ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সময়ের নির্মমতা যেন আজ মানুষের হৃদয়ের কোমলতা কেড়ে নিচ্ছে। যেখানে পিতা-মাতার ভালোবাসা ছিল সন্তানের জীবনের আশ্রয়, সেখানে আজ দেখা দিচ্ছে স্বার্থ আর নির্লজ্জ অবহেলার দেয়াল। রাজশাহীর পবা উপজেলার বৃদ্ধ পিতার এই মামলা শুধু আইনি লড়াই নয় এক নিঃশব্দ কান্না, যা আমাদের সমাজের বিবেককে প্রশ্ন করে। যখন সন্তান পিতা-মাতার ত্যাগ ভুলে যায়, তখন মানবতার আলো নিভে আসে, সম্পর্ক হারায় উষ্ণতা, আর মানুষ হয়ে ওঠে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় এক বাবা তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার মামলাটি পবা থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকায় বসবাস করেন মামলার বাদী ৭০ বছর বয়সী আমির হোসেন সরকার। তিনি তাঁর ছেলে বোরহান উদ্দিন (৪৫) ও পুত্রবধূ আয়েশা বেগম আশা (৩৬)-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, আমির হোসেন সরকার ছেলের নামে বাড়িসহ ছয় শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। ২০০০ সালে বোরহান সৌদি আরবে যাওয়ার পর বিদেশে থাকাকালীন তিনি বাবাকে ওই জমির আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) হিসেবে দায়িত্ব দেন। তবে সম্প্রতি দেশে ফিরে বোরহান স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করেছেন এবং বর্তমানে তিনি মা-বাবাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আমির হোসেন সরকারের অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর ছেলে কোনো ধরনের দেখাশোনা করেন না এবং আর্থিক সহায়তাও দেন না। এ কারণে তিনি সম্প্রতি রাজশাহীর পবা থানার আমলি আদালতে গিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে “পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন–২০১৩” অনুসারে মামলা করার আবেদন করেন। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান সরকার গত ৫ অক্টোবর অভিযোগটি সাত দিনের মধ্যে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)। আদালতের সেই নির্দেশ অনুযায়ী আজ মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
পিতা আমির হোসেন সরকার বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে আমার যা ছিল, সব বিক্রি করেছি। এমনকি ছেলের নামে বাড়িটাও কিনেছিলাম। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকেছে এবং ভালো উপার্জন করেছে, কিন্তু আমার খোঁজ নেয়নি। এখন বয়স ও অসুস্থতার কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছেলের স্ত্রীও কোনো আর্থিক সাহায্য করতে ে দেয় না। দেশে ফিরে ছেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নতুন বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমি, আমার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকি, কিন্তু সে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়। আমি রাজি না হলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে, এমনকি গলা টিপে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করে। পরে প্রতিবেশীরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছেলে বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমি ২৫ বছর বিদেশে কাজ করেছি। চারপাশে খোঁজ নিলে আসল ঘটনা বোঝা যাবে। ভাইবোনদের জন্য অনেক কিছু করেছি, এখন দেশে ফিরে দেড় বছর ধরে বেকার অবস্থায় আছি। এই পরিস্থিতিতে ভরণপোষণ দেব কীভাবে?” মামলার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমার আরও দুই ভাই আছে। সব দায়িত্ব কি কেবল আমার একার, নাকি তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে?”
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, “আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। আমার জানা মতে, পবা থানায় এই ধরনের মামলা এবারই প্রথম। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহমখদুম জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অবহেলা আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করেছে, যেখানে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অনেক বয়স্ক পিতা-মাতা পারিবারিক চাপে পড়ে চুপচাপ কষ্ট সহ্য করেন, মামলা করতে সাহস পান না। এই মামলা হয়তো তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
সময়ের নির্মমতা যেন আজ মানুষের হৃদয়ের কোমলতা কেড়ে নিচ্ছে। যেখানে পিতা-মাতার ভালোবাসা ছিল সন্তানের জীবনের আশ্রয়, সেখানে আজ দেখা দিচ্ছে স্বার্থ আর নির্লজ্জ অবহেলার দেয়াল। রাজশাহীর পবা উপজেলার বৃদ্ধ পিতার এই মামলা শুধু আইনি লড়াই নয় এক নিঃশব্দ কান্না, যা আমাদের সমাজের বিবেককে প্রশ্ন করে। যখন সন্তান পিতা-মাতার ত্যাগ ভুলে যায়, তখন মানবতার আলো নিভে আসে, সম্পর্ক হারায় উষ্ণতা, আর মানুষ হয়ে ওঠে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় এক বাবা তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার মামলাটি পবা থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকায় বসবাস করেন মামলার বাদী ৭০ বছর বয়সী আমির হোসেন সরকার। তিনি তাঁর ছেলে বোরহান উদ্দিন (৪৫) ও পুত্রবধূ আয়েশা বেগম আশা (৩৬)-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, আমির হোসেন সরকার ছেলের নামে বাড়িসহ ছয় শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। ২০০০ সালে বোরহান সৌদি আরবে যাওয়ার পর বিদেশে থাকাকালীন তিনি বাবাকে ওই জমির আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) হিসেবে দায়িত্ব দেন। তবে সম্প্রতি দেশে ফিরে বোরহান স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করেছেন এবং বর্তমানে তিনি মা-বাবাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আমির হোসেন সরকারের অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর ছেলে কোনো ধরনের দেখাশোনা করেন না এবং আর্থিক সহায়তাও দেন না। এ কারণে তিনি সম্প্রতি রাজশাহীর পবা থানার আমলি আদালতে গিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে “পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন–২০১৩” অনুসারে মামলা করার আবেদন করেন। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান সরকার গত ৫ অক্টোবর অভিযোগটি সাত দিনের মধ্যে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)। আদালতের সেই নির্দেশ অনুযায়ী আজ মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
পিতা আমির হোসেন সরকার বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে আমার যা ছিল, সব বিক্রি করেছি। এমনকি ছেলের নামে বাড়িটাও কিনেছিলাম। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকেছে এবং ভালো উপার্জন করেছে, কিন্তু আমার খোঁজ নেয়নি। এখন বয়স ও অসুস্থতার কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছেলের স্ত্রীও কোনো আর্থিক সাহায্য করতে ে দেয় না। দেশে ফিরে ছেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নতুন বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমি, আমার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকি, কিন্তু সে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়। আমি রাজি না হলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে, এমনকি গলা টিপে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করে। পরে প্রতিবেশীরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছেলে বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমি ২৫ বছর বিদেশে কাজ করেছি। চারপাশে খোঁজ নিলে আসল ঘটনা বোঝা যাবে। ভাইবোনদের জন্য অনেক কিছু করেছি, এখন দেশে ফিরে দেড় বছর ধরে বেকার অবস্থায় আছি। এই পরিস্থিতিতে ভরণপোষণ দেব কীভাবে?” মামলার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমার আরও দুই ভাই আছে। সব দায়িত্ব কি কেবল আমার একার, নাকি তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে?”
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, “আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। আমার জানা মতে, পবা থানায় এই ধরনের মামলা এবারই প্রথম। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহমখদুম জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অবহেলা আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করেছে, যেখানে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অনেক বয়স্ক পিতা-মাতা পারিবারিক চাপে পড়ে চুপচাপ কষ্ট সহ্য করেন, মামলা করতে সাহস পান না। এই মামলা হয়তো তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে।”