দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
দেশের আমজনতার কাছে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ বছর আগাম বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। পরিণতিতে বেড়ে গেছে চালের দাম। ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম লাগামহীন বাড়লেও সরকার এ ব্যাপারে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে কার্পণ্য করছে না। একদিকে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে উচ্চ দামে চাল ও গম কিনতে গিয়ে সরকারকে দিশাহারা অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। তারপরও সার্বিক পরিস্থিতিতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির এ প্রধান কারণটি ঠেকাতে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের কৌশল বিবেচনায় আনা হচ্ছে। সরকারের এ কৌশল অর্থাৎ চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক তবে ভবিষ্যতের কথা মনে করে চালের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে।
চালের পাশাপাশি গম ও ভুট্টা চাষে উৎসাহ দিতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষিকে পুরোপুরিভাবে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে যাতে কৃষক খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহী হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করার চেয়ে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ অনেক বেশি লাভজনক। আমাদের বিশ্বাস, সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকে তাদের অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে নেবে। উৎপাদনের সুফল যাতে কৃষক ভোগ করে এমন কৌশলও উদ্ভাবন করা জরুরি। দারিদ্র্য বিমোচনে সস্তা দরে খাদ্য বিক্রি নয়, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে বসে থাকলে চলবে না, ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও জরুরি। তা হলেই খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।
খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্যের লভ্যতা ও প্রাপ্তির বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যলভ্যতা প্রধানত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বাণিজ্য ও মজুতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর যেমন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই বিশ্বের প্রায় ১৭০টি ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আমদানি করে। কিন্তু খাদ্য বণ্টন ব্যবস্থায় যাতে কোন ধরনের অসংগতি তৈরি না হয় সেজন্য সরকারের ফুড এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে বিষয়গুলো নজরদারি করে। অভ্যন্তরীণ বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং বণ্টন ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয় যাতে ক্রয়ক্ষমতা জনগণের হাতেই থাকে। কভিডকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বণ্টন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্যমূল্যে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়াতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ও বিক্রয় নিশ্চিত করা, বিক্রেতার সঙ্গে ভোক্তার সংযোগ স্থাপনে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য হ্রাস করা জরুরি। নিশ্চিত করতে হবে বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পণ্যের ন্যায্যমূল্যও।
স্বল্প উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে অধিকতর খাদ্য উৎপাদন কৌশল বের করতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্যের অপচয় ও বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষায় কার্যকর মজুত ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুদামের নিম্নমানের পরিবেশের কারণে পোকার আক্রমণে খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। গুদামের পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। রিমোট সেন্সিং টুল ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও ফসলের ক্ষতিবিষয়ক গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ফসল ও ফসল উত্তোলন-পরবর্তী ক্ষতি কমায়, উৎপাদন ব্যয় ও খাটুনি কমায়, উচ্চমানসম্মত পণ্য উৎপাদনে দ্রুততম ও সময়ানুগ পরিচালনা নিশ্চিত করে।
[লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই]
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২
দেশের আমজনতার কাছে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ বছর আগাম বন্যার কারণে চালের উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। পরিণতিতে বেড়ে গেছে চালের দাম। ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম লাগামহীন বাড়লেও সরকার এ ব্যাপারে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে কার্পণ্য করছে না। একদিকে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে উচ্চ দামে চাল ও গম কিনতে গিয়ে সরকারকে দিশাহারা অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। তারপরও সার্বিক পরিস্থিতিতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির এ প্রধান কারণটি ঠেকাতে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের কৌশল বিবেচনায় আনা হচ্ছে। সরকারের এ কৌশল অর্থাৎ চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক তবে ভবিষ্যতের কথা মনে করে চালের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে।
চালের পাশাপাশি গম ও ভুট্টা চাষে উৎসাহ দিতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষিকে পুরোপুরিভাবে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে যাতে কৃষক খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহী হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করার চেয়ে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ অনেক বেশি লাভজনক। আমাদের বিশ্বাস, সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকে তাদের অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে নেবে। উৎপাদনের সুফল যাতে কৃষক ভোগ করে এমন কৌশলও উদ্ভাবন করা জরুরি। দারিদ্র্য বিমোচনে সস্তা দরে খাদ্য বিক্রি নয়, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে বসে থাকলে চলবে না, ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও জরুরি। তা হলেই খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।
খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্যের লভ্যতা ও প্রাপ্তির বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যলভ্যতা প্রধানত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বাণিজ্য ও মজুতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর যেমন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই বিশ্বের প্রায় ১৭০টি ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আমদানি করে। কিন্তু খাদ্য বণ্টন ব্যবস্থায় যাতে কোন ধরনের অসংগতি তৈরি না হয় সেজন্য সরকারের ফুড এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে বিষয়গুলো নজরদারি করে। অভ্যন্তরীণ বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং বণ্টন ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয় যাতে ক্রয়ক্ষমতা জনগণের হাতেই থাকে। কভিডকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বণ্টন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্যমূল্যে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়াতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ও বিক্রয় নিশ্চিত করা, বিক্রেতার সঙ্গে ভোক্তার সংযোগ স্থাপনে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য হ্রাস করা জরুরি। নিশ্চিত করতে হবে বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পণ্যের ন্যায্যমূল্যও।
স্বল্প উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে অধিকতর খাদ্য উৎপাদন কৌশল বের করতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্যের অপচয় ও বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষায় কার্যকর মজুত ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুদামের নিম্নমানের পরিবেশের কারণে পোকার আক্রমণে খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। গুদামের পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। রিমোট সেন্সিং টুল ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও ফসলের ক্ষতিবিষয়ক গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ফসল ও ফসল উত্তোলন-পরবর্তী ক্ষতি কমায়, উৎপাদন ব্যয় ও খাটুনি কমায়, উচ্চমানসম্মত পণ্য উৎপাদনে দ্রুততম ও সময়ানুগ পরিচালনা নিশ্চিত করে।
[লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই]