alt

গুম-খুনের ডকুমেন্টারির শুটিংয়ে অংশ নিতে তামাবিলে বিএনপির সালাউদ্দিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট : শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে অবস্থান করছেন। শনিবার,(১১ অক্টোবর ২০২৫) সকালের ফ্লাইটে সিলেট আসার পর তামাবিল সীমান্ত এলাকায় যান। তিনি সেই স্থান পরিদর্শন করেন, তাকে যে পথ দিয়ে গুম করে ভারতে নেয়া হয়েছিল।

২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় তাকে এ পথে ভারতের শিলং নেয়া হয় বলে দাবি করেন সালাউদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হচ্ছে। সেই ডকুমেন্টারির অংশের শ্যুটিং এ অংশ নিতে তিনি তামাবিল সীমান্তে যান।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর তাকে ভারতের শিলং-এ পাওয়া যায়। শিলংয়ে আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবিলা করার কারণে তিনি প্রায় ৯ বছর অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ, র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী বা বলবৎকারী কোনো সংস্থার সদস্যের হাতে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তের জন্য এ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দেশে ফেরার ১০ মাস পর, গত ৩ জুন, সালাহউদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি সরাসরি চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে এ অভিযোগ জমা দেন।

সালাউদ্দিনের গুম হওয়ার

ঘটনার ধারাক্রম

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে নয়টায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

নিখোঁজ হওয়ার পর হাইকোর্ট ৫টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জানতে চায় সালাহউদ্দিনের অবস্থান, ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, র?্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সিআইডি জবাবে জানান, তাদের হেফাজতে তিনি নেই। ১৯ মার্চ হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার সুস্থভাবে ফেরত পাওয়ার দাবি জানান। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন এবং আন্দোলন প্রায় নেতৃত্বহীন হয়ে যাচ্ছিল। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সালাহউদ্দিন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করছিলেন।

সালাহউদ্দিন নিখোঁজের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দাবি করেন তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

নিখোঁজের দুমাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রীকে ফোন করলে মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছিল যে- মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই।

হঠাৎ করে মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তার ফোন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ভারতের পুলিশ জানায়, মি. আহমেদকে শিলং শহরের বাসিন্দারা উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখার পর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে তাকে সেখানকার পোলো গ্রাউন্ড গল্ফ লিঙ্ক এলাকায় দেখা যায়। পরে তার মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাকে একটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সরকারি মানসিক হাসপাতাল ‘মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস (মিমহ্যানস) হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে সালাউদ্দিন আহমদ জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে কবরের মতো নিঃসঙ্গ একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সেখানে ছাদে হাই পাওয়ার লাইট ছিল, লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেয়া হতো এবং টয়লেট ব্যবস্থার জন্যও কোনো সুবিধা ছিল না। দুই মাস ধরে মাঝে মধ্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে চরম নির্দেশনা আসছিল। মৃত্যুর প্রহর গণনা করতে থাকা সালাহউদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য র‌্যাবের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, যিনি সালাহউদ্দিনের জীবন বাঁচাতে সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং একই বিসিএস ব্যাচের ছিলেন, গোপনভাবে সহায়তা করেন। তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে গত ১০ মে গভীর রাতে তাকে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে পৌঁছে দেন।

শিলংয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদভ্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার দেহে কোনো আঘাত বা চোটের চিহ্ন ছিল না, তবে হৃদরোগ এবং লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে জানায়।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান।

সালাহউদ্দিন প্রায় ৯ বছর শিলংয়ে অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

ট্রাভেল পাস নিয়ে ১১ আগস্ট দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তিনি বিপুল মানুষের ফুলের সংবর্ধনা পান।

গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে সালাহউদ্দিন এ অভিযোগ দেন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন সালাহউদ্দিন।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সালাহউদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারের সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।

ছবি

তারাগঞ্জ সাব জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে নানা অনিয়ম

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ১৫ বার্মিজ গরু জব্দ

বেগমগঞ্জে গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৮

ছবি

রায়গঞ্জে নারী গ্রাম পুলিশের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

পাঁচবিবিতে আইন শৃংখলা উন্নয়নে মতবিনিময় সভা

ছবি

জয়পুরহাটে ভিডব্লিউবি সুবিধাভোগীর তালিকায় স্বাবলম্বীরা

ছবি

বিরামপুরে খেতে বিষ স্প্রের অভিযোগ, ৪ বিঘা জমির ধান নষ্ট

ছবি

ঝড়ে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি ৭ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে প্রতিবন্ধী লালমিয়া

ছবি

ময়মনসিংহে বাস চলাচল বন্ধ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

নরসিংদীতে সিসা তৈরির কারখানায় আগুন, ৭ শ্রমিক দগ্ধ

ছবি

ডিমলায় তিস্তার ভাঙন রোধের জিওব্যাগ পাচারকালে জনতার হাতে আটক, এলাকায় তোলপাড়

ছবি

স্থগিতের পর এবার বাতিল চারুকলার ‘শরৎ উৎসব’, অভিযোগ তথ্য গোপনের

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫৩ হাজার

ছবি

পার্বতীপুরে পশু হাসপাতালে রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নেই

ছবি

সভা-সমাবেশ নিয়ে আবারও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা

সোনারগাঁয়ে শিশু সন্তানের সামনে ফাঁসি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

র‌্যাবের মিনিবাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ: নিহত ২, আহত অন্তত ৪০

