alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

এস ডি সুব্রত

: শনিবার, ০৪ জুন ২০২২
image

বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দিবসটি পালন করছে।

ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে চার নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়বে বাংলাদেশ।

এদিকে কোপারনিকাস অ্যাটমোস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস ও কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে, লকডাউনের কারণে কার্বন নিঃসরণ কমে আসায় ওজন স্তরে যে বিশাল ক্ষত বা গর্ত তৈরি হয়েছিল তা পৃথিবী নিজেই সারিয়ে তুলছে। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে বরফে ঢাকা উত্তর মেরুর আকাশে ওজন স্তরে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ বর্গকিলোমিটারের একটি বিশাল গর্ত তৈরির কথা জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই গর্ত দক্ষিণের দিকে মোড় নিলে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তো বিশ্ববাসী।

যানবাহন ও শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া করোনাকালে ঢাকার আকাশে ছিল না। সে কারণেই মহামারীকালে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে গিয়েছিল। সুতরাং বলা যায়, যারা বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যারা তাদের মনিটরিং করবে, উভয়েই যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর থাকবে। শুধু লোকাল পলিউশন নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। যেমন : বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টি, অন্য স্থানের দূষণ হলেও তার প্রভাব ঢাকায় পড়তে পারে। তাই নগরবাসী সচেতন হলে ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব।

পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারি। এর ফলে বাঁচবে পৃথিবী, বাঁচবে মানবজাতি। এজন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব চিন্তা-চেতনা।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপলায়েন্সের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি বাঁচানো সম্ভব। এছাড়া, পরিবেশবান্ধবের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঠের চুলার ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো উচিত। কারণ কাঠের চুলা থেকে অত্যধিক পরিমাণে ধোঁয়া নির্গত হয়, যা বায়ুর সঙ্গে মিশে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আমাদের পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ওপর জোর দিত হবে। গাড়ির নির্গত ধোঁয়া বায়ুর সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাতে পারে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার করা জরুরি। জোর দিতে হবে ইকোসিস্টেমকে সুস্থ রাখার বিষয়ে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বায়ুদূষণের কারণে ইকোসিস্টেম প্রভাবিত হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে গাছপালা, পশুপাখির ওপর। তাই ইকোসিস্টেম সুস্থ রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

কীটনাশক ও কেমিক্যালের ব্যবহার কমাতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট ও বায়ুদূষণ যাতে কম হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ার কারণে বাড়তে থাকে বায়ুদূষণ। এ ছাড়া, এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারও কম করা উচিত। বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতে হবে। কাচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা খবরের কাগজ ফেলে দেয়ার পরিবর্তে রিসাইকেল করা প্রয়োজন। এর ফলে আবর্জনা জমে দূষণ ছড়াবে না। এমনকি এই বর্জ্যগুলো পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করতে পারবে না। তাই প্লাস্টিক বা কাচের বোতল, এমনকি খবরের কাগজ না ফেলে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে। নিজ নিজ এলাকায় ফল-সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। এর ফলে ফল-সবজি সরবরাহের জন্য যে গাড়ি চলাচল করা হয়, তা কমানো যাবে। পাশাপাশি ফল ও সবজি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভের ব্যবহারও কম করা যাবে। এই প্রিজারভেটিভগুলো সরাসরি বায়ুদূষণ ঘটায়।

অর্গ্যানিক খাদ্যবস্তুর ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। নিজের বাগানে এগুলো উৎপাদন করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বাড়িতে দূষিত ও টক্সিক জিনিসের ব্যবহার না করাই ভালো। বাড়ি থেকেই একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। প্লাস্টিক টুথ ব্রাশ, ক্যান, বোতলের পরিবর্তে কাঠের জার ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার মশা বা আরশোলা মারার জন্য কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে ব্যবহারের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে তৈরি সামগ্রী দিয়ে পোকামাকড় তাড়ানো সম্ভব। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বায়ু বা জল দূষণের কারণে পরিবেশকে দূষিত করে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারে। বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘রূপকল্প ২০২১’ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

পরিবেশ সংশ্লিষ্ট টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর বা সংস্থা নিজেদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কার্যকরভাবে মোকাবিলায় বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদানপূর্বক বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবেশ বিষয়ে একটি পৃথক অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সুস্থ পরিবেশকে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এ ছাড়া, বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ অভিঘাতের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন এবং প্রশমন বা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস-এ দুই খাতেই বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা, পানি ও বায়ুদূষণ এবং জীববৈচিত্র্য ও মাটির ওপর বিরূপ প্রভাবে পরিবেশের গুণগতমানের অবনতির কারণে মারা যাচ্ছে হাজারো মানুষ। আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এর প্রতিকার না করি, তাহলে এর ফল হবে ভয়াবহ। ধ্বংস হবে প্রাকৃতিক সম্পদ, বাড়বে অভিবাসন এবং সেই সঙ্গে বাড়বে সংঘাত।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

