alt

জীবননগরে শীতকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা : শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা: মৃৎশিল্পী বাড়ির আঙিনায় ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত -সংবাদ

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামে শুরু হয়েছে মাটির ভাড় তৈরির ব্যস্ততা। শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়,আর এই সময়টিতেই মাটির ভাড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই চাহিদা পূরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেহাটির বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় চলছে ভাড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। কেউ এটেল মাটিতে পানি মিশিয়ে ভাড় গড়ছেন, কেউ শুকিয়ে নিচ্ছেন রোদে, আবার কেউ প্রস্তুত ভাড় পুড়িয়ে নিচ্ছেন আগুনে। আধুনিক ছাচ ও নকশার ছোয়ায় এসব ভাড় এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

কুমার নিতাই পাল জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তই ভাড় তৈরির প্রধান মৌসুম। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ভাড় তৈরি করি। রস রাখার ভাড় বিক্রি হয় ৩০ টাকায়, আর গুড় রাখার ভাড় ৪০ টাকায়। তিন মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ভাড় বিক্রি করতে পারি, খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। নিতাই পাল আরও বলেন, আমাদের তৈরি ভাড় কিনতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার গাছিরা পাইকারি ও খুচরা দামে আসে। এখানে প্রায় ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করে।

শ্রমিক গোপাল জানালেন, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি, প্রতিদিন পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই আয়েই পরিবারের পাচজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি।

আরেক শ্রমিক আনন্দ পাল বলেন, আমি ভাড় পুড়ানোর কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই। এই কাজেই সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।

তবে এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির মুখে বললেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী অনন্ত কুমার পাল। তার ভাষায়, জীবননগরের এক সময়কার গৌরবময় মৃৎশিল্প এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোয়ায় মানুষ মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। ফলে অনেক কুমার পরিবার পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি জানান, একসময় জীবননগরের মৃৎশিল্প চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ আশপাশের এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন পুরো উপজেলায় মাত্র ২৫টি পরিবার কোনোমতে এই পেশায় টিকে আছেন।

উত্তম কুমার পাল বলেন, আগে আমরা হাড়ি, পাতিল, কলসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বানাতাম। এখন মানুষ প্লাস্টিক, সিলভার ও রাবারের জিনিস ব্যবহার করছে। তাই আমরা এখন ফুলের টব, খেলনা ও সৌখিন সামগ্রী তৈরি করছি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী।

স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম এলেই দেহাটি গ্রামে যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চুলার আগুন আর কুমারদের হাতের ছোয়ায় জেগে ওঠে প্রাচীন ঐতিহ্যের সেই মাটির শিল্প।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমীন বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ। কালের প্রবাহে এটি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করতে চাই। এ ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

ছবি

ভোলায় উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষ: তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ১৫

ছবি

দামুড়হুদায় শীতের আগমনে লেপ তৈরীর কারিগরদের ব্যস্ততা

ছবি

তিন ছেলে থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হলো গোয়ালঘরে

ছবি

মহেশপুর ভৈরবা বাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘ঝাঁপান খেলা’ অনুষ্ঠিত

ছবি

নগেশ্বরীতে বউ-শাশুড়ী মেলা

ছবি

শেরপুরে মিনি রাতারগুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধতা খুঁজছেন শত শত পর্যটক

ছবি

সুবর্ণচরে পাচারকালে ৩০০ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ

ছবি

টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের সহায়তায় হাফিজ ফিরে পেল একমাত্র জীবিকার অবলম্বন

ছবি

বিএনপিতে ফিরলেন গঙ্গাচড়ার সাবেক চেয়ারম্যান সুজন

ছবি

শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুতে বিনা রশিদে টোল আদায়

ছবি

দশমিনায় দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন কম

ছবি

ইবিতে লোডশেডিং হলেই বন্ধ হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট

ছবি

স্বাস্থ্যসেবায় রংপুর বিভাগে দ্বিতীয় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ছবি

অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ, যুবক আলমগীরের ‘জীবন এখন শিকলবন্দি’

ছবি

ডিমলার ধুম নদীর বিধ্বস্ত ব্রিজ যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

সিরাজগঞ্জের কৃষকরা এখন শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত

ছবি

নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ বাসের সুপারভাইজার গ্রেপ্তার

