খোকসা (কুষ্টিয়া) : ডাক্তারদের চেম্বারের সমনে রোগীদের ভিড় -সংবাদ
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তি ও হয়রানি শিকার হচ্ছেন। ডাক্তার কর্মচারীরা আসে যায় নিজের ইচ্ছা মাফিক। জরুরি বিভাগ চলে বহিরাগত আর উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে। ভাগ্য ভালো হলে মাঝেমধ্যে মেডিকেল অফিসার মেলে। বহির্বিভাগে কমপক্ষে ৭ জন ডাক্তারের চেম্বার থাকলে দেখা মেলেনি একজনেরও।
উপজেলা প্রায় দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার কেন্দ্র বিন্দু উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৫০ শয্যা হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ জন মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৯ জন।
কয়েকজন সার্জন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎস কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের আসা যাওয় নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বসে এসি করা কক্ষে। সেটি আবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার চেম্বার হতে হবে। যদি রোগীর ভাগ্য ভালো হয় তবে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পেতে পারেন। এখনো জরুরী বিভাগ চলছে অনকল মেডিকেল অফিসার দিয়ে। হাসপাতালের ভর্তি প্রসূতি হলে তো আর কথায় নেই। ভুল ভাল বুঝিয়ে তাকে নেওয়া হবে স্থানীয় ক্লিনিকে। সামান্য ফোঁড়া ফাটাতেও হলে রোগীকে ছুটতে হয় ক্লিনিক অথবা বাইরের ডাক্তারের কাছে।
এখানেই শেষ না। ভোগান্তি আর প্রতারণা পদে পদে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল ঘিরে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের শক্ত দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে।
দাপটের সাথে হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়ান বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও এ্যাম্বুলেন্স চালকদের শক্তপোক্তা সিন্ডিকেট রয়েছে। ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থা পত্র নিয়ে রোগী বেড়োনার সাথে সাথে ওষুধ কোম্পানির ৪-৫ জন ঝাপিয়ে পরেন রোগীর হাতের ব্যবস্থা পত্রের ওপর। অনেক সময় রোগীর সাথে থাকা শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
সোমবার তখন বেলা সবে ১২টা ২৪ মিনিট। বহির্বিভাগে ঢুকতেই পুকুরের পাড়ে ওষুধ কোম্পানির ২৫-৩০ জন প্রতিনিধিকে দাড়িয়ে খোস গল্প করতে দেখা যায়। তখনও স্লিপের জন্য কাউন্টারে সামনে অপেক্ষা করছে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি শিশু নারী ও পুরুষ রোগী এবং তাদের স্বজনরা। ভিতরে ঢুকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদ)কে তার কক্ষে পাওয়া গেল।
অন্য একটি কক্ষে মহিলা ও শিশু রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন একজন নার্স। আশা নামের এই স্বাস্থ্যকর্মীর মিড ওয়াইফ নামের আর একটি পদবি রয়েছে। একই কক্ষে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ফাহিমা হেলেন।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজিব কুমার সাহার কক্ষে এসি চলছিলো। তিনি ভেতরে নেই। তার কক্ষ থেকে এক সহকারী জানান এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহের রবি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার অফিস করেন।
একই অবস্থা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখান গতানুগতিক উপ-সহকারী কমিসউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহিদুল ইসলাম রোগী সেবা দিচ্ছিলেন। তাকে ঘিরে শতাধিক নারী পুরুষ রোগী। সেখানেও দেখা মেলেনি মেডিকেল অফিসারের। নিজের কক্ষে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল হককে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী অনিক হাসান (১৮), উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে বাড়ি। পেটের সমস্যা নিয়ে দুই দিন আগে ভর্তি হয়েছে। সে জানায় দুই একটা ওষুধ বাদে সবই কিনতে হচ্ছে। ডাক্তার আসে তাদের ইচ্ছামত। মরে গেলেও ডাক্তার আর আসে না।
মাফুজা (৪৫) উপজেলা সদরের কালীবাড়ি পাড়ার বাসিন্দার। হাটুতে ব্যথা নিয়ে ৮ দিন ভর্তি আছেন। তার অভিযোগ খাবারের মান নিয়ে। ওষুধ যা দিচ্ছে তা দিয়ে অসুখ সারছে না। ডাক্তার আসে যায়।
কথা বলা হয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবির হোসেন সোহাগের সাথে, তিনি বলেন এখন রোগীর যে চাপ পরেছে তাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আগামীতে সমস্যা থাকবে না। ডাক্তার বাড়লে জরুরি বিভাগে অনুকূল বলে কিছু থাকবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল হক বলেন তিনি সবে যোগদান করেছেন। অনেক সমস্যাও আছে। খুব কম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।
