মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার শেখরীনগর গ্রামের এক তরুণ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে এই যুবকের চিকিৎসা বন্ধ। তাই ওই তরুণকে শিকল দিয়ে বেধে ঘরবন্দি করে রেখেছে তার পরিবার। আলমগীরের জীবন এখন শিকলবন্দি।
পারিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রুবিয়া-আওলাদ দম্পতির এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে আলমগীর মেঝো। ছোট বেলা থেকেই আলমগীর পড়া-লেখায় ভালো ছিলো। ২০১৭ সালে এসএসসি (বাণিজ্য) এবং ২০২০ সালে এইচএসসি (মানবিক) বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।কিন্তু হঠাৎ করেই আলমগীরের মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। এক পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বর্তমানে তাকে শিকল বন্দী করে রাখতে ‘বাধ্য হয়েছে’ পরিবার।
হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আলমগীরের বয়স ২৬ কিংবা ২৭ বছর হবে। গত পাঁচ বছর যাবৎ ভাঙাচোড়া টিনের বাড়ির ছোট্ট একটি ঘড়ে কাটছে তার শিকলবন্দি জীবন।
আলমগীর হোসেনের মা রুবিয়া খাতুন বলেন, ‘ওর (আলমগীরের) বাবা নেই। পাগল পোলাডারে নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য ভাতা ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজির এক বস্তা চাউল দিয়ে কোন মতে চালাই আমাদের সংসার। যেখানে তিন বেলা পেট ভরে খাইতে পারি না সেখানে ছেলে (আলমগীর) কে চিকিৎসা করামো কিভাবে?’
প্রতিবেশী মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, আলমগীরের পরিবারটি খুবই অসহায় ও অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবে সেই অবস্থাটুকু নাই। মেধাবী শিক্ষার্থী আলমগীর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সমাজের বিত্তশালী যারা আছেন তারা যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তবে ওর (আলমগীরের) সুচিকিৎসা করা সম্ভব।
রাহেলা বেগম নামের ষাটোর্ধ এক নারী বলেন, ‘সারাটা জীবন শুধু আলমগীরের মা কষ্ট করেই গেলো। ছোট থেকে বড় করলো সন্তানদের অনেক কষ্ট করে। গত পাঁচ বছর আগে স্বামীটা স্ট্রোক করে মারা গেলো, ছেলে পাগল হলো। ওদের সংসারটা কেমনে চলে তা এক আল্লাহ জানেন। এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাইতে পারে না। সবগুলো ছেলে ছোট, যে বড় সেই পাগল হয়ছে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ( মেম্বার ) আব্দুল লতিফ বলেন, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে। এমনিতেই ওরা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে, তারমধ্যে বাবাটা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। সরকারি ভাবে ১৫ টাকা কেজি চাউলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে পেট পুরলেও চিকিৎসা করাটা অসম্ভব। যার কারণে সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে সম্ভাবনাময় এই তারুন্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মামুন উর রশিদ বলেন, ‘আলমগীর আসলে ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তবে দীর্ঘদিন এই রোগে আক্রান্ত হলে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ায় সম্ভবনা আছে। তবে এটি অন্য রোগের মতোই চিকিৎসায় নিরাময় যোগ্য।’ দ্রুত সঠিক চিকিৎসা পেলে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের একটি বড় অংশকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার শেখরীনগর গ্রামের এক তরুণ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে এই যুবকের চিকিৎসা বন্ধ। তাই ওই তরুণকে শিকল দিয়ে বেধে ঘরবন্দি করে রেখেছে তার পরিবার। আলমগীরের জীবন এখন শিকলবন্দি।
পারিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রুবিয়া-আওলাদ দম্পতির এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে আলমগীর মেঝো। ছোট বেলা থেকেই আলমগীর পড়া-লেখায় ভালো ছিলো। ২০১৭ সালে এসএসসি (বাণিজ্য) এবং ২০২০ সালে এইচএসসি (মানবিক) বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।কিন্তু হঠাৎ করেই আলমগীরের মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। এক পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বর্তমানে তাকে শিকল বন্দী করে রাখতে ‘বাধ্য হয়েছে’ পরিবার।
হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আলমগীরের বয়স ২৬ কিংবা ২৭ বছর হবে। গত পাঁচ বছর যাবৎ ভাঙাচোড়া টিনের বাড়ির ছোট্ট একটি ঘড়ে কাটছে তার শিকলবন্দি জীবন।
আলমগীর হোসেনের মা রুবিয়া খাতুন বলেন, ‘ওর (আলমগীরের) বাবা নেই। পাগল পোলাডারে নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য ভাতা ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজির এক বস্তা চাউল দিয়ে কোন মতে চালাই আমাদের সংসার। যেখানে তিন বেলা পেট ভরে খাইতে পারি না সেখানে ছেলে (আলমগীর) কে চিকিৎসা করামো কিভাবে?’
প্রতিবেশী মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, আলমগীরের পরিবারটি খুবই অসহায় ও অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবে সেই অবস্থাটুকু নাই। মেধাবী শিক্ষার্থী আলমগীর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সমাজের বিত্তশালী যারা আছেন তারা যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তবে ওর (আলমগীরের) সুচিকিৎসা করা সম্ভব।
রাহেলা বেগম নামের ষাটোর্ধ এক নারী বলেন, ‘সারাটা জীবন শুধু আলমগীরের মা কষ্ট করেই গেলো। ছোট থেকে বড় করলো সন্তানদের অনেক কষ্ট করে। গত পাঁচ বছর আগে স্বামীটা স্ট্রোক করে মারা গেলো, ছেলে পাগল হলো। ওদের সংসারটা কেমনে চলে তা এক আল্লাহ জানেন। এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাইতে পারে না। সবগুলো ছেলে ছোট, যে বড় সেই পাগল হয়ছে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ( মেম্বার ) আব্দুল লতিফ বলেন, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলে বন্দি জীবন কাটছে। এমনিতেই ওরা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে, তারমধ্যে বাবাটা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। সরকারি ভাবে ১৫ টাকা কেজি চাউলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে পেট পুরলেও চিকিৎসা করাটা অসম্ভব। যার কারণে সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে সম্ভাবনাময় এই তারুন্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মামুন উর রশিদ বলেন, ‘আলমগীর আসলে ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তবে দীর্ঘদিন এই রোগে আক্রান্ত হলে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ায় সম্ভবনা আছে। তবে এটি অন্য রোগের মতোই চিকিৎসায় নিরাময় যোগ্য।’ দ্রুত সঠিক চিকিৎসা পেলে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের একটি বড় অংশকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।