alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাজেট নিয়ে ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

: বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেট এলেই প্রতি বছরেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত- সবার চোখ থাকে কোথায় খরচ বাড়ল, কোথায় কমল তা জানতে। কারণ বাজেটের নেয়া উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। আগামী বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। বাজেটে নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে বাড়ি-গাড়ি কেনায় যেমন খরচ বাড়তে পারে, তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে আয়করেও কিছুটা ছাড় থাকতে পারে।

আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে এনবিআরকে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এজন্য অন্যান্য খাতের পাশাপাশি এনবিআরের জন্য সময় ধরে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। এর পরিমাণ হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ।

এছাড়া শুল্ক-করছাড় যৌক্তিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কৌশলী হতে হচ্ছে এনবিআরকে। রাজস্ব খাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসেবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। এর মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে। এই ঋণ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে তিন বছরে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির শর্তই হচ্ছে কর-জিডিপির অনুপাতে প্রতি বছরই সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করদাতা খুঁজতে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগ দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য সংস্থাটি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা সংযোজন করবে বলে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা দেয়া হবে। বাজেটে এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে নতুন করদাতা চিহ্নিত করা ও তাদের রিটার্ন দেয়ার কাজে সহায়তা করবে বেসরকারিভাবে নিয়োগ দেয়া এজেন্টরা। এছাড়া নতুন অর্থবছরে বাড়তে পারে বিদেশ ভ্রমণের খরচও। কারণ আগামী অর্থবছরে ভ্রমণকর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। পাশাপাশি ধনীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরের করহারের সীমা বাড়তে পারে। তাতে ধনীদের ওপর বাড়বে কর। এভাবে মানুষের জীবনযাপনকে প্রভাবিত করবে এরকম বেশ কিছু উদ্যোগ থাকছে আগামী বাজেটে। যার প্রভাবে কেউ পাবেন স্বস্তি, কাউকে গুনতে হবে বাড়তি কর। আবার করজালের বাইরে থাকা অনেককে আসতে হবে এনবিআরের করের আওতায়।

এখন দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন মাত্র ৩০ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর পৌনে ২ শতাংশ। এখন উপজেলা এবং গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। তাতে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও করযোগ্য আয়ের লোকজন আছেন। এমনকি শহর এলাকারও অনেক করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

মূলত এনবিআর জনবলের অভাবে নতুন করদাতার সংখ্যা খুব বেশি বাড়াতে পারছে না। আগামী বাজেটে করদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের টিআইএন দেয়া এবং রিটার্ন দেয়ায় সহায়তা করার জন্য বেসরকারি খাতের এজেন্ট নিয়োগের জন্য একটি ধারা আয়কর অধ্যাদেশে সংযোজনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ওই এজেন্টরা কারা করদাতা হওয়ার যোগ্য, তা চিহ্নিত করে টিআইএন নিতে সহায়তার পাশাপাশি রিটার্ন তৈরি, কর হিসাব করাসহ নানা ধরনের সহায়তাও করবেন। এমনকি অনলাইনে রিটার্ন জমাও দিয়ে দেবেন। এজন্য অবশ্য নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পাবেন এজেন্টরা। আয়করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করে ছোট করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেয়ার চিন্তা থাকলেও ধনীরা পার পাবেন না। সর্বোচ্চ স্তরের করহার বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে সর্বোচ্চ স্তরে ২৫ শতাংশ কর আরোপ হয়। এই হার থেকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর বাড়ানো হতে পারে। সেটা সুপার ট্যাক্স হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে সারচার্জের হার ও সীমা পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে। এতে ধনীদের আরও বেশি কর দিতে হতে পারে। স্বস্তি পাবেন ছোট করদাতারা। ৯ মাসের বেশি সময় ধরে দেশে ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। তাতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। বাড়তি খরচের চাপে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সংসারের বাড়তি খরচের চাপে সঞ্চয় নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পক্ষে কর দেয়া বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে। আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কোন কর দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। এছাড়া ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় মিলতে পারে ছাড়। বর্তমানে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হয় না।

ঋণনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন কৌশল নিচ্ছে সরকার। তবে যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, টিআইএন নিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক সংকটের এ সময় করহার না বাড়িয়ে কর আদায়ের আওতা বাড়ানোর দিকে নজর রয়েছে। আগামী বাজেটের সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া নন-এনবিআর কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর-বহির্ভূত আয় (এনটিআর) চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে কর-বহির্ভূত রাজস্ব (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) সংগ্রহ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে জনসাধারণকে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থাকে বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সে অনুযায়ী সংস্থাগুলো তাদের আয় বাড়ানোর উদ্যোগও নিচ্ছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ আয়ের প্রাক্কলন করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের শর্তপূরণ করতে গিয়েই কর-বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইএমএফ বলছে, কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় কম হওয়ায় গত অর্থবছরে দেশের মোট রাজস্ব আয় কমে গেছে। আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ৫০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও আইএমএফ বলছে- সরকার এ পরিমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

প্রসঙ্গ : নিত্যপণ্যের দাম

ছবি

টঙ্ক আন্দোলনের কুমুদিনী হাজং

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

দূষণমুক্ত পানির বিকল্প নাই

রম্যগদ্য : ‘দুনিয়ার বাঙালি এক হও”

