পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয় তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সাধারণ মানুষ। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠক’। বৈঠক থেকে কোন সুখবর মেলেনি। বরং দুঃসংবাদ শুনিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। বলেছেন, আগামী নভেম্বরের শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত এর দাম কমবে না।
সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এর দাম কি এখন এমন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থাতেই থাকবে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে সুখবর নেই। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে উক্ত বৈঠকে আলোচনাই হয়নি। তাহলে বৈঠক করে লাভ হলো কী। মিটিংয়ের নামে ইটিং আর সিটিংই সার।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে রাজস্ব বোর্ডকে। পেঁয়াজ যা মজুত আছে তা দিয়ে মাস তিনেকের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কমবেশি আমদানিও হচ্ছে। তাহলে এর দাম কমবে না কেন সেটা একটা প্রশ্ন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের আতঙ্ক কমবে কীভাবে। পেঁয়াজের ৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে- এই খবরে কি আতঙ্ক কমবে। এনবিআর শুল্ক কমাবে কিনা তার নিশ্চয়তা কী? অতীতে রাজস্ব বোর্ড শুল্ক কমানোর অনেক অনুরোধেই সাড়া দেয়নি। আবার কর কমলেই যে পেঁয়াজের দাম কমবে সেই আশাও করা যাচ্ছে না। মজুদদারির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। টিসিবির তৎপরতা বাড়ানো নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ তাহলে কিসের ভিত্তিতে আশ্বস্ত হবে!
দাম বাড়ার চাপে জেরবার সাধারণ মানুষের জন্য আরও দুঃসংবাদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টাতদবির করছেন। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম যথাক্রমে ৭০ ও ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। আর বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৫৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ, দেশে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। দেশের ব্যবসায়ীরা ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে (বিটিটিসি) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আরও ১১ টাকা ও চিনির দাম ৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে দ্রুতই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।
নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ঘরে-বাইরে খাবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। মানুষের ব্যয় বেড়েই যাচ্ছে, কিন্তু তাদের আয় কি বেড়েছে। বরং মহামারীকালে মানুষের আয় কমেছে। অনেক লোক কাজ হারিয়েছে। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে অনেক মানুষ। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে মানুষ টিকবে কী করে সেটা একটা প্রশ্ন।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে একটি দূরদর্শী কর্তৃপক্ষ কর কমানো, আমদানি বাড়ানো, টিসিবির বিক্রি বাড়ানো, বাজার মনিটর করার আগাম ব্যবস্থা নেবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো আগাম ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর খেসারত বেশি দিতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষকে।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দাম কমানোর দায়িত্ব নিতে হবে। নইলে মানুষের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার কোন কাজটা করবে এবং তা কিভাবে করা হবে সেটা তাদেরকেই ভেবে বের করতে হবে।
মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয় তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সাধারণ মানুষ। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠক’। বৈঠক থেকে কোন সুখবর মেলেনি। বরং দুঃসংবাদ শুনিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। বলেছেন, আগামী নভেম্বরের শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত এর দাম কমবে না।
সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এর দাম কি এখন এমন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থাতেই থাকবে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে সুখবর নেই। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে উক্ত বৈঠকে আলোচনাই হয়নি। তাহলে বৈঠক করে লাভ হলো কী। মিটিংয়ের নামে ইটিং আর সিটিংই সার।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে রাজস্ব বোর্ডকে। পেঁয়াজ যা মজুত আছে তা দিয়ে মাস তিনেকের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কমবেশি আমদানিও হচ্ছে। তাহলে এর দাম কমবে না কেন সেটা একটা প্রশ্ন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের আতঙ্ক কমবে কীভাবে। পেঁয়াজের ৫ শতাংশ শুল্ক তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে- এই খবরে কি আতঙ্ক কমবে। এনবিআর শুল্ক কমাবে কিনা তার নিশ্চয়তা কী? অতীতে রাজস্ব বোর্ড শুল্ক কমানোর অনেক অনুরোধেই সাড়া দেয়নি। আবার কর কমলেই যে পেঁয়াজের দাম কমবে সেই আশাও করা যাচ্ছে না। মজুদদারির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। টিসিবির তৎপরতা বাড়ানো নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ তাহলে কিসের ভিত্তিতে আশ্বস্ত হবে!
দাম বাড়ার চাপে জেরবার সাধারণ মানুষের জন্য আরও দুঃসংবাদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টাতদবির করছেন। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম যথাক্রমে ৭০ ও ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। আর বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৫৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ, দেশে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। দেশের ব্যবসায়ীরা ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে (বিটিটিসি) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আরও ১১ টাকা ও চিনির দাম ৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে দ্রুতই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।
নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ঘরে-বাইরে খাবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। মানুষের ব্যয় বেড়েই যাচ্ছে, কিন্তু তাদের আয় কি বেড়েছে। বরং মহামারীকালে মানুষের আয় কমেছে। অনেক লোক কাজ হারিয়েছে। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে অনেক মানুষ। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে মানুষ টিকবে কী করে সেটা একটা প্রশ্ন।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে একটি দূরদর্শী কর্তৃপক্ষ কর কমানো, আমদানি বাড়ানো, টিসিবির বিক্রি বাড়ানো, বাজার মনিটর করার আগাম ব্যবস্থা নেবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো আগাম ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর খেসারত বেশি দিতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষকে।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দাম কমানোর দায়িত্ব নিতে হবে। নইলে মানুষের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার কোন কাজটা করবে এবং তা কিভাবে করা হবে সেটা তাদেরকেই ভেবে বের করতে হবে।