ জুন ২০২১

সংবাদমাধ্যমের মূল কাজ হলো, জনগণের নিকট তথ্য সরবরাহ করা। সংবাদপত্রকে আমরা অন্য অর্থে তথ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বলতে পারি। সংবাদপত্র বা সার্বিকভাবে গণমাধ্যম জনগণ ও সেবা প্রদানকারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান জনগণের পক্ষ থেকে সেবা প্রদানকারীর জবাদিহিতা নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক কাঠামো যখন কিছুটা দুর্বল, গণতন্ত্রের বিকাশ যখন প্রত্যশিত মাত্রায় হয়ে উঠে না তখন জনগণকে তথ্য প্রদানে সংবাদ পত্রের ভূমিকা আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতে সংবাদমাধ্যম জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসনের ভিত্তিকে সবল করতে পারে। সুশাসন নিশ্চিত হলে গণতন্ত্রও ও শক্তিশালী রূপ লাভ করে। জনবান্ধব সরকার, সংবাদপত্রের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে যখন জবাবদিহি নিশ্চিত হয় তখন সংবাদপত্রকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে থাকে। সংবাদমাধ্যম যত বেশি তথ্য প্রদান করবে, সরকার তত বেশি জনআকাক্সক্ষা পূরণে সচেতন হবে এবং এভাবে একটি সরকারের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পথও সুগম হতে পারে।

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো ‘জনসেবামূলক মন্ত্রণালয়ে’ কী এমন থাকতে পারে, যে জন্য মনে হয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে? যেখানে অপরাধের বিষয়টিই সুস্পষ্ট নয়, সে অপরাধের জন্য তাকে তিন দিন কারাগারে আটক থাকতে হলো। এটাকে কি একটা বার্তা হিসেবে ধরে নেয়া যায়? এত বড় একজন নামী সাংবাদিকের এ রকম হেনস্তার পরে যদি কেউ সচিবালয়ে রিপোর্ট করতে যায়, তার মাথায় কি এই ঘটনা আসবে না, যে তারও এ রকম হতে পারে? রোজিনা ইসলামের জন্য দেশে বিদেশে সাংবাদিক, সাধারণ জনগণ এমন কি জাতিসংঘ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল তা ছিল অভূতপূর্ব। অভূতপূর্ব কেন? এর নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। অনেকেই মনে করেন প্রথম আলোর মতো একটি প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় সংবাদ পত্রের সাংবাদিক হওয়ার কারণে তাকে আটক করার পর এত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আবার অনেকে বলেন রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে সব সাংবাদিক ইউনিয়নের একাত্মতার কারণে সরকার বাধ্য হয়েছে তাকে জামিন দিতে আবার অনেকের ধারণা সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে সাংবাদিক বান্ধব ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতার করতে নিজেরাই তাকে জামিন দেয়ার জন্য নমনীয় হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে কোন প্রেক্ষিতে এবং কোন মন্ত্রণালয়ের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল। আমরা জানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাকালে বহুমুখী, দুর্নীতির জন্য আলোচিত একটি মন্ত্রণালয়। আর রোজিনা ইসলাম হলেন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। এ ক্ষেত্রে তার সফলতা দেশে বিদেশে তাকে সুখ্যাতি ও স্বীকৃতি দিয়েছে প্রচুর। বাংলাদেশে যেহেতু আমরা বিরোধী দলের কাছ থেকে যে কোন কারণেই হোক সরব, এবং জনাকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি পাই না, তাই রোজিনা ইসলামের মতো সাংবাদিকরা যখন অনুসন্ধানের মাধ্যমে জনগণের সামনে দুর্নীতির বাক্সকে উন্মুক্ত করে তুলেন তখন তারা পাঠক কর্তৃক অনেক সমাদৃত হয়ে উঠেন।

