চরফ্যাসন (ভোলা) : নির্মিত হচ্ছে দেশের অন্যতম আধুনিক ২৩০/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন হাই ভোল্টেজ জিআইএস সাবস্টেশন গ্রিড (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র) -সংবাদ
ভোলার চরফ্যাসনে নির্মিত হচ্ছে দেশের অন্যতম আধুনিক ২৩০/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন হাই ভোল্টেজ জিআইএস সাবস্টেশন গ্রিড (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র)। এটি চালু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহে আসবে নিরবচ্ছিন্নতা, লো-ভোল্টেজ ও সিস্টেম লস কমবে, আর চরফ্যাসনের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুলবে নতুন দিগন্ত। গ্রিড সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রিভারি পাওয়ার অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং চীনা প্রতিষ্ঠান এসপিটিডিই। এছাড়া জলবায়ু তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে পিজিসিবির প্রধান কার্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উপকেন্দ্রটি চালুর লক্ষ্যে দিন-রাত কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। সূত্র আরও জানায়, গ্রিডটি চালু হলে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত প্রায় ৪২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে এই গ্রিডে পৌঁছাবে। ওই ক্যাবল ব্যবহার করে দ্রুতগতির ইন্টারনেটও সরবরাহ করা যাবে, যা মোবাইল টাওয়ারের বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে আধুনিক প্রযুক্তির বজ্রপাত নিরোধক এবং সুরক্ষিত সঞ্চালন ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরফ্যাসন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের প্রধান সড়কের পাশে প্রায় পাঁচ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে এই হাই ভোল্টেজ উপকেন্দ্রটি। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক কন্ট্রোল বিল্ডিং, স্টাফ ভবন ও আনসার ব্যারাকসহ তিনটি স্থাপনা। পাশাপাশি ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনে স্থাপন করা হচ্ছে ১২৫টি সু-উচ্চ বৈদ্যুতিক টাওয়ার, যার প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ৬৫ মিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন সীমাবদ্ধতার কারণে চরফ্যাসনে দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ সমস্যা চলছিল। নতুন উপকেন্দ্র চালু হলে এ সমস্যা দূর হবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। সামরাজ মৎস্য ঘাটের সভাপতি তারেক আজিজ বলেন, সামরাজ মৎস্য ঘাট দেশের অন্যতম ইলিশ আহরণকেন্দ্র। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে এখানে গড়ে উঠবে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও হিমাগার। এতে ইলিশ সংরক্ষণ ও রপ্তানির নতুন পথ উন্মুক্ত হবে।
উপজেলা সদরের সমাজসেবক মো. মনির হোসেন বলেন, নতুন হাই ভোল্টেজ উপকেন্দ্র চালু হলে চরফ্যাসন কেবল বিদ্যুৎনির্ভর অঞ্চলই হবে না, বরং শিল্প, কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক অর্থনীতির শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে উঠবে। কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নত জীবনযাত্রার আলোয় আলোকিত হবে চরফ্যাসনের প্রতিটি কোণা।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি’র দায়িত্বরত সহকারী প্রকৌশলী বশির আহম্মেদ বলেন, নতুন এই উপকেন্দ্র চালু হলে সিস্টেম লস ও ওভারলোড সমস্যা দূর হবে। এতে ঢালচর, মনপুরা, চর লক্ষ্মী, চর মনতাজ, চর কুকরিসহ উপকূলীয় এলাকায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দ্রুত সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ করছে। আগে দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। নতুন গ্রিড চালু হলে শিল্পকারখানা বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উপকূলবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
চরফ্যাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমাদুল হোসেন বলেন, হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নয়, পুরো উপজেলার শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মৎস্য হিমাগার, শিল্পকারখানা ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চরফ্যাসন (ভোলা) : নির্মিত হচ্ছে দেশের অন্যতম আধুনিক ২৩০/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন হাই ভোল্টেজ জিআইএস সাবস্টেশন গ্রিড (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র) -সংবাদ
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ভোলার চরফ্যাসনে নির্মিত হচ্ছে দেশের অন্যতম আধুনিক ২৩০/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন হাই ভোল্টেজ জিআইএস সাবস্টেশন গ্রিড (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র)। এটি চালু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহে আসবে নিরবচ্ছিন্নতা, লো-ভোল্টেজ ও সিস্টেম লস কমবে, আর চরফ্যাসনের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুলবে নতুন দিগন্ত। গ্রিড সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রিভারি পাওয়ার অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং চীনা প্রতিষ্ঠান এসপিটিডিই। এছাড়া জলবায়ু তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে পিজিসিবির প্রধান কার্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উপকেন্দ্রটি চালুর লক্ষ্যে দিন-রাত কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। সূত্র আরও জানায়, গ্রিডটি চালু হলে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত প্রায় ৪২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে এই গ্রিডে পৌঁছাবে। ওই ক্যাবল ব্যবহার করে দ্রুতগতির ইন্টারনেটও সরবরাহ করা যাবে, যা মোবাইল টাওয়ারের বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে আধুনিক প্রযুক্তির বজ্রপাত নিরোধক এবং সুরক্ষিত সঞ্চালন ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরফ্যাসন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের প্রধান সড়কের পাশে প্রায় পাঁচ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে এই হাই ভোল্টেজ উপকেন্দ্রটি। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক কন্ট্রোল বিল্ডিং, স্টাফ ভবন ও আনসার ব্যারাকসহ তিনটি স্থাপনা। পাশাপাশি ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনে স্থাপন করা হচ্ছে ১২৫টি সু-উচ্চ বৈদ্যুতিক টাওয়ার, যার প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ৬৫ মিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন সীমাবদ্ধতার কারণে চরফ্যাসনে দীর্ঘদিন ধরে লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ সমস্যা চলছিল। নতুন উপকেন্দ্র চালু হলে এ সমস্যা দূর হবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। সামরাজ মৎস্য ঘাটের সভাপতি তারেক আজিজ বলেন, সামরাজ মৎস্য ঘাট দেশের অন্যতম ইলিশ আহরণকেন্দ্র। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে এখানে গড়ে উঠবে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও হিমাগার। এতে ইলিশ সংরক্ষণ ও রপ্তানির নতুন পথ উন্মুক্ত হবে।
উপজেলা সদরের সমাজসেবক মো. মনির হোসেন বলেন, নতুন হাই ভোল্টেজ উপকেন্দ্র চালু হলে চরফ্যাসন কেবল বিদ্যুৎনির্ভর অঞ্চলই হবে না, বরং শিল্প, কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক অর্থনীতির শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে উঠবে। কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নত জীবনযাত্রার আলোয় আলোকিত হবে চরফ্যাসনের প্রতিটি কোণা।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি’র দায়িত্বরত সহকারী প্রকৌশলী বশির আহম্মেদ বলেন, নতুন এই উপকেন্দ্র চালু হলে সিস্টেম লস ও ওভারলোড সমস্যা দূর হবে। এতে ঢালচর, মনপুরা, চর লক্ষ্মী, চর মনতাজ, চর কুকরিসহ উপকূলীয় এলাকায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দ্রুত সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ করছে। আগে দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। নতুন গ্রিড চালু হলে শিল্পকারখানা বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উপকূলবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
চরফ্যাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমাদুল হোসেন বলেন, হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নয়, পুরো উপজেলার শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মৎস্য হিমাগার, শিল্পকারখানা ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।