alt

সারাদেশ

উচ্চ তাপ প্রবাহ, কালীগঞ্জে নেমে গেছে পানির স্তর

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

কালীগঞ্জে মাটি খুঁড়ে বসানো হচ্ছে স্যালোমেশিন, কিন্তু পানির পরিমাণ কম-সংবাদ

সারাদেশের অঞ্চলভেদে চলছে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ। যে কারণে জনস্বার্থে সরকারিভাবে কয়েক দফায় হিট এলার্ট ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বৃহত্তর যশোরাঞ্চালের কয়েকটি জেলার অবস্থা আরও ভীতিকর। কারণ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি-তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার তালিকাতেও কয়েকদিন ঘুরে ফিরে বৃহত্তর যশোরাঞ্চালের নাম আসছে। তাপমাত্রার পরিমাণও অতীতের কয়েক যুগের মধ্যে বেশি। অন্যদিকে অঞ্চলটিতে বৃষ্টির অভাবে জলাশয় শুকিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে অনেক বেশি। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বসতবাড়ির হাজার হাজার অগভীর নলকূপ। ফলে বাড়িতে বাড়িতে চলছে খাবার পানির তীব্র সংকট। এমন উচ্চমাত্রার তাপমাত্রা ও নিম্নগামী পানির স্তর মিলে আজ জনজীবন ও প্রাণীকুলে হাঁসফাঁস অবস্থা। এদিকে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলের নদী ও জলাশয়গুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও এ বছর দ্রুত নেমে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিসসূত্রে জানাগেছে, ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জরিপ মতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৯ হাজার ৫৬৩টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। আর গভীর নলকূপ আছে ৩৮৪টি। গ্রীষ্মের শুরুতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও পানির স্তর নামতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর অনেকটা বেশি এবং দ্রুত নেমে গেছে। অফিসসূত্রে আরও জানা গেছে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর কিছু কিছু এলাকাতে ৩৮ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। ফলে অগভীর কোনো নলকূপে পানি উঠার কথা না।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, প্রচ- তাপমাত্রায় কৃষকেরা কাজ করছেন। কিছুক্ষণ পরপর গাছের ছায়ায় অবস্থান নিচ্ছেন। পান করছেন খাওয়ার স্যালাইন ও পানি। এমন অস্থার মধ্য দিয়ে কৃষকেরা নাবি কিছু ক্ষেত ছাড়া বোরো ধান বাড়ি তুলতে ব্যস্ত। আর নাবি খেতগুলোতে চলছে শেষ সময়ের সেচকাজ। কিন্তু স্যালোমেশিনগুলোতে ঠিকমত পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেকগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত খুঁড়ে স্যালোমেশিন বসিয়ে সেচকাজ চালাচ্ছেন। যে গুলো সচল আছে পানি উঠছে খুবই কম। এদিকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ নলকূপ বিকল হয়ে পড়েছে। গৃহিণীরা দূর থেকে পানি এনে গৃহস্থালির পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। তবে যাদের বাসাবাড়িতে সাবমার্সেবল পাম্পের ব্যবস্থা করেছেন তারা প্রতিবেশীদের পানি দিয়ে মহৎ কাজ করছেন। শহরের বাসাবাড়িতে পানির অভাব থাকলেও পাখির জন্য ঘরের ছাদে একটা পাত্রে কিছু পানি রেখে দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, গ্রীষ্মকাল শুরু হলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। নলকূপগুলোতে পানি উঠতে চায় না। তবে প্রচন্ড গরমের পরে বৃষ্টিও হয়েছে। ধীরে ধীরে নলকূপগুলো আবার চালু হয়ে পানি উঠতে থাকে। কিন্তু এ বছরে ভিন্ন চিত্র। গ্রীষ্মের শুরু থেকে তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। এ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৃষ্টির কোন দেখা মেলেনি। ফলে বাসাবাড়ির নলকূপগুলো বিকল হয়ে গেছে। স্যালোইঞ্জিনচালিত গভীর নলকূপও বেশ কিছু বিকল হতে থাকে। বাকিগুলোতে পানি উঠলেও তা পরিমানে অনেক কম। কেউ কেউ পানির স্তর পেতে ১০-১২ ফিট মাটি খুঁড়ে স্যালোইঞ্জিন বসিয়ে বোরো ক্ষেতের সেচকাজ চালাচ্ছেন। এখন বোরো ধান কৃষকেরা ঘরে উঠাতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাসাবাড়ির গৃহস্থালির কাজ ও খাবার পানির জন্য আহাকার তীব্রতর হয়ে দেখা দিয়েছে।

