image
পাবনার আটঘরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দুইজন একাত্তরের নির্যাতিত নারী। সোনা বালা ও মায়া রাণী

একাত্তরের নির্যাতিতদের কথা

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

একাত্তরের নির্যাতিত নারীদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধি যাঁরা দিয়েছিলেন তাঁদের আন্তরিকতায় কোনো ত্রুটি ছিল না। তাঁরা আশা করেছিলেন ওই পরিচয় গৌরব বহন করবে। সে-আশা পুরোপুরি বিফলে গেছে, বীরাঙ্গনা পরিচয় দুঃসহ বোঝায় পরিণত হয়েছে। উপাধি বহনকারীরা দেখেছেন শিরোস্ত্রাণটি কণ্ঠকশোভিত, ওটি ফেলে দিতে পারলে তাঁরা বাঁচেন। সমাজ তো বটেই, অতি আপনজনেরাও এই মেয়েদেরকে পদে পদে অপমানিত করেছে। কটুবাক্য, অশ্লীল মন্তব্য, হাসিঠাট্টা কোনো কিছু বাদ রাখেনি। অবজ্ঞা উপেক্ষা এঁরা সহ্য করতে পারতেন, সার্বক্ষণিক সরব ও নীরব অপমান সহ্য করা কঠিন হয়েছে। একাত্তরে এঁরা পালাতে চেয়েছেন, একাত্তরের পরেও লুকিয়ে থাকতে হয়েছে, পালাতেও হয়েছে। পরিবারে আশ্রয় পাননি অনেকে, যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা সম্মান পাননি। পালিয়ে শহরে চলে এসেছেন, কেউ চিনবে না এমন জায়গা খুঁজেছেন, চেয়েছেন আত্মপরিচয় পুরোপুরি লুপ্ত করে দিতে। ‘দেশান্তরিত’ হয়েছেন তাঁরা। ভিখিরি হয়েছেন কেউ, কেউ কাজ নিয়েছেন ভৃত্যের, কেউ-বা আশ্রয় নিয়েছেন গার্মেন্টসে। সস্তা নারী শ্রমিকের কাতার দীর্ঘ হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে বোরখার আধিক্য। সম্মান যে কতটা অসম্মানের হতে পারে তার একটা দৃষ্টান্ত এখানে পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো আত্মহত্যাই করেছেন; যাঁদের খবর আমরা রাখি না। নির্যাতনের সময়েও ‘সাহসী’ মেয়েদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন মুক্তির উপায় হিসেবে। যাঁরা পারেননি তাঁদেরকে বহন করতে হয়েছে অভিশপ্ত জীবনের গ্লানি। গ্রামে কাজ নেই, উল্টো অপমান রয়েছে, গ্রামে তাঁরা থাকবেন কী করে? স্বাধীন দেশে তাঁরা উৎপাটিত।

কিন্তু কেন এমনটা ঘটলো? মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদেরকে অসামান্য সম্মান এনে দিয়েছিল। সে-সম্মান কেন আমরা ধরে রাখতে পারলাম না? কারণ হলো এই যে, সম্মানকে আমরা ভাগাভাগি করে নিতে পারিনি। গৌরব কুক্ষিগত করে ফেলতে চেয়েছে অল্প কিছু মানুষ, যারা ক্ষমতাবান ও সুযোগপ্রাপ্ত। এ কাজটি করার প্রক্রিয়াতে তারা আচার আচরণ দ্বারা অসম্মানিত করেছে নিজেদেরকে, অসম্মান বয়ে নিয়ে এসেছে গোটা দেশের জন্য।

নির্যাতিত মেয়েরা কিন্তু সম্মান চাননি, গৌরব তাঁদের কাক্সিক্ষত ছিল না, তাঁরা চেয়েছেন স্বাভাবিক জীবন। সে জীবন তাঁরা পাননি। একাত্তরে পাননি, তারপরেও পাননি। হানাদারেরা সে সুযোগ তাঁদেরকে দেয়নি, সুযোগ তারাও দেয়নি স্বাধীন বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় এসেছে। ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়াল? দাঁড়াল এই যে রাষ্ট্র ভেঙেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বদল হয়নি। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। বরঞ্চ আরও খারাপ হয়েছে। আরও বেশি দুঃসহ হয়ে উঠেছে ব্যবস্থার নিপীড়ন। দু’দিক থেকে ঘটেছে ঘটনা। একদিকে স্বাধীনতা আগের তুলনায় বেশি করে স্বাধীন করে দিয়েছে ক্ষমতাবানদের। তারা সেই স্বাধীনতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছে। বৃদ্ধি করার অর্থ দাঁড়িয়েছে বঞ্চিতদেরকে বঞ্চিত করা। এদের বৃদ্ধিতে অন্যদের হ্রাস। অন্যদিকে অকল্পনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তি যে আশার সৃষ্টি করেছিল, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। আশাভঙ্গের বেদনা বঞ্চনার দুঃখে নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে।

