চকরিয়া (কক্সবাজার) : বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলেরছড়াখাল থেকে বালু লুটের পর ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -সংবাদ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ি জনপদের প্রবাহিত ছড়াখাল থেকে বালু লুটের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কতিপয় দখলবাজ বালুখেকো চক্রের সদস্যরা বনাঞ্চল ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সকল নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে সংরক্ষিত বনভূমির এক কিলোমিটারের ভেতর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে বালু মহাল চালু হয়েছে। কিন্তু ইজারা এলাকার সীমানা অমান্য করে বনবিভাগের অভ্যন্তরে বসানো হচ্ছে শ্যালো মেশিন ও মোটরপাম্প। রাতের অন্ধকারে চলে বালু উত্তোলনের কারবার। আর দিনের আলোয় পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে নামছে ছড়ায়।
সরজমিনে দেখা গেছে, বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীন টইটং ইউনিয়নের বটতলী ও সোনাইছড়ি ঢালারমুখ জুমপাড়া এলাকায় অসংখ্য সেলো মেশিন বসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম সওদাগর, যুবলীগ নেতা নবু মেম্বার, জমিরসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বালু উত্তোলনে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা কখনো আওয়ামী লীগ পরিচয়ে, কখনো বিএনপি-জামায়াত পরিচয়ে বালু উত্তোলন কারবারে প্রশাসনের অনুকম্পা নেন।
এছাড়া হাবিবপাড়া ও মালঘারা এলাকায় অন্তত ১৪টি সেলো মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে রেজাউল করিম, মৃত দানু মিয়ার ছেলে আবদুল মজিদ, হাজী আবদুর রহমানের ছেলে আজিজুল হক ও হামিদুল হকসহ অনেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনে যুক্ত।
স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা বাঁধা দিলে তারা বলে ইউএনও থেকে লাইসেন্স নিয়েছে বলে হুংকার দেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১লা বৈশাখ থেকে এক বছরের জন্য ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় টইটংয়ের সোনাইছড়ি বালু মহালের ইজারা নিয়েছেন পেকুয়ার আনোয়ারুল কাদের লিটন। তার দাবি, উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতেই ৭ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগ বলছে, তাদের আপত্তি সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে সংরক্ষিত জায়গার কাছাকাছি। এখন ইজারার আড়ালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বনভূমির ভেতরে প্রবেশ করে বালু তুলছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের পেকুয়ার বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ইজারার সীমার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন স্পষ্টতই অবৈধ। এব্যাপারে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তাকে বালু উত্তোলনে জড়িতদের শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। শিগগিরই সেখানে অভিযান চালানো হবে। জনবল সংকটের কারণে তাদের ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্যাপকহারে বালু উত্তোলনে ছড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বহু মানুষের বসতঘর ভেঙে তলিয়ে গেছে। চলাচলের রাস্তা ভারি ট্রাকের চাপ সামলাতে না পেরে ধসে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষকে এখন হাঁটাপথেই চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, বালু ব্যবসায়ীরা শুধু পাহাড়ি ছড়াই নয়, তাদের জীবনও গিলে খাচ্ছে। প্রশাসন সব জেনেও চুপ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে উত্তোলিত বালু সরানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু দুই মাস পেরোলেও সেই নির্দেশ মানা হয়নি। বরং রাতের পর রাত অব্যাহত থেকেছে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে লুটেরা চক্র।
স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল বলছেন, পেকুয়ার সংরক্ষিত বনের ভেতর পাহাড়ি ছড়াগুলোতে এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড় ধসে পড়া ও নদী-ছড়া ভাঙন নতুন করে দুর্যোগ ডেকে আনবে।
অভিযোগ উঠেছে, বালু উত্তোলন কাগজে-কলমে বৈধ ইজারা থাকলেও বাস্তবে তা পরিণত হয়েছে প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসায়। পাহাড় কেটে ছরায় ফেলা হচ্ছে বালু, তাতে ভাঙছে বেড়িবাঁধ, হারাচ্ছে ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা অনেকে এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলেরছড়াখাল থেকে বালু লুটের পর ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -সংবাদ