স্বপন কুমার বিশ্বাস নামের এক স্কুল শিক্ষক জানান, অনেক দুর্যোগ মানুষ টেনে আনছে। অধিক হারে গাছ কেটে কার্বনডাই অক্সাইড বাড়িয়ে আমরাই তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছি। জমিতে যেনতেন নালা দিয়ে পানি সেচ দিয়ে এবং বাসা বাড়িতে রান্না ঘরে পানি অপচয় করছি। অথচ আজ পানির অভাবে অধিকাংশ বাড়ির গৃহিণীসহ অন্য সদস্যরা সকাল-বিকেল প্রতিবেশীদের সাবমার্সেবল পাম্পের পানি সংগ্রহ করতে লম্বা লাইন দিচ্ছেন। অবস্থাটা এমন চারিদিকে খাওয়ার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্কট এখন চরমে। বাসা বাড়িতে পানি না থাকাটা এক ধরনের জনদুর্ভোগ। তিনি বলেন, শুধু শহর নয় গ্রামাঞ্চালের মানুষও পশু-পাখি পানির জন্য পড়েছেন মহাভোগান্তিতে। তিনি বলেন, এমন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে অনেকে পাখির জন্য ঘরের ছাদে কিছু পানি রেখেছেন। এমন আবহাওয়ায় এ কাজটি সবার করা উচিত।

কালীগঞ্জ পৌর শহরের ফয়লা গ্রামের (মাস্টারপাড়ার) আব্দুল মজিদ জানান,পানিকে জীবন বলা হয়। কিন্তু তাদের মহল্লার বাসাবাড়ির বেশিরভাগ নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। সাধারণ মোটরের মাধ্যমেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার তাদের এলাকাতে পৌরসভার সাপ্লাই পানিরও ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রচ- গরমে আছেন মহাবিপাকে।

গ্রামের গৃহিণী সালমা বেগম জানান, মহল্লার দু-একটি পরিবারের নলকূপে পানি কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বাকিরা গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির অভাবে প্রতিনিয়ত ঝামেলা পোহাচ্ছেন। যতদিন ভারী বর্ষা না হবে ততদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে বলে তারা মনে করছেন।

ফয়লা গোহাটা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাসার নলকূপে পানি উঠছে না। বাসা থেকে বেশ দূরের বাড়িতে স্থাপনকৃত একটি সাবমার্সেবল মোটর থেকে সকাল বিকেল পানি টেনে বাসায় নিচ্ছেন। ওই গৃহকর্তার উদারতায় তিনিসহ মহল্লাবাসী বেশ উপকৃত হচ্ছেন।

এদিকে উপজেলার খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আয়ূব হোসেন জানান, মাঠে দোল খাওয়া বোরো খেতের ধান তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ মৌসুমের শেষের দিকে এসে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অল্প কিছুদিন পরেই ধান পাক ধরবে। তবে কিছু খেত আছে অনেক পরে লাগানো। সে খেতগুলোতে এখনও বেশ কয়েকটি পানি সেচ লাগবে। কিন্ত মেশিনে যেভাবে পানি উঠছে তাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন জানান, আগে রোপণ করা কিছু ধান কেটেছেন। তবে নাবী (পরে রোপণকৃত) বোরো খেতে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের সেচকাজ। কিন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিসহ গ্রামের বেশিরভাগ কৃষক ১০-১২ ফুট গভীর করে খুঁড়ে স্যালোমেশিন বসিয়ে খুব কষ্ট করে বোরো খেতের শেষ মুহূর্তের সেচ কাজ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, শুধু তাদের মাঠেই নয় এলাকার সকল বোরো ক্ষেতের মাঠগুলোতে একই অবস্থা।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা জানান, গ্রীষ্মের সময় পানির স্তর প্রতিবছর এ এলাকায় ২০ থেকে ২২ ফুট নিচে নেমে যায়। এ বছর একটু আগে থেকেই পানির স্তর ৩৫-৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টিও হয়নি। যে কারণে আগেই অগভীর নলকূপগুলো অকোজো হয়ে পড়েছে। আবার গভীর নলকূপগুলোতেও এখন ঠিকমত পানি উঠছে না। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলার একটি গ্রামে পানির স্তর মেপে দেখেছেন ৪০ ফুটেরও অধিক নিচেই নেমেছে পানির স্তর। যে কারণে নলকূপ অকেজো পড়ছে। তিনি বলেন, বেশি সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাবার পানিতে। এমনটি হওয়ার কারন হিসেবে তিনি বলেন, এ বছর এখনও কোন ভারী বৃষ্টি হয়নি। নদী-খাল-বিল জলাশয়ে কোন পানি নেই। যে কারণে চলতি বছরে আগে থেকেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তিনি আরও বলেন, আগামীতেও এ অঞ্চলের পানির স্তর ঠিক এমনটিই হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে পৃথিবী রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পানির স্তর ঠিকঠাক মতো পেতে হলে অবশ্যই নদী ও জলাশয় খনন করতে হবে।

