গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামটি গিয়াসপুর বাজার থেকে সিঙ্গুয়া ভূমি অফিস অভিমুখে ১০৩/৭৭ আল তৌফিকী পরিবার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। প্রায় দুই দশক আগে এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নরোত্তমপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, যা গ্রামের দরিদ্র, নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার কথা ছিল। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সমাজসেবক আব্দুল কুদ্দুছ এই ক্লিনিকের জমি দান করেন। সেই সময় সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ উদ্যোগ ছিল জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নরোত্তমপুর ক্লিনিকের আওতাধীন এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি। অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের। এই ক্লিনিক থেকেই গর্ভবতী মায়েদের পরামর্শ, টিকাদান কর্মসূচি, শিশুর পুষ্টি ও সাধারণ রোগের চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে ক্লিনিকটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ বন্ধ থাকে, আর খোলা থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে পাওয়া যায় না। গত এক সপ্তাহ ধরে ক্লিনিকটি সম্পূর্ণ বন্ধ। আশেপাশের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন ওষুধ ও চিকিৎসার আশায় আসে, কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে ফিরে যায়।
এই সমস্যার সমাধানে কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কমিউনিটি ক্লিনিকের উপস্থিতি ও কার্যক্রম ডিজিটালভাবে মনিটরিং করা যেতে পারে, যাতে জনগণ জানতে পারে ক্লিনিক খোলা আছে কি না এবং কোন স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে “কমিউনিটি হেলথ ভলান্টিয়ার” হিসেবে যুক্ত করা যেতে পারে, যারা প্রাথমিক চিকিৎসা, টিকাদান বা ওষুধ বিতরণে সহায়তা করবে। ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমিটি ও সিভিল সার্জন অফিসের মধ্যে সমন্বিত তদারকি কাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি। পাশাপাশি সরকারি ক্লিনিকের চারপাশে বেসরকারি হাসপাতাল বা চেম্বারের বিজ্ঞাপন টানানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু নরোত্তমপুর নয়, বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিক আজ একই সংকটে পড়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এই সমস্যা জাতীয়ভাবে গুরুত্ব পেতে হবে। ক্লিনিক বন্ধ থাকা মানে কেবল একটি ভবনের দরজা বন্ধ নয়, বরং গ্রামের দরিদ্র মানুষের জীবন ও আশার দরজাও বন্ধ হয়ে যাওয়া। সরকারের “সবার জন্য স্বাস্থ্য” অঙ্গীকার তখনই সফল হবে, যখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার সক্রিয় হবে, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত উপস্থিত থাকবেন, আর মানুষ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে।
মোসাম্মৎ ফাতেমা
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামটি গিয়াসপুর বাজার থেকে সিঙ্গুয়া ভূমি অফিস অভিমুখে ১০৩/৭৭ আল তৌফিকী পরিবার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। প্রায় দুই দশক আগে এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নরোত্তমপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, যা গ্রামের দরিদ্র, নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার কথা ছিল। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সমাজসেবক আব্দুল কুদ্দুছ এই ক্লিনিকের জমি দান করেন। সেই সময় সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ উদ্যোগ ছিল জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নরোত্তমপুর ক্লিনিকের আওতাধীন এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি। অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের। এই ক্লিনিক থেকেই গর্ভবতী মায়েদের পরামর্শ, টিকাদান কর্মসূচি, শিশুর পুষ্টি ও সাধারণ রোগের চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে ক্লিনিকটি কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ বন্ধ থাকে, আর খোলা থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে পাওয়া যায় না। গত এক সপ্তাহ ধরে ক্লিনিকটি সম্পূর্ণ বন্ধ। আশেপাশের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন ওষুধ ও চিকিৎসার আশায় আসে, কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে ফিরে যায়।
এই সমস্যার সমাধানে কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কমিউনিটি ক্লিনিকের উপস্থিতি ও কার্যক্রম ডিজিটালভাবে মনিটরিং করা যেতে পারে, যাতে জনগণ জানতে পারে ক্লিনিক খোলা আছে কি না এবং কোন স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে “কমিউনিটি হেলথ ভলান্টিয়ার” হিসেবে যুক্ত করা যেতে পারে, যারা প্রাথমিক চিকিৎসা, টিকাদান বা ওষুধ বিতরণে সহায়তা করবে। ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমিটি ও সিভিল সার্জন অফিসের মধ্যে সমন্বিত তদারকি কাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি। পাশাপাশি সরকারি ক্লিনিকের চারপাশে বেসরকারি হাসপাতাল বা চেম্বারের বিজ্ঞাপন টানানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু নরোত্তমপুর নয়, বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিক আজ একই সংকটে পড়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এই সমস্যা জাতীয়ভাবে গুরুত্ব পেতে হবে। ক্লিনিক বন্ধ থাকা মানে কেবল একটি ভবনের দরজা বন্ধ নয়, বরং গ্রামের দরিদ্র মানুষের জীবন ও আশার দরজাও বন্ধ হয়ে যাওয়া। সরকারের “সবার জন্য স্বাস্থ্য” অঙ্গীকার তখনই সফল হবে, যখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার সক্রিয় হবে, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত উপস্থিত থাকবেন, আর মানুষ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে।
মোসাম্মৎ ফাতেমা