খোকসা (কুষ্টিয়া) : ডাক্তারদের চেম্বারের সমনে রোগীদের ভিড় -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তি ও হয়রানি শিকার হচ্ছেন। ডাক্তার কর্মচারীরা আসে যায় নিজের ইচ্ছা মাফিক। জরুরি বিভাগ চলে বহিরাগত আর উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে। ভাগ্য ভালো হলে মাঝেমধ্যে মেডিকেল অফিসার মেলে। বহির্বিভাগে কমপক্ষে ৭ জন ডাক্তারের চেম্বার থাকলে দেখা মেলেনি একজনেরও।
উপজেলা প্রায় দেড় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার কেন্দ্র বিন্দু উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ৫০ শয্যা হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ জন মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৯ জন।
কয়েকজন সার্জন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎস কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের আসা যাওয় নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বসে এসি করা কক্ষে। সেটি আবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার চেম্বার হতে হবে। যদি রোগীর ভাগ্য ভালো হয় তবে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পেতে পারেন। এখনো জরুরী বিভাগ চলছে অনকল মেডিকেল অফিসার দিয়ে। হাসপাতালের ভর্তি প্রসূতি হলে তো আর কথায় নেই। ভুল ভাল বুঝিয়ে তাকে নেওয়া হবে স্থানীয় ক্লিনিকে। সামান্য ফোঁড়া ফাটাতেও হলে রোগীকে ছুটতে হয় ক্লিনিক অথবা বাইরের ডাক্তারের কাছে।
এখানেই শেষ না। ভোগান্তি আর প্রতারণা পদে পদে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল ঘিরে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের শক্ত দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে।
দাপটের সাথে হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়ান বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও এ্যাম্বুলেন্স চালকদের শক্তপোক্তা সিন্ডিকেট রয়েছে। ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থা পত্র নিয়ে রোগী বেড়োনার সাথে সাথে ওষুধ কোম্পানির ৪-৫ জন ঝাপিয়ে পরেন রোগীর হাতের ব্যবস্থা পত্রের ওপর। অনেক সময় রোগীর সাথে থাকা শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
সোমবার তখন বেলা সবে ১২টা ২৪ মিনিট। বহির্বিভাগে ঢুকতেই পুকুরের পাড়ে ওষুধ কোম্পানির ২৫-৩০ জন প্রতিনিধিকে দাড়িয়ে খোস গল্প করতে দেখা যায়। তখনও স্লিপের জন্য কাউন্টারে সামনে অপেক্ষা করছে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি শিশু নারী ও পুরুষ রোগী এবং তাদের স্বজনরা। ভিতরে ঢুকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদ)কে তার কক্ষে পাওয়া গেল।
অন্য একটি কক্ষে মহিলা ও শিশু রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন একজন নার্স। আশা নামের এই স্বাস্থ্যকর্মীর মিড ওয়াইফ নামের আর একটি পদবি রয়েছে। একই কক্ষে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ফাহিমা হেলেন।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজিব কুমার সাহার কক্ষে এসি চলছিলো। তিনি ভেতরে নেই। তার কক্ষ থেকে এক সহকারী জানান এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহের রবি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার অফিস করেন।
একই অবস্থা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখান গতানুগতিক উপ-সহকারী কমিসউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহিদুল ইসলাম রোগী সেবা দিচ্ছিলেন। তাকে ঘিরে শতাধিক নারী পুরুষ রোগী। সেখানেও দেখা মেলেনি মেডিকেল অফিসারের। নিজের কক্ষে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল হককে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী অনিক হাসান (১৮), উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে বাড়ি। পেটের সমস্যা নিয়ে দুই দিন আগে ভর্তি হয়েছে। সে জানায় দুই একটা ওষুধ বাদে সবই কিনতে হচ্ছে। ডাক্তার আসে তাদের ইচ্ছামত। মরে গেলেও ডাক্তার আর আসে না।
মাফুজা (৪৫) উপজেলা সদরের কালীবাড়ি পাড়ার বাসিন্দার। হাটুতে ব্যথা নিয়ে ৮ দিন ভর্তি আছেন। তার অভিযোগ খাবারের মান নিয়ে। ওষুধ যা দিচ্ছে তা দিয়ে অসুখ সারছে না। ডাক্তার আসে যায়।
কথা বলা হয় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবির হোসেন সোহাগের সাথে, তিনি বলেন এখন রোগীর যে চাপ পরেছে তাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আগামীতে সমস্যা থাকবে না। ডাক্তার বাড়লে জরুরি বিভাগে অনুকূল বলে কিছু থাকবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল হক বলেন তিনি সবে যোগদান করেছেন। অনেক সমস্যাও আছে। খুব কম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।