alt

উপ-সম্পাদকীয়

সুন্দরবনের সুরক্ষায় সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

: রোববার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নিয়ে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। যোগাযোগসহ অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের আগ্রহ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শুরু হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম। আমাদের একটি বিষয়ে সচেতন হতে হবে, তা হলো সুন্দরবনের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা নির্ভর করবে এখানকার বনজ ও প্রাণিসম্পদের ওপর। বনজ ও প্রাণিসম্পদ যত সমৃদ্ধ হবে, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন নিয়ে আগ্রহ ততটাই বাড়বে।

প্রতি বছর বন্য প্রাণী ও জলজ প্রাণীর প্রজনন নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটনের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেখা যায়, অনেক পর্যটক খাদ্যদ্রব্য, বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য পরিত্যক্তসামগ্রী বনের মধ্যে ফেলে দেয়। এগুলো বনের পরিবেশ নষ্ট করে। প্রয়োজনে ট্যুর অপারেটর ও নৌযান পরিচালনাকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

প্রতি বছর সুন্দরবনের আয়তন কমে আসায় বনভূমির প্রতিবেশব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমে আসছে গাছ, লতাগুল্ম, প্রাণী। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সুন্দরবন দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বৃহত্তর খুলনা জেলার গেজেটিয়ার লেখার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালে। ১৯৭৮ সালে ছাপা ওই গেজেটিয়ারে বলা হয়েছিল, নির্বিচার বনসম্পদ লুট ও প্রাণী হত্যা বন্ধ না হলে সুন্দরবন বিবর্ণ, বৃক্ষলতাহীন, প্রাণহীন হয়ে পড়বে। পাঁচ দশক পর পরিস্থিতি ততটা মারাত্মক না হলেও সুন্দরবনের প্রাণপ্রাচুর্য কমছে।

গবেষকরা বলছেন, সুন্দরবনের কিছু গাছ, প্রাণী ও পাখি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন। এ অবস্থায় সুন্দরবনের বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর জীবন সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে পানির তোড়ে মারা পড়ছে অনেক প্রাণী।

এদিকে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের হরিণগুলো প্রাণভয়ে লোকালয়ে এসে পড়েছে। এ ছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এখন উত্তাল। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাগেরহাটের সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ৩ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ বনের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারে পানি উঠে যায়। ভাটার সময় কিছু অংশের পানি নেমে গেলেও বনের নিচু এলাকায় পানি জমে ছিল।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গত ১০০ বছরে সুন্দরবনের ২৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়ে গেছে। এর অর্থ, প্রতি বছর আড়াই বর্গকিলোমিটারের মতো বন হারিয়ে যাচ্ছে। এ পরিমাণ জমির আয়তন আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার ৩৫০টি ফুটবল মাঠের সমান। গত কয়েক দশকে জেলেরা ছোট ছোট খালে বিষ ঢেলে মাছ ধরেন বলে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করছেন। এতে মাছের সঙ্গে অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়। এ জন্য সুন্দরবন বাঁচাতে সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুন্দরবন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা, এর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। সেভাবেই সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের পরিকল্পনা করতে হবে।

[লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সুন্দরবনের সুরক্ষায় সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

রোববার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নিয়ে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। যোগাযোগসহ অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের আগ্রহ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শুরু হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম। আমাদের একটি বিষয়ে সচেতন হতে হবে, তা হলো সুন্দরবনের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা নির্ভর করবে এখানকার বনজ ও প্রাণিসম্পদের ওপর। বনজ ও প্রাণিসম্পদ যত সমৃদ্ধ হবে, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন নিয়ে আগ্রহ ততটাই বাড়বে।

প্রতি বছর বন্য প্রাণী ও জলজ প্রাণীর প্রজনন নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটনের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। দেখা যায়, অনেক পর্যটক খাদ্যদ্রব্য, বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য পরিত্যক্তসামগ্রী বনের মধ্যে ফেলে দেয়। এগুলো বনের পরিবেশ নষ্ট করে। প্রয়োজনে ট্যুর অপারেটর ও নৌযান পরিচালনাকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

প্রতি বছর সুন্দরবনের আয়তন কমে আসায় বনভূমির প্রতিবেশব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমে আসছে গাছ, লতাগুল্ম, প্রাণী। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সুন্দরবন দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বৃহত্তর খুলনা জেলার গেজেটিয়ার লেখার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালে। ১৯৭৮ সালে ছাপা ওই গেজেটিয়ারে বলা হয়েছিল, নির্বিচার বনসম্পদ লুট ও প্রাণী হত্যা বন্ধ না হলে সুন্দরবন বিবর্ণ, বৃক্ষলতাহীন, প্রাণহীন হয়ে পড়বে। পাঁচ দশক পর পরিস্থিতি ততটা মারাত্মক না হলেও সুন্দরবনের প্রাণপ্রাচুর্য কমছে।

গবেষকরা বলছেন, সুন্দরবনের কিছু গাছ, প্রাণী ও পাখি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবন। এ অবস্থায় সুন্দরবনের বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর জীবন সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে পানির তোড়ে মারা পড়ছে অনেক প্রাণী।

এদিকে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের হরিণগুলো প্রাণভয়ে লোকালয়ে এসে পড়েছে। এ ছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এখন উত্তাল। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাগেরহাটের সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ৩ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ বনের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারে পানি উঠে যায়। ভাটার সময় কিছু অংশের পানি নেমে গেলেও বনের নিচু এলাকায় পানি জমে ছিল।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গত ১০০ বছরে সুন্দরবনের ২৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়ে গেছে। এর অর্থ, প্রতি বছর আড়াই বর্গকিলোমিটারের মতো বন হারিয়ে যাচ্ছে। এ পরিমাণ জমির আয়তন আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার ৩৫০টি ফুটবল মাঠের সমান। গত কয়েক দশকে জেলেরা ছোট ছোট খালে বিষ ঢেলে মাছ ধরেন বলে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করছেন। এতে মাছের সঙ্গে অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়। এ জন্য সুন্দরবন বাঁচাতে সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুন্দরবন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা, এর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। সেভাবেই সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনের পরিকল্পনা করতে হবে।

[লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড]

back to top