alt

মুক্ত আলোচনা

২১ বছরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বশিরুল ইসলাম

: বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা কৃষিকেন্দ্রিক। তাই আধুনিক কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্য তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’। এরপর বিভিন্ন নামে পরিবর্তিত হয়ে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ১৭তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। অত্যন্ত গৌরবের বিষয়-এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ ২০ বছর জ্ঞান বিতরণ করে ২১ বছরে পদার্পণ করল।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ ইতিহাস মাত্র ২০ বছরের হলেও উপমহাদেশের প্রচীনতম উচ্চতর কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এর ইতিহাস দীর্ঘ ৮৩ বছরের। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী তৈরি এবং কৃষি গবেষণার যথাযথ প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মূলত উপমহাদেশের কৃষি ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কারিকুলাম অনুসরণপূর্বক ১৯৪১ সালে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জন মুসলমান ও ১০ জন হিন্দু ছাত্র নিয়ে বিএসসিএজি কোর্স শুরু হয়। এরা দুই বৎসর বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোতে লেখাপড়া করে পরীক্ষা দিয়ে মেধা ভিত্তিতে বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটের গিয়ে ভর্তি হতে পারত। দুই বৎসর কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় ওপর পড়ালেখা করে পরীক্ষা পাসের পর কৃতী শিক্ষার্থীরা জেলা কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে চাকরি করতে পারত। এরাই ১৯৪৩ সালে বাংলার প্রথম কৃষি গ্র্যাজুয়েট।

১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে আইএসসি পাসের পর ত্রিবার্ষিক বিএজি ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। যদিও মৌলিক অনুষদের মর্যাদা তখনও অক্ষুণœ থাকে। তার সঙ্গে চার বছরের কোর্সটিও ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে ১৯৪৮ সালে পুরোনো ও নতুন মিলে দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একই বছরে ডিগ্রি পায়। ১৯৫১ সালে এমএজি কোর্স চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান আমলে এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। তবে সর্বসাধারণের কাছে এটি ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচিত না পেয়ে ‘কৃষি কলেজ’ হিসেবেই খ্যাতি লাভ করে।

এদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের অন্নের সংস্থান, কৃষিশিক্ষা, কৃষি গবেষণা ও কৃষি সম্প্রসারণে এ ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটগনই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অথচ এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত না করে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৯৬৪ সালে এ ইনস্টিটিউট কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে তদানীন্তন সরকার বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটকে (বিএআই) স্বায়ত্তশাসন প্রদানের ঘোষণা দিলেও ১৯৯০ সালে পরবর্তী সরকার তা বাতিল করে। বিএআই যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে যায়।

২০০১ সালের ৬ জানুয়ারি বিএআই হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন এবং ৯ জুলাই, ২০০১ সালে সংসদে আইন পাস করে। ১৫ জুলাই, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রফেসর মো. শাদাত উল্লাকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

১৯৪৩ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব গ্র্যাজুয়েট পাস করেছে মূলত তারাই সূচনা করেছে এদেশের কৃষি গবেষণা কার্যক্রমের। ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় এই প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা কৃষকের সঙ্গে মিলেমিশে এদেশের কৃষিকে চলমান রেখেছিলেন যার ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুথান এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও গৌরবময়। জানা যায়, তৎকালীন সময়ে পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে ঢাকার ছাত্রনেতারা আশ্রয় নিতেন এ প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের অংশগ্রহণও ছিল লক্ষণীয়।

শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্ররা কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে গবেষণা করে নতুন নতুন ফসলের জাত আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উপায় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সুন্দরবনের সব ধরনের প্রাণীর জেনেটিক বার কোড নির্ণয় ও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ আন্তর্জাতিক মানের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা করছেন। দেশে প্রথমবারের মতো ইঁদুরের মধ্যে মানুষের অন্তঃপরজীবী (কৃমি) গনজাইলোনেমা শনাক্ত করতে সফল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের একদল গবেষক। বাংলাদেশে মূল্যবান ফসল জাফরান উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেছে।

প্রথমবারের মতো টার্কি মুরগির কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। সম্প্রতি সূর্যের আলো ছাড়া সবজি চাষ, কৃত্রিম আলোর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সবজির বীজ উৎপাদন কৌশল আবিষ্কার, মৌমাছির কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন একদল গবেষক। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, সাউ টমাটিলো-১, সাউ টমাটিলো-২, সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-১, সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-২, সাদা ভুট্টা, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আলু বীজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফলতা, রুকোলা, বাটন মাশরুম, জামারুসান মুলা, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিভিন্ন বিদেশি ফুলের উৎপাদন সফলতা উল্লেখযোগ্য।

এর মধ্যে দেশে প্রথম ল্যাসেনথিরাস গাছের ফুল ফোটান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যা বাণিজ্যিকভাবে সফলভাবে চাষ হচ্ছে। উদ্যানতত্ত্ব খামারে গোলাপ বাগানে নানা প্রজাতির লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, পার্পল, কালো ও সবুজ রঙের গোলাপের ওপর গবেষণা করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষক পেঁয়াজ, পানপাতা, বাসমতী ধান, মুলা নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক টিস্যু কালচার ল্যাব।

