ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি-নেতার নয়, সংগঠিত তরুণ সমাজের ঐক্যে নিহিত। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নিজেদের ইতিহাস জানতে, বুঝতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা অন্য কেউ যাতে আত্মপরিচয় ও অধিকারের বিষয়গুলোতে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে না পারে। আর এভাবেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নতুন দিনের আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।
‘জাতীয় আদিবাসী যুব সম্মেলন-২৫’-এ অংশ নেয়া যুবদের উদ্দেশ্যে অতিথিরা এসব কথা বলেছেন। শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর আসাদ গেইটের সিবিসিবি সম্মেলনকেন্দ্রে। ‘শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে আদিবাসী যুবদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই হোক ন্যায়, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম।
সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সম্প্রতি ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজও শোষিত। ধনবাদী শাসকগোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রকৃত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি সইয়ের পরও পাহাড়ের জনগণের জীবনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। নিরাপত্তা, ভূমি অধিকার ও জীবিকার সংকটে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন।
পাহাড়ে যুবকদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তারা শহরে অনিশ্চিত জীবিকার সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও জমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্র তাদের সমস্যাকে এখনও জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে না।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী জাতিগত নিপীড়ন ও শ্রেণী শোষণেও জর্জরিত মন্তব্য করে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যাকে আলাদা না ভেবে জাতীয় সমস্যার অংশ হিসেবে দেখতে হবে।
যদি এখনই ন্যায়, অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পথে ঐক্য গড়ে না তোলা যায়, তবে এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে এবং রাষ্ট্র আরও গভীর শোষণচক্রে নিমজ্জিত হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে, এমন আশা করা হয়েছিল; যেখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু ১৪ মাস ধরে দেখছি, সেই স্বপ্ন-আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘এরপরও আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, আশা করতে চাই নতুন যে সরকার আসবে, তারা পুরনোদের মতো অত্যাচার, অবিচার কিংবা বঞ্চনা জিইয়ে রাখার সঙ্গে লিপ্ত হবে না।...আমরা সেই আশা করতে চাই, স্বপ্ন দেখতে চাই।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি-নেতায় নয়, সংগঠিত তরুণ সমাজের ঐক্যে নিহিত। দুর্নীতি, বৈষম্য ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন এখনও চললেও এই অভ্যুত্থান সমাজ পরিবর্তনের নতুন শিক্ষার সূচনা করেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন কেবল তাদের নয়, এটি সমগ্র সমাজের ন্যায় ও সমতার দাবি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মণিরা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। সম্মেলনে বিভিন্ন আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি-নেতার নয়, সংগঠিত তরুণ সমাজের ঐক্যে নিহিত। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নিজেদের ইতিহাস জানতে, বুঝতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা অন্য কেউ যাতে আত্মপরিচয় ও অধিকারের বিষয়গুলোতে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে না পারে। আর এভাবেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নতুন দিনের আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।
‘জাতীয় আদিবাসী যুব সম্মেলন-২৫’-এ অংশ নেয়া যুবদের উদ্দেশ্যে অতিথিরা এসব কথা বলেছেন। শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর আসাদ গেইটের সিবিসিবি সম্মেলনকেন্দ্রে। ‘শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে আদিবাসী যুবদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই হোক ন্যায়, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম।
সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সম্প্রতি ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজও শোষিত। ধনবাদী শাসকগোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রকৃত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি সইয়ের পরও পাহাড়ের জনগণের জীবনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। নিরাপত্তা, ভূমি অধিকার ও জীবিকার সংকটে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন।
পাহাড়ে যুবকদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তারা শহরে অনিশ্চিত জীবিকার সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও জমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্র তাদের সমস্যাকে এখনও জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে না।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী জাতিগত নিপীড়ন ও শ্রেণী শোষণেও জর্জরিত মন্তব্য করে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যাকে আলাদা না ভেবে জাতীয় সমস্যার অংশ হিসেবে দেখতে হবে।
যদি এখনই ন্যায়, অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পথে ঐক্য গড়ে না তোলা যায়, তবে এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে এবং রাষ্ট্র আরও গভীর শোষণচক্রে নিমজ্জিত হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে, এমন আশা করা হয়েছিল; যেখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু ১৪ মাস ধরে দেখছি, সেই স্বপ্ন-আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘এরপরও আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, আশা করতে চাই নতুন যে সরকার আসবে, তারা পুরনোদের মতো অত্যাচার, অবিচার কিংবা বঞ্চনা জিইয়ে রাখার সঙ্গে লিপ্ত হবে না।...আমরা সেই আশা করতে চাই, স্বপ্ন দেখতে চাই।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি-নেতায় নয়, সংগঠিত তরুণ সমাজের ঐক্যে নিহিত। দুর্নীতি, বৈষম্য ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন এখনও চললেও এই অভ্যুত্থান সমাজ পরিবর্তনের নতুন শিক্ষার সূচনা করেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন কেবল তাদের নয়, এটি সমগ্র সমাজের ন্যায় ও সমতার দাবি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মণিরা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। সম্মেলনে বিভিন্ন আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।