alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মিথ্যা মামলায় জড়ালে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

: সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

কেউ যদি আপনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে, তাহলে আপনি সেই মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধেও মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। এমনকি মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর জেল, জরিমানার ব্যবস্থাও করতে পারেন। মানহানি মামলাটি কখন, কোথায়, কিভাবে করতে হয় তা নিয়েই আজকের নিবন্ধ।

মিথ্যা মামলার দায় থেকে আপনি যখন অব্যহতি পাবেন কিংবা বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত যখন আপনাকে খালাস দেবে কিংবা মামলার তদন্তকারী অফিসার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা না পেলে ওই মামলায় আপনার পক্ষে ফাইনাল রিপোর্ট দেবে, তখন ওই মামলাটিকে মিথ্যা মামলা দাবি করে আপনি বাদীর বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে পারেন। মনে রাখবেন মিথ্যা মামলায় আপনি মুক্তি কিংবা খালাস না পেলে কিন্তু এ মানহানি মামলা করতে পারবেন না।

আর ম্যাজিস্ট্রেট যদি মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগের পর কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৭৬ বি ধারা অনুযায়ী দায়রা আদালতে আপিল দায়ের করতে পারবেন। এতে ফল না পেলে মহামান্য হাইকোর্টেও রিভিশন করতে পারবেন। তবে এরকম মিথ্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কিন্তু ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আছে। তিনি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারার বিধান মতে মিথ্যা অভিযোগকারী বাদীর বিরুদ্ধে ৫০০ বা ১০০০/-টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে ৩০ দিনের জেল দিতে পারবেন। আবার ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫(৫) ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট ৬ মাসের কারাদন্ড বা ৩০০০/- টাকা জরিমানাও করতে পারেন। আবার ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা দায়রা আদালত নিজেও ফৌজদারি কর্যিবিধির ১৯৫ ধারার বিধান অনুযায়ী মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও পাঠাতে পারে। কাজেই বিচারক নিজে স্বপ্রণোদিত হয়েই বাদীর বিরুদ্ধে ফলস প্রসিকিউশন দায়ের করতে পারেন।

কেউ যদি আপনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে, তাহলে আপনি সেই মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধেও মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন

বিচারক কোনো পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অর্থাৎ আসামির দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি আমলে নিতে পারবেন। মিথ্যা মামলা সাজা দেয়ার বিষয় বলা আছে দন্ডবিধির ২১১ ধারায়। মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১০ বছরের অধিক সাজা হতে পারেন এমন অপরাধের মিথ্যা মামলার সাজা হলো ৭ বছরের কারাদন্ড। এই তিন প্রকার অপরাধ ব্যতীত অন্য ধরনের ক্রিমিনাল অপরাধের জন্য মিথ্যা মামলার সাজা হলো ২ বছরের কারাদন্ড।

আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সাক্ষীর শাস্তি দিতে হলে মিথ্যা মামলায় খালাস আদেশ পাওয়ার পর আদালতে আবেদনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। দন্ডবিধির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড আর মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য যদি আসামির মৃত্যুদন্ড হয়, তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী ব্যক্তিরও দন্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুযায়ী মুত্যুদন্ড শাস্তি হতে পারে। আবার ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ শিশুর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারার বিধান অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ৬ মাসের জেলের বিধান করা হয়েছে। তবে শিশু আদালতের বিচারক নিজে এ শাস্তি প্রদান করবেন না। তিনি শাস্তির জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠিয়ে দেবেন। এমনকি কেউ যদি গ্রাম আদালতে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে, তাহলে গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর ৯(ক) ধারায় ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেউ যদি মিথ্যা ধর্ষণ কিংবা অন্য কোন মামলা দায়ের করে তাহলে এ আইনের ১৭ ধারার বিধান মতে বাদীর শাস্তি ৭ বছর।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা মামলার অভিযোগ আনয়ন করতে পারবে না। আসামিকেই অভিযোগ আনয়ন করতে হবে। এছাড়া টর্ট আইন অনুসারে বিদ্বেষপরায়ণ মামলার ক্ষেত্রে প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, বিবাদী তার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া বিদ্বেষবশত মামলাটি করায় বাদীর ক্ষতি হয়েছে।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট]

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মিথ্যা মামলায় জড়ালে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

