alt

উপ-সম্পাদকীয়

যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশকারীদের রুয়ান্ডায় প্রেরণ

মাবরুক মোহাম্মদ

: সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২

গত ১৪ এপ্রিল ২০২২ যুক্তরাজ্য সরকার দেশটিতে আগত শরণার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর আগে যুক্তরাজ্য ও রুয়ান্ডা এই বিষয়ে ‘এসাইলাম পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (এপিএ)’ শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, যে কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, এমনকি যারা ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে তাদের সবাইকে রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা হবে। দেশ দুটির এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কোন শরণার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর মাধ্যমে তার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের আইনগত দায়িত্ব শেষ হবে। তাদের বিষয়ে পরবর্র্তী দায়-দায়িত্ব রুয়ান্ডার। তবে যুক্তরাজ্য দেশটিতে আগত প্রতিটি শরণার্থীর ফাইল প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। যারা বৈধ পথে এবং দেশটির অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় আইন অনুযায়ী দেশটিতে যাবে তাদের যুক্তরাজ্যেই থাকার সুযোগ দেয়া হবে। শুধু যারা অবৈধ পথে দেশটিতে প্রবেশ করবে তাদেরই রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে।

কী আছে সমঝোতা স্মারকে
এপিএ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবৈধ পথে আগত শরণার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। রুয়ান্ডা সরকার প্রতিটি শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে তা যাচাই-বাছাই করবে। কোন শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হলে তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত যাওয়ার বা থাকার সুযোগ দেয়া হবে না। বরং তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর রুয়ান্ডায় থাকার অনুমতি দেয়া হবে। আর যাদের আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে না তাদের রুয়ান্ডার অভিবাসন আইন অনুযায়ী দেশটিতে অভিবাসনের সুযোগ দেয়া হবে অথবা তার বসবাসের অধিকার আছে এমন কোন তৃতীয় দেশে তাকে স্থানান্তর করা হবে। রুয়ান্ডায় থাকাকালীন শরণার্থীদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে, শরণার্থীরা তাদের বসবাসের স্থান থেকে বাইরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এমনকি তারা যদি আশ্রয় প্রার্থনার জন্য অন্য কোন দেশেও স্বাধীনভাবে যেতে পারবে। সর্বোচ্চ কতজনকে যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় পাঠানো যাবে সে বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

যুক্তরাজ্য সরকারের বাধা সৃষ্টির কৌশল
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে দুই হাজারেরও কম মানুষ অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছিল। ২০২০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় আট হাজার চার শততে। আর ২০২১ সালে অবৈধ পথে প্রবেশ করা অভিবাসীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ হাজারে। এই অভিবাসীদের অধিকাংশই ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে। অনেকে আবার ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে আকাশ পথে দেশটিতে আসে। এ ছাড়া লরি ও পণ্যবাহী ট্রাকে লুকিয়ে দেশটিতে প্রবেশের ঘটনাও জানা গেছে। যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, মানব পাচার চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশটিতে প্রবেশের প্রবণতা কমাতেই তারা অবৈধ পথে প্রবেশ করা অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রুয়ান্ডার যে লাভ
শরণার্থী গ্রহণের সমঝোতায় যে দেশে শরণার্থীদের পাঠানো হয় সেদেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষায় ‘গেটকিপার’ বা দ্বার রক্ষক হিসেবে অভিহিত করা হয়। য্ক্তুরাজ্য ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দ্বার রক্ষক হিসেবে রুয়ান্ডা ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থনৈতিক সহায়তা পাবে। এ ছাড়া শরণার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই, তাদের আবাসন, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের সামগ্রিক খরচ যুক্তরাজ্য সরকার বহন করবে। এর ফলে মূলত রুয়ান্ডার অর্থনীতি লাভবান হবার কথা, কারণ দেশটিতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ও চাঙ্গা হবে। অর্থনৈতিক সুফলের পাশাপাশি রুয়ান্ডার রাজনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে দেশটি উন্নত দেশগুলোর বিশ^স্ত সহযোগী হয়ে উঠবে। এর ফলে কূটনৈতিক অঙ্গনেও রুয়ান্ডা সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাবে।

