alt

উপ-সম্পাদকীয়

দুগ্ধশিল্পের সম্ভাবনা ও সংকট

মিহির কুমার রায়

: রোববার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, যার সঙ্গে দুগ্ধসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (২০১৯) এর তথ্যমতে দেশে প্রতিবছর ৯০ লাখ ২৪ হাজার টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টনের কিছু বেশি। এর মানে হলো বাংলাদেশ তার মোট প্রয়োজনের মাত্র ৬৩ শতাংশ উৎপাদন করছে এবং বাকি ৩৭ শতাংশ ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক হাজার পাঁচশত কোটি টাকার দুধ আমদানি করছে।

যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ব্যয় হয়, তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋণ কিংবা প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরণের করা সম্ভব হতো। কিন্তু দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়গুলো হলো জমির দুষ্প্রাপ্যতা, গবাদি পশুর পর্যাপ্ত খাবারের স্বল্পতা ও গরুর উৎপাদন ক্ষমতা।

সার্বিক ব্যবস্থাপনা তথা নীতি সহায়তা পেলে বাংলাদেশ যে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে-এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা বলছে প্রতি জনের প্রতিদিন ২৫০ মিলিমিটার দুধ পান করা প্রয়োজন অথচ সেখানে একজন মানুষের

প্রাপ্তি মাত্রা ৪০ মিলিমিটার। সেই হিসাবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে সারা দেশে প্রতিদিন মাথাপিছু দুধের চাহিদা ১৪.৪৮ মিলিয়ন টন এবং একি সময়ে উৎপাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন অর্থাৎ প্রতিদিনের ঘাটতি দাঁড়ায় ৭.৫১ মিলিয়ন টন। এই বিশাল ঘাটতি পূরণের জন্য এখন আমদানি বাণিজ্যই একমাত্র ভরসা অথচ এই সব পণ্যে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, তা নিয়ে কেউ কোন কথা বলছে না অথচ এই শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশে যে অপার সম্ভবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়িত করা গেলে দেশ পুষ্টিতে স্বয়ম্ভর হবে।

দুধকে একটি আদর্শ খাদ্য বলা হয় যেখানে পুষ্টি সব গুণাবলিগুলো রয়েছে, যা বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই দুধের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব বিশেষ করে উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে যার সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত রয়েছে।

বর্তমান সময়ে খাদ্যে নিরাপত্তায় ভেজাল একটি বহুল আলোচিত বিষয়। বাজারে প্রচলিত পাস্তরিত প্যাকেটজাত দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রজন্ম সবল শরীর নিয়ে বেড়ে উঠবে, তা কীভাবে আশা করা যায়? তা হলে কি দুগ্ধসংকট কাটছে না?

যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ব্যয় হয়, তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋণ কিংবা প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতো

দেশে বিদ্যাশিক্ষাও প্রযুক্তির অনেক প্রসার হয়েছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি তথা আয় বেড়েছে, মানব উন্নয়ন সূচকে ঊর্ধ্বগমন ঘটেছে কিন্তু ব্যবসায় লাভের আশায় দুধে ভেজাল মেশাতে আমাদের এতটুকু দ্বিধাদ্বন্দ্ব মনে হয় না, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিয়ে রেড়ে উঠার জন্য বিশেষ হুমকি।

পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও শিশুর দুধে ভেজালজনিত বিষয়গুলোর একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বিশেষত: ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানোর আগে অর্থাৎ আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত, পুষ্টিহীন মুক্ত, ভেজালমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় সুশাসিত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে অনেক, যা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি একইভাবে এর সমাধান এক দিনেও সম্ভব নয়। এই কাজটি শুরু হয়েছে মন্থর গতিতে যেমন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন সব খাদ্যসামগ্রীর মান নির্ণয়ে কোন কার্য্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি শুধু আশ্বাস ছাড়া। সাড়া পৃথিবীব্যাপী বিশেষত: উন্নত দেশে দুধের মান পরীক্ষার অনেক প্যারামিটার থাকে যেমন সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যাটি ৩৮টি আর বংলাদেশে দুধের মান নির্ণয়ের প্যারামিটার মাত্র ৮টি যার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার সামর্থ্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ইনস্টিটিউটের ( বিএসটিআই) নাই অথচ এর সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এরই মধ্যে দুগ্ধশিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে এবং জনস্বাস্থ্যেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য হলো-পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে দুধের অবদান অনস্বীকার্য এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় এটি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ দুগ্ধশিল্পের ওপর শিক্ষা ও গবেষণা সুযোগ খুবই সীমিত যদিও দেশে একটি ভেটেরাইনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি-তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কিংবা পশুপালন অনুষদে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সব গবেষণার ফল দেশের দুগ্ধশিল্পের বিকাশে কতটুকু অবদান রাখছে তার সম্প্রসারণ ও প্রচারের দায়িত্ব সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওপর ন্যাস্ত। এই সংস্থা দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি ডেইরি ফার্ম সরকারি কাঠামোতে পরিচালনা করছে, যার মধ্যে সাভার ডেইরি ফার্ম উল্লেখযোগ্য, যার উদ্দেশ্য প্রজনন, উৎপাদন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ। এই খামারের উৎপাদিত দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিপণন করা হয়, যা সাভার ডেইরি হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া মিল্কভিটা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজতকরণের ও দুগ্ধসামগ্রী বিতরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

