alt

opinion » post-editorial

সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

: রোববার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

সন্তানের স্বাভাবিক এবং আইনগত অভিভাবক হলেন পিতা। সম্প্রতি শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকের জায়গায় বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবককে রাখার নির্দেশ দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিলেন হাইকোর্ট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মায়ের নামে ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ চেয়ে করা এক রিটের নিষ্পত্তি করে ২৪ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন।

আমাদের অভিভাবকত্ব ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০-এর বিধান অনুযায়ী নাবালকের স্বাভাবিক এবং আইনগত অভিভাবক হলেন পিতা। পিতার অনুপস্থিতিতে বা অভিভাবক হিসেবে অযোগ্যতায় মাতা অথবা আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োজিত ব্যক্তি নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হতে পারেন। তবে নাবালকের সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণের গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে তার জিম্মাদারিত্বের বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারিত্বের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ছেলে শিশুকে সাত বছর এবং মেয়ে শিশুকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মা তার জিম্মায় রাখার অধিকারী।

তবে মা বা নাবালক সন্তান যার তত্ত্বাবধানেই থাকুক না কেন সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া, দেখাশোনা করা এবং ভরণপোষণ দেয়ার দায়িত্ব অভিভাবক হিসেবে সন্তানের পিতার। তবে মায়ের জিম্মায় সন্তান থাকা অবস্থায় বাবা যদি কোনো ভরণপোষণ না দেন, সেক্ষেত্রে মা সন্তানকে পিতার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করাতে বাধ্য নন বলে বিভিন্ন মামলার রায়ে অভিমত প্রদান করা হয়েছে (১৭ ডিএলআর ১৩৪)। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০-এর ১৯ ধারায় অভিভাবক হিসেবে পিতাও অযোগ্য হতে পারেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- যদি বাবা চারিত্রিকভাবে অসৎ হন, সন্তানের মা অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা করেন, মাদকাসক্ত এবং অধার্মিক হন, শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেন, প্রকাশ্যে লাম্পট্য করেন, দুস্থ অথবা নিঃস্ব হন অথবা স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি থাকে এবং নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ দিতে অবহেলা করেন।

‘ইমামবন্দি বনাম মুসাদ্দির ২২ ডিএলআর, পৃষ্ঠা ৬০৮’ মামলায় বলা হয়েছে- ‘মুসলিম আইনে সন্তানের শরীরের ব্যাপারে লিঙ্গভেদে কিছু বয়স পর্যন্ত মা তত্ত্বাবধানের অধিকারিণী। মা স্বাভাবিক অভিভাবক নন। একমাত্র পিতাই বা যদি তিনি মৃত হন তার নির্বাহক আইনগত বা বৈধ অভিভাবক।’ তবে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করলে মা এ অধিকার হারাবেন। [হেদায় ১৩৮, বেইলি ৪৩৫]।

একটি কেস স্টাডি থেকে জানা যায়, একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন শান্তা (কাল্পনিক)। আর সুজন (কাল্পনিক) স্নাতক পর্যায়ের একটি কলেজে। ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। শান্তা অন্তঃসত্ত্বা হয়। এদিকে সুজন অন্যত্র বিয়ে করে। সত্যটা জানার পর বাড়ি থেকে প্রচন্ড চাপ আসে শান্তার ওপর। কেউ বলছে আইনি পদক্ষেপ নিতে; আবার কেউ বলছে গর্ভপাত ঘটাতে। নানা ভাবনার আবর্তে পাগল হয়ে উঠে শান্তা। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বাচ্চা পৃথিবীতে আসে। এবার পালা সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট নেওয়ার।

সার্টিফিকেটে বাচ্চার মা এবং অভিভাবক হিসেবে শান্তার নামটি লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান; কিন্তু বাদসাধে আইন। বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করবার জন্য বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। কর্তৃপক্ষ শান্তার কাছে বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য জানতে চায়। উত্তরে শান্তা বলেন- এ বাচ্চা শুধুমাত্র ওর একার, বাচ্চার কোন বাবা নেই। শান্তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শান্তাকে সাফ জানিয়ে দেয় এ বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু হবে না। শান্তাও বাচ্চার পিতৃ-পরিচয় দাবি করে সুজনকে তার বিড়ম্বনার কারণ হতে চায় না।

