alt

ঢাকার খাল ও নদী : তৃতীয় পর্ব

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্ধারণ হয়নি ঢাকার চারপাশের নদী ও খালের সীমানা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : বুধবার, ১৯ মে ২০২১

ভরাট, দখল ও দূষণের শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল ও নদী। খালগুলো পরিণত হয়েছে নর্দমায়। নদী হয়ে গেছে খাল। ঢাকায় কয়টি খাল ছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারি এক একটি সংস্থা এক এক রকম তথ্য। কেউ বলছে ৫১টি, কেউ বলছে ৪৬টি কেউ বলছে ৩২টি খাল। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর পানি হয়ে গেছে ময়লা ও দুর্গন্ধ। ঢাকার খাল ও নদীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ তৃতীয় পর্ব।

ঢাকা শহর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রকৃতিগতভাবেই নদী, খাল এবং জলাশয় দ্বারা সমৃদ্ধ একটি স্থান। স্বাধীনতার পরে ঢাকার অভ্যন্তরে ৪৭টি খাল ছিল, বর্তমানে শহরটির পরিধি বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার হিসেব মতে খালের সংখ্যা কমে ২৬টিতে এসে ঠেকেছে যার মধ্যে অধিকাংশ খালই দখল-দূষণের শিকার। ঢাকা শহরের চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা এই ৫টি নদীদ্বারা আবৃত্ত। কিন্তু দখল, দূষণ ও ভরাট নদীরগুলো করুণ দশা। ঢাকা শহরের পানির উৎস, বিনোদন কেন্দ্র, নৌ-যোগাযোগ, মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল এবং জলাশয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নদী ও খালগুলো সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। জলাশয় বা পুকুরগুলো ভরাট করে সরকারিভাবে উঁচু উঁচু ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ সংবাদকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমাদের দেশের মতো পিলার দিয়ে নদী সীমানা নির্ধারণ করা হয় না। নদীর তীরে এভাবে পিলার স্থাপন করে নদীর সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। আগে নদীর তীরে তাকালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেতো। এখন শুধু খাম্বা দেখা যায়। নদীর সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রথমে পানি দূষণমুক্ত ও প্রবাহ ঠিক করতে হবে। তা না করে নদী তীরে পিলার স্থাপনের নামে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। নদী রক্ষার চেয়ে প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ বেশি সরকারি কর্মকর্তাদের। দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকার নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষার জন্য যেসব সরকারি সংস্থা জড়িত তারা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।’ যতদিন পর্যন্ত দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান না হবে ততদিন নদী, খাল ও জলাশয় তাদের প্রকৃত অবস্থা ফিরে পাবে না বলে জানান তিনি।

১৭ বছরেও চালু হয়নি ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ

ঢাকার চারপাশে নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা দেয়াল, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প নেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ২০২২ সালে জুনে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অবকাঠামো বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

এর আগে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে একটি নির্দেশনা দেয় আদালত। সেই নির্দেশনার আলোকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডি ২০১১-২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথাছিল। কিন্তু ৫ বছরের ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি পিলার স্থাপন করার কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তাই মোট ৪ হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ^রী নদীতে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় ১ হাজার ৮টি, তুরাগ নদীর পাড়ে ৩৫টি মৌজায় ২ হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ^রী নদীর পাড়ে ৪টি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়। বুঝে নেয়া এ সব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এতে ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিনে দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

১০ কোটি টাকার ওয়াটার বাস এখন খেয়া নৌকা

ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার নৌপথে ওয়াটার বাস চালুর জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি ওয়াটার বাস নির্মাণ করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ঢাকার চারদিগে নৌপথে চলাচলের জন্য ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ওয়াটার বাস। ২-৩টি ছাড়া বাকি ওয়াটার বাসগুলো অলসভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ওয়াটার বাসের বডি ও ইঞ্জিন। বর্তমানে সদরঘাটে খেয়া পারাপারের জন্য ২-৩টি ওয়াটার বাস ইজারা দেয়া হয়েছিল। গত দুই মাস যাবত তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাই দীর্ঘ ১৭ বছরেও চালু হয়নি ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ। ঢাকার চারপাশের নদীতে ১৩টি কম উচ্চতার সেতুর কারণে এই নৌপথ চালু করা সম্ভব হয়নি বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

