alt

উপ-সম্পাদকীয়

বন্যা দুর্গত মানুষের দীর্ঘশ্বাস

সজীব ওয়াফি

: শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২
image

কয় দিন ধরেই পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন খবরাখবরে চোখ রাখছিলাম। আশাজাগানিয়া খবরগুলো মন ভালো করে। পদ্মা সেতু নিয়ে করা খবরগুলো তেমনই। কেননা বিগত দিনে ক্রমান্বয়ে নেতিবাচক সংবাদে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যে দিকেই তাকাই শুধু দুঃসংবাদ আর দুঃসংবাদ। চট্টগ্রামে অনুমোদনবিহীন রাসায়নিক ডিপোতে অগ্নিকান্ড, বেঁচে ফেরা মানুষের আর্তনাদ, সিলেট অঞ্চলের বন্যা, নড়াইলে শিক্ষককে জুতার মালা গলায় দেওয়ানো, আবার কোথাও শিক্ষককে স্রেফ মেরেই ফেলা; এগুলোতে কার মন ভালো থাকে বলুন! সুস্থ-স্বাভাবিক মস্তিষ্কসম্পন্ন, বুদ্ধি যার একেবারেই তলানিতে গিয়ে না ঠেকছে, এরূপ যে কারও মন খারাপ না হওয়াও চিন্তার উদ্রেক। সিলেটের বানভাসি মানুষের আর্তচিৎকার পদ্মা সেতুর ডামাডোলে ঢাকা পরে গিয়েছিল। ঢাকা পরাটাও অপ্রাসঙ্গিক নয়, স্বাভাবিক। হঠাৎ করে চোখ আটকে গেল, ২৮ জুন প্রকাশিত দৈনিকের সংবাদের প্রধান শিরোনাম- দুর্গত এলাকায় অর্ধাহারে মানুষ! ক্রমান্বয়ে অন্যান্য জাতীয় দৈনিকগুলোতেও স্বল্প পরিসরে উঠে এসেছে বন্যা পরবর্তী বিধ্বস্তকর পরিস্থিতি, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধসংকট; খাদ্যসংকটে ত্রাণের আশায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষুধার্ত মানুষের চিত্র।

জুন মাসের প্রথম পক্ষের সমাপ্তি পরবর্তী সিলেট অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর আগে এপ্রিলের ঢলে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়েছে কৃষক। বলতে গেলে মাস খানেকের মাথায় পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অতিরক্তি বৃষ্টিতে পানির চাপে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকায় নির্মিত তাদের ব্যারেজের সব গেটগুলো খুলে দেয়। চোখের সামনে একে একে ভাসি নিয়ে যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, সহায়সম্পত্তি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাণটাও টিকিয়ে রাখা যায়নি। সরকার শুরু থেকে সিলেটের দিকে চোখ রাখলেও কেমন যেন একটা উদাসীনতা ছিল, যেখানে বিপদের মুখে কিছু কিছু এলাকার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা সাহায্যের জন্য বাধ্য হয়ে অনলাইনে পর্যন্ত আর্জি জানিয়েছিলেন। যতটুকু সাহায্য তাদের প্রয়োজন ছিল, আর্জি ছিল, তার সিকিভাগও তারা পায়নি।

পরিসংখ্যানিক রিপোর্টে বন্যাকবলিত এই জনসাধারণের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে ভুক্তভোগী এলাকায় বরাদ্দের পরিমাণ টাকার অঙ্কে পর্যালোচনা করলে জনপ্রতি টেনেটুনে গড়ে প্রায় ৭ টাকা; চাল আধা কেজিরও অনেক কম। বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন এবং সরকার থেকে যা কিছু সাহায্য আবার দেওয়া হচ্ছে, তা শুধু উপজেলার কাছাকাছি লোকালয়ে। তিক্ত সমালোচনার পরে বরাদ্দের পরিমাণ জনপ্রতি আরও কিছু বেড়েছে, কিন্তু সেটা যে অপ্রতুল, তা প্রথম বরাদ্দকৃততেই অনুমানযোগ্য। পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে সরকারপ্রধানের বন্যা পর্যবেক্ষণও অধিকাংশ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রার দিনে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পানিবন্দী জনগণের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছতে পারেনি। এ সব বিষয়ের তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

