তিন ইউনিয়নের ১৭০০ একর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চয়তা
চকরিয়া (কক্সবাজার) : ভরাট করা হচ্ছে নলবিলা খাল -সংবাদ
বর্ষাকালে অতি বৃষ্টিতে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটি জমে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের একমাত্র নলবিলা খালটি দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে পড়েছে। খালের গতিপথ অচল হয়ে পড়ার কারণে খালের উপরের অংশ তথা কাকারা ইউনিয়নের সাকের মোহাম্মদচর, বারআউলিয়া নগর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল চাষের জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে।
অপরদিকে খালটি ভরাট হবার কারণে পানি নিস্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পাশের বিশাল বিলে কৃষি জমি সেচ সুবিধার অভাবে কয়েকবছর ধরে চাষাবাদ করা যাচ্ছে। একইভাবে খালটি নীচের অংশে একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় কৈয়ারবিল ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশের এলাকায় চাষাবাদ ব্যহৃত হচ্ছে।
নলবিলা ভরাট খালের এমন দৈন্যদশা কারণে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ছাড়াও দুই পাশের কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিতে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নিরবিচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা নিয়ে আদৌও চাষাবাদ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে নলবিলা ভরাট খালটি খননের মাধ্যমে উপরের অংশে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করে চাষের আওতায় আনতে এবং একইভাবে নীচের অংশে পানি নিষ্কাশন সুবিধা সচল করে খালে পানি প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে চাষাবাদ নিশ্চিত করার জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
কৃষকরা জানিয়েছে, খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে সেচ (পানি) সুবিধার অভাবে তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৭ শত একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে কয়েকবছর ধরে অনিশ্চয়তা লেগে রয়েছে।
কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, নলবিলা খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় সাকের মোহাম্মদচর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। খালটি খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিরসন করা গেলে নলবিলা শাপলা বিল খ্যাত জলাবদ্ধতার কবলে পড়া কৃষিজমি গুলোতে চাষাবাদ করতে পারবে স্থানীয় কৃষকেরা।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর মোহাম্মদ মানিক বলেন, নলবিলা খালটি একসঙ্গে লক্ষ্যারচর, কাকারা ও কৈয়ারবিল মিলিয়ে তিনটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল। একসময় এ খালের পানি সুবিধা নিয়ে তিন ইউনিয়নের কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চাষাবাদ করতো। কিন্তু দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে নলবিলা খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতা এবং পানি নিস্কাশন সুবিধার অভাবে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকদের দুর্ভোগ দুর্দশা লাগবে নলবিলা খালটি খনন করা একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, নলবিলা খাল ও জালিয়ার ছড়া খাল ভরাট হয়ে পড়ার কারণে লক্ষ্যারচর এবং পাশের কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ অবস্থায় দুটি খাল খননের বিষয়ে চলতিবছরের মে মাসে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি কৃষি বিভাগের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে উল্লেখিত দুটি খাল খননে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গেল পাঁচমাসে বিএডিসি কতৃক উল্লেখিত দুটি খাল খননে এখনো কোনধরনের মাস্টারপ্ল্যান গ্রহন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছে। আশাকরি বিএডিসি এবিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, নলবিলা খাল ও জালিয়ার ছড়া খাল দুটি খননে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি রেজুলেশন ইতোপূর্বে পাওয়া গেছে। উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে দুটি খাল খননে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিএডিসির উর্ধবতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, খাল দুটি খননের জন্য বিএডিসি কতৃক অর্থবরাদ নিশ্চিত পরবর্তী টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলে আমরা খননকাজ শুরু করতে পারবো। মুলত এবিষয়ে উর্ধবতন কতৃপক্ষের আপডেট নির্দেশনা না পাওয়ায় নলবিলা খাল ও জালিয়ারছড়া খাল খনন একটু বিলম্ব হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