আর যারা একই পথে হেঁটেছে
শরণার্থীদের অন্য দেশে পাঠানোর এই ধরনের সমঝোতা এটাই প্রথম নয়। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ২০০১ সালে ‘প্যাসিফিক সলিউশন’ ঘোষণা করে। এর অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের পাপুয়া নিউগিনি ও নাউরুতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়। সেখানেই তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। যারা যাচাই-বাছাই শেষে অস্ট্রেলিয়াতে আশ্রয় লাভের জন্য বিবেচিত হয় তাদের অস্ট্রেলিয়াতে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার নীতি বদলে যায়। এই সময় থেকে তারা আর কোন অবৈধ অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেয়নি। এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ইসরায়েল সুদানিজ ও ইরিট্রিয়ান অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা ও উগান্ডায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করে। ইসরায়েল কখনোই তাদের আশ্রয় দেয়নি। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কও রুয়ান্ডার সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতা করেছে। দেশটি ‘শূন্য শরণার্থী’ নীতি অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে।

শরণার্থী গ্রহণের সমঝোতায় যে দেশে শরণার্থীদের পাঠানো হয় সে দেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষায় ‘গেটকিপার’ বা দ্বাররক্ষক হিসেবে অভিহিত করা হয়। য্ক্তুরাজ্য ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দ্বাররক্ষক হিসেবে রুয়ান্ডা ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থনৈতিক সহায়তা পাবে

অভিবাসন সংকট
সাধারণত যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ হানাহানি, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা, কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর বা গোষ্ঠীর মানুষের ওপর নিপীড়ন চলছে এমন দেশগুলো থেকে অবৈধ পথে শরণার্থীরা অন্য দেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। এই সুযোগে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল অনেক দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীরাও অবৈধ পথে উন্নত দেশে পাড়ি জমায়। তাই যেসব উন্নত দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ও অভিবাসন করে থাকে তারা নিজ দেশে আগত মানুষদের দুই ভাগে বিভক্ত করে: শরণার্থী ও অর্থনৈতিক অভিবাসী। যেসব দেশে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে রয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রয়োজন, তাদের শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর যারা স্থিতিশীল দেশ থেকে নিজেদের আর্থিক উন্নতির প্রত্যাশায় উন্নত দেশে পাড়ি জমায় তাদের অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলো অভিবাসনের ক্ষেত্রে ‘গ্লাস ডোর’ বা অদৃশ্য বাধার কৌশল সবসময়ই অনুসরণ করে। এই নীতি বা কৌশল অনুযায়ী তারা নিজ দেশে প্রয়োজনীয় পেশার লোক বা দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তিকে অভিবাসনের সুযোগ প্রদান করে। এর মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ সুগম করতে চায়। আর অদক্ষ বা অপ্রয়োজনীয় পেশার লোকদের দেশটিতে প্রবেশে আইনি বাধা সৃষ্টি করে। উন্নত দেশগুলো অদক্ষ অর্থনৈতিক অভিবাসীদের কখনোই স্বাগত জানায় না। অর্থনৈতিক অভিবাসীদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো তারা প্রধানত মানব পাচার চক্রের সহায়তায় জীবনের হুমকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশ করে। তবে যুক্তরাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থী প্রবেশের দ্বারও রুদ্ধ হয়ে গেছে। এইবার যুক্তরাজ্য সরকার তাদের ‘অদৃশ্য বাধার’ কৌশল থেকে সরে গিয়ে ‘দৃশ্যমান বাধার’ কৌশল গ্রহণ করেছে। এটাকে উন্নত দেশগুলোর অনেকটাই রক্ষণশীল অবস্থানে চলে যাওয়া বলা যায়। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যই একমাত্র দেশ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্ডার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্স অবৈধ শরণার্থী ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অভিবাসী ঠেকানোর জন্য বেশ কয়েকটি শরণার্থীর উৎস দেশ ও ট্রানজিট দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে যার আওতায় শরণার্থীদের সেসব দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতা
যুক্তরাজ্যে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর এই বন্দোবস্ত ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে। রুয়ান্ডার মানবাধিকার রক্ষা ও চর্চার রেকর্ড খারাপ। তাই সে দেশে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া রুয়ান্ডার গণতান্ত্রিক চর্চার মানও খুব একটা ভালো নয়। এ ধরনের একটি দেশের সঙ্গে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও মানবিক বিষয়ে সমঝোতার ফলাফল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে বলে সমালোচনা রয়েছে। কারণ, এর ফলে রুয়ান্ডার মতো রাজনৈতিকভাবে নড়বড়ে ও মানবাধিকার চর্চায় ‘উদাসীন’ দেশগুলোর প্রশ্রয় পাবার সুযোগ রয়েছে।

এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় কিন্তু এখনো পাঠানো যায়নি। সমঝোতা স্মারকটি খোদ যুক্তরাজ্যের আদালতেই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালত শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় প্রেরণের ব্যবস্থাকে বৈধ বলে রায় দেন। তবে সমঝোতা স্মারকটির পূর্ণাঙ্গ জুডিশিয়াল রিভিউ করার কথাও আদালত বলেন। এই বিষয়ে শুনানি আগামী সেপ্টেম্বর ২০২২ হওয়ার কথা রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় পাবার পর যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডায় অবৈধ অভিবাসীদের প্রথম দলটি পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়। একদম শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস প্রক্রিয়াটিতে হস্তক্ষেপ করে। শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হলে ‘অপরিবর্তনীয় ক্ষতি’ হতে পারে বলে আদালত মন্তব্য করেন এবং তাদের রুয়ান্ডায় না পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন। এর ফলে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়াও ইউএনএইচসিআর তাদের যুক্তরাজ্য-রুয়ান্ডা সমঝোতা স্মারকের আইনগত বিশ্লেষণ করে বলেছে, বন্দোবস্তটি ১৯৫১ সালের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের বক্তব্য হলো, এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে শরণার্থীদের নিজেদের গন্তব্য ঠিক করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া শরণার্থীদের এক দুর্দশা থেকে আরেক দুর্দশার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির বিরোধী।

শেষ কথা
যুক্তরাজ্য-রুয়ান্ডার সমঝোতা স্মারকটি খোদ যুক্তরাজ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে। দেশটির এমপিদের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই ধরনের বন্দোবস্ত শরণার্থী মর্যাদাপ্রত্যাশীদের ঢল ঠেকানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকরী নয়। তারা অন্য কোন বিকল্প অনুসন্ধানের পরামর্শ প্রদান করেছেন। এখানে উল্লেখ্য বিশে^র প্রতিটি দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে প্রায়ই মানবতা উপেক্ষিত হতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনে মানবিকতা ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখেই নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার নীতি প্রণয়নের জন্য উৎসাহিত করা হয়। ফলে রাজনীতি ও মানবাধিকার প্রায়ই দ্বান্দ্বিক অবস্থানে চলে যায়। যুক্তরাজ্যের বর্তমান নীতিটির ফলাফল শরণার্থীদের মানবাধিকার বিষয়ে বৈশ্বিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সারাবিশে^ই রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। আর যুক্তরাজ্যের আদালতে চলমান মামলার ফলাফল অন্য দেশগুলোর নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও নজির হয়ে থাকবে। তাই এটার সঙ্গে সারা বিশে^র শরণার্থীদের ভাগ্য কমবেশি জড়িত।

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

[লেখক: মানবাধিকারকর্মী]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশকারীদের রুয়ান্ডায় প্রেরণ

