আর দু’দিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট। বিশ্বের প্রভাবশালী এ দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দিকে এগোচ্ছে এবারের মার্কিন নির্বাচন। গত দুই নির্বাচনের মতো এবারও গুরুত্ব সহকারে বিষয়টিতে মনোযোগ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশিসহ অভিবাসীরা।
হ্যারিস তার প্রচারণায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে, ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনজীবী হিসেবে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেন।
এদিকে, ট্রাম্প এ দফায় সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে আরও বেশি করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী প্রত্যর্পণ ঘটানোর অঙ্গীকারও করেছেন ট্রাম্প। বলেন, গণহারে অবৈধ অধিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন তিনি।
কিন্তু কমলা হ্যারিস বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
এই প্রেক্ষিতে আমেরিকার অভিবাসীরা কাকে দেশটির প্রেসিডেন্ট দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে নিউইয়র্কে বসবাসরত আরব আমিরাতের এক অভিবাসী জানান, তাদের জন্য কমলা হ্যারিসই হবেন উপযুক্ত। তবে মেক্সিকোর অধিবাসী হ্যারিস বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ট ট্রাম্পকেই বেছে নিতে চান।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আসলাম আহমাদ খান বলেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন যুদ্ধ পরিহার করেছিল। অপরের সঙ্গে বিশৃঙ্খলা বাঁধানো সে পরিহার করেছে। যে কারণে আমি এখনও কনফিউজড যে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিবো কি দিবো না।’
আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি দুইটি পার্টি ফরেন পলিসিতে, ইসরায়েল ইস্যুতে একমত। তারা মুসলমানদের সমর্থন করে না। তবে এবার একটি সুযোগ এসেছে। মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দিয়ে যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট চেঞ্জ করতে পারে সেই শক্তি দেখানোর সময় এবার এসেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ১৬২ বিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন নাগরিক আগাম ভোট দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। গত ২৬ অক্টোবর থেকে আগাম ভোট দেয়া শুরু হয়েছে, ৩ নভেম্বরে শেষ।
এবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসেলভেনিয়া ও মিশিগানে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তাদের ভোটে পাল্টে যেতে পারে পুরো ভোটের হিসাব। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কর্মী এনামুল হক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে কমলা হ্যারিস অনেকটা এগিয়ে আছেন। বিশেষ করে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি, নারী-শিশু মূল্যায়ন এবং কর্মসংস্থানের বিষয়ে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি কমলা হ্যারিস এই নির্বাচনে জয়লাভ করবে।’
যেই জিতুক না কেন- বাংলাদেশি অভিবাসীরা চান কর্মসংস্থান, ইমিগ্রেশনের তড়িৎগতি এবং অন্যান্য বিষয়গুলো যেন আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে ভারতীয়-আমেরিকানরা কি ভাবছেন? সম্প্রতি নিউইয়র্কে দিওয়ালি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘অল দ্যাট গ্লিটার্স দিওয়ালি বল’ আয়োজনে মূল আলোচনা ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কারণ কমলা হ্যারিস দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্যের প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী। দলের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়ে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কের জাঁকজমকপূর্ণ এই পার্টির উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানে ‘ব্র্যাভো’র (যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) রিয়েলিটি শো ‘দ্য রিয়েল হাউসওয়াইভস অফ নিউইয়র্ক সিটি’র প্রথম ভারতীয় ‘কাস্ট’ জেসেল টাঙ্ক যোগ দেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি কমলা হ্যারিসের দিকেই ঝুঁকেছেন। বলেছেন, ‘এইবারের বিষয়টা (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন) একেবারে অনন্য, কারণ আমরা এমন একজনকে পেয়েছি যিনি আমদের মঙ্গল চান।’
একই সুর ছিল অলাভজনক সংস্থা ‘গার্লস হু কোড’-এর সিইও এবং ২০১০ সালে মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী প্রার্থী রেশমা সৌজানির কণ্ঠেও। তার মতে, কমলা হ্যারিসের মধ্যে বহু দক্ষিণ এশীয় নারীই নিজেদের প্রতিফলন দেখতে পান। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ হলো অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই উৎসাহকে সঞ্চারিত করা। এই ক্রমবর্ধমান অভিবাসী জনগোষ্ঠী ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে জর্জিয়া, মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
কমলা হ্যারিস এবং তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেই কিন্তু ইন্ডিয়ান-আমেরিকানদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করার ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তম এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় গোষ্ঠী হলো ভারতীয় আমেরিকানরা।