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান: পুলিশের লুট হওয়া ১৩শ’র বেশি অস্ত্রের এখনও হদিস নেই

ছবি

জাপার সমাবেশ: পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পণ্ড

কোম্পানীগঞ্জে গ্যাস লিকেজ বিষ্ফোরণে চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যু

ঝিকরগাছা থেকে নিখোঁজের চারদিন পর লাশ উদ্ধার

জুলাইযোদ্ধা লাঞ্ছিতের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচি; ঢাকা-ময়মনসিংহ যানবাহন স্বাভাবিক

ছবি

ক্ষমতায় কে আসবে, সেই ভাবনায় কাজের প্রবণতা: ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ

ছবি

দুর্গাপুরে বেওয়ারিশ কুকুর আতঙ্কে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

ছবি

দিনে-দুপুরে গাছ কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা

ছবি

নবাবগঞ্জে গাছ কাটার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

ছবি

দশমিনায় তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে মা ইলিশ মাছ সংরক্ষণে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি

ছবি

মহেশপুরে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ

ছবি

জলাবদ্ধতা নিরসনে লৌহজংয়ের মানববন্ধন

ছবি

ঝিকরগাছায় খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকি রামদাসহ আটক ৪

ছবি

মায়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ: থেমে থেমে গুলি, এপারে আতঙ্ক

ছবি

হত্যা মামলায় বিএনপি নেতাকে আসামি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনে বালু লুটের মহোৎসব

ছবি

শেরপুরে হাতে তৈরি হস্তশিল্পে বদলে যাচ্ছে নারীদের জীবন

ছবি

দামুড়হুদার পুরোদমে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি

ছবি

পদ্মা নদীতে অবৈধ কারেন্ট জাল আটক ও বিনষ্ট

tab

গুম-খুনের ডকুমেন্টারির শুটিংয়ে অংশ নিতে তামাবিলে বিএনপির সালাউদ্দিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে অবস্থান করছেন। শনিবার,(১১ অক্টোবর ২০২৫) সকালের ফ্লাইটে সিলেট আসার পর তামাবিল সীমান্ত এলাকায় যান। তিনি সেই স্থান পরিদর্শন করেন, তাকে যে পথ দিয়ে গুম করে ভারতে নেয়া হয়েছিল।

২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় তাকে এ পথে ভারতের শিলং নেয়া হয় বলে দাবি করেন সালাউদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হচ্ছে। সেই ডকুমেন্টারির অংশের শ্যুটিং এ অংশ নিতে তিনি তামাবিল সীমান্তে যান।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর তাকে ভারতের শিলং-এ পাওয়া যায়। শিলংয়ে আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবিলা করার কারণে তিনি প্রায় ৯ বছর অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ, র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী বা বলবৎকারী কোনো সংস্থার সদস্যের হাতে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তের জন্য এ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দেশে ফেরার ১০ মাস পর, গত ৩ জুন, সালাহউদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি সরাসরি চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে এ অভিযোগ জমা দেন।

সালাউদ্দিনের গুম হওয়ার

ঘটনার ধারাক্রম

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে নয়টায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

নিখোঁজ হওয়ার পর হাইকোর্ট ৫টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জানতে চায় সালাহউদ্দিনের অবস্থান, ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, র?্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সিআইডি জবাবে জানান, তাদের হেফাজতে তিনি নেই। ১৯ মার্চ হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার সুস্থভাবে ফেরত পাওয়ার দাবি জানান। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন এবং আন্দোলন প্রায় নেতৃত্বহীন হয়ে যাচ্ছিল। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সালাহউদ্দিন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করছিলেন।

সালাহউদ্দিন নিখোঁজের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দাবি করেন তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

নিখোঁজের দুমাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রীকে ফোন করলে মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছিল যে- মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই।

হঠাৎ করে মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তার ফোন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ভারতের পুলিশ জানায়, মি. আহমেদকে শিলং শহরের বাসিন্দারা উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখার পর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে তাকে সেখানকার পোলো গ্রাউন্ড গল্ফ লিঙ্ক এলাকায় দেখা যায়। পরে তার মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাকে একটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সরকারি মানসিক হাসপাতাল ‘মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস (মিমহ্যানস) হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে সালাউদ্দিন আহমদ জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে কবরের মতো নিঃসঙ্গ একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সেখানে ছাদে হাই পাওয়ার লাইট ছিল, লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেয়া হতো এবং টয়লেট ব্যবস্থার জন্যও কোনো সুবিধা ছিল না। দুই মাস ধরে মাঝে মধ্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে চরম নির্দেশনা আসছিল। মৃত্যুর প্রহর গণনা করতে থাকা সালাহউদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য র‌্যাবের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, যিনি সালাহউদ্দিনের জীবন বাঁচাতে সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং একই বিসিএস ব্যাচের ছিলেন, গোপনভাবে সহায়তা করেন। তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে গত ১০ মে গভীর রাতে তাকে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে পৌঁছে দেন।

শিলংয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদভ্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার দেহে কোনো আঘাত বা চোটের চিহ্ন ছিল না, তবে হৃদরোগ এবং লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে জানায়।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান।

সালাহউদ্দিন প্রায় ৯ বছর শিলংয়ে অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

ট্রাভেল পাস নিয়ে ১১ আগস্ট দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তিনি বিপুল মানুষের ফুলের সংবর্ধনা পান।

গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে সালাহউদ্দিন এ অভিযোগ দেন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন সালাহউদ্দিন।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সালাহউদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারের সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।

back to top