ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গবাদিপশুর তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স), ক্ষুরা ও লাম্পি প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই।
প্রাণিসম্পদ অফিসে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় অকালেই মৃত্যু ঘটছে শতাধিক প্রাণীর, খামারিরা বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি ক্ষুরা ষোলমাত্রার এক ভায়েল ভ্যাকসিনের মুল্য ৪০০ টাকা, ওই একই ভ্যাকসিন বিভিন্ন কোম্পানির ফার্মেসি থেকে পাওয়া যায় ৩-৪ হাজার টাকায়, সরকারি লাম্পি পাঁচ মাত্রার এক ভায়েল ভ্যাকসিনের মূল্য ২৫০ টাকা, বাজারের মূল্য ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায় খামারিদের কিনতে হচ্ছে। গ্রামের সাধারণ জনগণ ও খামারিরা দ্রুত গরুর রোগ প্রতিরোধ ভ্যাকসিনের দাবি জানিয়েছেন।
পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. মোছাহেব আহমদ নাঈম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমানে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের এফএমডি (ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ), তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) ও লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই। গত দুই মাস আগে চাহিদা দিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। রোগ প্রতিরোধে প্রতিদিন মাঠে খামারিদের নিয়ে বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, স্কুল ও হাট-বাজারে সচেনতামূলক, উঠান বৈঠকে পরার্মশ ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৫৬০টি ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৬০ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ৭২০টি প্রাণীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের কাছে ১ হাজার ৯শ’ ২০টি ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দাবি করছেন, লাম্পি, ক্ষুরা রোগ মাঠে চলমান রয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলায় তড়কা রোগ দেখা দিয়েছে। সবমিলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস মাঠে কাজ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। উপজেলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬টি গরু রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগের বৈশিষ্ট্য গরুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ে, পায়ে খতের সৃষ্টি হয়। এতে গরুর চলাফেরা ও খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অতিদ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। ভ্যাকসিনের অভাবে মারা গেছে ১০টি গরু। লাম্পি রোগে আক্রান্ত তিন শতাধিক গরু। মারা গেছে ১৫টি গরু। গত জুলাই মাসে ৫৬০টি ও আগসবট মাসে ১৬০ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ৭২০টি প্রাণীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। তবে, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে ২৪টি সমিতির ১ হাজার ২০ জন সদস্য রয়েছে। ওই বরাদ্দ পাওয়া ভ্যাকসিন সমিতির সদস্যের মধ্যে দেয়া হয়েছে।
পার্বতীপুরে নিবন্ধিত গাভীর খামার রয়েছে ১১১টি। অনিবন্ধিত খামার আছে ৯৮৫টি। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের অধিনে ৩০ জন প্রাথমিক পল্লীপ্রাণী সেবাদানকারী কাজ করছে। রয়েছে জনবল সংকট। মাত্র উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ও উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) রয়েছেন।
এদিকে, গত ১৯ আগস্ট থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।
সবমিলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এখন নিজেই খুড়ে খুড়ে চলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গৃহস্থালিরা ও খামারিরা। গরু লালন-পালন করে আসছেন পার্বতীপুরের ছোট খামারি মুরাদ হোসেন। কিন্তু গত ১ অক্টোবর হঠাৎ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একটি শাহিওয়াল বাছুর। কিন্তু মারা যাওয়া বাছুরটির অকাল মৃত্যুর কারণ জানেন না তিনি। খামারি মুরাদ জানান, মুখে ঘাঁ এবং পেট ফুলেই মারা যাচ্ছে বেশিরভাগ গরু। চন্ডিপুর ইউনিয়নের সুমন সরকার, জব্বর আলী ও বুলু মন্ডলসহ একাধিক ছোট-বড় খামারির গরু লাম্পি রোগে মারা গেছে। গৃহপালিত গরু ও খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচ মাসে শতাধিক গরু ইতোমধ্যে মারা গেছে। খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। এ ব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. মোছাহেব আহমদ নাঈম বলেন, উপজেলায় ক্ষুরা ও লাম্পি রোগ দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন করে পাশের উপজেলায় তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা ও খামারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ক্ষুরা রোগ ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক সুস্থ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা গরু রাখার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। রোগ প্রতিরোধে গরুর মালিক ও খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আক্রান্ত এলাকায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গবাদিপশুর তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স), ক্ষুরা ও লাম্পি প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই।