ব্যবস্থাটা বৈষম্যমূলক। বৈষম্য পুরাতন। একাত্তরের হানাদারেরা সকল বাঙালিকেই এক চোখে দেখতো। ভাবতো তারা শত্রু। বাঙালিরাও এক হয়ে গিয়েছিল, পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে। সত্যি সত্যি এক হয়েছিল কি? না, হয়নি, হওয়া সম্ভব ছিল না। পার্থক্য ছিল হিন্দু-মুসলমানে, ধনী-গরিবে এবং নারী-পুরুষে। হানাদার দস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল মেয়েদের ওপর। মেয়েদেরকে তারা ভোগ্য বস্তু মনে করেছে। তারা অবাধে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে এবং উন্মত্ত হিংস্রতায় ধর্ষণ করেছে মেয়েদেরকে। মেয়ে পুরুষ সবাই পালিয়েছে, কিন্তু মেয়েদের পক্ষে পালানোটা কঠিন ছিল। অনেকেরই সন্তান ছিল, এবং কেউই জানতেন না কোথায় যাবেন, কোন পথে যাবেন; প্রস্তুতি ছিল না কোনো প্রকারের। তাছাড়া হানাদাররা যে এমন অপরাধ করতে পারে সেটা ছিল কল্পনার বাইরে। উল্টোদিকে ওই সারমেয়রা বিশেষভাবে খুঁজছিল মেয়েদেরকেই। পাশবিক লোলুপতা ছিল তাদের দৃষ্টিতে। পালের গোদা ব্যঘ্রের ছদ্মবেশধারী সারমেয় লে. জে. নিয়াজী ছিল হানাদারের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণাদানকারী। সে তার সৈন্যদের লেলিয়ে দিয়েছে এবং নিজেও একই কাজ করায় তৎপর থেকেছে। শুনতে পেয়েছিলাম ইরাকে নাকি আইএস-এর দুর্বৃত্তরা তবু ধর্ষণের একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছিল, পাকিস্তানি দুর্বৃত্তরা ছিল পুরোপুরি মুক্ত। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা ‘মুক্তি’দের খুঁজতো। আর খুঁজতো সেয়ানা মেয়েদের। ‘মুক্তি’ পেলে হত্যা করতো, সেয়ানা মেয়ে পেলে যা করতো তা হত্যার অধিক।

নির্যাতিত এই মেয়েরা তাঁদের কথা বলতে চাননি। বিশজনকে খুঁজে বের করা হয়েছিল, যাঁদের সন্ধান পাওয়া গেছে তাঁদেরকে কথা বলতে রাজি করানো কম কঠিন হবার কথা নয়। এই বিশজনের কাহিনিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করার জন্য মূল্যবান তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে। সে-ইতিহাস লিখিত হচ্ছে, দিনটিতে তাদের নিয়ে কথা বলবো আমরা।

অ্যাংলো-আমেরিকান কবি ও সাহিত্য সমালোচকটিএস এলিয়ট বলেছেন, “যে জাতি তাঁর ইতিহাস ঐতিহ্যকে স্মরণ করে না, সে জাতি কখনো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না।”বিশেষভাবে এই আপ্তবাক্যটি স্মরণ করে আজ আমি আমাদের সেই বীর নারীদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। জানি,বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই একদিকে যেমন লাল-সবুজ পতাকায় ছেয়ে যায় দেশ- আনন্দ উল্লাস সত্ত্বেও বিষাদের ছায়াতলে জেগে ওঠে দু’লক্ষ মা ও বোনের অসহায় ও করুণ মুখাবয়ব। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের ইতিহাস যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে আমাদের মানসপটে।তারা আর কেউ নন, এদেশেরই সাহসী ও বীরনারী বা বীরাঙ্গনা- যাঁরা সেদিন যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বর্বর পাকিদের যৌন লালসার নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত হয়েছেন।তাঁদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার জন্যে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।তাঁদের সম্মান জানাতে বাংলাদেশ সরকার বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলো- তাদের প্রতি বীরত্ব ও সম্মান প্রদর্শনের প্রশস্তিবচন হিসেবে।এই মহিয়সী নারীরা যুদ্ধকালীন ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েও দেশের জন্যে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁদের এই বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫০৪ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। এই সংখ্যাটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।

এটি শুধু তাঁদের জন্য যাঁরা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।এবং তাঁদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার কর্তৃক বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বলা বাহুল্য যে,২ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ নির্যাতিত নারীর মধ্যে থেকে মাত্র ৫০৪ জনের স্বীকৃতি মিলেছে।নারীদের যথাযথ স্বীকৃতির ব্যাপারে সর্বত্রই এক ধরনের কৃপণতা লক্ষণীয়।

৩.

