চুয়াডাঙ্গা: মৃৎশিল্পী বাড়ির আঙিনায় ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত -সংবাদ
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামে শুরু হয়েছে মাটির ভাড় তৈরির ব্যস্ততা। শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়,আর এই সময়টিতেই মাটির ভাড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই চাহিদা পূরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেহাটির বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় চলছে ভাড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। কেউ এটেল মাটিতে পানি মিশিয়ে ভাড় গড়ছেন, কেউ শুকিয়ে নিচ্ছেন রোদে, আবার কেউ প্রস্তুত ভাড় পুড়িয়ে নিচ্ছেন আগুনে। আধুনিক ছাচ ও নকশার ছোয়ায় এসব ভাড় এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
কুমার নিতাই পাল জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তই ভাড় তৈরির প্রধান মৌসুম। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ভাড় তৈরি করি। রস রাখার ভাড় বিক্রি হয় ৩০ টাকায়, আর গুড় রাখার ভাড় ৪০ টাকায়। তিন মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ভাড় বিক্রি করতে পারি, খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। নিতাই পাল আরও বলেন, আমাদের তৈরি ভাড় কিনতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার গাছিরা পাইকারি ও খুচরা দামে আসে। এখানে প্রায় ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করে।
শ্রমিক গোপাল জানালেন, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি, প্রতিদিন পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই আয়েই পরিবারের পাচজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি।
আরেক শ্রমিক আনন্দ পাল বলেন, আমি ভাড় পুড়ানোর কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই। এই কাজেই সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।
তবে এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির মুখে বললেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী অনন্ত কুমার পাল। তার ভাষায়, জীবননগরের এক সময়কার গৌরবময় মৃৎশিল্প এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোয়ায় মানুষ মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। ফলে অনেক কুমার পরিবার পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি জানান, একসময় জীবননগরের মৃৎশিল্প চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ আশপাশের এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন পুরো উপজেলায় মাত্র ২৫টি পরিবার কোনোমতে এই পেশায় টিকে আছেন।
উত্তম কুমার পাল বলেন, আগে আমরা হাড়ি, পাতিল, কলসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বানাতাম। এখন মানুষ প্লাস্টিক, সিলভার ও রাবারের জিনিস ব্যবহার করছে। তাই আমরা এখন ফুলের টব, খেলনা ও সৌখিন সামগ্রী তৈরি করছি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী।
স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম এলেই দেহাটি গ্রামে যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চুলার আগুন আর কুমারদের হাতের ছোয়ায় জেগে ওঠে প্রাচীন ঐতিহ্যের সেই মাটির শিল্প।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমীন বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ। কালের প্রবাহে এটি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করতে চাই। এ ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চুয়াডাঙ্গা: মৃৎশিল্পী বাড়ির আঙিনায় ভাড় তৈরিতে ব্যস্ত -সংবাদ
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামে শুরু হয়েছে মাটির ভাড় তৈরির ব্যস্ততা। শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয়,আর এই সময়টিতেই মাটির ভাড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই চাহিদা পূরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেহাটির বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় চলছে ভাড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। কেউ এটেল মাটিতে পানি মিশিয়ে ভাড় গড়ছেন, কেউ শুকিয়ে নিচ্ছেন রোদে, আবার কেউ প্রস্তুত ভাড় পুড়িয়ে নিচ্ছেন আগুনে। আধুনিক ছাচ ও নকশার ছোয়ায় এসব ভাড় এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
কুমার নিতাই পাল জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তই ভাড় তৈরির প্রধান মৌসুম। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ভাড় তৈরি করি। রস রাখার ভাড় বিক্রি হয় ৩০ টাকায়, আর গুড় রাখার ভাড় ৪০ টাকায়। তিন মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ভাড় বিক্রি করতে পারি, খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। নিতাই পাল আরও বলেন, আমাদের তৈরি ভাড় কিনতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার গাছিরা পাইকারি ও খুচরা দামে আসে। এখানে প্রায় ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করে।
শ্রমিক গোপাল জানালেন, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি, প্রতিদিন পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই আয়েই পরিবারের পাচজনের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি।
আরেক শ্রমিক আনন্দ পাল বলেন, আমি ভাড় পুড়ানোর কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পাই। এই কাজেই সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।
তবে এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির মুখে বললেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী অনন্ত কুমার পাল। তার ভাষায়, জীবননগরের এক সময়কার গৌরবময় মৃৎশিল্প এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোয়ায় মানুষ মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। ফলে অনেক কুমার পরিবার পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি জানান, একসময় জীবননগরের মৃৎশিল্প চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ আশপাশের এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন পুরো উপজেলায় মাত্র ২৫টি পরিবার কোনোমতে এই পেশায় টিকে আছেন।
উত্তম কুমার পাল বলেন, আগে আমরা হাড়ি, পাতিল, কলসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বানাতাম। এখন মানুষ প্লাস্টিক, সিলভার ও রাবারের জিনিস ব্যবহার করছে। তাই আমরা এখন ফুলের টব, খেলনা ও সৌখিন সামগ্রী তৈরি করছি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী।
স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম এলেই দেহাটি গ্রামে যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চুলার আগুন আর কুমারদের হাতের ছোয়ায় জেগে ওঠে প্রাচীন ঐতিহ্যের সেই মাটির শিল্প।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমীন বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ। কালের প্রবাহে এটি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করতে চাই। এ ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।