alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির চূড়ান্ত মালিকানা পেতে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

: শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

আপনি জমি কিনলেই কিন্তু জমির চূড়ান্ত মালিকানা অর্জিত হয় না। এর জন্য আপনাকে তিনটি ধাপ পাড়ি দিতে হয়। তারপরেই আপনি হবেন জমিটির চূড়ান্ত মালিক। প্রথমটি হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রেশন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে অভিজ্ঞ আইনজীবী কিংবা দলিল লেখক দিয়ে দলিলটি ভালো করে লিখে নিন। যে জমিটি কিনছেন তার দাগ, খতিয়ান ভালো করে দেখে নিন। জমির পরিমাণ, চৌহদ্দি দেখে নিন। জমি দাতা ও গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, বানান দলিল লেখায় ঠিক আছে কি-না দেখে নিন। এল.টি নোটিশে জমির পরিমাণ দেখে নিন, রেজিস্ট্রি খরচের ব্যাংক পে অর্ডারের ফটোকপি রাখুন। জমির ক্রেতা হিসেবে আপনি কিন্তু সমস্ত খরচ বহন করবেন না। আয়কর ও ভ্যাট জমির বিক্রেতা দিবে। দলিল রেজিস্ট্রেশন হলে ৫২ ধারার রশিদ বুঝে নিন। সবশেষে দলিলের অবিকল নকলের আবেদন করুন।

এরপর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নামজারি (মিউটেশন)। অনেকে দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরই জমি তার হয়ে গেছে বলে মনে করেন। এক হিসাবে বাংলাদেশের মামলার মোট ৮৭ শতাংশের মূল কারণ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ। এতে মামলাজট তৈরি হয় আদালতে। আর্থিক ক্ষতি হয় সংশ্লিষ্ট সবার। তবে নতুন ব্যবস্থাপনায় এসব সমস্যার কোন বালাই নেই। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও এসি ল্যান্ডের অফিসের মধ্যে পারস্পরিক তথ্যবিনিময়ের সফটওয়্যার রয়েছে। দেশের সব এসি ল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অব রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও এসি ল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেজে ঢুকতে পারেন। এর ফলে কেউ জমি রেজিস্ট্রি করতে গেলে রেজিস্ট্রি অফিস প্রথমে সেই জমির আরওআর অর্থাৎ রেকর্ডস অব রাইটস দেখে নিশ্চিত হবে, যিনি জমি বিক্রি করছেন তিনি ঠিক মালিক কি-না। নতুন পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার তথ্য সঙ্গে সঙ্গে ভূমি অফিস দেখতে পারে। আপনি যদি আবেদন করে বলেন যে অমুক তারিখে এত নম্বর দলিলটি আমার, তখন ভূমি অফিসে চেক করে সহজেই আপনার জমির নামজারি করে দেবেন। সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ পাবে না কেউ। যদি কোন এসি ল্যান্ড সময়ক্ষেপণ করতে চান, তাহলে ডিসি অফিসের নজরদারিতে ধরা পড়ে যাবেন, যা তার চাকরির অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।

সর্বশেষ তৃতীয় ধাপ হচ্ছে আরওআর অর্থাৎ রেকর্ডস অব রাইটস। খতিয়ানে নাম্বার, জেলা ও মৌজার নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এছাড়া একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নং, জমির শ্রেণী, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। আর নামজারি হয়ে যাওয়ার পর এসি ল্যান্ডকে সংশ্লিষ্ট জমির বিষয়ে রেকর্ড অব রাইটসে (আরওআর) জমির নতুন মালিকের তথ্য আপডেট করতে হবে। এরকম তিনটি ধাপ অতিক্রমের পরেই জমিতে আপনার চূড়ান্ত মালিকানা অর্জিত হয়। আপনাদের জানিয়ে রাখি নতুন পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রির ৮ দিনের মধ্যেই আপনার জমির মিউটেশন বা নামজারি হওয়ার কথা।

কিন্তু জমিটি যিনি বিক্রি করবেন তাকে কিন্তু অবশ্যই রেজিস্ট্রি অফিসে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে সিএস/এসএ/আরএস/বিএস খতিয়ান অথবা নামজারি খতিয়ান অর্থাৎ এলাকাভেদে সর্বশেষ জরিপের মাধ্যমে সৃষ্ট খতিয়ান এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দলিলের মূল কপি অথবা সার্টিফাইড কপি। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের রশিদ বা দাখিলা। জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি। আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হলে অবশ্যই ওয়ারিশ সনদ সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আপনি যে জমিটি বিক্রি করছেন সেই জমিটির বায়া দলিল অর্থাৎ পিঠ দলিলসমূহ নিয়ে যেতে পারেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিআইন সার্টিফিকেট অর্থাৎ আয়কর সনদপত্র সঙ্গে নিয়ে যান।

[লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট]

