ভূমিকম্প এখন দেশের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের একটি নাম। কারণ এই দুর্যোগ আসে হঠাৎ, থাকে অল্পক্ষণ, আর মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে একটি শহরকে। মানুষ জানে-ভূমিকম্পের সময় বাঁচার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া। কিন্তু ঢাকায় বাস করলে সেই সাধারণ উপায়টিও প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কারণ ঘর থেকে বেরোতেই সময় লাগে, আর বেরোলেও আশেপাশে নিরাপদ কোনো খোলা জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। যেন নিজের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মানুষ অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়।
ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল মহানগর। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থানের চাহিদা বেড়েছে, আর সেই চাপ সামলাতে শহর ভরে গেছে অগণিত অট্টালিকা, কলকারখানা, দোকানপাট ও কংক্রিটের দেয়ালে। খোলা জায়গা, উন্মুক্ত প্রাঙ্গন, খেলার মাঠ-সবই দ্রুত হারিয়ে গেছে এই শহরের নিত্যদিনের চাপে। শুধু স্থান কমে যায়নি, বরং জায়গার অভাবে ভবন–গঠনে নিয়মও মানা হয়নি। ঢাকার প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন বড় ভূমিকম্পে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে-এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে আসছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শহরের ৮০ শতাংশ বিল্ডিং নির্মাণবিধি অনুসরণ করে গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে পুরান ঢাকাসহ অনেক এলাকার ভবন বহু আগেই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় যুক্ত হলেও তাদের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ হয়নি। তাই বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
২০১৫ সালের নেপালের ভূমিকম্পের কথা মনে করলে ঢাকার ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়। জনসংখ্যা ছিল মাত্র দেড় কোটি, ভবনের ঘনত্বও ঢাকার মতো ছিল না-তারপরও ৭.৮ মাত্রার সেই কম্পনে প্রায় ৯ হাজার মানুষ মারা যায়, লাখো মানুষ আহত হয় এবং লাখো ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। হাসপাতাল, খাদ্য, আশ্রয়-সবক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়। ঢাকার জনসংখ্যা এখন প্রায় চার কোটি-তাই একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরিণতি কল্পনা করলেই শিউরে উঠতে হয়।
ঢাকাকে নিরাপদ করতে হলে দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও কাঠামোগত জটিলতা দূর করতে হবে ধীরে ধীরে, পরিকল্পিতভাবে। প্রশাসনে সৎ ও সক্ষম কর্মকর্তা প্রয়োজন, যারা নিয়ম না মেনে নির্মিত ভবন শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। অবৈধ দখলদারি সরাতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ করতে হবে, তার ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ করতে হবে। জনগণকেও বোঝাতে হবে যে অবৈধ স্থাপনা রক্ষা করা মানে নিজের জীবনকে বিপন্ন করা।
যদি এখনই বড় কোনো ভূমিকম্প হয়, ঢাকাবাসীর পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না। তাই আতঙ্ক নয়-জ্ঞান ও প্রস্তুতিই সবচেয়ে জরুরি। ভূমিকম্পের মুহূর্তে শক্ত টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া, মাথা ও জরুরি অঙ্গ সুরক্ষায় মনোযোগ দেওয়াই জীবনের সম্ভাব্য সুরক্ষা বাড়াতে পারে।
লাবনী আক্তার কবিতা
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
ভূমিকম্প এখন দেশের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের একটি নাম। কারণ এই দুর্যোগ আসে হঠাৎ, থাকে অল্পক্ষণ, আর মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে একটি শহরকে। মানুষ জানে-ভূমিকম্পের সময় বাঁচার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া। কিন্তু ঢাকায় বাস করলে সেই সাধারণ উপায়টিও প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কারণ ঘর থেকে বেরোতেই সময় লাগে, আর বেরোলেও আশেপাশে নিরাপদ কোনো খোলা জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। যেন নিজের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মানুষ অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়।
ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল মহানগর। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থানের চাহিদা বেড়েছে, আর সেই চাপ সামলাতে শহর ভরে গেছে অগণিত অট্টালিকা, কলকারখানা, দোকানপাট ও কংক্রিটের দেয়ালে। খোলা জায়গা, উন্মুক্ত প্রাঙ্গন, খেলার মাঠ-সবই দ্রুত হারিয়ে গেছে এই শহরের নিত্যদিনের চাপে। শুধু স্থান কমে যায়নি, বরং জায়গার অভাবে ভবন–গঠনে নিয়মও মানা হয়নি। ঢাকার প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন বড় ভূমিকম্পে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে-এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে আসছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শহরের ৮০ শতাংশ বিল্ডিং নির্মাণবিধি অনুসরণ করে গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে পুরান ঢাকাসহ অনেক এলাকার ভবন বহু আগেই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় যুক্ত হলেও তাদের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ হয়নি। তাই বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
২০১৫ সালের নেপালের ভূমিকম্পের কথা মনে করলে ঢাকার ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়। জনসংখ্যা ছিল মাত্র দেড় কোটি, ভবনের ঘনত্বও ঢাকার মতো ছিল না-তারপরও ৭.৮ মাত্রার সেই কম্পনে প্রায় ৯ হাজার মানুষ মারা যায়, লাখো মানুষ আহত হয় এবং লাখো ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। হাসপাতাল, খাদ্য, আশ্রয়-সবক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়। ঢাকার জনসংখ্যা এখন প্রায় চার কোটি-তাই একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরিণতি কল্পনা করলেই শিউরে উঠতে হয়।
ঢাকাকে নিরাপদ করতে হলে দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও কাঠামোগত জটিলতা দূর করতে হবে ধীরে ধীরে, পরিকল্পিতভাবে। প্রশাসনে সৎ ও সক্ষম কর্মকর্তা প্রয়োজন, যারা নিয়ম না মেনে নির্মিত ভবন শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। অবৈধ দখলদারি সরাতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ করতে হবে, তার ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ করতে হবে। জনগণকেও বোঝাতে হবে যে অবৈধ স্থাপনা রক্ষা করা মানে নিজের জীবনকে বিপন্ন করা।
যদি এখনই বড় কোনো ভূমিকম্প হয়, ঢাকাবাসীর পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না। তাই আতঙ্ক নয়-জ্ঞান ও প্রস্তুতিই সবচেয়ে জরুরি। ভূমিকম্পের মুহূর্তে শক্ত টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া, মাথা ও জরুরি অঙ্গ সুরক্ষায় মনোযোগ দেওয়াই জীবনের সম্ভাব্য সুরক্ষা বাড়াতে পারে।
লাবনী আক্তার কবিতা