কেউ যদি আপনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে, তাহলে আপনি সেই মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধেও মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। এমনকি মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর জেল, জরিমানার ব্যবস্থাও করতে পারেন। মানহানি মামলাটি কখন, কোথায়, কিভাবে করতে হয় তা নিয়েই আজকের নিবন্ধ।

মিথ্যা মামলার দায় থেকে আপনি যখন অব্যহতি পাবেন কিংবা বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত যখন আপনাকে খালাস দেবে কিংবা মামলার তদন্তকারী অফিসার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা না পেলে ওই মামলায় আপনার পক্ষে ফাইনাল রিপোর্ট দেবে, তখন ওই মামলাটিকে মিথ্যা মামলা দাবি করে আপনি বাদীর বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে পারেন। মনে রাখবেন মিথ্যা মামলায় আপনি মুক্তি কিংবা খালাস না পেলে কিন্তু এ মানহানি মামলা করতে পারবেন না।

আর ম্যাজিস্ট্রেট যদি মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগের পর কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৭৬ বি ধারা অনুযায়ী দায়রা আদালতে আপিল দায়ের করতে পারবেন। এতে ফল না পেলে মহামান্য হাইকোর্টেও রিভিশন করতে পারবেন। তবে এরকম মিথ্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কিন্তু ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আছে। তিনি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারার বিধান মতে মিথ্যা অভিযোগকারী বাদীর বিরুদ্ধে ৫০০ বা ১০০০/-টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে ৩০ দিনের জেল দিতে পারবেন। আবার ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫(৫) ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট ৬ মাসের কারাদন্ড বা ৩০০০/- টাকা জরিমানাও করতে পারেন। আবার ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা দায়রা আদালত নিজেও ফৌজদারি কর্যিবিধির ১৯৫ ধারার বিধান অনুযায়ী মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও পাঠাতে পারে। কাজেই বিচারক নিজে স্বপ্রণোদিত হয়েই বাদীর বিরুদ্ধে ফলস প্রসিকিউশন দায়ের করতে পারেন।

কেউ যদি আপনাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে, তাহলে আপনি সেই মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধেও মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন

বিচারক কোনো পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অর্থাৎ আসামির দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি আমলে নিতে পারবেন। মিথ্যা মামলা সাজা দেয়ার বিষয় বলা আছে দন্ডবিধির ২১১ ধারায়। মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১০ বছরের অধিক সাজা হতে পারেন এমন অপরাধের মিথ্যা মামলার সাজা হলো ৭ বছরের কারাদন্ড। এই তিন প্রকার অপরাধ ব্যতীত অন্য ধরনের ক্রিমিনাল অপরাধের জন্য মিথ্যা মামলার সাজা হলো ২ বছরের কারাদন্ড।

আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সাক্ষীর শাস্তি দিতে হলে মিথ্যা মামলায় খালাস আদেশ পাওয়ার পর আদালতে আবেদনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। দন্ডবিধির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড আর মিথ্যা সাক্ষ্যের জন্য যদি আসামির মৃত্যুদন্ড হয়, তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী ব্যক্তিরও দন্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুযায়ী মুত্যুদন্ড শাস্তি হতে পারে। আবার ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ শিশুর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারার বিধান অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ৬ মাসের জেলের বিধান করা হয়েছে। তবে শিশু আদালতের বিচারক নিজে এ শাস্তি প্রদান করবেন না। তিনি শাস্তির জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠিয়ে দেবেন। এমনকি কেউ যদি গ্রাম আদালতে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে, তাহলে গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর ৯(ক) ধারায় ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেউ যদি মিথ্যা ধর্ষণ কিংবা অন্য কোন মামলা দায়ের করে তাহলে এ আইনের ১৭ ধারার বিধান মতে বাদীর শাস্তি ৭ বছর।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা মামলার অভিযোগ আনয়ন করতে পারবে না। আসামিকেই অভিযোগ আনয়ন করতে হবে। এছাড়া টর্ট আইন অনুসারে বিদ্বেষপরায়ণ মামলার ক্ষেত্রে প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, বিবাদী তার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া বিদ্বেষবশত মামলাটি করায় বাদীর ক্ষতি হয়েছে।

[লেখক: আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট]

back to top