কেউ কেউ আবার শুধু বিরোধী মতামতের বিরোধিতা করার জন্য বলছেন-সরকার তো তার সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে, কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় সমালোচনাকারীদের ভূমিকা কি; সরকার বিরোধীরা কে কোথায়, কতটুকু জনগণের পাশে দাঁড়াল? সত্যি বলতে এ সব প্রশ্নের বাণ প্রদানকারী ব্যক্তিরা সরকার এবং রাজনৈতিক দল গুলিয়ে ফেলেছেন। তারা ভুলে বসেছেন রাজনৈতিক দল আর এনজিও যে এক নয়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রাজনীতির মাঠে, তার প্রধান উদ্দেশ্য যদি এনজিওবাদী কার্যকলাপ হয়, তবে এ জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে। সুতরাং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহূর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা পরোক্ষভাবে বিরোধী মতকে দমন এবং অবান্তর। যা হোক রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি দুর্যোগের সময়ে তাদের সর্বোচ্চটুকু নিয়ে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারে। দুঃখজনক বাংলাদেশ কখনোই সেই কল্যাণমূলক রাজনীতির পথে হাটেনি, এক সঙ্গে কাজ করার সুস্থ সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকলে বিশ্ব মহামারীকালীন সময়ে বিরোধী দলগুলোর আহ্বানকে সরকার অগ্রাহ্য করতে পারতো না; রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর সহাবস্থান এখানে অমাবস্যার চাঁদ। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলো প্রতিটা দুর্যোগ, এমনকি সিলেট অঞ্চলের বন্যা মুহূর্তে বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো এগিয়েছেন অথবা না আগানো একান্তই তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল।

লক্ষণীয় ব্যাপার-দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকার থেকে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তহবিল। সংবাদ মারফত জানা যাচ্ছে সেই তহবিলে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠা সাহায্য-অনুদান দিচ্ছেন। কে কত টাকা অনুদান দিয়ে সরকারকে খুশি রাখতে পারবেন এই পাল্লাপাল্লিতে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলগুলোর মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আবার নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বাধ্যতামূলক চাঁদা নির্ধারণে দ্রব্যমূল্যের চাপে চিঁড়েচ্যাপটা হওয়া মধ্যবিত্তের মনোভাবও নেতিবাচক। আমরা দেখলাম ডান-বাম, মধ্যপন্থী এবং ব্যক্তি বা সংগঠন পর্যায়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের গণচাঁদা তুলছেন। আদতে গণচাঁদার অর্থ ভুক্তভোগী মানুষের দুয়ারে পৌঁছাবে কিনা, নাকি কোন অসৎ মানুষের থলিতে উঠবে তারও নিশ্চয়তা নাই; যথাযথ মনিটরিং নাই। বাস্তবতার খাতিরে মনে হচ্ছে এ সব দল-ব্যক্তি বা সংগঠন যতটা না সহানুভূতিশীল-সহমর্মী প্রেক্ষাপটে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তার চেয়েও তাদের বড় উদ্দেশ্য নিজস্ব রাজনীতি এবং চিন্তার বিস্তার ঘটানো। তবে মহৎ উদ্দেশ্য যে কারোরই নেই এটা বলা যাবে না। মহৎ উদ্দেশ্য আছে, সেই সংখ্যাটা মুষ্টিমেয় এবং অর্থনৈতিক কারণে হোক বা জনবলের দিক থেকে হোক তাদের সাহায্যের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। অপরপক্ষে ঐতিহাসিকভাবে মহৎ উদ্দেশ্যে এ ভূখন্ডে লড়াই করে যাওয়া গণচাঁদা উত্তোলনকারী কিছু সংগঠন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে অভিযোগ করেছে- গণচাঁদা তুলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সরকারপক্ষ থেকে নিষেধের আদেশ।