তিন ইউনিয়নের ১৭০০ একর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চয়তা
চকরিয়া (কক্সবাজার) : ভরাট করা হচ্ছে নলবিলা খাল -সংবাদ
রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
বর্ষাকালে অতি বৃষ্টিতে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটি জমে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের একমাত্র নলবিলা খালটি দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে পড়েছে। খালের গতিপথ অচল হয়ে পড়ার কারণে খালের উপরের অংশ তথা কাকারা ইউনিয়নের সাকের মোহাম্মদচর, বারআউলিয়া নগর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল চাষের জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে।
অপরদিকে খালটি ভরাট হবার কারণে পানি নিস্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পাশের বিশাল বিলে কৃষি জমি সেচ সুবিধার অভাবে কয়েকবছর ধরে চাষাবাদ করা যাচ্ছে। একইভাবে খালটি নীচের অংশে একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় কৈয়ারবিল ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশের এলাকায় চাষাবাদ ব্যহৃত হচ্ছে।
নলবিলা ভরাট খালের এমন দৈন্যদশা কারণে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ছাড়াও দুই পাশের কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিতে চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নিরবিচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা নিয়ে আদৌও চাষাবাদ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে নলবিলা ভরাট খালটি খননের মাধ্যমে উপরের অংশে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করে চাষের আওতায় আনতে এবং একইভাবে নীচের অংশে পানি নিষ্কাশন সুবিধা সচল করে খালে পানি প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে চাষাবাদ নিশ্চিত করার জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
কৃষকরা জানিয়েছে, খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে সেচ (পানি) সুবিধার অভাবে তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৭ শত একর জমিতে চাষাবাদ নিয়ে কয়েকবছর ধরে অনিশ্চয়তা লেগে রয়েছে।
কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, নলবিলা খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় সাকের মোহাম্মদচর ও শাহওমর নগর এলাকার বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। খালটি খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিরসন করা গেলে নলবিলা শাপলা বিল খ্যাত জলাবদ্ধতার কবলে পড়া কৃষিজমি গুলোতে চাষাবাদ করতে পারবে স্থানীয় কৃষকেরা।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর মোহাম্মদ মানিক বলেন, নলবিলা খালটি একসঙ্গে লক্ষ্যারচর, কাকারা ও কৈয়ারবিল মিলিয়ে তিনটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল। একসময় এ খালের পানি সুবিধা নিয়ে তিন ইউনিয়নের কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চাষাবাদ করতো। কিন্তু দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে নলবিলা খালটি ভরাট হয়ে পড়ার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি জলাবদ্ধতা এবং পানি নিস্কাশন সুবিধার অভাবে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকদের দুর্ভোগ দুর্দশা লাগবে নলবিলা খালটি খনন করা একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, নলবিলা খাল ও জালিয়ার ছড়া খাল ভরাট হয়ে পড়ার কারণে লক্ষ্যারচর এবং পাশের কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ অবস্থায় দুটি খাল খননের বিষয়ে চলতিবছরের মে মাসে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি কৃষি বিভাগের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে উল্লেখিত দুটি খাল খননে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গেল পাঁচমাসে বিএডিসি কতৃক উল্লেখিত দুটি খাল খননে এখনো কোনধরনের মাস্টারপ্ল্যান গ্রহন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছে। আশাকরি বিএডিসি এবিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, নলবিলা খাল ও জালিয়ার ছড়া খাল দুটি খননে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি রেজুলেশন ইতোপূর্বে পাওয়া গেছে। উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে দুটি খাল খননে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিএডিসির উর্ধবতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, খাল দুটি খননের জন্য বিএডিসি কতৃক অর্থবরাদ নিশ্চিত পরবর্তী টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলে আমরা খননকাজ শুরু করতে পারবো। মুলত এবিষয়ে উর্ধবতন কতৃপক্ষের আপডেট নির্দেশনা না পাওয়ায় নলবিলা খাল ও জালিয়ারছড়া খাল খনন একটু বিলম্ব হচ্ছে।