আবেদন-নিবেদনে যখন কোন কাজই হলো না, তখন বাধ্য হয়ে শান্তা গেলেন পারিবারিক আদালতে। ১৮৯০ সালের গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট-এর ৭ ধারা মোতাবেক ওই বাচ্চার একমাত্র অভিভাবক ঘোষণার জন্য আবেদন জানান। ওই আইনের ধারা ১১ অনুযায়ী বাচ্চার সম্ভাব্য অভিভাবকদের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এবার কোর্টও শান্তার বাচ্চার বাবার নাম জানতে চায়; কিন্তু শান্তা নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শান্তা কোর্টকে জানিয়ে দেন- বাচ্চার বাবা এই বাচ্চার জন্ম বিষয়ে কিছুই জানেন না। কাজেই তার নাম এখানে অপ্রয়োজনীয়। আদালতের রায় শান্তার বিরুদ্ধে যায়। তার আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। নাছোড়বান্দা শান্তা এ রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের; কিন্তু সেখানেও শান্তার আপিল খারিজ হয়ে যায়। শেষমেশ শান্তা দ্বারস্থ হন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে। ফাইল করেন স্পেশাল লিভ পিটিশন।

এবার এলো এক যুগান্তকারী রায়। পত্রিকায় বড় বড় শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলো- ‘কুমারি মায়ের আইনি স্বীকৃতি...অভিভাবক হতে বিয়ে জরুরি নয়।’

শান্তার মতো মা যারা, তাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক সম্মান ও একক মাতৃত্বের বিষয়টিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে অবশেষে পথ দেখালো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (SLP (Civil) No. 28367 of 2015 : ABC Vs. The State NCT of Delhi)।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

ন্যাশনাল গ্যালারি : রঙতুলির মহাসমুদ্রে একদিন

যুব শক্তি বনাম বেকারত্ব

প্রযুক্তি, আর্থিক পরিকল্পনা ও গণিতের ব্যবহার

ফরাসি বিপ্লব: বৈষম্য নিরসনে সামগ্রিক মুক্তির প্রেরণা

অন্তর্বর্তী সরকারের নিউইয়র্ক সফর

প্রবীণদের যত্ন: নৈতিক দায়িত্ব থেকে সামাজিক শক্তি নির্মাণ

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অপরিহার্যতা

জনমিতিক সুবিধা: স্বপ্নের দশক ও নীতিগত সংস্কারের অপরিহার্যতা

বিদ্যালয় ও মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংগ্রাম

শিক্ষাসংস্কারে চাই সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

ভারতে এসআইআর বিতর্ক

tab

opinion » post-editorial

সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

রোববার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

সন্তানের স্বাভাবিক এবং আইনগত অভিভাবক হলেন পিতা। সম্প্রতি শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকের জায়গায় বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবককে রাখার নির্দেশ দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিলেন হাইকোর্ট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মায়ের নামে ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ চেয়ে করা এক রিটের নিষ্পত্তি করে ২৪ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন।

আমাদের অভিভাবকত্ব ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০-এর বিধান অনুযায়ী নাবালকের স্বাভাবিক এবং আইনগত অভিভাবক হলেন পিতা। পিতার অনুপস্থিতিতে বা অভিভাবক হিসেবে অযোগ্যতায় মাতা অথবা আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োজিত ব্যক্তি নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হতে পারেন। তবে নাবালকের সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণের গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে তার জিম্মাদারিত্বের বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারিত্বের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ছেলে শিশুকে সাত বছর এবং মেয়ে শিশুকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মা তার জিম্মায় রাখার অধিকারী।

তবে মা বা নাবালক সন্তান যার তত্ত্বাবধানেই থাকুক না কেন সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া, দেখাশোনা করা এবং ভরণপোষণ দেয়ার দায়িত্ব অভিভাবক হিসেবে সন্তানের পিতার। তবে মায়ের জিম্মায় সন্তান থাকা অবস্থায় বাবা যদি কোনো ভরণপোষণ না দেন, সেক্ষেত্রে মা সন্তানকে পিতার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করাতে বাধ্য নন বলে বিভিন্ন মামলার রায়ে অভিমত প্রদান করা হয়েছে (১৭ ডিএলআর ১৩৪)। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০-এর ১৯ ধারায় অভিভাবক হিসেবে পিতাও অযোগ্য হতে পারেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- যদি বাবা চারিত্রিকভাবে অসৎ হন, সন্তানের মা অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা করেন, মাদকাসক্ত এবং অধার্মিক হন, শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেন, প্রকাশ্যে লাম্পট্য করেন, দুস্থ অথবা নিঃস্ব হন অথবা স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি থাকে এবং নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ দিতে অবহেলা করেন।