ছবি

বেনাপোল বন্দরে ৫ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ছবি

কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত ৫

ছবি

কিশোরগঞ্জে শ্রেণিকক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ

ছবি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাজের সময় গ্যাস লাইনে লিকেজ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের জামিন নামঞ্জুর

ছবি

চাঁদপুরে দুই ইটভাটার মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দেশে কোরবানির জন্য প্রস্তুত এক কোটি ২৯ লাখ পশু

ছবি

হোসেনপুরে গরমে ক্লাসেই অসুস্থ ৩০ প্রাইমারী শিক্ষার্থী

ছবি

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের আম পাড়া শুরু

ছবি

বিলীনের পথে জলকদর খাল

ছবি

উখিয়ায় বাসা থেকে এনজিও কর্মীর লাশ উদ্ধার

ছবি

গাজীপুরে টিনশেড মার্কেট ও বসতবাড়িতে আগুন

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে ‘নগর উন্নয়ন মাশুল’ চান :মেয়র

বাংলাদেশি রোগীদের জন্য আসামের গুয়াহাটিতে মানসম্মত চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ

ছবি

নতুন দুই জাতের শিম উদ্ভাবন

মৌলভীবাজারে এ ধর্ষন ও হত্যা মামলায় দুই আসামী মৃত্যুদন্ডের রায়

ছবি

রাজশাহীতে যুবককে হত্যায় দুইজনের ফাঁসি

ছবি

ফরিদপুরে আইসক্রিম তৈরির কারখানায় অভিযান ও জরিমানা

ছবি

সব ইটভাটা বন্ধ না করায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের ব্যাখ্যা তলব: হাইকোর্ট

ছবি

গৃহকর্মীকে নির্যাতন মামলায় গৃহকর্ত্রীর বিচার শুরু

ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘন : শ্রীপুরের এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করল ইসি

ছবি

রাতভর টহলে পেরেশান তিতাস গ্যাস, আবাসিকে সংযোগ চালু করার সুপারিশ

ছবি

জাহাজে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ১২ ডাকাত আটক

ছবি

৬৪ দিনের উৎকণ্ঠার অবসান : স্বজনদের কাছে ফিরলেন ২৩ নাবিক

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখে বাঁশখালীর ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

ছবি

পাহাড়ে আরসার আস্তানা, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি

জামালপুরে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের নামে করা রাস্তার নামফলক ভাংচুর

ছবি

নওগাঁর আম বাজারে আসবে ২২ মে থেকে

নারায়ণগঞ্জে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে একজন নিহত

যাত্রাবাড়ী থেকে পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেপ্তার ১০

ছবি

মুন্সীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান মিঠু কারাগারে

ছবি

সিরাজগঞ্জে ভোটের আগে গোপন বৈঠক গ্রেপ্তারের পর সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক

ছবি

চট্টগ্রামে ২১ লক্ষাধিক টাকার অবৈধ সিগারেট উদ্ধার, গ্রেপ্তার-২, পলাতক ২

ছবি

ফসলি জমির মাটি কাটায় মামলা

ছবি

প্রতিপক্ষের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা খুন

tab

সারাদেশ

উচ্চ তাপ প্রবাহ, কালীগঞ্জে নেমে গেছে পানির স্তর

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

কালীগঞ্জে মাটি খুঁড়ে বসানো হচ্ছে স্যালোমেশিন, কিন্তু পানির পরিমাণ কম-সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