বিরোধী মতের ভূমিকা নিয়ে বিরোধিতা করা, অহেতুক তীর নিক্ষেপে প্রসঙ্গতঃ কারণেই প্রশ্ন উঠবে-জনগণ কি রাজনৈতিক দলগুলোকে ভ্যাট ট্যাক্স দেয়, নাকি সরকারকে দেয়? অবশ্যই সরকারকে দেয়। যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণ ট্যাক্স না দেয় তবে সংকটাপন্ন সময়টাতে রাজনৈতিক দলগুলো বা বিরোধীরাই কেন দায়ী হবেন! যেখানে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রধান দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়, সেখানে রাজনৈতিক দলের ভূমিকাকে মুখ্য করে দেখার কারণ নেই। দ্বিতীয়ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ নামে যে মন্ত্রণালয় আছে, সেটারই বা কাজ কি? দুর্যোগ মুহূর্ত মোকাবিলার জন্য যদি অনুদানের জন্য তহবিল গঠন করতে হয়, হাত পাততে হয়; তাহলে প্রতি বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জন্য এত এত বাজেট যায় কই? বরঞ্চ প্রয়োজনের সময়ে কাজে না লাগলে ওই সব মন্ত্রণালয় গরিবের শ্বেতহস্তি পোষার মতো হয়ে গেল না!

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের বয়ানে এরকম সর্বগ্রাসী বন্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা দেখেনি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন মানুষের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ, নানা কৃত্রিম সংকট তৈরিকরণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনে ভবিষ্যতের দিনগুলোর বন্যা আরও ভয়াবহ হবে। অর্থাৎ এক মাঘেই শীত যাচ্ছে না, রেখে যাচ্ছে ভবিষ্যতে জন্য অশনি বার্তা। তাহলে দুশ্চিন্তার উপাদান হলো বন্যাকবলিত ওই সব অঞ্চলের পরিণতি কি সামনের বছরগুলোতে ক্রমেই খারাপ হবে? নিয়মিত সে-রকমটা হলে সাহায্যকারী বা অনুদানকারী দাতাপক্ষগুলো একটা সময়ে স্তিমিত হয়ে আসবে স্বাভাবিক। সমস্যার সমাধানকল্পে খুঁজে বের করা উচিত মানুষ পরিবেশের কি এমন ক্ষতি করেছে যার জন্য প্রকৃতি তার বদলা নিচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? বন্যার বেশকিছু কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট, যা ইতোমধ্যে সর্ব মহলে চাউর হয়েছে। চাউর হয়েছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের যত উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ।

নিজ স্বার্থ বিবেচনা করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র দিল নদীতে বাঁধ, আর আমরা করলাম হাওরের ভেতরে এক দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সড়ক। দৃষ্টিনন্দন সড়ক যে মুহূর্তেই তেতো হয়ে যেতে পারে, সেই চিন্তা পরিকল্পনাবিদদের মাথায় ছিল না। আমাদের মাথায় ছিল না বাঁধের কারণে মরতে বসা নদীগুলোর ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকলে বন্যার সময়ে পানি যে লোকালয় দিয়ে নামবে। বন্যা মোকাবিলায় আন্তঃদেশীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও কোন তৎপরতা আমরা গায়ে মাখিনি। ভাটি অঞ্চলের প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওরাঞ্চল দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে; পানি দ্রুত নামতে বাধা তৈরি করে বন্যার অতিরিক্ত ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জার্নাল জিওকার্টো ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রকৃতি বিনষ্ট করে অবকাঠামো নির্মাণের এই চিত্র তুলে ধরেছে যে, সিলেট অঞ্চলের নদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৯২ শতাংশ বনভূমি, ৬ শতাংশ তৃণভূমি ও ২৮ শতাংশ অনুর্বর ভূমি কমেছে। অধিকন্তু এবারের প্রলয়ঙ্করী বন্যার পূর্বাভাস ছিল বহু আগেই; আগাম সতর্কবার্তা জারি করলে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কি কারণে যে কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তা জারি করল না সেটা শুধু অজানাই রয়ে গেল!

মানুষ ভুলে গেছে সে যে পরিবেশরই অংশ। এ কারণে পরিবেশের সঙ্গে খাপ না খাইয়ে পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিদ্রোহ করেছে, যার বিরূপ প্রভাব পরেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর। সিলেটের সর্বগ্রাসী বন্যা শুধু তারই প্রতিফলন। বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে বা গেছে এটা বাস্তবতা, কিন্তু বানের জলে সবকিছু ভেসে যাওয়া মানুষের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ভূমিকা না থাকা এবং বন্যা পরবর্তী পর্যায়ের পদক্ষেপে উদাসীনতা হতাশার। বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ প্রশমন ব্যক্তির পক্ষে সামলানো অসম্ভব। বুভুক্ষু বা আধপেটা খেয়ে থাকা শরীরে মনের অজান্তেই নিঃশ্বাস ছাড়ে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল এবং সদয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রার্থনা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বন্যা দুর্গত মানুষের দীর্ঘশ্বাস