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ি জনপদের প্রবাহিত ছড়াখাল থেকে বালু লুটের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কতিপয় দখলবাজ বালুখেকো চক্রের সদস্যরা বনাঞ্চল ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সকল নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে সংরক্ষিত বনভূমির এক কিলোমিটারের ভেতর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে বালু মহাল চালু হয়েছে। কিন্তু ইজারা এলাকার সীমানা অমান্য করে বনবিভাগের অভ্যন্তরে বসানো হচ্ছে শ্যালো মেশিন ও মোটরপাম্প। রাতের অন্ধকারে চলে বালু উত্তোলনের কারবার। আর দিনের আলোয় পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে নামছে ছড়ায়।
সরজমিনে দেখা গেছে, বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীন টইটং ইউনিয়নের বটতলী ও সোনাইছড়ি ঢালারমুখ জুমপাড়া এলাকায় অসংখ্য সেলো মেশিন বসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম সওদাগর, যুবলীগ নেতা নবু মেম্বার, জমিরসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বালু উত্তোলনে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা কখনো আওয়ামী লীগ পরিচয়ে, কখনো বিএনপি-জামায়াত পরিচয়ে বালু উত্তোলন কারবারে প্রশাসনের অনুকম্পা নেন।
এছাড়া হাবিবপাড়া ও মালঘারা এলাকায় অন্তত ১৪টি সেলো মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে রেজাউল করিম, মৃত দানু মিয়ার ছেলে আবদুল মজিদ, হাজী আবদুর রহমানের ছেলে আজিজুল হক ও হামিদুল হকসহ অনেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনে যুক্ত।
স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা বাঁধা দিলে তারা বলে ইউএনও থেকে লাইসেন্স নিয়েছে বলে হুংকার দেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১লা বৈশাখ থেকে এক বছরের জন্য ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় টইটংয়ের সোনাইছড়ি বালু মহালের ইজারা নিয়েছেন পেকুয়ার আনোয়ারুল কাদের লিটন। তার দাবি, উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতেই ৭ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগ বলছে, তাদের আপত্তি সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে সংরক্ষিত জায়গার কাছাকাছি। এখন ইজারার আড়ালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বনভূমির ভেতরে প্রবেশ করে বালু তুলছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের পেকুয়ার বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ইজারার সীমার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন স্পষ্টতই অবৈধ। এব্যাপারে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তাকে বালু উত্তোলনে জড়িতদের শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। শিগগিরই সেখানে অভিযান চালানো হবে। জনবল সংকটের কারণে তাদের ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্যাপকহারে বালু উত্তোলনে ছড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বহু মানুষের বসতঘর ভেঙে তলিয়ে গেছে। চলাচলের রাস্তা ভারি ট্রাকের চাপ সামলাতে না পেরে ধসে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষকে এখন হাঁটাপথেই চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, বালু ব্যবসায়ীরা শুধু পাহাড়ি ছড়াই নয়, তাদের জীবনও গিলে খাচ্ছে। প্রশাসন সব জেনেও চুপ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে উত্তোলিত বালু সরানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু দুই মাস পেরোলেও সেই নির্দেশ মানা হয়নি। বরং রাতের পর রাত অব্যাহত থেকেছে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে লুটেরা চক্র।
স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল বলছেন, পেকুয়ার সংরক্ষিত বনের ভেতর পাহাড়ি ছড়াগুলোতে এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড় ধসে পড়া ও নদী-ছড়া ভাঙন নতুন করে দুর্যোগ ডেকে আনবে।
অভিযোগ উঠেছে, বালু উত্তোলন কাগজে-কলমে বৈধ ইজারা থাকলেও বাস্তবে তা পরিণত হয়েছে প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসায়। পাহাড় কেটে ছরায় ফেলা হচ্ছে বালু, তাতে ভাঙছে বেড়িবাঁধ, হারাচ্ছে ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা অনেকে এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।