alt

উপ-সম্পাদকীয়

হিন্দু নারীর সমানাধিকারের দাবি

বাবুল রবিদাস

: মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১
image

এখনো আমরা সমাজে কন্যাশিশুর জন্মকে অবহেলার চোখে দেখি। বিশেষ করে হিন্দু সমাজে কন্যার পিতাকে হেয়প্রতিপন্ন, ঘৃণা ও অবহেলা করা হয়। বলা হয় ‘পুত্রহীনে স্বর্গে নাহি বাস’। হিন্দু আইনে মেয়েরা পৈতৃকসূত্রে ও স্বামীপ্রাপ্ত সম্পত্তিতে পূর্ণ স্বত্বে ওয়ারিশ হয় না। তারা শুধুমাত্র জীবন স্বত্বের অধিকারী হয়। কন্যাসন্তানদের প্রতি এটা বৈষম্যমূলক আচরণ বলে অনেকে অভিমত দেন। সাবালিকা কন্যাকে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে তার দায়-দায়িত্ব স্বামীর হাতে সম্প্রদান করে চিরতরে মুক্ত হয়ে যান এবং সম্পত্তির ওয়ারিশ থেকে কন্যারা চিরতরে বঞ্চিত হন।

পুত্রসন্তানেরা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিশ বা মালিক হয়ে যান। অর্থাৎ একমুখী নীতি ও সমর্থন পূত্রসন্তানদের প্রতি। সমাজে কন্যাসন্তানের তুলনায় পুত্রসন্তান কাক্সিক্ষত হওয়ার কারণে নারী-পুরুষের অনুপাতে ফারাক দেখা যায়। লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণে প্রায়ই কন্যাশিশুকে মাটিচাপা বা গলাটিপে হত্যার তথ্য আসে গণমাধ্যমে। ভারতে গর্ভপাত ঘটিয়ে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার কন্যাশিশু হত্যা করা হয়। এ কারণে দেশটিতে গর্ভাবস্থায় জটিলতা ছাড়া ভিন্ন কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাম (ডাক্তারি পরীক্ষায় গর্ভে ছেলে বা মেয়ের ছবি) নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বর্তমানে ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দু নারীরা ডিভোর্স দিতে পারেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন- স্ত্রী স্বামীর দাসী বা সম্পত্তি নন। এজন্য বলপূর্বক তাকে যেখানে খুশি থাকতে বাধ্য করা যাবে না। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি হিন্দু সমাজে দাস-দাসী প্রথা বা সতীদাহ প্রথা এবং কৌলিন্য অকৌলিন্য প্রথা ছিল।

বাংলাদেশের হিন্দু নেতারা দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু আইন সংস্কার করার দাবি করছেন। আমাদের মনে আছে, ২০১৬ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেছিলেন- আপনাদের যেটা সমস্যা, আপনাদের কোন উত্তরাধিকার আইন নেই, সূত্র নেই- এটা তো ঠিক, একজন মারা গেলে তার স্ত্রী সম্পদ পাবেন না বা ছেলেমেয়ে পাবে না, অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াবে। সম্পত্তি থাকতেও ভোগ করতে পারবে না, জীবন চালাতে পারবে না, এটা হতে পারে না।

হিন্দু নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকার আমলে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে নারীশিক্ষার প্রতি যথেষ্ঠ নজর দেয়া হয়েছে। সে কারণেই সব ক্ষেত্রে নারীদের অবদান পুরুষের সমান। অথচ হিন্দু ধর্মীয় আইনে দেখা যাচ্ছে- কন্যাসন্তান পিতামাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার বিয়ের পর স্বামীর সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি সম্পত্তিতে হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের অধিকার নিশ্চিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। খবরে জানা যায়, স্বামী বা পিতামাতার সম্পত্তিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিতে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বলা হয়- উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দুনারী কিছুই পান না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এ আইন হওয়া উচিত; যাতে হিন্দু নারীরা আর বঞ্চিত না হন। তবে ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার হারাবেন- এই বিধান রেখেই দ্রুত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পাস করা হোক।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু নারী তথা কন্যাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে সমানাধিকার উত্তরাধিকার বাস্তবায়ন বহু পূর্বেই হয়েছে। অতএব আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? নেতারা, ভুক্তভোগী, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হিন্দু কন্যাসন্তানদের জন্য আইন সংশোধন চেয়েছেন। দ্রুত জাতীয় সংসদে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমানাধিকার আইন পাস করলে হিন্দু নারীরা উপকৃত হবেন ও হিংসা, ঘৃণা, অবহেলার শিকার হবেন না বলে অনেক সুধীমহল মনে করেন।

[লেখক : আইনজীবী]