মাবরুক মোহাম্মদ

সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২

গত ১৪ এপ্রিল ২০২২ যুক্তরাজ্য সরকার দেশটিতে আগত শরণার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর আগে যুক্তরাজ্য ও রুয়ান্ডা এই বিষয়ে ‘এসাইলাম পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (এপিএ)’ শীর্ষক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, যে কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, এমনকি যারা ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে তাদের সবাইকে রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা হবে। দেশ দুটির এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কোন শরণার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর মাধ্যমে তার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের আইনগত দায়িত্ব শেষ হবে। তাদের বিষয়ে পরবর্র্তী দায়-দায়িত্ব রুয়ান্ডার। তবে যুক্তরাজ্য দেশটিতে আগত প্রতিটি শরণার্থীর ফাইল প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। যারা বৈধ পথে এবং দেশটির অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় আইন অনুযায়ী দেশটিতে যাবে তাদের যুক্তরাজ্যেই থাকার সুযোগ দেয়া হবে। শুধু যারা অবৈধ পথে দেশটিতে প্রবেশ করবে তাদেরই রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে।

কী আছে সমঝোতা স্মারকে
এপিএ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবৈধ পথে আগত শরণার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। রুয়ান্ডা সরকার প্রতিটি শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে তা যাচাই-বাছাই করবে। কোন শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হলে তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত যাওয়ার বা থাকার সুযোগ দেয়া হবে না। বরং তাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর রুয়ান্ডায় থাকার অনুমতি দেয়া হবে। আর যাদের আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে না তাদের রুয়ান্ডার অভিবাসন আইন অনুযায়ী দেশটিতে অভিবাসনের সুযোগ দেয়া হবে অথবা তার বসবাসের অধিকার আছে এমন কোন তৃতীয় দেশে তাকে স্থানান্তর করা হবে। রুয়ান্ডায় থাকাকালীন শরণার্থীদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে, শরণার্থীরা তাদের বসবাসের স্থান থেকে বাইরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এমনকি তারা যদি আশ্রয় প্রার্থনার জন্য অন্য কোন দেশেও স্বাধীনভাবে যেতে পারবে। সর্বোচ্চ কতজনকে যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় পাঠানো যাবে সে বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

যুক্তরাজ্য সরকারের বাধা সৃষ্টির কৌশল
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে দুই হাজারেরও কম মানুষ অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছিল। ২০২০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় আট হাজার চার শততে। আর ২০২১ সালে অবৈধ পথে প্রবেশ করা অভিবাসীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ হাজারে। এই অভিবাসীদের অধিকাংশই ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে। অনেকে আবার ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে আকাশ পথে দেশটিতে আসে। এ ছাড়া লরি ও পণ্যবাহী ট্রাকে লুকিয়ে দেশটিতে প্রবেশের ঘটনাও জানা গেছে। যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, মানব পাচার চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশটিতে প্রবেশের প্রবণতা কমাতেই তারা অবৈধ পথে প্রবেশ করা অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রুয়ান্ডার যে লাভ
শরণার্থী গ্রহণের সমঝোতায় যে দেশে শরণার্থীদের পাঠানো হয় সেদেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষায় ‘গেটকিপার’ বা দ্বার রক্ষক হিসেবে অভিহিত করা হয়। য্ক্তুরাজ্য ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দ্বার রক্ষক হিসেবে রুয়ান্ডা ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থনৈতিক সহায়তা পাবে। এ ছাড়া শরণার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই, তাদের আবাসন, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের সামগ্রিক খরচ যুক্তরাজ্য সরকার বহন করবে। এর ফলে মূলত রুয়ান্ডার অর্থনীতি লাভবান হবার কথা, কারণ দেশটিতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ও চাঙ্গা হবে। অর্থনৈতিক সুফলের পাশাপাশি রুয়ান্ডার রাজনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে দেশটি উন্নত দেশগুলোর বিশ^স্ত সহযোগী হয়ে উঠবে। এর ফলে কূটনৈতিক অঙ্গনেও রুয়ান্ডা সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাবে।