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জমির চূড়ান্ত মালিকানা পেতে কী করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

আপনি জমি কিনলেই কিন্তু জমির চূড়ান্ত মালিকানা অর্জিত হয় না। এর জন্য আপনাকে তিনটি ধাপ পাড়ি দিতে হয়। তারপরেই আপনি হবেন জমিটির চূড়ান্ত মালিক। প্রথমটি হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রেশন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে অভিজ্ঞ আইনজীবী কিংবা দলিল লেখক দিয়ে দলিলটি ভালো করে লিখে নিন। যে জমিটি কিনছেন তার দাগ, খতিয়ান ভালো করে দেখে নিন। জমির পরিমাণ, চৌহদ্দি দেখে নিন। জমি দাতা ও গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, বানান দলিল লেখায় ঠিক আছে কি-না দেখে নিন। এল.টি নোটিশে জমির পরিমাণ দেখে নিন, রেজিস্ট্রি খরচের ব্যাংক পে অর্ডারের ফটোকপি রাখুন। জমির ক্রেতা হিসেবে আপনি কিন্তু সমস্ত খরচ বহন করবেন না। আয়কর ও ভ্যাট জমির বিক্রেতা দিবে। দলিল রেজিস্ট্রেশন হলে ৫২ ধারার রশিদ বুঝে নিন। সবশেষে দলিলের অবিকল নকলের আবেদন করুন।

এরপর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নামজারি (মিউটেশন)। অনেকে দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরই জমি তার হয়ে গেছে বলে মনে করেন। এক হিসাবে বাংলাদেশের মামলার মোট ৮৭ শতাংশের মূল কারণ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ। এতে মামলাজট তৈরি হয় আদালতে। আর্থিক ক্ষতি হয় সংশ্লিষ্ট সবার। তবে নতুন ব্যবস্থাপনায় এসব সমস্যার কোন বালাই নেই। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও এসি ল্যান্ডের অফিসের মধ্যে পারস্পরিক তথ্যবিনিময়ের সফটওয়্যার রয়েছে। দেশের সব এসি ল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অব রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও এসি ল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেজে ঢুকতে পারেন। এর ফলে কেউ জমি রেজিস্ট্রি করতে গেলে রেজিস্ট্রি অফিস প্রথমে সেই জমির আরওআর অর্থাৎ রেকর্ডস অব রাইটস দেখে নিশ্চিত হবে, যিনি জমি বিক্রি করছেন তিনি ঠিক মালিক কি-না। নতুন পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার তথ্য সঙ্গে সঙ্গে ভূমি অফিস দেখতে পারে। আপনি যদি আবেদন করে বলেন যে অমুক তারিখে এত নম্বর দলিলটি আমার, তখন ভূমি অফিসে চেক করে সহজেই আপনার জমির নামজারি করে দেবেন। সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ পাবে না কেউ। যদি কোন এসি ল্যান্ড সময়ক্ষেপণ করতে চান, তাহলে ডিসি অফিসের নজরদারিতে ধরা পড়ে যাবেন, যা তার চাকরির অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।

সর্বশেষ তৃতীয় ধাপ হচ্ছে আরওআর অর্থাৎ রেকর্ডস অব রাইটস। খতিয়ানে নাম্বার, জেলা ও মৌজার নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এছাড়া একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নং, জমির শ্রেণী, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। আর নামজারি হয়ে যাওয়ার পর এসি ল্যান্ডকে সংশ্লিষ্ট জমির বিষয়ে রেকর্ড অব রাইটসে (আরওআর) জমির নতুন মালিকের তথ্য আপডেট করতে হবে। এরকম তিনটি ধাপ অতিক্রমের পরেই জমিতে আপনার চূড়ান্ত মালিকানা অর্জিত হয়। আপনাদের জানিয়ে রাখি নতুন পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রির ৮ দিনের মধ্যেই আপনার জমির মিউটেশন বা নামজারি হওয়ার কথা।

কিন্তু জমিটি যিনি বিক্রি করবেন তাকে কিন্তু অবশ্যই রেজিস্ট্রি অফিসে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে সিএস/এসএ/আরএস/বিএস খতিয়ান অথবা নামজারি খতিয়ান অর্থাৎ এলাকাভেদে সর্বশেষ জরিপের মাধ্যমে সৃষ্ট খতিয়ান এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দলিলের মূল কপি অথবা সার্টিফাইড কপি। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের রশিদ বা দাখিলা। জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি। আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হলে অবশ্যই ওয়ারিশ সনদ সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আপনি যে জমিটি বিক্রি করছেন সেই জমিটির বায়া দলিল অর্থাৎ পিঠ দলিলসমূহ নিয়ে যেতে পারেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিআইন সার্টিফিকেট অর্থাৎ আয়কর সনদপত্র সঙ্গে নিয়ে যান।

[লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট]

back to top