সজীব ওয়াফি

image

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

কয় দিন ধরেই পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন খবরাখবরে চোখ রাখছিলাম। আশাজাগানিয়া খবরগুলো মন ভালো করে। পদ্মা সেতু নিয়ে করা খবরগুলো তেমনই। কেননা বিগত দিনে ক্রমান্বয়ে নেতিবাচক সংবাদে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যে দিকেই তাকাই শুধু দুঃসংবাদ আর দুঃসংবাদ। চট্টগ্রামে অনুমোদনবিহীন রাসায়নিক ডিপোতে অগ্নিকান্ড, বেঁচে ফেরা মানুষের আর্তনাদ, সিলেট অঞ্চলের বন্যা, নড়াইলে শিক্ষককে জুতার মালা গলায় দেওয়ানো, আবার কোথাও শিক্ষককে স্রেফ মেরেই ফেলা; এগুলোতে কার মন ভালো থাকে বলুন! সুস্থ-স্বাভাবিক মস্তিষ্কসম্পন্ন, বুদ্ধি যার একেবারেই তলানিতে গিয়ে না ঠেকছে, এরূপ যে কারও মন খারাপ না হওয়াও চিন্তার উদ্রেক। সিলেটের বানভাসি মানুষের আর্তচিৎকার পদ্মা সেতুর ডামাডোলে ঢাকা পরে গিয়েছিল। ঢাকা পরাটাও অপ্রাসঙ্গিক নয়, স্বাভাবিক। হঠাৎ করে চোখ আটকে গেল, ২৮ জুন প্রকাশিত দৈনিকের সংবাদের প্রধান শিরোনাম- দুর্গত এলাকায় অর্ধাহারে মানুষ! ক্রমান্বয়ে অন্যান্য জাতীয় দৈনিকগুলোতেও স্বল্প পরিসরে উঠে এসেছে বন্যা পরবর্তী বিধ্বস্তকর পরিস্থিতি, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধসংকট; খাদ্যসংকটে ত্রাণের আশায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষুধার্ত মানুষের চিত্র।

জুন মাসের প্রথম পক্ষের সমাপ্তি পরবর্তী সিলেট অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর আগে এপ্রিলের ঢলে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়েছে কৃষক। বলতে গেলে মাস খানেকের মাথায় পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অতিরক্তি বৃষ্টিতে পানির চাপে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকায় নির্মিত তাদের ব্যারেজের সব গেটগুলো খুলে দেয়। চোখের সামনে একে একে ভাসি নিয়ে যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, সহায়সম্পত্তি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাণটাও টিকিয়ে রাখা যায়নি। সরকার শুরু থেকে সিলেটের দিকে চোখ রাখলেও কেমন যেন একটা উদাসীনতা ছিল, যেখানে বিপদের মুখে কিছু কিছু এলাকার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা সাহায্যের জন্য বাধ্য হয়ে অনলাইনে পর্যন্ত আর্জি জানিয়েছিলেন। যতটুকু সাহায্য তাদের প্রয়োজন ছিল, আর্জি ছিল, তার সিকিভাগও তারা পায়নি।

পরিসংখ্যানিক রিপোর্টে বন্যাকবলিত এই জনসাধারণের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে ভুক্তভোগী এলাকায় বরাদ্দের পরিমাণ টাকার অঙ্কে পর্যালোচনা করলে জনপ্রতি টেনেটুনে গড়ে প্রায় ৭ টাকা; চাল আধা কেজিরও অনেক কম। বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন এবং সরকার থেকে যা কিছু সাহায্য আবার দেওয়া হচ্ছে, তা শুধু উপজেলার কাছাকাছি লোকালয়ে। তিক্ত সমালোচনার পরে বরাদ্দের পরিমাণ জনপ্রতি আরও কিছু বেড়েছে, কিন্তু সেটা যে অপ্রতুল, তা প্রথম বরাদ্দকৃততেই অনুমানযোগ্য। পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে সরকারপ্রধানের বন্যা পর্যবেক্ষণও অধিকাংশ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রার দিনে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পানিবন্দী জনগণের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছতে পারেনি। এ সব বিষয়ের তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

