alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

‘ইতিবাচক দর্শন ও আগামী প্রজন্ম’

তাপসী ইসলাম

: বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো “বিশ্ব দর্শন দিবস” উদ্্যাপন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো সর্বপ্রথম এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নিয়ম অনুযায়ী নভেম্বরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার এ দিবস উদ্যাপন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে আজ ১৮ নভেম্বর ২০২১ বিশ্ব দর্শন দিবস। মূলত মানবজাতির ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ সাধনে প্রতিটি সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মূল্যবোধ অত্যন্ত জরইর। যেহেতু পৃথিবীর মধ্যে মানবজাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত, তাই সত্যিকারের মানুষের মানবিক চর্চার কোন বিকল্প নেই।

সাধারণ অর্থে আমরা যা দেখি, যেভাবে দেখি অথবা ইতিবাচকভাবে দেখি নাকি নেতিবাচকভাবে দেখি, আক্ষরিক অর্থে সাধারণ মানুষের কাছে সেটিই দর্শন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী চিন্তাবিদদের মতে, ইংরেজি ফিলোসফি (philosophy) এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা’। অতএব এটি সৃস্পষ্ট যে, ব্যক্তির অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলোর অধ্যয়নই সার্বিক অর্থে “দর্শন”। আর যারা এসবের চাষাবাদ করে তারাই “দার্শনিক” হিসেবে স্বীকৃত।

দর্শন শুধু কোন প্রাতিষ্ঠানিক অনুশাসনই নয়; বরং আপাত: দৃষ্টিতে মানব সভ্যতার প্রতিটির মানুষই কোন না কোনভাবে “দার্শনিক” হিসেবে বিবেচিত। কেননা, আজকাল প্রায় প্রত্যেকেই তার জগৎ, জীবন ও দর্শনকেই নিয়েই ব্যস্ততম সময় পার করে। প্রাতিষ্ঠানিক বা অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানবজাতিই তাদের স্বকীয় চিন্তা-চেতনায় বেড়ে ওঠে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই সে শেখে; অবচেতন মনেই সেই শিখনকে অনুশীলনও করে, যা একদিন সেই আদর্শ তার পরবর্তী প্রজন্মের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে থাকে। এমনি করেই তার সেই স্বয়ংক্রিয় মূল্যবোধ মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নেয়।

একটি “ইতিবাচক দর্শন” যেমন পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে, রূপান্তরিত করতে পারে; ঠিক তদ্রপ সদালাপ, আন্তঃসংস্কৃতিক সংলাপও একটি জাতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্দীপিত করে তুলতে পারে। একটি ইতবাচক দর্শন আমাদের আরও সহনশীল, আরও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে সহায়তা করে। আমি ও আমরা বিশ্বাস করি, “বিশ্ব দর্শন দিবস” উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দেশপ্রেমকে শ্রদ্ধা জানানোর এক অন্যতম উৎসও বটে! যেহেতু আমরা বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ; তাই আমাদের সুচিন্তা ও মত প্রকাশের মধ্য দিয়ে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে। একটি সুন্দর জাতি গঠনের প্রত্যয় হোক আমাদের সবার।

সময়ের বিবর্তনে আমরা হয়তো এক দিন হারিয়েই যাব; কালের বিবর্তনে স্মৃতিচিহ্নগুলো ইতিহাস হয়ে বলবে কথা সেদিন! আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আজকের আমাদের সেদিন মনে রাখবে তো? সেদিন কি আজকের এই আয়োজন সাক্ষ্য দেবে উত্তরসূরীদের? আমরা যদি ইতবাচক দর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাত পারি, তবে আশা করা যেতেই পারে, বৈকি!

ইতহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার মোক্ষম সময় আজ এসে গেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদী হওয়ার কারণেই হিটলার যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য ঠিক তেমনি ইতিবাচক চিন্তা করেছিলেন দার্শনিক আর এম হেয়ার এবং বার্ট্রান্ড রাসেল এবং মানবজাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিশ্ব সরকারের ধারণা প্রচার করেন। এজন্যই আজও তারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ।

আমরা জানি, শান্তির পূর্বশর্ত হলো সত্য জ্ঞান; যার ফলে, একজন ব্যক্তি আচরণগতভাবে সংযত হয়। এ জ্ঞান যদি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকে, তাহলে শান্তিময় হবে বিশ্বসমাজ। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এর মতে- ‘Knowledge is virtue and virtue is knowledge.’ জ্ঞানই পুণ্য এবং পুণ্যই জ্ঞান। একজন মানুষ যদি জ্ঞানী হন, তাহলে তিনি পুণ্যকাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন না। পক্ষান্তরে, মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতে, মানুষ যদি শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে একটা শক্তিশালী সংগঠন খুবই জরুরি, যার কথা শুনতে সবাই বাধ্য থাকবে। আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব, সৎ উদ্দেশ্য ও গণমানুষের সমর্থন; যা শুধু ইতবাচক দর্শনের দ্বারাই সম্ভব।

[লেখক : বিভাগীয় প্রধান, দর্শন বিভাগ, মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজ, বগুড়া]