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

tab

উপ-সম্পাদকীয়

হিন্দু নারীর সমানাধিকারের দাবি

বাবুল রবিদাস

image

মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১

এখনো আমরা সমাজে কন্যাশিশুর জন্মকে অবহেলার চোখে দেখি। বিশেষ করে হিন্দু সমাজে কন্যার পিতাকে হেয়প্রতিপন্ন, ঘৃণা ও অবহেলা করা হয়। বলা হয় ‘পুত্রহীনে স্বর্গে নাহি বাস’। হিন্দু আইনে মেয়েরা পৈতৃকসূত্রে ও স্বামীপ্রাপ্ত সম্পত্তিতে পূর্ণ স্বত্বে ওয়ারিশ হয় না। তারা শুধুমাত্র জীবন স্বত্বের অধিকারী হয়। কন্যাসন্তানদের প্রতি এটা বৈষম্যমূলক আচরণ বলে অনেকে অভিমত দেন। সাবালিকা কন্যাকে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে তার দায়-দায়িত্ব স্বামীর হাতে সম্প্রদান করে চিরতরে মুক্ত হয়ে যান এবং সম্পত্তির ওয়ারিশ থেকে কন্যারা চিরতরে বঞ্চিত হন।

পুত্রসন্তানেরা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ওয়ারিশ বা মালিক হয়ে যান। অর্থাৎ একমুখী নীতি ও সমর্থন পূত্রসন্তানদের প্রতি। সমাজে কন্যাসন্তানের তুলনায় পুত্রসন্তান কাক্সিক্ষত হওয়ার কারণে নারী-পুরুষের অনুপাতে ফারাক দেখা যায়। লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণে প্রায়ই কন্যাশিশুকে মাটিচাপা বা গলাটিপে হত্যার তথ্য আসে গণমাধ্যমে। ভারতে গর্ভপাত ঘটিয়ে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার কন্যাশিশু হত্যা করা হয়। এ কারণে দেশটিতে গর্ভাবস্থায় জটিলতা ছাড়া ভিন্ন কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাম (ডাক্তারি পরীক্ষায় গর্ভে ছেলে বা মেয়ের ছবি) নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বর্তমানে ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দু নারীরা ডিভোর্স দিতে পারেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন- স্ত্রী স্বামীর দাসী বা সম্পত্তি নন। এজন্য বলপূর্বক তাকে যেখানে খুশি থাকতে বাধ্য করা যাবে না। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি হিন্দু সমাজে দাস-দাসী প্রথা বা সতীদাহ প্রথা এবং কৌলিন্য অকৌলিন্য প্রথা ছিল।

বাংলাদেশের হিন্দু নেতারা দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু আইন সংস্কার করার দাবি করছেন। আমাদের মনে আছে, ২০১৬ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেছিলেন- আপনাদের যেটা সমস্যা, আপনাদের কোন উত্তরাধিকার আইন নেই, সূত্র নেই- এটা তো ঠিক, একজন মারা গেলে তার স্ত্রী সম্পদ পাবেন না বা ছেলেমেয়ে পাবে না, অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াবে। সম্পত্তি থাকতেও ভোগ করতে পারবে না, জীবন চালাতে পারবে না, এটা হতে পারে না।

হিন্দু নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকার আমলে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে নারীশিক্ষার প্রতি যথেষ্ঠ নজর দেয়া হয়েছে। সে কারণেই সব ক্ষেত্রে নারীদের অবদান পুরুষের সমান। অথচ হিন্দু ধর্মীয় আইনে দেখা যাচ্ছে- কন্যাসন্তান পিতামাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার বিয়ের পর স্বামীর সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি সম্পত্তিতে হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের অধিকার নিশ্চিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। খবরে জানা যায়, স্বামী বা পিতামাতার সম্পত্তিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিতে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বলা হয়- উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দুনারী কিছুই পান না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এ আইন হওয়া উচিত; যাতে হিন্দু নারীরা আর বঞ্চিত না হন। তবে ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার হারাবেন- এই বিধান রেখেই দ্রুত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পাস করা হোক।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দু নারী তথা কন্যাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে সমানাধিকার উত্তরাধিকার বাস্তবায়ন বহু পূর্বেই হয়েছে। অতএব আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? নেতারা, ভুক্তভোগী, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হিন্দু কন্যাসন্তানদের জন্য আইন সংশোধন চেয়েছেন। দ্রুত জাতীয় সংসদে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমানাধিকার আইন পাস করলে হিন্দু নারীরা উপকৃত হবেন ও হিংসা, ঘৃণা, অবহেলার শিকার হবেন না বলে অনেক সুধীমহল মনে করেন।

[লেখক : আইনজীবী]

back to top