আদি বুড়িগঙ্গা নদী এখন মরা খাল

পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কিছুটা পশ্চিমে চাঁদনীঘাট এলাকায় দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকের শাখাটি আদি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত। আর দক্ষিণের শাখাটি এখনকার মূল বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গার এই দুই ধারার মাঝখানে কামরাঙ্গীর চর, নবাবগঞ্জ চরসহ কয়েকটি এলাকার অবস্থান। কামরাঙ্গীর চর অংশের অল্প কিছু দূর ছাড়া এই চ্যানেলের পুরোটাই এখন ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও বহুতল ভবন। অথচ দুই দশক আগেও এই চ্যানেলটি হাজারীবাগ, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুরের পাশ দিয়ে আবারও বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। চ্যানেলটি উদ্ধারে ২০১৪ সালের ২৫ মে তৎকালীন নৌমন্ত্রী ও নদী উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে একাধিক মন্ত্রী, টাস্কফোর্সের সদস্যরা সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি পরিদর্শন করেন। চ্যানেলটির দূরাবস্থা দেখে নৌমন্ত্রী পরের দিনই সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে আদি চ্যানেল উদ্ধারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে আর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কমিটি আর উপকমিটির বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় এই চ্যানেলের উদ্ধার প্রক্রিয়া। তখন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রায় ১ মাস পর লালবাগ সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনারকে আহ্বায়ক করে আরও একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এত কমিটির পরও দীর্ঘ ৭ বছরেও উদ্ধার হয়নি আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটি। বর্তমানে পুরো কামরাঙ্গীরচরসহ নতুন করে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)’র সূত্র জানায়।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে

প্রাচীনকালে গঙ্গা নদীর একটি প্রবাহ ধলেশ্বরী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়তো। এই ধারাটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে একসময় গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বুড়িগঙ্গা নামে অভিহিত হয়। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে ঢাকার উজানের নদ-নদীগুলো মধুপুর জঙ্গলের উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে সরে যায়। সে সময় অথবা মতভেদে তারও আগে ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পের ফলে সলমাসি, কলাতিয়া, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ এলাকা দিয়ে প্রবাহমান বুড়িগঙ্গা কিছুটা দক্ষিণে সরে যায়। তখন তলদেশের গঠনগত পরিবর্তন হওয়ায় নদীতে পলি পড়ার গতিও বেড়ে যায়। ফলে মাঝখানে জেগে উঠতে থাকে চর, যার একটি অংশ পরবর্তী সময়ে কামরাঙ্গীর চর ও আরেকটি অংশ নবাবগঞ্জ চর হিসেবে পরিচিত হয়। এসব চরের ভেতর দিয়ে কয়েকটি খাল ও জলাভূমি থাকার প্রমাণ দেখা যায় উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রণীত সিএস ম্যাপে। এদিকে বুড়িগঙ্গার ধলেশ্বরীর উৎস পলি ভরাটের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে আদি চ্যানেলটি সলমাসি, বছিলা, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগের দিকে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে শুরু হয় চাষাবাদ। এরপর নগরায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে দখল, ভরাট ও বাড়িঘর নির্মাণ। ঢাকার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বুড়িগঙ্গা। ১৭৮২ সালে জেমস রেনেলের মানচিত্রে বুড়িগঙ্গার যে গতিপথ দেখানো হয়েছিল তাতে নওয়াবগঞ্জ চরের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে নৌকা লালবাগ ঘাটে ভিড়তো। ১৮৬৪ সালেও বুড়িগঙ্গা বয়ে যেত লালবাগের কেল্লা, চৌধুরীবাজার, রায়েরবাজার এবং পিলখানার ঘাটের ধার ঘেঁষে। এখন সেসব কথা ইতিহাস হয়ে গেছে। ১৮৪০ সালে টেইলর লিখেছিলেন, ক্রমেই বুড়িগঙ্গা পলি জমে অপ্রশস্ত হচ্ছে। ১৮৯৬ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বুড়িগঙ্গার গতিপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই সংবাদে ঢাকাবাসীর ভবিষ্যৎ সর্বনাশ হওয়ার আশঙ্কাও তুলে ধরা হয়। নবাব আহসান উল্লাহ বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ নদ পর্যন্ত নদীপথে নাব্য সৃষ্টির জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ড্রেজিংও করিয়েছিলেন।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আদি চ্যানেল ভরাট ও দখলের ফলে এর ওপর নির্মিত সেতুগুলো এখন প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কামরাঙ্গীর চরের লোহারপুল ও পাকা সেতুর নিচে পানি থাকলেও পশ্চিমের অন্য সেতুগুলোর কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কচুরিপানা আর আগাছায় ভরা। মাটি ভরাট করে অনেক সেতুকে দুই দিক থেকে দখল করে ফেলা হয়েছে। নবাবগঞ্জের পাকা সেতুটি ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ করা হয়। এক যুগের ব্যবধানে ওই সেতুটি এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেতুর নিচে পানি নেই, আছে মাটি। দুই দিকে অসংখ্য স্থাপনা। আবাসন ব্যবসায়ীরা বালু ভরাট করে এই এলাকায় সারি সারি প্লট বিক্রি করেছেন। একই অবস্থা কামরাঙ্গীর চরের রসুলপুর ও হাজারীবাগের কোম্পানিঘাট সেতুরও।

এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, রাজধানীর বৃত্তকার নৌপথের উপরে কম উচ্চতার সেতুগুলো ভেঙে পুনঃনির্মাণ করে নৌপথটি চালু করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যে কোন দেশে পরিবহন সেক্টরে সড়ক, রেল ও নৌপথের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয়া হলেও তিন সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। কমিশন ডিপিপি পাস করে তাদের কাজ শেষ। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর রাখে না। তাই পরিকল্পনা কমিশনকেও আরও আধুনিক করার পরামর্শ দেন তিনি।

ছবি

সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেলেন হিরো আলম

ছবি

ঢাকার হাই কোর্টের সামনে ড্রামে মিলল ব্যবসায়ী আশরাফুলের খণ্ডিত লাশ: ত্রিভুজ প্রেম, প্রতারণা ও হত্যা : জানাল ডিবি

ছবি

সাবেক স্ত্রীর মামলায় গ্রেপ্তার হিরো আলম

ছবি

শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ছিল মারাত্মক দূষিত

ছবি

ধানমন্ডিতে ‘মারধরের শিকার’ নারী জুলাই আন্দোলনের মামলায় কারাগারে

ছবি

ছাত্রের ‘যৌন নিপীড়নের’ মামলায় ঢাবি শিক্ষক কারাগারে

ছবি

হাইকোর্টের সামনে লাশ: শাহবাগ থানায় মামলা, ‘সন্দেহভাজন বন্ধুকে’ খুঁজছে পুলিশ

ছবি

হাই কোর্ট এলাকায় ড্রামে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার 

ছবি

ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

ছবি

রাজশাহীতে বিচারকের ঘরে ঢুকে ছেলেকে হত্যা, স্ত্রীকে জখম

ছবি

বৃহস্পতিবার রাজধানী ছিল ফাঁকা, রাস্তায় তেমন গাড়ি চলেনি

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ‘ইট সংগ্রহে’ এসে পুলিশ হেফাজতে কিশোর

ছবি

হাইকোর্টের কাছে ড্রামে মিললো খণ্ডিত লাশ

ছবি

বিটিআরসির তহবিল আত্মসাৎ মামলা: ১২ আসামির জামিন বাতিল

ছবি

দুটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে

ছবি

অন্তর্কোন্দলে ‘দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে মামুনকে হত্যা: ডিবি

