alt

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা

মাসুদ রানা : বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে মায়ের লড়াই। মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এই করুণ চিত্রটি বৃহস্পতিবারের -সোহরাব আলম

চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল এক বছর বয়সী শিশু সাইদুর রহমান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বর আসে তার, ডেঙ্গু হিসেবে শনাক্ত হয় সেই জ্বর। চারদিন ধরে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পেয়িং বেডে চিকিৎসাধীন সাইদুর। শিশুটির মা শাহনাজ বেগম বলেন, বাচ্চাটার থ্যালাসেমিয়া আছে বলে ধারণা করছে ডাক্তাররা। সেটির পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছি। এক রোগের চিকিৎসা করার জন্য হাসপাতালে এসে আরেক রোগে আক্রান্ত হলো। ডেঙ্গুর কারণে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট পিছিয়ে গেল। এদিকে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল হাদী। তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকছেন মা ঝুমুর আক্তার। পুরোটা সময় ছেলেকে সেবা দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন ঝুমুর। খাওয়ানো থেকে শুরু করে, ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ আনা, টেস্ট করানো- সবকিছুই করছেন তিনি। শুধু ঝুমুর নয় তার মতো অনেক মা তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।

সাইদুর ও রাফির মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছেই। শিশু হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ২৫% শিশু রোগী। আক্রান্তের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর ২১% শিশু। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এ বছর এত বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে, যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু। এছাড়া জ্বরে আক্রান্ত অনেক শিশুকে বাইরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার বা না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন বাইরের রোগীরা। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও বেশ কয়েকজন রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন যারা ভর্তি আছেন, তাদের অনেকেই ঢাকার বাইরে অন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসকেরাই তাদের ঢাকায় পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ামাত্র ভয়ে নিজে থেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। এই দুটি কারণেই ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীরা আসছেন।

এদিকে, সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৮৯ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে ৮৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট শনাক্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৮৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৮৯ জন আর ঢাকার বাইরের ২ হাজার ১০০ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে ঢাকার একজন এবং ঢাকার বাইরের ৭ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জনের। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৬ হাজার ৬২২ জন আর ঢাকার বাইরের এক লাখ তিন হাজার ৭৭ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৯১১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৯৫৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭২ হাজার ৩৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ৯৬ হাজার ২০৭ জন। ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মারা যান ২৭ জন। আলোচ্য বছরে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর সারাদেশে ১০৫ জন ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছিল।

ডেঙ্গু আক্রান্ত সন্তানের সুস্থতায় লড়ে যাচ্ছেন মায়েরা

মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল হাদী। তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকছেন মা ঝুমুর আক্তার। সঙ্গে চার বছরের মেয়ে ঝর্ণা। তিনদিন ধরে তাদের অবস্থান হাসপাতালেই। আর পুরোটা সময় ছেলেকে সেবা দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন ঝুমুর। খাওয়ানো থেকে শুরু করে, ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ আনা, টেস্ট করানো- সব কিছুই করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ঝুমুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গেন্ডারিয়া থেকে এসেছি আমরা। অনেক বড় হাসপাতাল। ওয়ার্ড থেকে প্যাথলজিতে যাওয়া কষ্টকর। ছেলের টেস্ট রিপোর্ট আনা থেকে শুরু করে সব কাজ আমিই করি। এখানে সেবা ভালো। কিন্ত একা একা সব কাজ করতে কষ্ট হয়।

শুধু ঝুমুর নন, এ হাসপাতালে তার মতো অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনদের সেবা করে যাচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে কারও বাবা-মা, কারও সন্তান, আবার কারও স্বামী বা স্ত্রী রয়েছেন। এমনই একজন মালিবাগের বাসিন্দা আল-আমিন। পেশায় ছোটখাটো অনলাইন ব্যবসায়ী। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। মাকে সঙ্গে নিয়ে ছয়দিন ধরে হাসপাতালে। মা হাসি বেগম ছেলে আল-আমিনের জন্য একাই দৌড়াদৌড়ি করছেন। হাসি বেগম বলেন, ৮ দিন আগে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোন উপায় না পেয়ে এখানে ফ্রি চিকিৎসা তাই আসি। বাসায় আমার ছোট ছেলে একা। আমি ছাড়া সেবা করার কেউ নেই।