দেশে সরকারের পাশাপাশি ১৪টি সরকারি কোম্পানি দুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত, যাদের পণ্যসামগ্রী মূলত তরল দুধ, মিল্ক পাউডার, ঘি, ছানা, পনির, মাখন ইত্যাদি। দেশীয় কোম্পানিগুলো মনে করে বর্তমানে প্রচলিত দেশীয় শিল্পনীতিকে সহায়তা দিলে দেশে গ্রামে গঙ্গে অবস্থিত দুগ্ধ খামারি ও শহরকেন্দ্রিক কোম্পানিগুলো তরল কিংবা গুঁড়ো দুধের চাহিদা মেটাতে পারবে। আবার দুধ আমদানিতে বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, তা যদি দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ করা যেত, তাহলে এই শিল্পে বাংলাদেশ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারত।

[লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

চিঠি : একটি ব্রিজ চাই

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

মার্কিন ভিসানীতি ও কিছু প্রশ্ন

ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে কিভাবে

জ্বালানি সংকটে আশার আলো ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র

তামাক নয়, খাদ্য ফলান

খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তি

আপনি তো আছেন নিজের সঙ্গে

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কি প্রাথমিক থাকা যৌক্তিক?

কর্নাটকের ভোট বনাম ভারতের আসন্ন লোকসভার ভোট

স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে প্রয়োজন স্মার্ট কৃষক

দূতাবাসের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার ও অবরোধের আশঙ্কা

দাদা ও নানার বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

কর্নাটকের ভোট বনাম ভারতের আসন্ন লোকসভার ভোট

ছবি

লেমুপালং পাড়াবনের নিরাপত্তা দেবে কে?

গ্রামীণ জনজীবনে বজ্রপাতের ঝুঁকি

বাজেট নিয়ে ভাবনা

বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক বৈষম্য কি ঘুচবে

মাদকের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে

পরিবেশ দূষণ রোধে আমরা কী করছি

বাজার পরিস্থিতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন

গ্রিনহাউস গ্যাস : সতর্কতা জরুরি

বিদ্যুৎ খাতে অপচয়-দুর্নীতি

মজুতদারদের কাছে অসহায় মানুষ

শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন দপ্তরি

অসচেতনতায় ডিজিটালি প্রতারিত হবেন না

বাড়ছে ডেঙ্গুর শঙ্কা, চাই জনসচেতনতা

ছবি

সাংবিধানিক সংকটে পাকিস্তান

আয়ারল্যান্ডে বইমেলা

স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে স্মার্ট স্কুল

আনস্মার্ট চিকিৎসা ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন

ছবি

নিয়োগ দুর্নীতি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসন

ছবি

সব বাণিজ্যই দখল করে নিচ্ছে কর্পোরেট হাউস

অন্তর্বর্তীকালীন গ্যাস বিপণন প্রসঙ্গে

বাল্যবিয়ের উদ্বেগজনক চিত্র

রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দুরবস্থা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দুগ্ধশিল্পের সম্ভাবনা ও সংকট

মিহির কুমার রায়

রোববার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, যার সঙ্গে দুগ্ধসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (২০১৯) এর তথ্যমতে দেশে প্রতিবছর ৯০ লাখ ২৪ হাজার টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টনের কিছু বেশি। এর মানে হলো বাংলাদেশ তার মোট প্রয়োজনের মাত্র ৬৩ শতাংশ উৎপাদন করছে এবং বাকি ৩৭ শতাংশ ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক হাজার পাঁচশত কোটি টাকার দুধ আমদানি করছে।

যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ব্যয় হয়, তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋণ কিংবা প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরণের করা সম্ভব হতো। কিন্তু দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়গুলো হলো জমির দুষ্প্রাপ্যতা, গবাদি পশুর পর্যাপ্ত খাবারের স্বল্পতা ও গরুর উৎপাদন ক্ষমতা।

সার্বিক ব্যবস্থাপনা তথা নীতি সহায়তা পেলে বাংলাদেশ যে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে-এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা বলছে প্রতি জনের প্রতিদিন ২৫০ মিলিমিটার দুধ পান করা প্রয়োজন অথচ সেখানে একজন মানুষের