রোজিনা ইসলাম, রাজনৈতিক দলের পক্ষপাত মুক্ত থেকে তার রিপোর্টগুলো প্রকাশ করেছিলেন। তার পেশাদারিত্ব অসাধারণ। বাংলাদেশের আলোচিত দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়ম অনেক সাহসীভাবে তিনি তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। রোজিনা ইসলাম দেশ কাঁপানো যে সব গুরুতর দুর্নীতি, অনাচার ও অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করে নন্দিত হয়েছেন, সেগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় তাকে কেন টুঁটি চেপে ধরে নির্যাতন করতে হয়। তার আলোচিত প্রতিবেদনগুলো হলো, খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ডের আসামি জোসেফের সাজা হ্রাস ও পরে মওকুফ, বহুল আলোচিত লক্ষ্মীপুরের সাবেক পৌর মেয়র তাহেরপুত্রের রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্তি, অন্তত অর্ধডজন সচিবের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিক্ষেত্রে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ, ক্রেস্টের সোনায় ১২ আনাই খাদ, কারাগারের ভেতরের দুর্নীতি, মহামারির সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটানা মাসখানেক অফিস না করা, একই মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক দুর্নীতির খবরÑএগুলোর সবই তাকে দুর্নীতিবিরোধী পাঠকের কাছে নন্দিত করে তুলেছে।

করোনা অতিমারির মধ্যেও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খুব বড় সংকটের সম্মুখীন হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দুরদৃষ্টি সময়োচিত পদক্ষেপ আমাদের এখনও অনেক প্রতিবেশী দেশের থেকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রেখেছে। করোনাকালে জীবন ও জীবিকার ভারসাম্যমূলক অবস্থানের নীতি গ্রহণ করে তিনি যেমন জীবনকে সুরক্ষা দিতে পেরেছেন একই ভাবে জীবিকাকেও একটি গ্রহণ যোগ্য পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মনে রাখতে প্রধানমন্ত্রী একটি দল নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সেই দলের কোথাও ফুটো থাকলে তার সমস্ত অর্জনের গায়ে কালিমার ছাপ পড়ে। আর যারা, ‘ঘোলা জলে মাছ শিকারে’ ব্যস্ত আছেন তাদের মনে রাখতে হবে, দুর্নীতির জন্য তাদের কোন না কোনভাবে জবাদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের যে উন্নয়ন সে উন্নয়নকে ম্লান করে দেয়ার তৎপরতা এখনই বন্ধ করতে হবে।

গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত। এই স্বচ্ছতাই পারে সরকারে উজ্জ্বলতর ভাবমূর্তি জনগণের কাছে তুলে ধরতে। জনপ্রতিনিধিরা যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, একইভাবে সরকারি আমলারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সরকারি আমলারা জনগণের ভৃত্য হিসাবে চাকরিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন; কিন্তু নিয়োগের পর পর ক্ষমতা, প্রতিপত্তির প্রভাবে তারা নিজেরাই জনগণের প্রভুতে রূপান্তরিত হয়ে পড়েন। আমলারা নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে চলে যান। আমদের অধিকাংশ আমলাদের কোথাও না কোথাও দ্বিতীয় আবাস আছে। কানাডার ‘বেগম পারাতে’ আমলাদের নিজস্ব বাসস্থানের সংখ্যা বেশি এ’ বিষয়টি আমার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। যাদের পৃথিবীর উন্নত দেশে দ্বিতীয় বাসস্থান আছে, তাদের জবাদিহি, স্বচ্ছতা যে খুব বেশি পরিমান থাকবে, তা’ আশা করা যায়না। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের সরকারর এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তাদের যথাযথ জবাদিহি নিশ্চিত করা।

সংবাদমাধ্যমের বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এ ক্ষেত্রে সরকারকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করতে পারে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ সরকার সম্পর্কে ভুল ধারণা নিরসন করতে সহায়তা করতে পারে সহজেই। আমরা চাই যারা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমে আসুক। জনগণের তথ্য জানার অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারলে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং সরকারও জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় হতে সক্ষম হবে। গণতন্ত্রের দ্রুত বিকাশ, উন্নয়নকে টেকসই করা এবং জাতীয় ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতর করার লক্ষ্যে চাই স্বাধীন গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ।

[লেখক : উন্নয়ন গবেষক]

back to top