পাশের ওয়ার্ডেই আরেক ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে খাওয়াচ্ছিলেন মা নুরাইন। তার ছেলে আকাশ ট্রাকচালক। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নুরাইন একাই করছেন। আকাশ বলেন, মা সহজ-সরল মানুষ। কোন সমস্যা হলে নার্স ডেকে আনা, টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আসা, বাইরে থেকে খাবার আনা- একাই করছেন মা। এখানে চিকিৎসা খরচ সামান্য, কিন্ত কেউ না থাকায় মা কাহিল হয়ে যাচ্ছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ড ও ওষুধ ফ্রি হওয়ায় হাসপাতালের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট তারা। তবে অধিকাংশ রোগী ঢাকার বাইরের। ডিএনসিসি হাসপাতালের স্টাফ নার্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে প্রায় ৫০০ ডেঙ্গুরোগী ভর্তি। আইসিইউতে আছেন ৫০ জন। এক সপ্তাহে মারা গেছেন দুইজন।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাফির মা চম্পা বলেন, আমাদের বাসার কোথাও মশা নেই। তারপরও কোথা থেকে যে বাচ্চাটা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো। বাসায় ছোট আরেকটা মেয়ে আছে, তাকে প্রতিবেশীর কাছে রেখে এসে ছেলের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু শিমুল সাঈদ বলেন, একাধিক রোগী এক বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার কেউ ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। জ্বর থাকলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত, এটাকে জ্বর বলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর চলে গেলে ভয় শুরু হয়, তখন আপনাকে আরও সতর্ক হতে হবে। ডা. শিমুল আরও বলেন, ছোট শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা কঠিন কারণ তাদের রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা যায় না।

শিশুদের দেহে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টও চ্যালেঞ্জিং। শিশুরা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে না এবং যে কোন সময় শকে চলে যেতে পারে। এজন্য আপনাকে শিশুদের ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু সেলের মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল পারভেজ জানিয়েছেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগীর হার বাড়ছে। সব বয়সী শিশু রোগী পাচ্ছি আমরা। এক দুইদিনের জ্বরে যেসব রোগী আসছে তারা যদি মুখে খেতে পারে, তাহলে তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু দিনে তিনবারের বেশি বমি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা নিয়ে আসা রোগীদের আমরা ভর্তি করছি। বর্তমানে ৬৮১ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১১৯। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাম্প্রতিক জরিপে ঢাকার চেয়ে এর পাশের দুই নগর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি দেখা গেছে। এর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্যে। তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ঢাকার বাইরের জেলা গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের রোগী বেশি এসেছেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, অন্য জেলা থেকে ঢাকায় রোগী আনার সময় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়ে পড়তে পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা সব জেলাতেই সমান। জেলাতে ডেঙ্গু রোগীর যে চিকিৎসা হবে, ঢাকার হাসপাতালেও একই চিকিৎসা পাবে। ঢাকায় রোগী এনে ঝুঁকি বাড়ানোর কোন মানে হয় না। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিনি বাইরের ডেঙ্গু রোগী ঢাকা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার বা না পাঠানোর অনুরোধ জানান। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা ঢাকায় আসা বন্ধ হয়নি। মানিকগঞ্জের শিবালয় থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ওমর ফারুক। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ফারুকের মামা মো. নাসির বলেন, ‘জ্বর কমতেছিল না। তাই উপজেলা থেকে ঢাকায় পাঠায় দিছে। ভাগিনার শরীরের অবস্থা ভালো না।

প্রতিদিনই ঢাকার বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকার আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে রোগীরা বেশি আসছেন। ডেঙ্গুর যে চিকিৎসা তাতে ১০০ রোগীর মধ্যে ২ জনের হয়তো ঢাকায় আনা লাগতে পারে। কিন্তু অনেকেই ভয়ে ঢাকায় চলে আসছেন। এতে বরং রোগীর ঝুঁকি বাড়ে। যেসব রোগী ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে আসেন, তাদের অবস্থা কেমন থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাইরের হাসপাতাল থেকে যারা আসছেন, তাদের খুব কমসংখ্যকের অবস্থাই জটিল থাকে।