সারাদেশের অঞ্চলভেদে চলছে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ। যে কারণে জনস্বার্থে সরকারিভাবে কয়েক দফায় হিট এলার্ট ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বৃহত্তর যশোরাঞ্চালের কয়েকটি জেলার অবস্থা আরও ভীতিকর। কারণ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি-তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার তালিকাতেও কয়েকদিন ঘুরে ফিরে বৃহত্তর যশোরাঞ্চালের নাম আসছে। তাপমাত্রার পরিমাণও অতীতের কয়েক যুগের মধ্যে বেশি। অন্যদিকে অঞ্চলটিতে বৃষ্টির অভাবে জলাশয় শুকিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে অনেক বেশি। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বসতবাড়ির হাজার হাজার অগভীর নলকূপ। ফলে বাড়িতে বাড়িতে চলছে খাবার পানির তীব্র সংকট। এমন উচ্চমাত্রার তাপমাত্রা ও নিম্নগামী পানির স্তর মিলে আজ জনজীবন ও প্রাণীকুলে হাঁসফাঁস অবস্থা। এদিকে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলের নদী ও জলাশয়গুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও এ বছর দ্রুত নেমে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিসসূত্রে জানাগেছে, ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জরিপ মতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৯ হাজার ৫৬৩টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। আর গভীর নলকূপ আছে ৩৮৪টি। গ্রীষ্মের শুরুতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও পানির স্তর নামতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর অনেকটা বেশি এবং দ্রুত নেমে গেছে। অফিসসূত্রে আরও জানা গেছে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর কিছু কিছু এলাকাতে ৩৮ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। ফলে অগভীর কোনো নলকূপে পানি উঠার কথা না।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, প্রচ- তাপমাত্রায় কৃষকেরা কাজ করছেন। কিছুক্ষণ পরপর গাছের ছায়ায় অবস্থান নিচ্ছেন। পান করছেন খাওয়ার স্যালাইন ও পানি। এমন অস্থার মধ্য দিয়ে কৃষকেরা নাবি কিছু ক্ষেত ছাড়া বোরো ধান বাড়ি তুলতে ব্যস্ত। আর নাবি খেতগুলোতে চলছে শেষ সময়ের সেচকাজ। কিন্তু স্যালোমেশিনগুলোতে ঠিকমত পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেকগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত খুঁড়ে স্যালোমেশিন বসিয়ে সেচকাজ চালাচ্ছেন। যে গুলো সচল আছে পানি উঠছে খুবই কম। এদিকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ নলকূপ বিকল হয়ে পড়েছে। গৃহিণীরা দূর থেকে পানি এনে গৃহস্থালির পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। তবে যাদের বাসাবাড়িতে সাবমার্সেবল পাম্পের ব্যবস্থা করেছেন তারা প্রতিবেশীদের পানি দিয়ে মহৎ কাজ করছেন। শহরের বাসাবাড়িতে পানির অভাব থাকলেও পাখির জন্য ঘরের ছাদে একটা পাত্রে কিছু পানি রেখে দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, গ্রীষ্মকাল শুরু হলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। নলকূপগুলোতে পানি উঠতে চায় না। তবে প্রচন্ড গরমের পরে বৃষ্টিও হয়েছে। ধীরে ধীরে নলকূপগুলো আবার চালু হয়ে পানি উঠতে থাকে। কিন্তু এ বছরে ভিন্ন চিত্র। গ্রীষ্মের শুরু থেকে তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। এ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৃষ্টির কোন দেখা মেলেনি। ফলে বাসাবাড়ির নলকূপগুলো বিকল হয়ে গেছে। স্যালোইঞ্জিনচালিত গভীর নলকূপও বেশ কিছু বিকল হতে থাকে। বাকিগুলোতে পানি উঠলেও তা পরিমানে অনেক কম। কেউ কেউ পানির স্তর পেতে ১০-১২ ফিট মাটি খুঁড়ে স্যালোইঞ্জিন বসিয়ে বোরো ক্ষেতের সেচকাজ চালাচ্ছেন। এখন বোরো ধান কৃষকেরা ঘরে উঠাতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাসাবাড়ির গৃহস্থালির কাজ ও খাবার পানির জন্য আহাকার তীব্রতর হয়ে দেখা দিয়েছে।