স্নায়ুরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

এস ডি সুব্রত

image

শনিবার, ০৪ জুন ২০২২

বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দিবসটি পালন করছে।

ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে চার নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়বে বাংলাদেশ।

এদিকে কোপারনিকাস অ্যাটমোস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস ও কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে, লকডাউনের কারণে কার্বন নিঃসরণ কমে আসায় ওজন স্তরে যে বিশাল ক্ষত বা গর্ত তৈরি হয়েছিল তা পৃথিবী নিজেই সারিয়ে তুলছে। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে বরফে ঢাকা উত্তর মেরুর আকাশে ওজন স্তরে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ বর্গকিলোমিটারের একটি বিশাল গর্ত তৈরির কথা জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই গর্ত দক্ষিণের দিকে মোড় নিলে সরাসরি হুমকির মুখে পড়তো বিশ্ববাসী।

যানবাহন ও শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া করোনাকালে ঢাকার আকাশে ছিল না। সে কারণেই মহামারীকালে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে গিয়েছিল। সুতরাং বলা যায়, যারা বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যারা তাদের মনিটরিং করবে, উভয়েই যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর থাকবে। শুধু লোকাল পলিউশন নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। যেমন : বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টি, অন্য স্থানের দূষণ হলেও তার প্রভাব ঢাকায় পড়তে পারে। তাই নগরবাসী সচেতন হলে ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব।

পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারি। এর ফলে বাঁচবে পৃথিবী, বাঁচবে মানবজাতি। এজন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব চিন্তা-চেতনা।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপলায়েন্সের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি বাঁচানো সম্ভব। এছাড়া, পরিবেশবান্ধবের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঠের চুলার ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো উচিত। কারণ কাঠের চুলা থেকে অত্যধিক পরিমাণে ধোঁয়া নির্গত হয়, যা বায়ুর সঙ্গে মিশে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আমাদের পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ওপর জোর দিত হবে। গাড়ির নির্গত ধোঁয়া বায়ুর সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাতে পারে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার করা জরুরি। জোর দিতে হবে ইকোসিস্টেমকে সুস্থ রাখার বিষয়ে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বায়ুদূষণের কারণে ইকোসিস্টেম প্রভাবিত হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে গাছপালা, পশুপাখির ওপর। তাই ইকোসিস্টেম সুস্থ রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

কীটনাশক ও কেমিক্যালের ব্যবহার কমাতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট ও বায়ুদূষণ যাতে কম হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ার কারণে বাড়তে থাকে বায়ুদূষণ। এ ছাড়া, এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারও কম করা উচিত। বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতে হবে। কাচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা খবরের কাগজ ফেলে দেয়ার পরিবর্তে রিসাইকেল করা প্রয়োজন। এর ফলে আবর্জনা জমে দূষণ ছড়াবে না। এমনকি এই বর্জ্যগুলো পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করতে পারবে না। তাই প্লাস্টিক বা কাচের বোতল, এমনকি খবরের কাগজ না ফেলে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে। নিজ নিজ এলাকায় ফল-সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। এর ফলে ফল-সবজি সরবরাহের জন্য যে গাড়ি চলাচল করা হয়, তা কমানো যাবে। পাশাপাশি ফল ও সবজি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভের ব্যবহারও কম করা যাবে। এই প্রিজারভেটিভগুলো সরাসরি বায়ুদূষণ ঘটায়।

অর্গ্যানিক খাদ্যবস্তুর ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। নিজের বাগানে এগুলো উৎপাদন করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বাড়িতে দূষিত ও টক্সিক জিনিসের ব্যবহার না করাই ভালো। বাড়ি থেকেই একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। প্লাস্টিক টুথ ব্রাশ, ক্যান, বোতলের পরিবর্তে কাঠের জার ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার মশা বা আরশোলা মারার জন্য কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে ব্যবহারের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে তৈরি সামগ্রী দিয়ে পোকামাকড় তাড়ানো সম্ভব। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বায়ু বা জল দূষণের কারণে পরিবেশকে দূষিত করে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারে। বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘রূপকল্প ২০২১’ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

পরিবেশ সংশ্লিষ্ট টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর বা সংস্থা নিজেদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কার্যকরভাবে মোকাবিলায় বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদানপূর্বক বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবেশ বিষয়ে একটি পৃথক অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সুস্থ পরিবেশকে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এ ছাড়া, বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ অভিঘাতের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন এবং প্রশমন বা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস-এ দুই খাতেই বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা, পানি ও বায়ুদূষণ এবং জীববৈচিত্র্য ও মাটির ওপর বিরূপ প্রভাবে পরিবেশের গুণগতমানের অবনতির কারণে মারা যাচ্ছে হাজারো মানুষ। আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এর প্রতিকার না করি, তাহলে এর ফল হবে ভয়াবহ। ধ্বংস হবে প্রাকৃতিক সম্পদ, বাড়বে অভিবাসন এবং সেই সঙ্গে বাড়বে সংঘাত।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top