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাজেট নিয়ে ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেট এলেই প্রতি বছরেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত- সবার চোখ থাকে কোথায় খরচ বাড়ল, কোথায় কমল তা জানতে। কারণ বাজেটের নেয়া উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। আগামী বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। বাজেটে নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে বাড়ি-গাড়ি কেনায় যেমন খরচ বাড়তে পারে, তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে আয়করেও কিছুটা ছাড় থাকতে পারে।

আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে এনবিআরকে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এজন্য অন্যান্য খাতের পাশাপাশি এনবিআরের জন্য সময় ধরে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। এর পরিমাণ হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ।

এছাড়া শুল্ক-করছাড় যৌক্তিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কৌশলী হতে হচ্ছে এনবিআরকে। রাজস্ব খাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসেবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। এর মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে। এই ঋণ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে তিন বছরে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির শর্তই হচ্ছে কর-জিডিপির অনুপাতে প্রতি বছরই সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করদাতা খুঁজতে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগ দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য সংস্থাটি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা সংযোজন করবে বলে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা দেয়া হবে। বাজেটে এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে নতুন করদাতা চিহ্নিত করা ও তাদের রিটার্ন দেয়ার কাজে সহায়তা করবে বেসরকারিভাবে নিয়োগ দেয়া এজেন্টরা। এছাড়া নতুন অর্থবছরে বাড়তে পারে বিদেশ ভ্রমণের খরচও। কারণ আগামী অর্থবছরে ভ্রমণকর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। পাশাপাশি ধনীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরের করহারের সীমা বাড়তে পারে। তাতে ধনীদের ওপর বাড়বে কর। এভাবে মানুষের জীবনযাপনকে প্রভাবিত করবে এরকম বেশ কিছু উদ্যোগ থাকছে আগামী বাজেটে। যার প্রভাবে কেউ পাবেন স্বস্তি, কাউকে গুনতে হবে বাড়তি কর। আবার করজালের বাইরে থাকা অনেককে আসতে হবে এনবিআরের করের আওতায়।

এখন দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন মাত্র ৩০ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর পৌনে ২ শতাংশ। এখন উপজেলা এবং গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। তাতে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও করযোগ্য আয়ের লোকজন আছেন। এমনকি শহর এলাকারও অনেক করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

মূলত এনবিআর জনবলের অভাবে নতুন করদাতার সংখ্যা খুব বেশি বাড়াতে পারছে না। আগামী বাজেটে করদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের টিআইএন দেয়া এবং রিটার্ন দেয়ায় সহায়তা করার জন্য বেসরকারি খাতের এজেন্ট নিয়োগের জন্য একটি ধারা আয়কর অধ্যাদেশে সংযোজনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ওই এজেন্টরা কারা করদাতা হওয়ার যোগ্য, তা চিহ্নিত করে টিআইএন নিতে সহায়তার পাশাপাশি রিটার্ন তৈরি, কর হিসাব করাসহ নানা ধরনের সহায়তাও করবেন। এমনকি অনলাইনে রিটার্ন জমাও দিয়ে দেবেন। এজন্য অবশ্য নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পাবেন এজেন্টরা। আয়করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করে ছোট করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেয়ার চিন্তা থাকলেও ধনীরা পার পাবেন না। সর্বোচ্চ স্তরের করহার বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে সর্বোচ্চ স্তরে ২৫ শতাংশ কর আরোপ হয়। এই হার থেকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর বাড়ানো হতে পারে। সেটা সুপার ট্যাক্স হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে সারচার্জের হার ও সীমা পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে। এতে ধনীদের আরও বেশি কর দিতে হতে পারে। স্বস্তি পাবেন ছোট করদাতারা। ৯ মাসের বেশি সময় ধরে দেশে ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। তাতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। বাড়তি খরচের চাপে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সংসারের বাড়তি খরচের চাপে সঞ্চয় নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পক্ষে কর দেয়া বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে। আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কোন কর দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। এছাড়া ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় মিলতে পারে ছাড়। বর্তমানে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হয় না।

ঋণনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন কৌশল নিচ্ছে সরকার। তবে যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, টিআইএন নিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক সংকটের এ সময় করহার না বাড়িয়ে কর আদায়ের আওতা বাড়ানোর দিকে নজর রয়েছে। আগামী বাজেটের সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া নন-এনবিআর কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর-বহির্ভূত আয় (এনটিআর) চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে কর-বহির্ভূত রাজস্ব (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) সংগ্রহ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে জনসাধারণকে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থাকে বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সে অনুযায়ী সংস্থাগুলো তাদের আয় বাড়ানোর উদ্যোগও নিচ্ছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ আয়ের প্রাক্কলন করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের শর্তপূরণ করতে গিয়েই কর-বহির্ভূত রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইএমএফ বলছে, কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় কম হওয়ায় গত অর্থবছরে দেশের মোট রাজস্ব আয় কমে গেছে। আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ৫০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও আইএমএফ বলছে- সরকার এ পরিমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top