স্বপন কুমার বিশ্বাস নামের এক স্কুল শিক্ষক জানান, অনেক দুর্যোগ মানুষ টেনে আনছে। অধিক হারে গাছ কেটে কার্বনডাই অক্সাইড বাড়িয়ে আমরাই তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছি। জমিতে যেনতেন নালা দিয়ে পানি সেচ দিয়ে এবং বাসা বাড়িতে রান্না ঘরে পানি অপচয় করছি। অথচ আজ পানির অভাবে অধিকাংশ বাড়ির গৃহিণীসহ অন্য সদস্যরা সকাল-বিকেল প্রতিবেশীদের সাবমার্সেবল পাম্পের পানি সংগ্রহ করতে লম্বা লাইন দিচ্ছেন। অবস্থাটা এমন চারিদিকে খাওয়ার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্কট এখন চরমে। বাসা বাড়িতে পানি না থাকাটা এক ধরনের জনদুর্ভোগ। তিনি বলেন, শুধু শহর নয় গ্রামাঞ্চালের মানুষও পশু-পাখি পানির জন্য পড়েছেন মহাভোগান্তিতে। তিনি বলেন, এমন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে অনেকে পাখির জন্য ঘরের ছাদে কিছু পানি রেখেছেন। এমন আবহাওয়ায় এ কাজটি সবার করা উচিত।

কালীগঞ্জ পৌর শহরের ফয়লা গ্রামের (মাস্টারপাড়ার) আব্দুল মজিদ জানান,পানিকে জীবন বলা হয়। কিন্তু তাদের মহল্লার বাসাবাড়ির বেশিরভাগ নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। সাধারণ মোটরের মাধ্যমেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার তাদের এলাকাতে পৌরসভার সাপ্লাই পানিরও ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রচ- গরমে আছেন মহাবিপাকে।

গ্রামের গৃহিণী সালমা বেগম জানান, মহল্লার দু-একটি পরিবারের নলকূপে পানি কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বাকিরা গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির অভাবে প্রতিনিয়ত ঝামেলা পোহাচ্ছেন। যতদিন ভারী বর্ষা না হবে ততদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে বলে তারা মনে করছেন।

ফয়লা গোহাটা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাসার নলকূপে পানি উঠছে না। বাসা থেকে বেশ দূরের বাড়িতে স্থাপনকৃত একটি সাবমার্সেবল মোটর থেকে সকাল বিকেল পানি টেনে বাসায় নিচ্ছেন। ওই গৃহকর্তার উদারতায় তিনিসহ মহল্লাবাসী বেশ উপকৃত হচ্ছেন।

এদিকে উপজেলার খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আয়ূব হোসেন জানান, মাঠে দোল খাওয়া বোরো খেতের ধান তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ মৌসুমের শেষের দিকে এসে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অল্প কিছুদিন পরেই ধান পাক ধরবে। তবে কিছু খেত আছে অনেক পরে লাগানো। সে খেতগুলোতে এখনও বেশ কয়েকটি পানি সেচ লাগবে। কিন্ত মেশিনে যেভাবে পানি উঠছে তাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন জানান, আগে রোপণ করা কিছু ধান কেটেছেন। তবে নাবী (পরে রোপণকৃত) বোরো খেতে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের সেচকাজ। কিন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিসহ গ্রামের বেশিরভাগ কৃষক ১০-১২ ফুট গভীর করে খুঁড়ে স্যালোমেশিন বসিয়ে খুব কষ্ট করে বোরো খেতের শেষ মুহূর্তের সেচ কাজ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, শুধু তাদের মাঠেই নয় এলাকার সকল বোরো ক্ষেতের মাঠগুলোতে একই অবস্থা।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা জানান, গ্রীষ্মের সময় পানির স্তর প্রতিবছর এ এলাকায় ২০ থেকে ২২ ফুট নিচে নেমে যায়। এ বছর একটু আগে থেকেই পানির স্তর ৩৫-৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টিও হয়নি। যে কারণে আগেই অগভীর নলকূপগুলো অকোজো হয়ে পড়েছে। আবার গভীর নলকূপগুলোতেও এখন ঠিকমত পানি উঠছে না। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলার একটি গ্রামে পানির স্তর মেপে দেখেছেন ৪০ ফুটেরও অধিক নিচেই নেমেছে পানির স্তর। যে কারণে নলকূপ অকেজো পড়ছে। তিনি বলেন, বেশি সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাবার পানিতে। এমনটি হওয়ার কারন হিসেবে তিনি বলেন, এ বছর এখনও কোন ভারী বৃষ্টি হয়নি। নদী-খাল-বিল জলাশয়ে কোন পানি নেই। যে কারণে চলতি বছরে আগে থেকেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তিনি আরও বলেন, আগামীতেও এ অঞ্চলের পানির স্তর ঠিক এমনটিই হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে পৃথিবী রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পানির স্তর ঠিকঠাক মতো পেতে হলে অবশ্যই নদী ও জলাশয় খনন করতে হবে।

back to top