বীরাঙ্গনা নারীদের পেছনের ইতিহাস বড়ই করুণ ও মর্মন্তুদ।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করি আমরা।

*যুদ্ধচলাকালীন ৯মাস সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ২ থেকে ৪ লক্ষ নিরীহ নারী পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা ধর্ষিত হয়।

*১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধকালীন ধর্ষিত নারীদের বীরঙ্গনা খেতাব প্রদান করে।

*তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান “পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের যথাযোগ্য সম্মান এবং মর্যাদা” দেবার জন্য আহ্বান জানান এবং বীরাঙ্গনাদেরকে নিজের মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের অনেকে আত্মহত্যা করেন, অনেকে দেশ ছেড়ে বাইরে গৃহস্থালী কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। অসংখ্য বীরাঙ্গনা অশিক্ষিত ধাত্রীদের মাধ্যমে গর্ভপাত করানোর সময়মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলে সরকার “সেবা সদন”প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

*১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়- যাতে করে এই নিপীড়িত নারীদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড, দি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাবরশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং সেন্টার এবং ক্যাথলিক চার্চের সহায়তায় কারিগরি এবং মানবিক সমর্থন প্রদান করা যায়।

*পরবর্তী সময়ে সরকার তাদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে এবং তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি ক্যাম্পেইন চালু করে। এর ফলে বাংলাদেশ বীরাঙ্গনাদের আড়াল করতে চাইছে বলে অভিযোগ ওঠে।ফলে সে উদ্যোগও থেমে যায়।বীরাঙ্গনাদেরকে নিজ পরিবার এবং সমাজ থেকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে।

*নারী অধিকার কর্মীরা বীরাঙ্গনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।

*বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশন এবং মিতালী হোসেন উচ্চ আদালতে বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য একটি পিটিশন পেশ করেন।

*২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালত বীরাঙ্গনাদের মর্যাদাকে কেন বর্ধিত করা হবে না- এ ব্যাপারে সরকারের কাছে জানতে চায়।

*২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বীরাঙ্গনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেবার প্রস্তাব পাস করে।

*২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো ৪৩ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে বীরাঙ্গনা এই নারীরাও মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই সমান সুযোগ সুবিধা লাভ করেন।

পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ৫০৪ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার সমমর্যাদায় অবস্থান করছেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর হাজার হাজার নারী এবং বালিকাদেরকে নির্যাতন শিবির ও সেনা ব্যারাক থেকে উদ্ধার করা হয়।

গবেষকরা বলেছেন, বাংলাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এরফলে অগণিত যুদ্ধশিশুর জন্ম হয় ও নির্যাতনের শিকার নারীদেরকে সমাজচ্যুত করা হয়।

৪.

আমরা যদিও কথায় কথায় বলি, তিরিশ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগ এবং দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে এই স্বাধীনতা পেয়েছি। এই একটিমাত্র বাক্যে আসলে তাঁদের ত্যাগ, আত্মদান,রক্তদানের মর্মন্তুদ বেদনা, যৌন নিপীড়নের যে ঐতিহাসিক হিং¯্রতা, সেভাবে তা বহন করে না।বীরাঙ্গনা নারীদের বাস্তব কাহিনী নিয়ে সাহিত্যেও খুব বেশি কাজ হয়েছে- একথা বলা যাবে না।

তবে ড. নীলিমা ইব্রাহিম রচিত ‘আমি বীরঙ্গনা বলছি’ একটি কালজয়ী রচনা- এ গ্রন্থে লেখক ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরেছেন অত্যন্ত দক্ষতায়।

এছাড়া ব্রিটিশ থিয়েটার গ্রুপ দ্য কমল কালেকটিব ও লিসা গাজীর মঞ্চায়িত একটি নাটকের কথা জানা যায়- ‘বীরাঙ্গনা: উইমেন অফ ওয়ার’।এই একাঙ্কিকা নাটকে

ধর্ষিত নারীর জবানে তাঁর হাহাকার বেদনার্তির কথা জানা যায়।

“আমি বীরাঙ্গনা বলছি”রচনাটির নেপথ্যের বাস্তবতা হলো যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের অধীনে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠিত হলে নীলিমা ইব্রাহিম সেখানে একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। শ্রদ্ধেয় বিচারপতি কে এম সোবহান “নারী পুনর্বাসন বোর্ড”-এর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন।

স্বদেশ প্রেমে নিবেদিত ড. নীলিমা ইব্রাহিমের এই রচনার মধ্য দিয়ে নির্যাতিত ও পীড়িত নারীদের কথা তিনি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে তুলে আনেন।

এই গ্রন্থের মাধ্যমে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে লাঞ্ছিত, নিপীড়িত বাঙালি নারীর কান্না-দুঃখ-শোকের ইতিহাসই কেবল পাই না, এখানে এক নারীর মানবাধিকার- সচেতন শক্তিশালী লেখককে আমরা খুঁজে পাই।

লিসা গাজীর মঞ্চন্থ একটি একাঙ্কিকা নাটক “ওম্যান অব ওয়ার”-এ বীরাঙ্গনা নারীদের বেদনা ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের ইতিহাস লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন লিপিবদ্ধ করে গেছেন অনেকেই। সেইসব ঘটনার সত্যতা কেউ কেউ উন্মুক্ত করে গেছেন লেখনীর অনিবার শক্তিতে। তাদের কথা জানাতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে, বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে।

সম্প্রতি