গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিন সাঁওতাল হত্যার নয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি। বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের দেওয়া আশ্বাসও। হত্যাকাণ্ডের নবম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জে পৃথক কর্মসূচি থেকে বিচার দাবি করেন বক্তারা। তাদের অভিযোগ, সাঁওতালরা এখনো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন সাঁওতাল আহত হন এবং তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আহতদের মধ্যে মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান।
ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যার নবম বার্ষিকীতে সকালে গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর গ্রামে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। পরে মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেবগঞ্জ নিমতলা মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। একই দাবিতে গাইবান্ধা শহরেও একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি ঢাকার উদ্যোগে নিমতলা মোড়ে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবসের’ সমাবেশ হয়। সভাপতিত্ব করেন গনেশ মুরমু। বক্তা ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, আইনজীবী প্রভাত টুডু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আহ্বায়ক আতোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন মোল্লা, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা, কামিল হেমব্রম, বিমল বেসরা, ময়রা হেমব্রন, রুমিলা কিসকু ও ইলিকা টুডু।
বক্তারা বলেন, নয় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আহত অনেকে চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন, কেউ শরীরে গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় ভুগছেন। তারা দ্রুত বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ এবং সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান।
এদিন গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির একাংশের সভাপতি ফিলিমন বাসকে। এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খায়রুল কবির, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী নেত্রী বিচিত্রা তিরকিত, গাইবান্ধা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু ও সমাজকর্মী মোর্শেদ হাসান দীপন।
বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলেও মূল আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাদীপক্ষের আপত্তির পর মামলাটি সিআইডির হাতে যায়। কিন্তু ২০২০ সালের ২ নভেম্বর সিআইডিও আগের অভিযোগপত্র হুবহু জমা দেয়। এরপর আদালত ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখনও অভিযোগপত্র জমা পড়েনি।
বক্তাদের অভিযোগ, তদন্তে গড়িমসি ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে তিন সাঁওতাল হত্যার ন্যায়বিচার আজও অধরাই রয়ে গেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিন সাঁওতাল হত্যার নয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি। বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের দেওয়া আশ্বাসও। হত্যাকাণ্ডের নবম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জে পৃথক কর্মসূচি থেকে বিচার দাবি করেন বক্তারা। তাদের অভিযোগ, সাঁওতালরা এখনো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন সাঁওতাল আহত হন এবং তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আহতদের মধ্যে মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান।
ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যার নবম বার্ষিকীতে সকালে গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর গ্রামে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। পরে মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেবগঞ্জ নিমতলা মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। একই দাবিতে গাইবান্ধা শহরেও একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি ঢাকার উদ্যোগে নিমতলা মোড়ে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবসের’ সমাবেশ হয়। সভাপতিত্ব করেন গনেশ মুরমু। বক্তা ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, আইনজীবী প্রভাত টুডু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আহ্বায়ক আতোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন মোল্লা, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা, কামিল হেমব্রম, বিমল বেসরা, ময়রা হেমব্রন, রুমিলা কিসকু ও ইলিকা টুডু।
বক্তারা বলেন, নয় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আহত অনেকে চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন, কেউ শরীরে গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় ভুগছেন। তারা দ্রুত বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ এবং সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান।
এদিন গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির একাংশের সভাপতি ফিলিমন বাসকে। এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খায়রুল কবির, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী নেত্রী বিচিত্রা তিরকিত, গাইবান্ধা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু ও সমাজকর্মী মোর্শেদ হাসান দীপন।
বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলেও মূল আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাদীপক্ষের আপত্তির পর মামলাটি সিআইডির হাতে যায়। কিন্তু ২০২০ সালের ২ নভেম্বর সিআইডিও আগের অভিযোগপত্র হুবহু জমা দেয়। এরপর আদালত ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখনও অভিযোগপত্র জমা পড়েনি।
বক্তাদের অভিযোগ, তদন্তে গড়িমসি ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে তিন সাঁওতাল হত্যার ন্যায়বিচার আজও অধরাই রয়ে গেছে।