‘ইমামবন্দি বনাম মুসাদ্দির ২২ ডিএলআর, পৃষ্ঠা ৬০৮’ মামলায় বলা হয়েছে- ‘মুসলিম আইনে সন্তানের শরীরের ব্যাপারে লিঙ্গভেদে কিছু বয়স পর্যন্ত মা তত্ত্বাবধানের অধিকারিণী। মা স্বাভাবিক অভিভাবক নন। একমাত্র পিতাই বা যদি তিনি মৃত হন তার নির্বাহক আইনগত বা বৈধ অভিভাবক।’ তবে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করলে মা এ অধিকার হারাবেন। [হেদায় ১৩৮, বেইলি ৪৩৫]।

একটি কেস স্টাডি থেকে জানা যায়, একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন শান্তা (কাল্পনিক)। আর সুজন (কাল্পনিক) স্নাতক পর্যায়ের একটি কলেজে। ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। শান্তা অন্তঃসত্ত্বা হয়। এদিকে সুজন অন্যত্র বিয়ে করে। সত্যটা জানার পর বাড়ি থেকে প্রচন্ড চাপ আসে শান্তার ওপর। কেউ বলছে আইনি পদক্ষেপ নিতে; আবার কেউ বলছে গর্ভপাত ঘটাতে। নানা ভাবনার আবর্তে পাগল হয়ে উঠে শান্তা। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বাচ্চা পৃথিবীতে আসে। এবার পালা সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট নেওয়ার।

সার্টিফিকেটে বাচ্চার মা এবং অভিভাবক হিসেবে শান্তার নামটি লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান; কিন্তু বাদসাধে আইন। বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করবার জন্য বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। কর্তৃপক্ষ শান্তার কাছে বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য জানতে চায়। উত্তরে শান্তা বলেন- এ বাচ্চা শুধুমাত্র ওর একার, বাচ্চার কোন বাবা নেই। শান্তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শান্তাকে সাফ জানিয়ে দেয় এ বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু হবে না। শান্তাও বাচ্চার পিতৃ-পরিচয় দাবি করে সুজনকে তার বিড়ম্বনার কারণ হতে চায় না।

আবেদন-নিবেদনে যখন কোন কাজই হলো না, তখন বাধ্য হয়ে শান্তা গেলেন পারিবারিক আদালতে। ১৮৯০ সালের গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট-এর ৭ ধারা মোতাবেক ওই বাচ্চার একমাত্র অভিভাবক ঘোষণার জন্য আবেদন জানান। ওই আইনের ধারা ১১ অনুযায়ী বাচ্চার সম্ভাব্য অভিভাবকদের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এবার কোর্টও শান্তার বাচ্চার বাবার নাম জানতে চায়; কিন্তু শান্তা নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শান্তা কোর্টকে জানিয়ে দেন- বাচ্চার বাবা এই বাচ্চার জন্ম বিষয়ে কিছুই জানেন না। কাজেই তার নাম এখানে অপ্রয়োজনীয়। আদালতের রায় শান্তার বিরুদ্ধে যায়। তার আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। নাছোড়বান্দা শান্তা এ রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের; কিন্তু সেখানেও শান্তার আপিল খারিজ হয়ে যায়। শেষমেশ শান্তা দ্বারস্থ হন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে। ফাইল করেন স্পেশাল লিভ পিটিশন।

এবার এলো এক যুগান্তকারী রায়। পত্রিকায় বড় বড় শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলো- ‘কুমারি মায়ের আইনি স্বীকৃতি...অভিভাবক হতে বিয়ে জরুরি নয়।’

শান্তার মতো মা যারা, তাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক সম্মান ও একক মাতৃত্বের বিষয়টিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে অবশেষে পথ দেখালো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (SLP (Civil) No. 28367 of 2015 : ABC Vs. The State NCT of Delhi)।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top