আর যারা একই পথে হেঁটেছে
শরণার্থীদের অন্য দেশে পাঠানোর এই ধরনের সমঝোতা এটাই প্রথম নয়। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ২০০১ সালে ‘প্যাসিফিক সলিউশন’ ঘোষণা করে। এর অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের পাপুয়া নিউগিনি ও নাউরুতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়। সেখানেই তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। যারা যাচাই-বাছাই শেষে অস্ট্রেলিয়াতে আশ্রয় লাভের জন্য বিবেচিত হয় তাদের অস্ট্রেলিয়াতে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার নীতি বদলে যায়। এই সময় থেকে তারা আর কোন অবৈধ অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেয়নি। এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে ইসরায়েল সুদানিজ ও ইরিট্রিয়ান অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা ও উগান্ডায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করে। ইসরায়েল কখনোই তাদের আশ্রয় দেয়নি। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কও রুয়ান্ডার সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতা করেছে। দেশটি ‘শূন্য শরণার্থী’ নীতি অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে।

শরণার্থী গ্রহণের সমঝোতায় যে দেশে শরণার্থীদের পাঠানো হয় সে দেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষায় ‘গেটকিপার’ বা দ্বাররক্ষক হিসেবে অভিহিত করা হয়। য্ক্তুরাজ্য ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দ্বাররক্ষক হিসেবে রুয়ান্ডা ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থনৈতিক সহায়তা পাবে

অভিবাসন সংকট
সাধারণত যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ হানাহানি, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা, কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর বা গোষ্ঠীর মানুষের ওপর নিপীড়ন চলছে এমন দেশগুলো থেকে অবৈধ পথে শরণার্থীরা অন্য দেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করে। এই সুযোগে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল অনেক দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীরাও অবৈধ পথে উন্নত দেশে পাড়ি জমায়। তাই যেসব উন্নত দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ও অভিবাসন করে থাকে তারা নিজ দেশে আগত মানুষদের দুই ভাগে বিভক্ত করে: শরণার্থী ও অর্থনৈতিক অভিবাসী। যেসব দেশে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে রয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রয়োজন, তাদের শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর যারা স্থিতিশীল দেশ থেকে নিজেদের আর্থিক উন্নতির প্রত্যাশায় উন্নত দেশে পাড়ি জমায় তাদের অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলো অভিবাসনের ক্ষেত্রে ‘গ্লাস ডোর’ বা অদৃশ্য বাধার কৌশল সবসময়ই অনুসরণ করে। এই নীতি বা কৌশল অনুযায়ী তারা নিজ দেশে প্রয়োজনীয় পেশার লোক বা দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তিকে অভিবাসনের সুযোগ প্রদান করে। এর মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ সুগম করতে চায়। আর অদক্ষ বা অপ্রয়োজনীয় পেশার লোকদের দেশটিতে প্রবেশে আইনি বাধা সৃষ্টি করে। উন্নত দেশগুলো অদক্ষ অর্থনৈতিক অভিবাসীদের কখনোই স্বাগত জানায় না। অর্থনৈতিক অভিবাসীদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো তারা প্রধানত মানব পাচার চক্রের সহায়তায় জীবনের হুমকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশ করে। তবে যুক্তরাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থী প্রবেশের দ্বারও রুদ্ধ হয়ে গেছে। এইবার যুক্তরাজ্য সরকার তাদের ‘অদৃশ্য বাধার’ কৌশল থেকে সরে গিয়ে ‘দৃশ্যমান বাধার’ কৌশল গ্রহণ করেছে। এটাকে উন্নত দেশগুলোর অনেকটাই রক্ষণশীল অবস্থানে চলে যাওয়া বলা যায়। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যই একমাত্র দেশ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্ডার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্স অবৈধ শরণার্থী ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অভিবাসী ঠেকানোর জন্য বেশ কয়েকটি শরণার্থীর উৎস দেশ ও ট্রানজিট দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে যার আওতায় শরণার্থীদের সেসব দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতা
যুক্তরাজ্যে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর এই বন্দোবস্ত ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে। রুয়ান্ডার মানবাধিকার রক্ষা ও চর্চার রেকর্ড খারাপ। তাই সে দেশে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে প্রদত্ত অধিকারগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া রুয়ান্ডার গণতান্ত্রিক চর্চার মানও খুব একটা ভালো নয়। এ ধরনের একটি দেশের সঙ্গে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও মানবিক বিষয়ে সমঝোতার ফলাফল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে বলে সমালোচনা রয়েছে। কারণ, এর ফলে রুয়ান্ডার মতো রাজনৈতিকভাবে নড়বড়ে ও মানবাধিকার চর্চায় ‘উদাসীন’ দেশগুলোর প্রশ্রয় পাবার সুযোগ রয়েছে।

এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় কিন্তু এখনো পাঠানো যায়নি। সমঝোতা স্মারকটি খোদ যুক্তরাজ্যের আদালতেই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালত শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় প্রেরণের ব্যবস্থাকে বৈধ বলে রায় দেন। তবে সমঝোতা স্মারকটির পূর্ণাঙ্গ জুডিশিয়াল রিভিউ করার কথাও আদালত বলেন। এই বিষয়ে শুনানি আগামী সেপ্টেম্বর ২০২২ হওয়ার কথা রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় পাবার পর যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডায় অবৈধ অভিবাসীদের প্রথম দলটি পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়। একদম শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস প্রক্রিয়াটিতে হস্তক্ষেপ করে। শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হলে ‘অপরিবর্তনীয় ক্ষতি’ হতে পারে বলে আদালত মন্তব্য করেন এবং তাদের রুয়ান্ডায় না পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন। এর ফলে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়াও ইউএনএইচসিআর তাদের যুক্তরাজ্য-রুয়ান্ডা সমঝোতা স্মারকের আইনগত বিশ্লেষণ করে বলেছে, বন্দোবস্তটি ১৯৫১ সালের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের বক্তব্য হলো, এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে শরণার্থীদের নিজেদের গন্তব্য ঠিক করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া শরণার্থীদের এক দুর্দশা থেকে আরেক দুর্দশার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির বিরোধী।

শেষ কথা
যুক্তরাজ্য-রুয়ান্ডার সমঝোতা স্মারকটি খোদ যুক্তরাজ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে। দেশটির এমপিদের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই ধরনের বন্দোবস্ত শরণার্থী মর্যাদাপ্রত্যাশীদের ঢল ঠেকানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকরী নয়। তারা অন্য কোন বিকল্প অনুসন্ধানের পরামর্শ প্রদান করেছেন। এখানে উল্লেখ্য বিশে^র প্রতিটি দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে প্রায়ই মানবতা উপেক্ষিত হতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনে মানবিকতা ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখেই নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার নীতি প্রণয়নের জন্য উৎসাহিত করা হয়। ফলে রাজনীতি ও মানবাধিকার প্রায়ই দ্বান্দ্বিক অবস্থানে চলে যায়। যুক্তরাজ্যের বর্তমান নীতিটির ফলাফল শরণার্থীদের মানবাধিকার বিষয়ে বৈশ্বিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সারাবিশে^ই রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। আর যুক্তরাজ্যের আদালতে চলমান মামলার ফলাফল অন্য দেশগুলোর নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও নজির হয়ে থাকবে। তাই এটার সঙ্গে সারা বিশে^র শরণার্থীদের ভাগ্য কমবেশি জড়িত।

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

[লেখক: মানবাধিকারকর্মী]

back to top