কেউ কেউ আবার শুধু বিরোধী মতামতের বিরোধিতা করার জন্য বলছেন-সরকার তো তার সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে, কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় সমালোচনাকারীদের ভূমিকা কি; সরকার বিরোধীরা কে কোথায়, কতটুকু জনগণের পাশে দাঁড়াল? সত্যি বলতে এ সব প্রশ্নের বাণ প্রদানকারী ব্যক্তিরা সরকার এবং রাজনৈতিক দল গুলিয়ে ফেলেছেন। তারা ভুলে বসেছেন রাজনৈতিক দল আর এনজিও যে এক নয়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রাজনীতির মাঠে, তার প্রধান উদ্দেশ্য যদি এনজিওবাদী কার্যকলাপ হয়, তবে এ জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে। সুতরাং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহূর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা পরোক্ষভাবে বিরোধী মতকে দমন এবং অবান্তর। যা হোক রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি দুর্যোগের সময়ে তাদের সর্বোচ্চটুকু নিয়ে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারে। দুঃখজনক বাংলাদেশ কখনোই সেই কল্যাণমূলক রাজনীতির পথে হাটেনি, এক সঙ্গে কাজ করার সুস্থ সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকলে বিশ্ব মহামারীকালীন সময়ে বিরোধী দলগুলোর আহ্বানকে সরকার অগ্রাহ্য করতে পারতো না; রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর সহাবস্থান এখানে অমাবস্যার চাঁদ। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলো প্রতিটা দুর্যোগ, এমনকি সিলেট অঞ্চলের বন্যা মুহূর্তে বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো এগিয়েছেন অথবা না আগানো একান্তই তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল।

লক্ষণীয় ব্যাপার-দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকার থেকে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তহবিল। সংবাদ মারফত জানা যাচ্ছে সেই তহবিলে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠা সাহায্য-অনুদান দিচ্ছেন। কে কত টাকা অনুদান দিয়ে সরকারকে খুশি রাখতে পারবেন এই পাল্লাপাল্লিতে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলগুলোর মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আবার নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বাধ্যতামূলক চাঁদা নির্ধারণে দ্রব্যমূল্যের চাপে চিঁড়েচ্যাপটা হওয়া মধ্যবিত্তের মনোভাবও নেতিবাচক। আমরা দেখলাম ডান-বাম, মধ্যপন্থী এবং ব্যক্তি বা সংগঠন পর্যায়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের গণচাঁদা তুলছেন। আদতে গণচাঁদার অর্থ ভুক্তভোগী মানুষের দুয়ারে পৌঁছাবে কিনা, নাকি কোন অসৎ মানুষের থলিতে উঠবে তারও নিশ্চয়তা নাই; যথাযথ মনিটরিং নাই। বাস্তবতার খাতিরে মনে হচ্ছে এ সব দল-ব্যক্তি বা সংগঠন যতটা না সহানুভূতিশীল-সহমর্মী প্রেক্ষাপটে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তার চেয়েও তাদের বড় উদ্দেশ্য নিজস্ব রাজনীতি এবং চিন্তার বিস্তার ঘটানো। তবে মহৎ উদ্দেশ্য যে কারোরই নেই এটা বলা যাবে না। মহৎ উদ্দেশ্য আছে, সেই সংখ্যাটা মুষ্টিমেয় এবং অর্থনৈতিক কারণে হোক বা জনবলের দিক থেকে হোক তাদের সাহায্যের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। অপরপক্ষে ঐতিহাসিকভাবে মহৎ উদ্দেশ্যে এ ভূখন্ডে লড়াই করে যাওয়া গণচাঁদা উত্তোলনকারী কিছু সংগঠন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে অভিযোগ করেছে- গণচাঁদা তুলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সরকারপক্ষ থেকে নিষেধের আদেশ।

বিরোধী মতের ভূমিকা নিয়ে বিরোধিতা করা, অহেতুক তীর নিক্ষেপে প্রসঙ্গতঃ কারণেই প্রশ্ন উঠবে-জনগণ কি রাজনৈতিক দলগুলোকে ভ্যাট ট্যাক্স দেয়, নাকি সরকারকে দেয়? অবশ্যই সরকারকে দেয়। যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণ ট্যাক্স না দেয় তবে সংকটাপন্ন সময়টাতে রাজনৈতিক দলগুলো বা বিরোধীরাই কেন দায়ী হবেন! যেখানে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রধান দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়, সেখানে রাজনৈতিক দলের ভূমিকাকে মুখ্য করে দেখার কারণ নেই। দ্বিতীয়ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ নামে যে মন্ত্রণালয় আছে, সেটারই বা কাজ কি? দুর্যোগ মুহূর্ত মোকাবিলার জন্য যদি অনুদানের জন্য তহবিল গঠন করতে হয়, হাত পাততে হয়; তাহলে প্রতি বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জন্য এত এত বাজেট যায় কই? বরঞ্চ প্রয়োজনের সময়ে কাজে না লাগলে ওই সব মন্ত্রণালয় গরিবের শ্বেতহস্তি পোষার মতো হয়ে গেল না!