ছবি

রাজধানীর চার স্থানে বাস ও যানে অগ্নিকাণ্ড

ছবি

মিরপুরে বাসে আগুন, গাজীপুর-সাভারেও বাসে অগ্নিসংযোগ

ছবি

মামুন হত্যা: আদালত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি

ছবি

রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার

রাজধানীতে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মুঠোফোন ব্যবহার না করার নির্দেশ

ছবি

রাজধানীতে বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেপ্তার ৩৪

ছবি

আদালত থেকে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে সন্ত্রাসী মামুন খুন

ঢাকায় ককটেল হামলার ঘটনায় ‘ছাত্রলীগের’ একজন গ্রেপ্তার

ঢাকায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বকালীন সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

রাজধানীতে প্রযুক্তি খাতের নতুন ঠিকানা ‘ঢাকা কম্পিউটার সিটি’ উদ্বোধন

ছবি

জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

পুরান ঢাকায় নিহত মামুনকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল দুই বছর আগেও

২৪ ঘণ্টায় আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখী গানের মিছিলে পুলিশের বাধা

ছবি

তিন দফা দাবিতে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি

ছবি

শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা পুলিশের বাধায় ব্যর্থ, কয়েকজন আহত

ছবি

মোহাম্মদপুরে গ্যারেজের আগুনে ‘নাশকতা’ দেখছে পুলিশ

ছবি

ঢাকা-আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের ‘শান্তি চুক্তি’, সাড়া মেলেনি সিটির

ছবি

রাজধানীতে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের মহড়া

টঙ্গীতে তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

tab

ঢাকার খাল ও নদী : তৃতীয় পর্ব

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্ধারণ হয়নি ঢাকার চারপাশের নদী ও খালের সীমানা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

বুধবার, ১৯ মে ২০২১

ভরাট, দখল ও দূষণের শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল ও নদী। খালগুলো পরিণত হয়েছে নর্দমায়। নদী হয়ে গেছে খাল। ঢাকায় কয়টি খাল ছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারি এক একটি সংস্থা এক এক রকম তথ্য। কেউ বলছে ৫১টি, কেউ বলছে ৪৬টি কেউ বলছে ৩২টি খাল। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর পানি হয়ে গেছে ময়লা ও দুর্গন্ধ। ঢাকার খাল ও নদীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ তৃতীয় পর্ব।

ঢাকা শহর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রকৃতিগতভাবেই নদী, খাল এবং জলাশয় দ্বারা সমৃদ্ধ একটি স্থান। স্বাধীনতার পরে ঢাকার অভ্যন্তরে ৪৭টি খাল ছিল, বর্তমানে শহরটির পরিধি বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার হিসেব মতে খালের সংখ্যা কমে ২৬টিতে এসে ঠেকেছে যার মধ্যে অধিকাংশ খালই দখল-দূষণের শিকার। ঢাকা শহরের চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা এই ৫টি নদীদ্বারা আবৃত্ত। কিন্তু দখল, দূষণ ও ভরাট নদীরগুলো করুণ দশা। ঢাকা শহরের পানির উৎস, বিনোদন কেন্দ্র, নৌ-যোগাযোগ, মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল এবং জলাশয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নদী ও খালগুলো সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। জলাশয় বা পুকুরগুলো ভরাট করে সরকারিভাবে উঁচু উঁচু ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ সংবাদকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমাদের দেশের মতো পিলার দিয়ে নদী সীমানা নির্ধারণ করা হয় না। নদীর তীরে এভাবে পিলার স্থাপন করে নদীর সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। আগে নদীর তীরে তাকালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেতো। এখন শুধু খাম্বা দেখা যায়। নদীর সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রথমে পানি দূষণমুক্ত ও প্রবাহ ঠিক করতে হবে। তা না করে নদী তীরে পিলার স্থাপনের নামে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। নদী রক্ষার চেয়ে প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ বেশি সরকারি কর্মকর্তাদের। দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকার নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষার জন্য যেসব সরকারি সংস্থা জড়িত তারা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।’ যতদিন পর্যন্ত দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান না হবে ততদিন নদী, খাল ও জলাশয় তাদের প্রকৃত অবস্থা ফিরে পাবে না বলে জানান তিনি।