এছাড়া চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ নভেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবার অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম দীর্ঘায়িত হবে। নভেম্বরেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টি আর এরপর টানা রোদে সবচেয়ে বেশি জন্মায় এডিস মশা। এমন পরিস্থিতি এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। ডেঙ্গু এখন আর বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে এর প্রকোপ দীর্ঘ হচ্ছে। এবারও বছরের শুরু থেকেই ছিল ডেঙ্গু রোগী। আগস্টে শনাক্ত ও প্রাণহানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুন-জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও আগস্টে প্রায় ৩৬ ভাগ বেশি হয়েছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুম শেষ হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি, এবার কিছুটা দেরির সম্ভাবনা রয়েছে।

ছবি

মীরসরাইয়ে আগুনে পুড়লো প্লাস্টিকের গোডাউন

ছবি

বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রাঙ্গণে কাব স্কাউটদের মিলনমেলা

১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বরের কথা স্মরন করলে জীবিতরা আঁতকে ওঠে

শরীয়তপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাতক, কিন্তু নিয়মিত স্বাক্ষর হচ্ছে হাজিরা খাতায়

ছবি

বাসচালকের মায়ের আহাজারি: আমার ছেলে তো রাজনীতি করে না, পুড়িয়ে মারলো কেন

ছবি

চাটমোহরের কুমড়ো বড়ি যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা

ছবি

ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নির্মাণ কাজ বন্ধ

ছবি

হাটহাজারীতে দুই দিনে ৩ অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার

ছবি

প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে চাটমোহরে বিএনপির সমাবেশ

ছবি

মোরেলগঞ্জে শিক্ষকের মারপিটে ছাত্রীর প্রানহানির অভিযোগ

ছবি

ভূয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি রৌমারীতে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

ছবি

তরুণ উদ্যোক্তা পরানের সাফল্য : নদীতীরে হাঁসের খামারে ভাগ্যের দিগন্ত

ছবি

সিরাজগঞ্জে হাসিনা-কাদেরসহ সাড়ে ৫শ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ছবি

শ্রীপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৬৮ পরিবারের মাঝে ছাগল বিতরণ

শীতে খেজুরের রস-গুড়ের স্বাদ জোগাতে ব্যস্ত গাছিরা

চাটখিলে চিহ্নিত মাদক কারবারি ইয়াবাসহ আটক

সিরাজগঞ্জে কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ

কালিয়াকৈরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

ছবি

কুমিল্লায় গোখরা সাপসহ ১৭টি বাচ্চা উদ্ধার

ছবি

বোয়ালখালীতে আগাম সরিষার জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত কৃষক

ছবি

শক্তিশালী বোমা মেশিনে বালি অপসারণ, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

ছবি

নিয়ম না মেনেই সড়কের পার্শ্বে দ্বিতল ভবন নির্মাণ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ছবি

সুপেয় পানির দাবিতে সোচ্চার মোরেলগঞ্জবাসী

মহেশপুর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত

ছবি

সাবেক এমপি সাদেক খানের ১২ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

নিরাপত্তার দাবিতে গৃহবধুর সংবাদ সম্মেলন

ছবি

নারীকে বাঁচাতে গিয়ে ২ তরুণের মৃত্যু

ছবি

ধনবাড়ীতে পিকাপ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪

তাহিরপুরে ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী আটক

ছবি

রাণীনগরে গোয়াল ঘরের তালা কেটে গরু চুরি

ছবি

বরুড়ার কচুর লতি বিদেশে

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু

ছবি

সিরাজগঞ্জে গৃহবধু হত্যায় স্বামী ও ননদের যাবজ্জীবন

ছবি

হবিগঞ্জে ইসকন মন্দিরে অগ্নিকান্ড

ছবি

নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা যুবক আটক

ছবি

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ৫

tab

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা

মাসুদ রানা

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে মায়ের লড়াই। মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এই করুণ চিত্রটি বৃহস্পতিবারের -সোহরাব আলম

