কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারে—এই বিবেচনায় কিছু কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কারো কারো মাঝে আগামী সময়ে কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারে, সেই ভাবনা থেকে কাজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ আমাদের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করে না। মানুষ চায় আমরা কোনো দলের নয়, কোনো মতের নয়, কোনো আদর্শের নয়। আমরা দলদাস না, আমরা জনদাস। আমরা জনদাস হয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই।”
ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, এসব ‘দলদাসদের’ আলাদা করে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা যায় কিনা, তা বিবেচনা করা উচিত। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ করে অনুরোধ জানান, “নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং পরে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সব অপকর্ম কঠোরভাবে দমন করতে হবে।”
কর্মশালায় উপস্থিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, “আপনাদের কঠোরতা আমাদের দায়িত্বশীল করবে। নির্বাচনের সময় কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যে নীতিমালার মধ্যে নির্বাচনি কাজ করার কথা, তার ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের কেউ যদি কোনো অপকর্ম করেন, আমরাও ব্যবস্থা নেব।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কমে গেছে উল্লেখ করে ডিআইজি বলেন, “আইন প্রয়োগের অন্যতম শর্ত হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ আইন মেনে চলবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যেরকম অংশগ্রহণ দরকার, সেই পর্যায়ের সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ভয়ভীতি, দাঙ্গা এমনকি হত্যাকাণ্ডের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ছে, যা পুলিশের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন।”
তিনি আরও জানান, “কিছু দলের চার-পাঁচজন এমপি পদপ্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার আশায় নিজেরা অনৈক্য তৈরি করছেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার—এসব এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
নির্বাচন এখন ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগ’
আহসান হাবিব পলাশ বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রার্থীরা বিষয়টিকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে সম্পদ বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। ফলে ‘টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না’—এই ধারণা রাজনীতি ও ভোটারদের মাঝেও গেঁথে গেছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম বড় বাধা।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের জন্য অর্থ জমানোর প্রবণতার কারণে প্রার্থীরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ সামনে নির্বাচন, আর নির্বাচনের জন্য টাকা লাগবে।”
পুরনো সমর্থকদের দলে টানার প্রতিযোগিতা
ডিআইজি পলাশ আরও বলেন, “বিগত সরকারের সমর্থকদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। তাদের অপকর্ম ঢেকে বা উপেক্ষা করে দলে ভেড়ানোর এই অপচেষ্টা আমাদের জন্য বিব্রতকর। পুলিশ যখন এদের গ্রেপ্তার করে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে প্রতিবাদ জানায়, আদালতে গিয়ে জামিনসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন বানচাল করতে কিছু অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের মোকাবিলায় প্রকৃত তথ্য জানা জরুরি।”
আগামী নির্বাচনে নগদ অর্থের বদলে অনলাইন লেনদেন বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে ডিআইজি পলাশ বলেন, “মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)-এর মাধ্যমে টাকার লেনদেনের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই এমন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যার নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে এবং তাদের নির্দেশনার বাইরে যেন কেউ যেতে না পারে।”
শনিবার নগরীর এস এস খালেদ রোডের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার শিরোনাম ছিল—‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণের উপায়’।
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারে—এই বিবেচনায় কিছু কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কারো কারো মাঝে আগামী সময়ে কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারে, সেই ভাবনা থেকে কাজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ আমাদের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করে না। মানুষ চায় আমরা কোনো দলের নয়, কোনো মতের নয়, কোনো আদর্শের নয়। আমরা দলদাস না, আমরা জনদাস। আমরা জনদাস হয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই।”
ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, এসব ‘দলদাসদের’ আলাদা করে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা যায় কিনা, তা বিবেচনা করা উচিত। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ করে অনুরোধ জানান, “নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং পরে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সব অপকর্ম কঠোরভাবে দমন করতে হবে।”
কর্মশালায় উপস্থিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, “আপনাদের কঠোরতা আমাদের দায়িত্বশীল করবে। নির্বাচনের সময় কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যে নীতিমালার মধ্যে নির্বাচনি কাজ করার কথা, তার ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের কেউ যদি কোনো অপকর্ম করেন, আমরাও ব্যবস্থা নেব।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কমে গেছে উল্লেখ করে ডিআইজি বলেন, “আইন প্রয়োগের অন্যতম শর্ত হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ আইন মেনে চলবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যেরকম অংশগ্রহণ দরকার, সেই পর্যায়ের সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ভয়ভীতি, দাঙ্গা এমনকি হত্যাকাণ্ডের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ছে, যা পুলিশের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন।”
তিনি আরও জানান, “কিছু দলের চার-পাঁচজন এমপি পদপ্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার আশায় নিজেরা অনৈক্য তৈরি করছেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার—এসব এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
নির্বাচন এখন ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগ’
আহসান হাবিব পলাশ বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রার্থীরা বিষয়টিকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে সম্পদ বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। ফলে ‘টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না’—এই ধারণা রাজনীতি ও ভোটারদের মাঝেও গেঁথে গেছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম বড় বাধা।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের জন্য অর্থ জমানোর প্রবণতার কারণে প্রার্থীরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ সামনে নির্বাচন, আর নির্বাচনের জন্য টাকা লাগবে।”
পুরনো সমর্থকদের দলে টানার প্রতিযোগিতা
ডিআইজি পলাশ আরও বলেন, “বিগত সরকারের সমর্থকদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। তাদের অপকর্ম ঢেকে বা উপেক্ষা করে দলে ভেড়ানোর এই অপচেষ্টা আমাদের জন্য বিব্রতকর। পুলিশ যখন এদের গ্রেপ্তার করে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে প্রতিবাদ জানায়, আদালতে গিয়ে জামিনসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন বানচাল করতে কিছু অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের মোকাবিলায় প্রকৃত তথ্য জানা জরুরি।”
আগামী নির্বাচনে নগদ অর্থের বদলে অনলাইন লেনদেন বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে ডিআইজি পলাশ বলেন, “মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)-এর মাধ্যমে টাকার লেনদেনের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই এমন ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যার নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে এবং তাদের নির্দেশনার বাইরে যেন কেউ যেতে না পারে।”
শনিবার নগরীর এস এস খালেদ রোডের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার শিরোনাম ছিল—‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণের উপায়’।