১৭ বছরেও চালু হয়নি ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ

ঢাকার চারপাশে নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা দেয়াল, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প নেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ২০২২ সালে জুনে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অবকাঠামো বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

এর আগে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে একটি নির্দেশনা দেয় আদালত। সেই নির্দেশনার আলোকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডি ২০১১-২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথাছিল। কিন্তু ৫ বছরের ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি পিলার স্থাপন করার কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তাই মোট ৪ হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ^রী নদীতে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় ১ হাজার ৮টি, তুরাগ নদীর পাড়ে ৩৫টি মৌজায় ২ হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ^রী নদীর পাড়ে ৪টি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়। বুঝে নেয়া এ সব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এতে ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিনে দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

১০ কোটি টাকার ওয়াটার বাস এখন খেয়া নৌকা

ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার নৌপথে ওয়াটার বাস চালুর জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি ওয়াটার বাস নির্মাণ করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ঢাকার চারদিগে নৌপথে চলাচলের জন্য ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ওয়াটার বাস। ২-৩টি ছাড়া বাকি ওয়াটার বাসগুলো অলসভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ওয়াটার বাসের বডি ও ইঞ্জিন। বর্তমানে সদরঘাটে খেয়া পারাপারের জন্য ২-৩টি ওয়াটার বাস ইজারা দেয়া হয়েছিল। গত দুই মাস যাবত তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাই দীর্ঘ ১৭ বছরেও চালু হয়নি ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ। ঢাকার চারপাশের নদীতে ১৩টি কম উচ্চতার সেতুর কারণে এই নৌপথ চালু করা সম্ভব হয়নি বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

আদি বুড়িগঙ্গা নদী এখন মরা খাল

পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কিছুটা পশ্চিমে চাঁদনীঘাট এলাকায় দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকের শাখাটি আদি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত। আর দক্ষিণের শাখাটি এখনকার মূল বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গার এই দুই ধারার মাঝখানে কামরাঙ্গীর চর, নবাবগঞ্জ চরসহ কয়েকটি এলাকার অবস্থান। কামরাঙ্গীর চর অংশের অল্প কিছু দূর ছাড়া এই চ্যানেলের পুরোটাই এখন ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও বহুতল ভবন। অথচ দুই দশক আগেও এই চ্যানেলটি হাজারীবাগ, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুরের পাশ দিয়ে আবারও বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। চ্যানেলটি উদ্ধারে ২০১৪ সালের ২৫ মে তৎকালীন নৌমন্ত্রী ও নদী উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে একাধিক মন্ত্রী, টাস্কফোর্সের সদস্যরা সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি পরিদর্শন করেন। চ্যানেলটির দূরাবস্থা দেখে নৌমন্ত্রী পরের দিনই সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে আদি চ্যানেল উদ্ধারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে আর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কমিটি আর উপকমিটির বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় এই চ্যানেলের উদ্ধার প্রক্রিয়া। তখন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রায় ১ মাস পর লালবাগ সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনারকে আহ্বায়ক করে আরও একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এত কমিটির পরও দীর্ঘ ৭ বছরেও উদ্ধার হয়নি আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটি। বর্তমানে পুরো কামরাঙ্গীরচরসহ নতুন করে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)’র সূত্র জানায়।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে