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল এক বছর বয়সী শিশু সাইদুর রহমান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বর আসে তার, ডেঙ্গু হিসেবে শনাক্ত হয় সেই জ্বর। চারদিন ধরে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পেয়িং বেডে চিকিৎসাধীন সাইদুর। শিশুটির মা শাহনাজ বেগম বলেন, বাচ্চাটার থ্যালাসেমিয়া আছে বলে ধারণা করছে ডাক্তাররা। সেটির পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছি। এক রোগের চিকিৎসা করার জন্য হাসপাতালে এসে আরেক রোগে আক্রান্ত হলো। ডেঙ্গুর কারণে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট পিছিয়ে গেল। এদিকে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল হাদী। তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকছেন মা ঝুমুর আক্তার। পুরোটা সময় ছেলেকে সেবা দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন ঝুমুর। খাওয়ানো থেকে শুরু করে, ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ আনা, টেস্ট করানো- সবকিছুই করছেন তিনি। শুধু ঝুমুর নয় তার মতো অনেক মা তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।

সাইদুর ও রাফির মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছেই। শিশু হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ২৫% শিশু রোগী। আক্রান্তের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর ২১% শিশু। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এ বছর এত বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে, যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু। এছাড়া জ্বরে আক্রান্ত অনেক শিশুকে বাইরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার বা না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন বাইরের রোগীরা। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও বেশ কয়েকজন রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন যারা ভর্তি আছেন, তাদের অনেকেই ঢাকার বাইরে অন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসকেরাই তাদের ঢাকায় পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ামাত্র ভয়ে নিজে থেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। এই দুটি কারণেই ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীরা আসছেন।

এদিকে, সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৮৯ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে ৮৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট শনাক্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৮৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৮৯ জন আর ঢাকার বাইরের ২ হাজার ১০০ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে ঢাকার একজন এবং ঢাকার বাইরের ৭ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জনের। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৬ হাজার ৬২২ জন আর ঢাকার বাইরের এক লাখ তিন হাজার ৭৭ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৯১১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৯৫৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭২ হাজার ৩৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ৯৬ হাজার ২০৭ জন। ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মারা যান ২৭ জন। আলোচ্য বছরে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর সারাদেশে ১০৫ জন ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছিল।

ডেঙ্গু আক্রান্ত সন্তানের সুস্থতায় লড়ে যাচ্ছেন মায়েরা

মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল হাদী। তার সঙ্গে হাসপাতালে থাকছেন মা ঝুমুর আক্তার। সঙ্গে চার বছরের মেয়ে ঝর্ণা। তিনদিন ধরে তাদের অবস্থান হাসপাতালেই। আর পুরোটা সময় ছেলেকে সেবা দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন ঝুমুর। খাওয়ানো থেকে শুরু করে, ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ আনা, টেস্ট করানো- সব কিছুই করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ঝুমুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গেন্ডারিয়া থেকে এসেছি আমরা। অনেক বড় হাসপাতাল। ওয়ার্ড থেকে প্যাথলজিতে যাওয়া কষ্টকর। ছেলের টেস্ট রিপোর্ট আনা থেকে শুরু করে সব কাজ আমিই করি। এখানে সেবা ভালো। কিন্ত একা একা সব কাজ করতে কষ্ট হয়।

শুধু ঝুমুর নন, এ হাসপাতালে তার মতো অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনদের সেবা করে যাচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে কারও বাবা-মা, কারও সন্তান, আবার কারও স্বামী বা স্ত্রী রয়েছেন। এমনই একজন মালিবাগের বাসিন্দা আল-আমিন। পেশায় ছোটখাটো অনলাইন ব্যবসায়ী। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। মাকে সঙ্গে নিয়ে ছয়দিন ধরে হাসপাতালে। মা হাসি বেগম ছেলে আল-আমিনের জন্য একাই দৌড়াদৌড়ি করছেন। হাসি বেগম বলেন, ৮ দিন আগে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোন উপায় না পেয়ে এখানে ফ্রি চিকিৎসা তাই আসি। বাসায় আমার ছোট ছেলে একা। আমি ছাড়া সেবা করার কেউ নেই।

