ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় নিজেই অসুস্থ; রোগীর সেবা করবে কীভাবে। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি এক সময় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ছিল, পরবর্তীতে ৫০ শয্যায় উন্নিত কর হয়। তবে চিকিৎসক সংকট, ডাক্তারদের অনুউপস্থিত, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
উপজেলার প্রায় চার লাখ জনসাধাণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পায় না, আবার হয়তো বা কেউ পেলেও চিকিৎসা পত্রের দেয়া ঔষুধ ঠিকভাবে পায় না। অনেক রোগী ঔষুধ প্রাপ্তিতে বিতরণকারীদের হাতে হেনস্থার স্বীকারও হয়ে থাকে। যে কতজন ডাক্তার উপস্থিত থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত হয় না। তাদের খেয়াল খুশি মতো চিকিৎসা কেন্দ্রে উপস্থিত হন।
অথচ এই উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নয়ন করা হলেও এর তেমন কোন উন্নয়নের সুবিধা পাচ্ছে না জনসাধারণ। এটি যেন নামেই হাসপাতাল! আছেন মাত্র নিয়মিত সাতজন চিকিৎসক। বিধান অনুযায়ী কাগজে কলমে ১৭ জনের পদ থাকলেও বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। তাও তারা নিয়মিত চিকিৎসা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয় না। বলা যায় চিকিৎসা সেবা বলতে এখন শুধু নামেই, কাজের কিছুই না। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে একাধিক কনসালটেন্ট এর কর্মস্থল সদরপুর হাসপাতালে হলেও থাকেন অন্যত্র, আসেন মাঝেমধ্যে, বাকি সময় চেম্বার বন্ধ থাকে। হাসপাতালে ক্যাশিয়ার বিবেক বাবু নিয়মিত অফিসে আসেন না, থাকেন ফরিদপুরে অফিসে আসেন খেয়াল খুশি মতো। এছাড়া যে কজন ডাক্তার উপস্থিত থাকেন তারাও ঠিক সময় হাসপাতালের চেম্বারে বসেন না, অনেকেই অফিস সময়ে বাইরে থাকেন। সামান্য কাটাছেড়া বা অন্য কোন সমস্যার রোগী এলেও চিকিৎসা না দিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের ভিতরের অবস্থা আরো খারাপ, হাসপাতালের টয়লেটগুলো এতো নোংরা যেখানো কোন লোকের যাওয়া সম্ভব হয় না। জরুরী বিভাগের সামনে ময়লার ভাগার, হাত ধোঁয়ার বেসিং এর পাশে যাওয়ার উপায় নেই, বিদ্যুৎ চলে গেলে, আলো-বাতাসের ব্যাবস্থার জন্যে কোন ব্যাবস্থা নেই বিদ্যুত চলে গেলে রোগির বোগান্তি কতটা বেড়ে যায় তা অনুমান করা যায়। চিকিৎসা নিতে আসা জুম্মন অভিযোগের সুরে বলেন, সেই চরাঞ্চাল থেকে এসে বসে থেকেও ডাক্তার পাই নাই, ঔষুধ ঠিক মতো পাই না, এটা শুধু নামেই হাসপাতাল। দেয়ারার রাশেক বলেন, অনেক দূর থেকে হাসপাতালে এসছি, ডাক্তার পাই না, ঔষুধ পাই না, সকাল থেকে বসে আছি। আমার মনে হয় জনগণের চিকিৎসা না করে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসা করা দরকার, কেননা বিভিন্ন অনিয়মের কারনে, হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, সেবা দিবে কীভাবে? তার চিকিৎসা আগে করা দরকার বলেই অনেক রোগীরা বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যরা হাসপাতালে ১৮ জন জুনিয়র, সিনিয়র কনসালটেন্ট, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসারের পদ আছে। হাসপাতালে বাড়তি কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু মাত্র নামেই ৫০ শয্যা। গত প্রায় ২ মাসের মধ্যে একজনের সিজার করতে পেরেছে বলেই জানা যায়। আউটডোরে প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন গড়ে ৫/৬শ’ জন রোগী। কিন্তু অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যান। অনেকেই ২২/২৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ঠিকমতো চিকিৎসা পান না, ওষুধ পায় না খালি হাতে ফিরে যায়, অথচ এটি সরকারি হাসপাতাল।
মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীর স্বজন করিম হোসেন বলেন, এ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। আমার ভাই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এখানে নিয়ে এসেছি, জরুরী বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর রেফার করেছেন।
এরপর অনিয়ম, অনুপস্থিতি আর দায়সারা চিকিৎসায় এই হাসপাতাল কার্যত কখনোই পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়নি। ৫০ শয্যর হাসপাতালে শিশু রোগ, গাইনি বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কল্পনা করা আর গভীর রাতে সূর্যের আলো দেখতে চাওয়া সমান। সরকারি নীতিমালায় বরাদ্দ থাকলেও বহুদিন ধরেই নেই সার্জারির রোগির সুবিধা।
চিকিৎসা নিতে আসা গৃহিনী হাসি বেগম বলেন, রক্তচাপ বেশি ছিল, এখানে এসেছি একটু দেরি হয়েছিল। ডাক্তার পাই নাই, ওষুধও পেলাম না, হাসপাতালের একজন বললো বাইরে থেকে কিনেন। তাহলে হাসপাতাল থাকলে আমাদের লাভ কী। কেউ গিয়ে ডাক্তার খুঁজলে বলে, ডাক্তার বাইরে একটু পরে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দিয়েছি লোকবল ও সরঞ্জাম বৃদ্ধির জন্য। জনবল সংকটের কারণে অনেক কিছুই করতে পারছি না। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে দুর থেকে, তাদের কাজ করতেই হিমসিম খাচ্ছি। তার উপরে বিভিন্ন দরবারের লোক আসে। তাদের চিকিৎসা দিতে হয়।
রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় নিজেই অসুস্থ; রোগীর সেবা করবে কীভাবে। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি এক সময় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ছিল, পরবর্তীতে ৫০ শয্যায় উন্নিত কর হয়। তবে চিকিৎসক সংকট, ডাক্তারদের অনুউপস্থিত, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
উপজেলার প্রায় চার লাখ জনসাধাণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পায় না, আবার হয়তো বা কেউ পেলেও চিকিৎসা পত্রের দেয়া ঔষুধ ঠিকভাবে পায় না। অনেক রোগী ঔষুধ প্রাপ্তিতে বিতরণকারীদের হাতে হেনস্থার স্বীকারও হয়ে থাকে। যে কতজন ডাক্তার উপস্থিত থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত হয় না। তাদের খেয়াল খুশি মতো চিকিৎসা কেন্দ্রে উপস্থিত হন।
অথচ এই উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নয়ন করা হলেও এর তেমন কোন উন্নয়নের সুবিধা পাচ্ছে না জনসাধারণ। এটি যেন নামেই হাসপাতাল! আছেন মাত্র নিয়মিত সাতজন চিকিৎসক। বিধান অনুযায়ী কাগজে কলমে ১৭ জনের পদ থাকলেও বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। তাও তারা নিয়মিত চিকিৎসা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয় না। বলা যায় চিকিৎসা সেবা বলতে এখন শুধু নামেই, কাজের কিছুই না। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে একাধিক কনসালটেন্ট এর কর্মস্থল সদরপুর হাসপাতালে হলেও থাকেন অন্যত্র, আসেন মাঝেমধ্যে, বাকি সময় চেম্বার বন্ধ থাকে। হাসপাতালে ক্যাশিয়ার বিবেক বাবু নিয়মিত অফিসে আসেন না, থাকেন ফরিদপুরে অফিসে আসেন খেয়াল খুশি মতো। এছাড়া যে কজন ডাক্তার উপস্থিত থাকেন তারাও ঠিক সময় হাসপাতালের চেম্বারে বসেন না, অনেকেই অফিস সময়ে বাইরে থাকেন। সামান্য কাটাছেড়া বা অন্য কোন সমস্যার রোগী এলেও চিকিৎসা না দিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের ভিতরের অবস্থা আরো খারাপ, হাসপাতালের টয়লেটগুলো এতো নোংরা যেখানো কোন লোকের যাওয়া সম্ভব হয় না। জরুরী বিভাগের সামনে ময়লার ভাগার, হাত ধোঁয়ার বেসিং এর পাশে যাওয়ার উপায় নেই, বিদ্যুৎ চলে গেলে, আলো-বাতাসের ব্যাবস্থার জন্যে কোন ব্যাবস্থা নেই বিদ্যুত চলে গেলে রোগির বোগান্তি কতটা বেড়ে যায় তা অনুমান করা যায়। চিকিৎসা নিতে আসা জুম্মন অভিযোগের সুরে বলেন, সেই চরাঞ্চাল থেকে এসে বসে থেকেও ডাক্তার পাই নাই, ঔষুধ ঠিক মতো পাই না, এটা শুধু নামেই হাসপাতাল। দেয়ারার রাশেক বলেন, অনেক দূর থেকে হাসপাতালে এসছি, ডাক্তার পাই না, ঔষুধ পাই না, সকাল থেকে বসে আছি। আমার মনে হয় জনগণের চিকিৎসা না করে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসা করা দরকার, কেননা বিভিন্ন অনিয়মের কারনে, হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, সেবা দিবে কীভাবে? তার চিকিৎসা আগে করা দরকার বলেই অনেক রোগীরা বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যরা হাসপাতালে ১৮ জন জুনিয়র, সিনিয়র কনসালটেন্ট, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসারের পদ আছে। হাসপাতালে বাড়তি কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু মাত্র নামেই ৫০ শয্যা। গত প্রায় ২ মাসের মধ্যে একজনের সিজার করতে পেরেছে বলেই জানা যায়। আউটডোরে প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন গড়ে ৫/৬শ’ জন রোগী। কিন্তু অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যান। অনেকেই ২২/২৪ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ঠিকমতো চিকিৎসা পান না, ওষুধ পায় না খালি হাতে ফিরে যায়, অথচ এটি সরকারি হাসপাতাল।
মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীর স্বজন করিম হোসেন বলেন, এ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া তেমন কিছুই হয় না। আমার ভাই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এখানে নিয়ে এসেছি, জরুরী বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর রেফার করেছেন।
এরপর অনিয়ম, অনুপস্থিতি আর দায়সারা চিকিৎসায় এই হাসপাতাল কার্যত কখনোই পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়নি। ৫০ শয্যর হাসপাতালে শিশু রোগ, গাইনি বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কল্পনা করা আর গভীর রাতে সূর্যের আলো দেখতে চাওয়া সমান। সরকারি নীতিমালায় বরাদ্দ থাকলেও বহুদিন ধরেই নেই সার্জারির রোগির সুবিধা।
চিকিৎসা নিতে আসা গৃহিনী হাসি বেগম বলেন, রক্তচাপ বেশি ছিল, এখানে এসেছি একটু দেরি হয়েছিল। ডাক্তার পাই নাই, ওষুধও পেলাম না, হাসপাতালের একজন বললো বাইরে থেকে কিনেন। তাহলে হাসপাতাল থাকলে আমাদের লাভ কী। কেউ গিয়ে ডাক্তার খুঁজলে বলে, ডাক্তার বাইরে একটু পরে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দিয়েছি লোকবল ও সরঞ্জাম বৃদ্ধির জন্য। জনবল সংকটের কারণে অনেক কিছুই করতে পারছি না। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে দুর থেকে, তাদের কাজ করতেই হিমসিম খাচ্ছি। তার উপরে বিভিন্ন দরবারের লোক আসে। তাদের চিকিৎসা দিতে হয়।