প্রাচীনকালে গঙ্গা নদীর একটি প্রবাহ ধলেশ্বরী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়তো। এই ধারাটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে একসময় গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বুড়িগঙ্গা নামে অভিহিত হয়। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে ঢাকার উজানের নদ-নদীগুলো মধুপুর জঙ্গলের উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে সরে যায়। সে সময় অথবা মতভেদে তারও আগে ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পের ফলে সলমাসি, কলাতিয়া, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ এলাকা দিয়ে প্রবাহমান বুড়িগঙ্গা কিছুটা দক্ষিণে সরে যায়। তখন তলদেশের গঠনগত পরিবর্তন হওয়ায় নদীতে পলি পড়ার গতিও বেড়ে যায়। ফলে মাঝখানে জেগে উঠতে থাকে চর, যার একটি অংশ পরবর্তী সময়ে কামরাঙ্গীর চর ও আরেকটি অংশ নবাবগঞ্জ চর হিসেবে পরিচিত হয়। এসব চরের ভেতর দিয়ে কয়েকটি খাল ও জলাভূমি থাকার প্রমাণ দেখা যায় উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রণীত সিএস ম্যাপে। এদিকে বুড়িগঙ্গার ধলেশ্বরীর উৎস পলি ভরাটের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে থাকলে আদি চ্যানেলটি সলমাসি, বছিলা, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগের দিকে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে শুরু হয় চাষাবাদ। এরপর নগরায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে দখল, ভরাট ও বাড়িঘর নির্মাণ। ঢাকার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বুড়িগঙ্গা। ১৭৮২ সালে জেমস রেনেলের মানচিত্রে বুড়িগঙ্গার যে গতিপথ দেখানো হয়েছিল তাতে নওয়াবগঞ্জ চরের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে নৌকা লালবাগ ঘাটে ভিড়তো। ১৮৬৪ সালেও বুড়িগঙ্গা বয়ে যেত লালবাগের কেল্লা, চৌধুরীবাজার, রায়েরবাজার এবং পিলখানার ঘাটের ধার ঘেঁষে। এখন সেসব কথা ইতিহাস হয়ে গেছে। ১৮৪০ সালে টেইলর লিখেছিলেন, ক্রমেই বুড়িগঙ্গা পলি জমে অপ্রশস্ত হচ্ছে। ১৮৯৬ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বুড়িগঙ্গার গতিপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই সংবাদে ঢাকাবাসীর ভবিষ্যৎ সর্বনাশ হওয়ার আশঙ্কাও তুলে ধরা হয়। নবাব আহসান উল্লাহ বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ নদ পর্যন্ত নদীপথে নাব্য সৃষ্টির জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ড্রেজিংও করিয়েছিলেন।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আদি চ্যানেল ভরাট ও দখলের ফলে এর ওপর নির্মিত সেতুগুলো এখন প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কামরাঙ্গীর চরের লোহারপুল ও পাকা সেতুর নিচে পানি থাকলেও পশ্চিমের অন্য সেতুগুলোর কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কচুরিপানা আর আগাছায় ভরা। মাটি ভরাট করে অনেক সেতুকে দুই দিক থেকে দখল করে ফেলা হয়েছে। নবাবগঞ্জের পাকা সেতুটি ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ করা হয়। এক যুগের ব্যবধানে ওই সেতুটি এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেতুর নিচে পানি নেই, আছে মাটি। দুই দিকে অসংখ্য স্থাপনা। আবাসন ব্যবসায়ীরা বালু ভরাট করে এই এলাকায় সারি সারি প্লট বিক্রি করেছেন। একই অবস্থা কামরাঙ্গীর চরের রসুলপুর ও হাজারীবাগের কোম্পানিঘাট সেতুরও।

এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, রাজধানীর বৃত্তকার নৌপথের উপরে কম উচ্চতার সেতুগুলো ভেঙে পুনঃনির্মাণ করে নৌপথটি চালু করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যে কোন দেশে পরিবহন সেক্টরে সড়ক, রেল ও নৌপথের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয়া হলেও তিন সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। কমিশন ডিপিপি পাস করে তাদের কাজ শেষ। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর রাখে না। তাই পরিকল্পনা কমিশনকেও আরও আধুনিক করার পরামর্শ দেন তিনি।

back to top