[লেখক : উপপরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

২১ বছরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বশিরুল ইসলাম

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা কৃষিকেন্দ্রিক। তাই আধুনিক কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্য তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’। এরপর বিভিন্ন নামে পরিবর্তিত হয়ে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ১৭তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। অত্যন্ত গৌরবের বিষয়-এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ ২০ বছর জ্ঞান বিতরণ করে ২১ বছরে পদার্পণ করল।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এ ইতিহাস মাত্র ২০ বছরের হলেও উপমহাদেশের প্রচীনতম উচ্চতর কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এর ইতিহাস দীর্ঘ ৮৩ বছরের। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী তৈরি এবং কৃষি গবেষণার যথাযথ প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মূলত উপমহাদেশের কৃষি ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কারিকুলাম অনুসরণপূর্বক ১৯৪১ সালে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জন মুসলমান ও ১০ জন হিন্দু ছাত্র নিয়ে বিএসসিএজি কোর্স শুরু হয়। এরা দুই বৎসর বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোতে লেখাপড়া করে পরীক্ষা দিয়ে মেধা ভিত্তিতে বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটের গিয়ে ভর্তি হতে পারত। দুই বৎসর কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় ওপর পড়ালেখা করে পরীক্ষা পাসের পর কৃতী শিক্ষার্থীরা জেলা কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে চাকরি করতে পারত। এরাই ১৯৪৩ সালে বাংলার প্রথম কৃষি গ্র্যাজুয়েট।

১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে আইএসসি পাসের পর ত্রিবার্ষিক বিএজি ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। যদিও মৌলিক অনুষদের মর্যাদা তখনও অক্ষুণœ থাকে। তার সঙ্গে চার বছরের কোর্সটিও ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে ১৯৪৮ সালে পুরোনো ও নতুন মিলে দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একই বছরে ডিগ্রি পায়। ১৯৫১ সালে এমএজি কোর্স চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান আমলে এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। তবে সর্বসাধারণের কাছে এটি ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচিত না পেয়ে ‘কৃষি কলেজ’ হিসেবেই খ্যাতি লাভ করে।

এদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের অন্নের সংস্থান, কৃষিশিক্ষা, কৃষি গবেষণা ও কৃষি সম্প্রসারণে এ ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটগনই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অথচ এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত না করে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৯৬৪ সালে এ ইনস্টিটিউট কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে তদানীন্তন সরকার বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটকে (বিএআই) স্বায়ত্তশাসন প্রদানের ঘোষণা দিলেও ১৯৯০ সালে পরবর্তী সরকার তা বাতিল করে। বিএআই যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে যায়।

২০০১ সালের ৬ জানুয়ারি বিএআই হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন এবং ৯ জুলাই, ২০০১ সালে সংসদে আইন পাস করে। ১৫ জুলাই, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রফেসর মো. শাদাত উল্লাকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

১৯৪৩ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব গ্র্যাজুয়েট পাস করেছে মূলত তারাই সূচনা করেছে এদেশের কৃষি গবেষণা কার্যক্রমের। ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় এই প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা কৃষকের সঙ্গে মিলেমিশে এদেশের কৃষিকে চলমান রেখেছিলেন যার ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুথান এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও গৌরবময়। জানা যায়, তৎকালীন সময়ে পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে ঢাকার ছাত্রনেতারা আশ্রয় নিতেন এ প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের অংশগ্রহণও ছিল লক্ষণীয়।

শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্ররা কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে গবেষণা করে নতুন নতুন ফসলের জাত আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উপায় নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সুন্দরবনের সব ধরনের প্রাণীর জেনেটিক বার কোড নির্ণয় ও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ আন্তর্জাতিক মানের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা করছেন। দেশে প্রথমবারের মতো ইঁদুরের মধ্যে মানুষের অন্তঃপরজীবী (কৃমি) গনজাইলোনেমা শনাক্ত করতে সফল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের একদল গবেষক। বাংলাদেশে মূল্যবান ফসল জাফরান উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেছে।

প্রথমবারের মতো টার্কি মুরগির কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। সম্প্রতি সূর্যের আলো ছাড়া সবজি চাষ, কৃত্রিম আলোর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সবজির বীজ উৎপাদন কৌশল আবিষ্কার, মৌমাছির কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন একদল গবেষক। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, সাউ টমাটিলো-১, সাউ টমাটিলো-২, সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-১, সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-২, সাদা ভুট্টা, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আলু বীজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফলতা, রুকোলা, বাটন মাশরুম, জামারুসান মুলা, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিভিন্ন বিদেশি ফুলের উৎপাদন সফলতা উল্লেখযোগ্য।

এর মধ্যে দেশে প্রথম ল্যাসেনথিরাস গাছের ফুল ফোটান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যা বাণিজ্যিকভাবে সফলভাবে চাষ হচ্ছে। উদ্যানতত্ত্ব খামারে গোলাপ বাগানে নানা প্রজাতির লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, পার্পল, কালো ও সবুজ রঙের গোলাপের ওপর গবেষণা করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষক পেঁয়াজ, পানপাতা, বাসমতী ধান, মুলা নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক টিস্যু কালচার ল্যাব।

[লেখক : উপপরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top