ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে স্ক্যাবিস নামে ছোঁয়াচে চর্মরোগ। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বড় একটি অংশই এখন এ রোগে ভুগছেন। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও এর প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে। এতে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম আতঙ্ক। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক চর্মরোগে আক্রান্ত রোগী থাকে। এদিকে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে কোনো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চি?কিৎসক নেই। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা।
আক্রান্তদের অনেকে প্রথমে গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় অবস্থার অবনতি ঘটছে এবং শেষে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসকদের মতে, স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে শরীরের আঙুলের ফাঁক, কবজি, কনুই, বগল, নাভি, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ ও হাতের তালুতে তীব্র চুলকানি হয় বিশেষ করে রাতে। চুলকানোর ফলে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা দেখা দেয়, যা থেকে তরল পদার্থ বের হয়। এটি সারকপটিস স্ক্যাবাই নামের এক ধরনের ক্ষুদ্র মাইট দ্বারা ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা, তোয়ালে বা শরীরের সংস্পর্শে এলে অন্যরাও সহজেই সংক্রমিত হয়। দেবিদ্বারের ছাত্রাবাস, হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসাগুলিতে স্ক্যাবিস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিছানা, বালিশ ও চাদর ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ির যন্ত্রণায় ভুগছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সফিক সরকার বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে শরীরে চুলকানি হচ্ছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ ব্যবহার করেও কাজ হয়নি। অবশেষে হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম, এটি স্ক্যাবিস। ফতেহাবাদের জামাল হোসেন বলেন, আমার ১৮ মাস বয়সী সন্তানের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার জানিয়েছেন, স্ক্যাবিস হয়েছে এবং পুরো পরিবারকে চিকিৎসা নিতে হবে। হাসপাতাল এলাকার কয়েকজন ফার্মাসিস্ট জানান, অনেক রোগী স্ক্যাবিস সম্পর্কে ধারণা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এলার্জি বা চুলকানির ওষুধ কিনে ব্যবহার করেন। এতে রোগ সারে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকাটাও একটি বড় কারণ। তাদের মতে, গত কয়েক মাসে চর্মরোগের ক্রিম, লোশন ও ওষুধের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কবীর হোসেন বলেন, শিশুদের মধ্যে স্ক্যাবিস সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যরাও সহজেই সংক্রমিত হয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গরমকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। শিশুদের নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে, ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে এবং অ্যালার্জিজনিত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আক্রান্তের ব্যবহৃত কাপড়, চাদর, বালিশ ও তোয়ালে অন্য কেউ ব্যবহার করলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিবুস ছালাম খান বলেন, প্রতিদিনই স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু সচেতনতার অভাবে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। আক্রাস্তদের ব্যবহৃত পোশাক, গামছা ও বিছানার চাদর নিয়মিত ধুয়ে রোদে শুকানো জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আলাদা বিছানায় ঘুমানো উচিত।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে স্ক্যাবিস নামে ছোঁয়াচে চর্মরোগ। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বড় একটি অংশই এখন এ রোগে ভুগছেন। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও এর প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে। এতে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম আতঙ্ক। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক চর্মরোগে আক্রান্ত রোগী থাকে। এদিকে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে কোনো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চি?কিৎসক নেই। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা।
আক্রান্তদের অনেকে প্রথমে গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় অবস্থার অবনতি ঘটছে এবং শেষে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসকদের মতে, স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে শরীরের আঙুলের ফাঁক, কবজি, কনুই, বগল, নাভি, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ ও হাতের তালুতে তীব্র চুলকানি হয় বিশেষ করে রাতে। চুলকানোর ফলে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা দেখা দেয়, যা থেকে তরল পদার্থ বের হয়। এটি সারকপটিস স্ক্যাবাই নামের এক ধরনের ক্ষুদ্র মাইট দ্বারা ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা, তোয়ালে বা শরীরের সংস্পর্শে এলে অন্যরাও সহজেই সংক্রমিত হয়। দেবিদ্বারের ছাত্রাবাস, হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসাগুলিতে স্ক্যাবিস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিছানা, বালিশ ও চাদর ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ির যন্ত্রণায় ভুগছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সফিক সরকার বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে শরীরে চুলকানি হচ্ছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ ব্যবহার করেও কাজ হয়নি। অবশেষে হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম, এটি স্ক্যাবিস। ফতেহাবাদের জামাল হোসেন বলেন, আমার ১৮ মাস বয়সী সন্তানের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার জানিয়েছেন, স্ক্যাবিস হয়েছে এবং পুরো পরিবারকে চিকিৎসা নিতে হবে। হাসপাতাল এলাকার কয়েকজন ফার্মাসিস্ট জানান, অনেক রোগী স্ক্যাবিস সম্পর্কে ধারণা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এলার্জি বা চুলকানির ওষুধ কিনে ব্যবহার করেন। এতে রোগ সারে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকাটাও একটি বড় কারণ। তাদের মতে, গত কয়েক মাসে চর্মরোগের ক্রিম, লোশন ও ওষুধের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কবীর হোসেন বলেন, শিশুদের মধ্যে স্ক্যাবিস সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যরাও সহজেই সংক্রমিত হয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গরমকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। শিশুদের নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে, ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে এবং অ্যালার্জিজনিত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আক্রান্তের ব্যবহৃত কাপড়, চাদর, বালিশ ও তোয়ালে অন্য কেউ ব্যবহার করলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিবুস ছালাম খান বলেন, প্রতিদিনই স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু সচেতনতার অভাবে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। আক্রাস্তদের ব্যবহৃত পোশাক, গামছা ও বিছানার চাদর নিয়মিত ধুয়ে রোদে শুকানো জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আলাদা বিছানায় ঘুমানো উচিত।