ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নে অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। অসুস্থ গরুর মাংসের সংস্পর্শে আসা ৯ ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি পরিকল্পিতভাবে ওই গরুর মালিক কমমূল্যে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি করেছেন। ওই গরুর মাংস ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠালে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে সেই গরুটি প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে ৪ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ রেজাল্ট আসে। এছাড়া ২ নারীও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বলে সরজমিনে দেখা গেছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলা ও সতর্কতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডা. মেহেদী হাসান তুষারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ও উপস্বর্গের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে প্রায় ২০ দিন আগে একটি অসুস্থ গরু জবাই করে একই গ্রামে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা হয়। গরুর মালিক ইব্রাহিম মিয়া (৫২) গরুর গলায় ফাঁস লেগেছে বলে দ্রুত জবাই করার দ্বায়িত্ব দেন প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাককে। তিনি সহ যারা যারা মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ করেছেন সকলেই সংক্রমিত হওয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে। কারও হাতে কারও হাটুতে যে আঙুল দিয়ে মাংস ছুয়েছে সেই স্থানেই সংক্রমিত হতে দেখা গেছে।
সংক্রমিত একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইব্রাহিমের পরিবারের কেউ মাংসের সংস্পর্শে আসেনি কিংবা খায়নি। চারজন ব্যক্তিকে ডা. প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করেই দায়সারা চিকিৎসা দিয়েছেন। গ্রামের ডাক্তারের পরামর্শে এখন আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করছি।
এর এক সপ্তাহ পর ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর ও সোনারপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ দেখা যায়। পরবর্তীতে এক ক্রেতার বাড়ির ফ্রিজ থেকে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ঢাকা আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া যায়।
ইমাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছে। গঠিত কমিটি গরু জবাই করার পূর্বে যাচাই-বাছাই করবেন গরুটি সুস্থ রয়েছে কিনা? এবং দিনেরবেলা জনসাধারণের সামনে সুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করছেন গঠিত কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও মাত্র ৮০ পয়সায় গবাদিপশুকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. এম এ হালিম লাবলু জানান, মিঠাপুকুরে এ পর্যন্ত ৯ জনের অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৪ জন পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২ জন গৃহিণীর অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ রয়েছে। আমরা আপাতত দুজন অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, ভালোভাবে সিদ্ধ করে মাংস খেতে হবে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাক্তার আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতোমধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আশপাশের এলাকার গরুগুলোকে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছি। ভবিষ্যতে যেন অসুস্থ গরু জবাই না করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দিয়েছি।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নে অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। অসুস্থ গরুর মাংসের সংস্পর্শে আসা ৯ ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি পরিকল্পিতভাবে ওই গরুর মালিক কমমূল্যে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি করেছেন। ওই গরুর মাংস ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠালে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে সেই গরুটি প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে ৪ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ রেজাল্ট আসে। এছাড়া ২ নারীও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বলে সরজমিনে দেখা গেছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলা ও সতর্কতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডা. মেহেদী হাসান তুষারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ও উপস্বর্গের রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে প্রায় ২০ দিন আগে একটি অসুস্থ গরু জবাই করে একই গ্রামে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা হয়। গরুর মালিক ইব্রাহিম মিয়া (৫২) গরুর গলায় ফাঁস লেগেছে বলে দ্রুত জবাই করার দ্বায়িত্ব দেন প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাককে। তিনি সহ যারা যারা মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ করেছেন সকলেই সংক্রমিত হওয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে। কারও হাতে কারও হাটুতে যে আঙুল দিয়ে মাংস ছুয়েছে সেই স্থানেই সংক্রমিত হতে দেখা গেছে।
সংক্রমিত একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইব্রাহিমের পরিবারের কেউ মাংসের সংস্পর্শে আসেনি কিংবা খায়নি। চারজন ব্যক্তিকে ডা. প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করেই দায়সারা চিকিৎসা দিয়েছেন। গ্রামের ডাক্তারের পরামর্শে এখন আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করছি।
এর এক সপ্তাহ পর ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর ও সোনারপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ দেখা যায়। পরবর্তীতে এক ক্রেতার বাড়ির ফ্রিজ থেকে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ঢাকা আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া যায়।
ইমাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছে। গঠিত কমিটি গরু জবাই করার পূর্বে যাচাই-বাছাই করবেন গরুটি সুস্থ রয়েছে কিনা? এবং দিনেরবেলা জনসাধারণের সামনে সুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করছেন গঠিত কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও মাত্র ৮০ পয়সায় গবাদিপশুকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. এম এ হালিম লাবলু জানান, মিঠাপুকুরে এ পর্যন্ত ৯ জনের অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৪ জন পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২ জন গৃহিণীর অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ রয়েছে। আমরা আপাতত দুজন অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, ভালোভাবে সিদ্ধ করে মাংস খেতে হবে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাক্তার আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতোমধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আশপাশের এলাকার গরুগুলোকে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছি। ভবিষ্যতে যেন অসুস্থ গরু জবাই না করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দিয়েছি।