প্রাপ্তি মাত্রা ৪০ মিলিমিটার। সেই হিসাবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে সারা দেশে প্রতিদিন মাথাপিছু দুধের চাহিদা ১৪.৪৮ মিলিয়ন টন এবং একি সময়ে উৎপাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন অর্থাৎ প্রতিদিনের ঘাটতি দাঁড়ায় ৭.৫১ মিলিয়ন টন। এই বিশাল ঘাটতি পূরণের জন্য এখন আমদানি বাণিজ্যই একমাত্র ভরসা অথচ এই সব পণ্যে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে, তা নিয়ে কেউ কোন কথা বলছে না অথচ এই শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশে যে অপার সম্ভবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়িত করা গেলে দেশ পুষ্টিতে স্বয়ম্ভর হবে।

দুধকে একটি আদর্শ খাদ্য বলা হয় যেখানে পুষ্টি সব গুণাবলিগুলো রয়েছে, যা বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই দুধের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব বিশেষ করে উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে যার সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত রয়েছে।

বর্তমান সময়ে খাদ্যে নিরাপত্তায় ভেজাল একটি বহুল আলোচিত বিষয়। বাজারে প্রচলিত পাস্তরিত প্যাকেটজাত দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রজন্ম সবল শরীর নিয়ে বেড়ে উঠবে, তা কীভাবে আশা করা যায়? তা হলে কি দুগ্ধসংকট কাটছে না?

যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ব্যয় হয়, তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋণ কিংবা প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতো

দেশে বিদ্যাশিক্ষাও প্রযুক্তির অনেক প্রসার হয়েছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি তথা আয় বেড়েছে, মানব উন্নয়ন সূচকে ঊর্ধ্বগমন ঘটেছে কিন্তু ব্যবসায় লাভের আশায় দুধে ভেজাল মেশাতে আমাদের এতটুকু দ্বিধাদ্বন্দ্ব মনে হয় না, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিয়ে রেড়ে উঠার জন্য বিশেষ হুমকি।

পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও শিশুর দুধে ভেজালজনিত বিষয়গুলোর একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বিশেষত: ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানোর আগে অর্থাৎ আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত, পুষ্টিহীন মুক্ত, ভেজালমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় সুশাসিত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে অনেক, যা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি একইভাবে এর সমাধান এক দিনেও সম্ভব নয়। এই কাজটি শুরু হয়েছে মন্থর গতিতে যেমন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন সব খাদ্যসামগ্রীর মান নির্ণয়ে কোন কার্য্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি শুধু আশ্বাস ছাড়া। সাড়া পৃথিবীব্যাপী বিশেষত: উন্নত দেশে দুধের মান পরীক্ষার অনেক প্যারামিটার থাকে যেমন সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যাটি ৩৮টি আর বংলাদেশে দুধের মান নির্ণয়ের প্যারামিটার মাত্র ৮টি যার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার সামর্থ্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ইনস্টিটিউটের ( বিএসটিআই) নাই অথচ এর সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এরই মধ্যে দুগ্ধশিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে এবং জনস্বাস্থ্যেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য হলো-পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে দুধের অবদান অনস্বীকার্য এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় এটি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ দুগ্ধশিল্পের ওপর শিক্ষা ও গবেষণা সুযোগ খুবই সীমিত যদিও দেশে একটি ভেটেরাইনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি-তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কিংবা পশুপালন অনুষদে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সব গবেষণার ফল দেশের দুগ্ধশিল্পের বিকাশে কতটুকু অবদান রাখছে তার সম্প্রসারণ ও প্রচারের দায়িত্ব সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওপর ন্যাস্ত। এই সংস্থা দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি ডেইরি ফার্ম সরকারি কাঠামোতে পরিচালনা করছে, যার মধ্যে সাভার ডেইরি ফার্ম উল্লেখযোগ্য, যার উদ্দেশ্য প্রজনন, উৎপাদন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ। এই খামারের উৎপাদিত দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিপণন করা হয়, যা সাভার ডেইরি হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া মিল্কভিটা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজতকরণের ও দুগ্ধসামগ্রী বিতরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

দেশে সরকারের পাশাপাশি ১৪টি সরকারি কোম্পানি দুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত, যাদের পণ্যসামগ্রী মূলত তরল দুধ, মিল্ক পাউডার, ঘি, ছানা, পনির, মাখন ইত্যাদি। দেশীয় কোম্পানিগুলো মনে করে বর্তমানে প্রচলিত দেশীয় শিল্পনীতিকে সহায়তা দিলে দেশে গ্রামে গঙ্গে অবস্থিত দুগ্ধ খামারি ও শহরকেন্দ্রিক কোম্পানিগুলো তরল কিংবা গুঁড়ো দুধের চাহিদা মেটাতে পারবে। আবার দুধ আমদানিতে বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, তা যদি দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ করা যেত, তাহলে এই শিল্পে বাংলাদেশ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারত।

[লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

back to top