কমলা হ্যারিস প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব যিনি ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে হ্যারিসের যেমন আচমকা প্রবেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা, তেমনই উল্লেখযোগ্য গত এক দশকে ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায় থেকে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়টা।
আরও লক্ষ্যণীয় যে, কমলা হ্যারিস ছাড়াও চলতি নির্বাচনী চক্রে একাধিক ভারতীয়-আমেরিকান ব্যক্তিত্বের উত্থান দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ জেডি ভান্সের স্ত্রী ঊষা ভান্সও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
এছাড়া, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই রিপাবলিকান বিবেক রামস্বামী এবং নিকি হ্যালি।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়স্তরে ভারতীয়-আমেরিকান ব্যক্তিত্বদের প্রভাবের পাশাপাশি, তাদের সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগও ক্রমশ গভীর হয়েছে। এশিয়ান-আমেরিকান সম্প্রদায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ‘এএপিআই ডাটা’-র তথ্য অনুযায়ী, গত দুই নির্বাচনে এশিয়ান-আমেরিকানদের মধ্যে ভারতীয় আমেরিকান ভোটারের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।
২০২০ সালে ভোট দিয়েছেন এমন ভারতীয়-আমেরিকানদের সংখ্যা ছিল ৭১ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।
‘কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ এবং ‘ইউগভ’ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নথিভুক্ত ভারতীয়-আমেরিকান ভোটারদের ৬১ শতাংশ কমলা হ্যারিসকে, আর ডনাল্ড ট্রাম্পকে ৩২ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে এই সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত থাকলেও সর্বশেষ জরিপে এই সমর্থন ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের পক্ষে যাওয়ার কিছুটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ভারতীয়-আমেরিকান পুরুষদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে।
একই পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ৬০ শতাংশের বেশি ভারতীয়-আমেরিকান নারী কমলাকে ভোট আগ্রহী। অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ ভারতীয়-আমেরিকান পুরুষ ভোট দিতে চান ডনাল্ড ট্রাম্পকে।
রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪
আর দু’দিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট। বিশ্বের প্রভাবশালী এ দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দিকে এগোচ্ছে এবারের মার্কিন নির্বাচন। গত দুই নির্বাচনের মতো এবারও গুরুত্ব সহকারে বিষয়টিতে মনোযোগ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশিসহ অভিবাসীরা।
হ্যারিস তার প্রচারণায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে, ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনজীবী হিসেবে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেন।
এদিকে, ট্রাম্প এ দফায় সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে আরও বেশি করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী প্রত্যর্পণ ঘটানোর অঙ্গীকারও করেছেন ট্রাম্প। বলেন, গণহারে অবৈধ অধিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন তিনি।
কিন্তু কমলা হ্যারিস বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
এই প্রেক্ষিতে আমেরিকার অভিবাসীরা কাকে দেশটির প্রেসিডেন্ট দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে নিউইয়র্কে বসবাসরত আরব আমিরাতের এক অভিবাসী জানান, তাদের জন্য কমলা হ্যারিসই হবেন উপযুক্ত। তবে মেক্সিকোর অধিবাসী হ্যারিস বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ট ট্রাম্পকেই বেছে নিতে চান।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আসলাম আহমাদ খান বলেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন যুদ্ধ পরিহার করেছিল। অপরের সঙ্গে বিশৃঙ্খলা বাঁধানো সে পরিহার করেছে। যে কারণে আমি এখনও কনফিউজড যে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিবো কি দিবো না।’
আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি দুইটি পার্টি ফরেন পলিসিতে, ইসরায়েল ইস্যুতে একমত। তারা মুসলমানদের সমর্থন করে না। তবে এবার একটি সুযোগ এসেছে। মুসলিমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দিয়ে যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট চেঞ্জ করতে পারে সেই শক্তি দেখানোর সময় এবার এসেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ১৬২ বিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন নাগরিক আগাম ভোট দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। গত ২৬ অক্টোবর থেকে আগাম ভোট দেয়া শুরু হয়েছে, ৩ নভেম্বরে শেষ।
এবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসেলভেনিয়া ও মিশিগানে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তাদের ভোটে পাল্টে যেতে পারে পুরো ভোটের হিসাব। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কর্মী এনামুল হক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে কমলা হ্যারিস অনেকটা এগিয়ে আছেন। বিশেষ করে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি, নারী-শিশু মূল্যায়ন এবং কর্মসংস্থানের বিষয়ে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি কমলা হ্যারিস এই নির্বাচনে জয়লাভ করবে।’
যেই জিতুক না কেন- বাংলাদেশি অভিবাসীরা চান কর্মসংস্থান, ইমিগ্রেশনের তড়িৎগতি এবং অন্যান্য বিষয়গুলো যেন আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে ভারতীয়-আমেরিকানরা কি ভাবছেন? সম্প্রতি নিউইয়র্কে দিওয়ালি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘অল দ্যাট গ্লিটার্স দিওয়ালি বল’ আয়োজনে মূল আলোচনা ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কারণ কমলা হ্যারিস দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্যের প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী। দলের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়ে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কের জাঁকজমকপূর্ণ এই পার্টির উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানে ‘ব্র্যাভো’র (যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) রিয়েলিটি শো ‘দ্য রিয়েল হাউসওয়াইভস অফ নিউইয়র্ক সিটি’র প্রথম ভারতীয় ‘কাস্ট’ জেসেল টাঙ্ক যোগ দেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি কমলা হ্যারিসের দিকেই ঝুঁকেছেন। বলেছেন, ‘এইবারের বিষয়টা (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন) একেবারে অনন্য, কারণ আমরা এমন একজনকে পেয়েছি যিনি আমদের মঙ্গল চান।’
একই সুর ছিল অলাভজনক সংস্থা ‘গার্লস হু কোড’-এর সিইও এবং ২০১০ সালে মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী প্রার্থী রেশমা সৌজানির কণ্ঠেও। তার মতে, কমলা হ্যারিসের মধ্যে বহু দক্ষিণ এশীয় নারীই নিজেদের প্রতিফলন দেখতে পান। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ হলো অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই উৎসাহকে সঞ্চারিত করা। এই ক্রমবর্ধমান অভিবাসী জনগোষ্ঠী ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে জর্জিয়া, মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
কমলা হ্যারিস এবং তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেই কিন্তু ইন্ডিয়ান-আমেরিকানদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করার ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তম এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় গোষ্ঠী হলো ভারতীয় আমেরিকানরা।
কমলা হ্যারিস প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব যিনি ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে হ্যারিসের যেমন আচমকা প্রবেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা, তেমনই উল্লেখযোগ্য গত এক দশকে ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায় থেকে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়টা।
আরও লক্ষ্যণীয় যে, কমলা হ্যারিস ছাড়াও চলতি নির্বাচনী চক্রে একাধিক ভারতীয়-আমেরিকান ব্যক্তিত্বের উত্থান দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ জেডি ভান্সের স্ত্রী ঊষা ভান্সও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
এছাড়া, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই রিপাবলিকান বিবেক রামস্বামী এবং নিকি হ্যালি।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়স্তরে ভারতীয়-আমেরিকান ব্যক্তিত্বদের প্রভাবের পাশাপাশি, তাদের সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগও ক্রমশ গভীর হয়েছে। এশিয়ান-আমেরিকান সম্প্রদায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ‘এএপিআই ডাটা’-র তথ্য অনুযায়ী, গত দুই নির্বাচনে এশিয়ান-আমেরিকানদের মধ্যে ভারতীয় আমেরিকান ভোটারের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।
২০২০ সালে ভোট দিয়েছেন এমন ভারতীয়-আমেরিকানদের সংখ্যা ছিল ৭১ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।
‘কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ এবং ‘ইউগভ’ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নথিভুক্ত ভারতীয়-আমেরিকান ভোটারদের ৬১ শতাংশ কমলা হ্যারিসকে, আর ডনাল্ড ট্রাম্পকে ৩২ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে এই সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত থাকলেও সর্বশেষ জরিপে এই সমর্থন ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের পক্ষে যাওয়ার কিছুটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ভারতীয়-আমেরিকান পুরুষদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী তরুণদের মধ্যে।
একই পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ৬০ শতাংশের বেশি ভারতীয়-আমেরিকান নারী কমলাকে ভোট আগ্রহী। অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ ভারতীয়-আমেরিকান পুরুষ ভোট দিতে চান ডনাল্ড ট্রাম্পকে।