প্রাণিসম্পদ অফিসে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় অকালেই মৃত্যু ঘটছে শতাধিক প্রাণীর, খামারিরা বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারি ক্ষুরা ষোলমাত্রার এক ভায়েল ভ্যাকসিনের মুল্য ৪০০ টাকা, ওই একই ভ্যাকসিন বিভিন্ন কোম্পানির ফার্মেসি থেকে পাওয়া যায় ৩-৪ হাজার টাকায়, সরকারি লাম্পি পাঁচ মাত্রার এক ভায়েল ভ্যাকসিনের মূল্য ২৫০ টাকা, বাজারের মূল্য ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায় খামারিদের কিনতে হচ্ছে। গ্রামের সাধারণ জনগণ ও খামারিরা দ্রুত গরুর রোগ প্রতিরোধ ভ্যাকসিনের দাবি জানিয়েছেন।
পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. মোছাহেব আহমদ নাঈম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমানে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের এফএমডি (ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ), তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) ও লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই। গত দুই মাস আগে চাহিদা দিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। রোগ প্রতিরোধে প্রতিদিন মাঠে খামারিদের নিয়ে বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, স্কুল ও হাট-বাজারে সচেনতামূলক, উঠান বৈঠকে পরার্মশ ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৫৬০টি ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৬০ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ৭২০টি প্রাণীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের কাছে ১ হাজার ৯শ’ ২০টি ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দাবি করছেন, লাম্পি, ক্ষুরা রোগ মাঠে চলমান রয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলায় তড়কা রোগ দেখা দিয়েছে। সবমিলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস মাঠে কাজ করছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। উপজেলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬টি গরু রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগের বৈশিষ্ট্য গরুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ে, পায়ে খতের সৃষ্টি হয়। এতে গরুর চলাফেরা ও খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অতিদ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। ভ্যাকসিনের অভাবে মারা গেছে ১০টি গরু। লাম্পি রোগে আক্রান্ত তিন শতাধিক গরু। মারা গেছে ১৫টি গরু। গত জুলাই মাসে ৫৬০টি ও আগসবট মাসে ১৬০ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ৭২০টি প্রাণীকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। তবে, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে ২৪টি সমিতির ১ হাজার ২০ জন সদস্য রয়েছে। ওই বরাদ্দ পাওয়া ভ্যাকসিন সমিতির সদস্যের মধ্যে দেয়া হয়েছে।
পার্বতীপুরে নিবন্ধিত গাভীর খামার রয়েছে ১১১টি। অনিবন্ধিত খামার আছে ৯৮৫টি। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের অধিনে ৩০ জন প্রাথমিক পল্লীপ্রাণী সেবাদানকারী কাজ করছে। রয়েছে জনবল সংকট। মাত্র উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ও উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) রয়েছেন।
এদিকে, গত ১৯ আগস্ট থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।
সবমিলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এখন নিজেই খুড়ে খুড়ে চলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গৃহস্থালিরা ও খামারিরা। গরু লালন-পালন করে আসছেন পার্বতীপুরের ছোট খামারি মুরাদ হোসেন। কিন্তু গত ১ অক্টোবর হঠাৎ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একটি শাহিওয়াল বাছুর। কিন্তু মারা যাওয়া বাছুরটির অকাল মৃত্যুর কারণ জানেন না তিনি। খামারি মুরাদ জানান, মুখে ঘাঁ এবং পেট ফুলেই মারা যাচ্ছে বেশিরভাগ গরু। চন্ডিপুর ইউনিয়নের সুমন সরকার, জব্বর আলী ও বুলু মন্ডলসহ একাধিক ছোট-বড় খামারির গরু লাম্পি রোগে মারা গেছে। গৃহপালিত গরু ও খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচ মাসে শতাধিক গরু ইতোমধ্যে মারা গেছে। খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। এ ব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. মোছাহেব আহমদ নাঈম বলেন, উপজেলায় ক্ষুরা ও লাম্পি রোগ দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন করে পাশের উপজেলায় তড়কা রোগ (অ্যানথ্রাক্স) দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা ও খামারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ক্ষুরা রোগ ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক সুস্থ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা গরু রাখার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। রোগ প্রতিরোধে গরুর মালিক ও খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আক্রান্ত এলাকায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।