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের বয়ানে এরকম সর্বগ্রাসী বন্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা দেখেনি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন মানুষের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ, নানা কৃত্রিম সংকট তৈরিকরণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনে ভবিষ্যতের দিনগুলোর বন্যা আরও ভয়াবহ হবে। অর্থাৎ এক মাঘেই শীত যাচ্ছে না, রেখে যাচ্ছে ভবিষ্যতে জন্য অশনি বার্তা। তাহলে দুশ্চিন্তার উপাদান হলো বন্যাকবলিত ওই সব অঞ্চলের পরিণতি কি সামনের বছরগুলোতে ক্রমেই খারাপ হবে? নিয়মিত সে-রকমটা হলে সাহায্যকারী বা অনুদানকারী দাতাপক্ষগুলো একটা সময়ে স্তিমিত হয়ে আসবে স্বাভাবিক। সমস্যার সমাধানকল্পে খুঁজে বের করা উচিত মানুষ পরিবেশের কি এমন ক্ষতি করেছে যার জন্য প্রকৃতি তার বদলা নিচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? বন্যার বেশকিছু কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট, যা ইতোমধ্যে সর্ব মহলে চাউর হয়েছে। চাউর হয়েছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের যত উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ।

নিজ স্বার্থ বিবেচনা করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র দিল নদীতে বাঁধ, আর আমরা করলাম হাওরের ভেতরে এক দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সড়ক। দৃষ্টিনন্দন সড়ক যে মুহূর্তেই তেতো হয়ে যেতে পারে, সেই চিন্তা পরিকল্পনাবিদদের মাথায় ছিল না। আমাদের মাথায় ছিল না বাঁধের কারণে মরতে বসা নদীগুলোর ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকলে বন্যার সময়ে পানি যে লোকালয় দিয়ে নামবে। বন্যা মোকাবিলায় আন্তঃদেশীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও কোন তৎপরতা আমরা গায়ে মাখিনি। ভাটি অঞ্চলের প্লাবন ভূমি, নদী অববাহিকা ও হাওরাঞ্চল দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে; পানি দ্রুত নামতে বাধা তৈরি করে বন্যার অতিরিক্ত ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জার্নাল জিওকার্টো ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রকৃতি বিনষ্ট করে অবকাঠামো নির্মাণের এই চিত্র তুলে ধরেছে যে, সিলেট অঞ্চলের নদীর দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৯২ শতাংশ বনভূমি, ৬ শতাংশ তৃণভূমি ও ২৮ শতাংশ অনুর্বর ভূমি কমেছে। অধিকন্তু এবারের প্রলয়ঙ্করী বন্যার পূর্বাভাস ছিল বহু আগেই; আগাম সতর্কবার্তা জারি করলে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কি কারণে যে কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তা জারি করল না সেটা শুধু অজানাই রয়ে গেল!

মানুষ ভুলে গেছে সে যে পরিবেশরই অংশ। এ কারণে পরিবেশের সঙ্গে খাপ না খাইয়ে পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিদ্রোহ করেছে, যার বিরূপ প্রভাব পরেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর। সিলেটের সর্বগ্রাসী বন্যা শুধু তারই প্রতিফলন। বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে বা গেছে এটা বাস্তবতা, কিন্তু বানের জলে সবকিছু ভেসে যাওয়া মানুষের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ভূমিকা না থাকা এবং বন্যা পরবর্তী পর্যায়ের পদক্ষেপে উদাসীনতা হতাশার। বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ প্রশমন ব্যক্তির পক্ষে সামলানো অসম্ভব। বুভুক্ষু বা আধপেটা খেয়ে থাকা শরীরে মনের অজান্তেই নিঃশ্বাস ছাড়ে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল এবং সদয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রার্থনা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top