পাশের ওয়ার্ডেই আরেক ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে খাওয়াচ্ছিলেন মা নুরাইন। তার ছেলে আকাশ ট্রাকচালক। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নুরাইন একাই করছেন। আকাশ বলেন, মা সহজ-সরল মানুষ। কোন সমস্যা হলে নার্স ডেকে আনা, টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আসা, বাইরে থেকে খাবার আনা- একাই করছেন মা। এখানে চিকিৎসা খরচ সামান্য, কিন্ত কেউ না থাকায় মা কাহিল হয়ে যাচ্ছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ড ও ওষুধ ফ্রি হওয়ায় হাসপাতালের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট তারা। তবে অধিকাংশ রোগী ঢাকার বাইরের। ডিএনসিসি হাসপাতালের স্টাফ নার্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে প্রায় ৫০০ ডেঙ্গুরোগী ভর্তি। আইসিইউতে আছেন ৫০ জন। এক সপ্তাহে মারা গেছেন দুইজন।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাফির মা চম্পা বলেন, আমাদের বাসার কোথাও মশা নেই। তারপরও কোথা থেকে যে বাচ্চাটা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো। বাসায় ছোট আরেকটা মেয়ে আছে, তাকে প্রতিবেশীর কাছে রেখে এসে ছেলের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু শিমুল সাঈদ বলেন, একাধিক রোগী এক বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার কেউ ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। জ্বর থাকলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত, এটাকে জ্বর বলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর চলে গেলে ভয় শুরু হয়, তখন আপনাকে আরও সতর্ক হতে হবে। ডা. শিমুল আরও বলেন, ছোট শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা কঠিন কারণ তাদের রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা যায় না।

শিশুদের দেহে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টও চ্যালেঞ্জিং। শিশুরা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে না এবং যে কোন সময় শকে চলে যেতে পারে। এজন্য আপনাকে শিশুদের ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু সেলের মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল পারভেজ জানিয়েছেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগীর হার বাড়ছে। সব বয়সী শিশু রোগী পাচ্ছি আমরা। এক দুইদিনের জ্বরে যেসব রোগী আসছে তারা যদি মুখে খেতে পারে, তাহলে তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু দিনে তিনবারের বেশি বমি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা নিয়ে আসা রোগীদের আমরা ভর্তি করছি। বর্তমানে ৬৮১ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১১৯। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাম্প্রতিক জরিপে ঢাকার চেয়ে এর পাশের দুই নগর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি দেখা গেছে। এর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্যে। তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ঢাকার বাইরের জেলা গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের রোগী বেশি এসেছেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, অন্য জেলা থেকে ঢাকায় রোগী আনার সময় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়ে পড়তে পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা সব জেলাতেই সমান। জেলাতে ডেঙ্গু রোগীর যে চিকিৎসা হবে, ঢাকার হাসপাতালেও একই চিকিৎসা পাবে। ঢাকায় রোগী এনে ঝুঁকি বাড়ানোর কোন মানে হয় না। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিনি বাইরের ডেঙ্গু রোগী ঢাকা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার বা না পাঠানোর অনুরোধ জানান। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা ঢাকায় আসা বন্ধ হয়নি। মানিকগঞ্জের শিবালয় থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ওমর ফারুক। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ফারুকের মামা মো. নাসির বলেন, ‘জ্বর কমতেছিল না। তাই উপজেলা থেকে ঢাকায় পাঠায় দিছে। ভাগিনার শরীরের অবস্থা ভালো না।

প্রতিদিনই ঢাকার বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকার আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে রোগীরা বেশি আসছেন। ডেঙ্গুর যে চিকিৎসা তাতে ১০০ রোগীর মধ্যে ২ জনের হয়তো ঢাকায় আনা লাগতে পারে। কিন্তু অনেকেই ভয়ে ঢাকায় চলে আসছেন। এতে বরং রোগীর ঝুঁকি বাড়ে। যেসব রোগী ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে আসেন, তাদের অবস্থা কেমন থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাইরের হাসপাতাল থেকে যারা আসছেন, তাদের খুব কমসংখ্যকের অবস্থাই জটিল থাকে।

এছাড়া চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ নভেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবার অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম দীর্ঘায়িত হবে। নভেম্বরেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টি আর এরপর টানা রোদে সবচেয়ে বেশি জন্মায় এডিস মশা। এমন পরিস্থিতি এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। ডেঙ্গু এখন আর বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে এর প্রকোপ দীর্ঘ হচ্ছে। এবারও বছরের শুরু থেকেই ছিল ডেঙ্গু রোগী। আগস্টে শনাক্ত ও প্রাণহানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুন-জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও আগস্টে প্রায় ৩৬ ভাগ বেশি হয়েছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুম শেষ হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি, এবার কিছুটা দেরির সম্ভাবনা রয়েছে।

back to top