ছবি

চৌগাছায় ট্রলির সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই কিশোর নিহত

ছবি

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত ৫

মোহনগঞ্জে যাত্রাপথে আনন্দ গান মেঠোসুর পরিষদের কর্মশালা

ছবি

বেগমগঞ্জে গাঁজাসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

ছবি

যশোরে ফেনসিডিলের মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন

ছবি

গরু চুরির সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১,আহত ৩

ছবি

যশোরের রং ও কেমিক্যাল দিয়ে আইসক্রিম তৈরি, জরিমানা

ছবি

নড়াইলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি

ছবি

উলিপুরে বিরোধের জেরে অবরুদ্ধ এক পরিবার

ছবি

নালিতাবাড়ীতে পানির বোরিংয়ে মিলল গ্যাস, চাঞ্চল্যে স্থানীয়রা

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিক্ষোভ

ছবি

জয়পুরহাটে দুই বছরেও চালু হয়নি ম্যাটস ভবন

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে আটক ১১

ছবি

৫ ইউনিয়নে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

ছবি

কচুয়া পাথৈর উবিতে ভবনের অভাবে পাঠদান ব্যাহত

ছবি

ফরিদপুরে ট্রাক-ভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫

ছবি

বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বদলে যাবে চরফ্যাসনের ভাগ্য

ছবি

নন্দীগ্রামে সওজের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ, জনদুর্ভোগ চরমে

ছবি

কাঠালিয়ায় দুইশ বছরের পুরোনো মেলা

tab

জীবননগরে শীতকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা: মৃৎশিল্পী বাড়ির আঙিনায় ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত -সংবাদ

শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামে শুরু হয়েছে মাটির ভাড় তৈরির ব্যস্ততা। শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়,আর এই সময়টিতেই মাটির ভাড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই চাহিদা পূরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেহাটির বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় চলছে ভাড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। কেউ এটেল মাটিতে পানি মিশিয়ে ভাড় গড়ছেন, কেউ শুকিয়ে নিচ্ছেন রোদে, আবার কেউ প্রস্তুত ভাড় পুড়িয়ে নিচ্ছেন আগুনে। আধুনিক ছাচ ও নকশার ছোয়ায় এসব ভাড় এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

কুমার নিতাই পাল জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তই ভাড় তৈরির প্রধান মৌসুম। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ভাড় তৈরি করি। রস রাখার ভাড় বিক্রি হয় ৩০ টাকায়, আর গুড় রাখার ভাড় ৪০ টাকায়। তিন মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ভাড় বিক্রি করতে পারি, খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। নিতাই পাল আরও বলেন, আমাদের তৈরি ভাড় কিনতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার গাছিরা পাইকারি ও খুচরা দামে আসে। এখানে প্রায় ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করে।

শ্রমিক গোপাল জানালেন, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি, প্রতিদিন পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই আয়েই পরিবারের পাচজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি।

আরেক শ্রমিক আনন্দ পাল বলেন, আমি ভাড় পুড়ানোর কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই। এই কাজেই সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।

তবে এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির মুখে বললেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী অনন্ত কুমার পাল। তার ভাষায়, জীবননগরের এক সময়কার গৌরবময় মৃৎশিল্প এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোয়ায় মানুষ মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। ফলে অনেক কুমার পরিবার পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি জানান, একসময় জীবননগরের মৃৎশিল্প চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ আশপাশের এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন পুরো উপজেলায় মাত্র ২৫টি পরিবার কোনোমতে এই পেশায় টিকে আছেন।

উত্তম কুমার পাল বলেন, আগে আমরা হাড়ি, পাতিল, কলসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বানাতাম। এখন মানুষ প্লাস্টিক, সিলভার ও রাবারের জিনিস ব্যবহার করছে। তাই আমরা এখন ফুলের টব, খেলনা ও সৌখিন সামগ্রী তৈরি করছি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী।

স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম এলেই দেহাটি গ্রামে যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চুলার আগুন আর কুমারদের হাতের ছোয়ায় জেগে ওঠে প্রাচীন ঐতিহ্যের সেই মাটির শিল্প।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমীন বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ। কালের প্রবাহে এটি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করতে চাই। এ ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

back to top