চীনের সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরি ‘ফুজিয়ান’ আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রণতরিটি নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। ফুজিয়ান হলো চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরি, যা আধুনিক ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমে সজ্জিত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলো আরও বেশি গতিতে উড্ডয়ন করতে পারবে।
এটি চীনের নৌ সক্ষমতায় এক বড় অগ্রগতি। কারণ, বর্তমানে জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে চীনের নৌবাহিনীই বিশ্বের সবচেয়ে বড়। সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে নৌবাহিনী সম্প্রসারণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ফুজিয়ানের সমতল ডেকে থাকা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমের সাহায্যে তিন ধরনের যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই রণতরি ভারী অস্ত্র ও জ্বালানি বহনকারী যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারবে, যা আরও দূরের শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে এটি চীনের প্রথম দুটি রণতরি—রুশ নির্মিত ‘লিয়াওনিং’ ও ‘শানডং’-এর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফুজিয়ানকে চীনের নৌবাহিনীর বিকাশে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই এমন একটি বিমানবাহী রণতরি রয়েছে, যাতে ফুজিয়ানের মতো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই রণতরীতে রয়েছে সমতল ফ্লাইট ডেক ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক ফোর্ড-শ্রেণির রণতরীতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ফুজিয়ান আরও বেশি এবং ভারী অস্ত্রসজ্জিত যুদ্ধবিমান বহনে সক্ষম হবে। পরীক্ষামূলক চালনার সময় এই রণতরী থেকে উড্ডয়ন করানো হয় চীনের নতুন জে–৩৫ স্টেলথ ফাইটারের নৌ সংস্করণ, কে–জে৬০০ আর্লি-ওয়ার্নিং বিমান এবং বিদ্যমান জে–১৫ জেটের একটি উন্নত সংস্করণ।
নিজস্ব নজরদারি বিমান বহনের ক্ষমতা থাকায় ফুজিয়ান এখন আগের দুটি রণতরীর মতো স্থলভিত্তিক সহায়তার বাইরে থেকেও পরিচালনা করতে পারবে, যা সমুদ্রের দূরবর্তী অঞ্চলে অভিযান সক্ষমতা বাড়াবে।
যদিও এখনো এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রস্তুত কিনা তা স্পষ্ট নয়, বিশ্লেষকদের মতে, ফুজিয়ান হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সামরিক সংস্কার ও নৌবাহিনী সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় দৃশ্যমান উদাহরণ। শি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও ২০৫০ সালের মধ্যে ‘বিশ্বমানের’ বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হবে। ফুজিয়ান সেবায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বেইজিং আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর এশিয়া মেরিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘বিমানবাহী রণতরীগুলো চীনা নেতৃত্বের সেই স্বপ্নের প্রতীক, যেখানে চীন নিজেকে একটি সমুদ্রশক্তিধর বিশ্বশক্তি হিসেবে দেখতে চায়।’ তার মতে, চীন দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং হলুদ সাগরের জলসীমায়—যা জাপান, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনকে ঘিরে তথাকথিত ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’—প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পাশাপাশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকেও প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী।
পোলিং বলেন, ‘প্রথম দ্বীপমালার ভেতরে রণতরী তেমন কার্যকর নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদি বৃহত্তর ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতিযোগিতা করতে চাও, তবে এই রণতরীগুলোই প্রধান অস্ত্র।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
চীনের সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরি ‘ফুজিয়ান’ আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রণতরিটি নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। ফুজিয়ান হলো চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরি, যা আধুনিক ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমে সজ্জিত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলো আরও বেশি গতিতে উড্ডয়ন করতে পারবে।
এটি চীনের নৌ সক্ষমতায় এক বড় অগ্রগতি। কারণ, বর্তমানে জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে চীনের নৌবাহিনীই বিশ্বের সবচেয়ে বড়। সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে নৌবাহিনী সম্প্রসারণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ফুজিয়ানের সমতল ডেকে থাকা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেমের সাহায্যে তিন ধরনের যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই রণতরি ভারী অস্ত্র ও জ্বালানি বহনকারী যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারবে, যা আরও দূরের শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে এটি চীনের প্রথম দুটি রণতরি—রুশ নির্মিত ‘লিয়াওনিং’ ও ‘শানডং’-এর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফুজিয়ানকে চীনের নৌবাহিনীর বিকাশে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই এমন একটি বিমানবাহী রণতরি রয়েছে, যাতে ফুজিয়ানের মতো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই রণতরীতে রয়েছে সমতল ফ্লাইট ডেক ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক ফোর্ড-শ্রেণির রণতরীতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ফুজিয়ান আরও বেশি এবং ভারী অস্ত্রসজ্জিত যুদ্ধবিমান বহনে সক্ষম হবে। পরীক্ষামূলক চালনার সময় এই রণতরী থেকে উড্ডয়ন করানো হয় চীনের নতুন জে–৩৫ স্টেলথ ফাইটারের নৌ সংস্করণ, কে–জে৬০০ আর্লি-ওয়ার্নিং বিমান এবং বিদ্যমান জে–১৫ জেটের একটি উন্নত সংস্করণ।
নিজস্ব নজরদারি বিমান বহনের ক্ষমতা থাকায় ফুজিয়ান এখন আগের দুটি রণতরীর মতো স্থলভিত্তিক সহায়তার বাইরে থেকেও পরিচালনা করতে পারবে, যা সমুদ্রের দূরবর্তী অঞ্চলে অভিযান সক্ষমতা বাড়াবে।
যদিও এখনো এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রস্তুত কিনা তা স্পষ্ট নয়, বিশ্লেষকদের মতে, ফুজিয়ান হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সামরিক সংস্কার ও নৌবাহিনী সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় দৃশ্যমান উদাহরণ। শি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও ২০৫০ সালের মধ্যে ‘বিশ্বমানের’ বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হবে। ফুজিয়ান সেবায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বেইজিং আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর এশিয়া মেরিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘বিমানবাহী রণতরীগুলো চীনা নেতৃত্বের সেই স্বপ্নের প্রতীক, যেখানে চীন নিজেকে একটি সমুদ্রশক্তিধর বিশ্বশক্তি হিসেবে দেখতে চায়।’ তার মতে, চীন দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং হলুদ সাগরের জলসীমায়—যা জাপান, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনকে ঘিরে তথাকথিত ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’—প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পাশাপাশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকেও প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী।
পোলিং বলেন, ‘প্রথম দ্বীপমালার ভেতরে রণতরী তেমন কার্যকর নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদি বৃহত্তর ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতিযোগিতা করতে চাও, তবে এই রণতরীগুলোই প্রধান অস্ত্র।’