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

‘ইতিবাচক দর্শন ও আগামী প্রজন্ম’

তাপসী ইসলাম

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো “বিশ্ব দর্শন দিবস” উদ্্যাপন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো সর্বপ্রথম এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নিয়ম অনুযায়ী নভেম্বরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার এ দিবস উদ্যাপন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে আজ ১৮ নভেম্বর ২০২১ বিশ্ব দর্শন দিবস। মূলত মানবজাতির ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ সাধনে প্রতিটি সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মূল্যবোধ অত্যন্ত জরইর। যেহেতু পৃথিবীর মধ্যে মানবজাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত, তাই সত্যিকারের মানুষের মানবিক চর্চার কোন বিকল্প নেই।

সাধারণ অর্থে আমরা যা দেখি, যেভাবে দেখি অথবা ইতিবাচকভাবে দেখি নাকি নেতিবাচকভাবে দেখি, আক্ষরিক অর্থে সাধারণ মানুষের কাছে সেটিই দর্শন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী চিন্তাবিদদের মতে, ইংরেজি ফিলোসফি (philosophy) এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা’। অতএব এটি সৃস্পষ্ট যে, ব্যক্তির অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলোর অধ্যয়নই সার্বিক অর্থে “দর্শন”। আর যারা এসবের চাষাবাদ করে তারাই “দার্শনিক” হিসেবে স্বীকৃত।

দর্শন শুধু কোন প্রাতিষ্ঠানিক অনুশাসনই নয়; বরং আপাত: দৃষ্টিতে মানব সভ্যতার প্রতিটির মানুষই কোন না কোনভাবে “দার্শনিক” হিসেবে বিবেচিত। কেননা, আজকাল প্রায় প্রত্যেকেই তার জগৎ, জীবন ও দর্শনকেই নিয়েই ব্যস্ততম সময় পার করে। প্রাতিষ্ঠানিক বা অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানবজাতিই তাদের স্বকীয় চিন্তা-চেতনায় বেড়ে ওঠে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই সে শেখে; অবচেতন মনেই সেই শিখনকে অনুশীলনও করে, যা একদিন সেই আদর্শ তার পরবর্তী প্রজন্মের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে থাকে। এমনি করেই তার সেই স্বয়ংক্রিয় মূল্যবোধ মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নেয়।

একটি “ইতিবাচক দর্শন” যেমন পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে, রূপান্তরিত করতে পারে; ঠিক তদ্রপ সদালাপ, আন্তঃসংস্কৃতিক সংলাপও একটি জাতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্দীপিত করে তুলতে পারে। একটি ইতবাচক দর্শন আমাদের আরও সহনশীল, আরও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে সহায়তা করে। আমি ও আমরা বিশ্বাস করি, “বিশ্ব দর্শন দিবস” উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দেশপ্রেমকে শ্রদ্ধা জানানোর এক অন্যতম উৎসও বটে! যেহেতু আমরা বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ; তাই আমাদের সুচিন্তা ও মত প্রকাশের মধ্য দিয়ে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে। একটি সুন্দর জাতি গঠনের প্রত্যয় হোক আমাদের সবার।

সময়ের বিবর্তনে আমরা হয়তো এক দিন হারিয়েই যাব; কালের বিবর্তনে স্মৃতিচিহ্নগুলো ইতিহাস হয়ে বলবে কথা সেদিন! আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আজকের আমাদের সেদিন মনে রাখবে তো? সেদিন কি আজকের এই আয়োজন সাক্ষ্য দেবে উত্তরসূরীদের? আমরা যদি ইতবাচক দর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাত পারি, তবে আশা করা যেতেই পারে, বৈকি!

ইতহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার মোক্ষম সময় আজ এসে গেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদী হওয়ার কারণেই হিটলার যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য ঠিক তেমনি ইতিবাচক চিন্তা করেছিলেন দার্শনিক আর এম হেয়ার এবং বার্ট্রান্ড রাসেল এবং মানবজাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিশ্ব সরকারের ধারণা প্রচার করেন। এজন্যই আজও তারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ।

আমরা জানি, শান্তির পূর্বশর্ত হলো সত্য জ্ঞান; যার ফলে, একজন ব্যক্তি আচরণগতভাবে সংযত হয়। এ জ্ঞান যদি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকে, তাহলে শান্তিময় হবে বিশ্বসমাজ। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এর মতে- ‘Knowledge is virtue and virtue is knowledge.’ জ্ঞানই পুণ্য এবং পুণ্যই জ্ঞান। একজন মানুষ যদি জ্ঞানী হন, তাহলে তিনি পুণ্যকাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন না। পক্ষান্তরে, মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতে, মানুষ যদি শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে একটা শক্তিশালী সংগঠন খুবই জরুরি, যার কথা শুনতে সবাই বাধ্য থাকবে। আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব, সৎ উদ্দেশ্য ও গণমানুষের সমর্থন; যা শুধু ইতবাচক দর্শনের দ্বারাই সম্ভব।

[লেখক : বিভাগীয় প্রধান, দর্শন বিভাগ, মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজ, বগুড়া]

back to top