শাহজাদপুরে সিরাজুল হত্যার রহস্য উদঘাটন
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বহুল আলোচিত সিরাজুল ইসলাম (২৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে তদন্তে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রামের গোষ্ঠীগত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে টাকার বিনিময়ে নিজের ছেলেকেই হত্যার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মা শেফালী খাতুনের বিরুদ্ধে। হত্যার উদ্দেশ্যে মায়ের কাছ থেকে ভিকটিম সিরাজুলকে দেড় লাখ টাকায় কিনে নেয় ঘাতকরা। এক পর্যায়ে গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওমর আলী ও আলমাছ আলী বেড়ানোর কথা বলে সিরাজুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। একই দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিরাজুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এমনি সব লোমহর্ষক ঘটনার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা।
থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, গত ২৯ অক্টোবর সকালে উপজেলার পূর্ব চরকৈজুরীর রাস্তার পাশ থেকে সিরাজুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সিরাজুল উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত শাহাদৎ হোসেন ম-লের ছেলে। এই ঘটনায় নিহতের মা শেফালী খাতুন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলীর নেতৃত্বে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস তদন্ত টিম তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মৃত ওয়াজেদ আলী মণ্ডলের ছেলে আল আমীন মণ্ডল (৩৮), সানোয়ার মণ্ডলের ছেলে সেলিম মণ্ডল (৩২), শহিদ আলী মণ্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৩৩), মৃত ইয়াছিন প্রামাণিকের ছেলে ওমর ফারুক (৩৮) ও মৃত আজগর প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল গফুর প্রামাণিক (৫৫)। এরা সবাই পূর্ব চরকৈজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পরদিন গেপ্তারকৃতদের শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, রিমান্ড চলাকালে আসামিরা সিরাজুল হত্যাকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেন।
আসামিদের দেয়া তথ্য মতে, ২০২১ সনে পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের ‘মুসা মন্ডল ও গফুর প্রামানিক’ গোষ্ঠীর সাথে গোপালপুর গ্রামের ‘চুন্নু মেম্বার ও খোকন মাস্টার’ (চেয়ারম্যান) গোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
এই ঘটনায় মুসা মন্ডল ও গফুর প্রামানিক গোষ্ঠীর লোকজনদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। এক পর্যায়ে বাদিপক্ষ ও আসামিপক্ষ ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপোষ মীমাংসা করে নেয়। আসামিপক্ষ বাদিপক্ষকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার পর অবশিষ্ট টাকা দিতে নানা তালবাহানা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এদিকে অবশিষ্ট টাকা যাতে না দিতে হয় ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আসামিরা সিরাজুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মাদকাসক্ত সিরাজুলের অত্যাচারে তার পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। এই সুযোগ নিয়ে একজন আসামি সিরাজুলের মাকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যার প্রস্তাব দেয়। টাকা পেয়ে তার মা ছেলে সিরাজুলকে হত্যার অনুমতি দেন। জবানবন্দিতে আসামিরা আরো জানান, গত ২৮ অক্টোবর সিরাজুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অন্য এক আসামির বাড়িতে আটকে রাখা হয় এবং রাত সাড়ে ৩টার দিকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে সিরাজুলকে হত্যা করে রাস্তায় পাশে ফেলে রাখে আসামিরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শারফুল ইসলাম জানান, রিমান্ড শেষে গত বুধবার ৫জন আসামির মধ্যে ৩জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত ৫ জনকে সিরাজগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, আসামিদের জবানবন্দিতে সিরাজুল হত্যার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকা আরো কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শাহজাদপুরে সিরাজুল হত্যার রহস্য উদঘাটন
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বহুল আলোচিত সিরাজুল ইসলাম (২৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে তদন্তে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রামের গোষ্ঠীগত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে টাকার বিনিময়ে নিজের ছেলেকেই হত্যার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মা শেফালী খাতুনের বিরুদ্ধে। হত্যার উদ্দেশ্যে মায়ের কাছ থেকে ভিকটিম সিরাজুলকে দেড় লাখ টাকায় কিনে নেয় ঘাতকরা। এক পর্যায়ে গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওমর আলী ও আলমাছ আলী বেড়ানোর কথা বলে সিরাজুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। একই দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিরাজুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এমনি সব লোমহর্ষক ঘটনার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা।
থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, গত ২৯ অক্টোবর সকালে উপজেলার পূর্ব চরকৈজুরীর রাস্তার পাশ থেকে সিরাজুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সিরাজুল উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত শাহাদৎ হোসেন ম-লের ছেলে। এই ঘটনায় নিহতের মা শেফালী খাতুন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলীর নেতৃত্বে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস তদন্ত টিম তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মৃত ওয়াজেদ আলী মণ্ডলের ছেলে আল আমীন মণ্ডল (৩৮), সানোয়ার মণ্ডলের ছেলে সেলিম মণ্ডল (৩২), শহিদ আলী মণ্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৩৩), মৃত ইয়াছিন প্রামাণিকের ছেলে ওমর ফারুক (৩৮) ও মৃত আজগর প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল গফুর প্রামাণিক (৫৫)। এরা সবাই পূর্ব চরকৈজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পরদিন গেপ্তারকৃতদের শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, রিমান্ড চলাকালে আসামিরা সিরাজুল হত্যাকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেন।
আসামিদের দেয়া তথ্য মতে, ২০২১ সনে পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের ‘মুসা মন্ডল ও গফুর প্রামানিক’ গোষ্ঠীর সাথে গোপালপুর গ্রামের ‘চুন্নু মেম্বার ও খোকন মাস্টার’ (চেয়ারম্যান) গোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
এই ঘটনায় মুসা মন্ডল ও গফুর প্রামানিক গোষ্ঠীর লোকজনদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। এক পর্যায়ে বাদিপক্ষ ও আসামিপক্ষ ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপোষ মীমাংসা করে নেয়। আসামিপক্ষ বাদিপক্ষকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার পর অবশিষ্ট টাকা দিতে নানা তালবাহানা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এদিকে অবশিষ্ট টাকা যাতে না দিতে হয় ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আসামিরা সিরাজুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মাদকাসক্ত সিরাজুলের অত্যাচারে তার পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। এই সুযোগ নিয়ে একজন আসামি সিরাজুলের মাকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যার প্রস্তাব দেয়। টাকা পেয়ে তার মা ছেলে সিরাজুলকে হত্যার অনুমতি দেন। জবানবন্দিতে আসামিরা আরো জানান, গত ২৮ অক্টোবর সিরাজুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অন্য এক আসামির বাড়িতে আটকে রাখা হয় এবং রাত সাড়ে ৩টার দিকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে সিরাজুলকে হত্যা করে রাস্তায় পাশে ফেলে রাখে আসামিরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শারফুল ইসলাম জানান, রিমান্ড শেষে গত বুধবার ৫জন আসামির মধ্যে ৩জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত ৫ জনকে সিরাজগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) থানার অফিসার ইনচার্জ আছলাম আলী জানান, আসামিদের জবানবন্দিতে সিরাজুল হত্যার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকা আরো কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।