ময়মনসিংহে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে নিহত বাসচালকের মায়ের আহাজারি -সংবাদ
বাসে অগ্নিসংযোগের পর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক জুলহাস মিয়ার মায়ের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ শোকবিহ্বল হয়ে উঠেছে। নিহতের মা সাজেদা বেগম কাদতে কাদতে সাবাইকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তাহলে কী কারণে তাকে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো?’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগের পর দগ্ধ হয়ে চালক জুলহাস মিয়া মারা যান। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। জুলহাসকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার পরিবারের সদস্যরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সাজেদা বেগম। তাদের সান্ত¡না দিতে এসে কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও।
জুলহাস (৪০) উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামের মো. সাজু মিয়ার ছেলে। জুলহাস দীর্ঘদিন যাবৎ বাস চালিয়ে আসছেন। বাসটি গভীর রাতে ঢাকা থেকে গিয়ে ফুলবাড়িয়ার ভালুকজান বাজারে পেট্রোল পাম্পে অবস্থান নেয়। সেখানেই ভোর রাতে মাস্ক পরা তিন যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দুপুরে সাংবাদিকরা জুলহাসের বাড়িতে যান। সেখানে আগে থেকেই প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। বাড়িতে কান্নার রোল। এর মধ্যেই জুলহাসের মা সাজেদা বেগম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তার তিন লাখ টাকা দেনা আছে। সে মাসে ১৫ হাজার টাকার কিস্তি চালায়। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি দেড় বছর আগে। সন্তান হওয়ার আগেই আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’
জুলহাসের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’
জুলহাসের বোন ময়না বেগম বলেন, ‘আমার ভাই সেই ছোট থেকে বাস চালায়। সে সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে আসত। আবার চলে যেত। ভাই বাসেই থাকত। আমার ছেলে-মেয়ে, মা, আমি তার উপার্জনের চলতাম। এখন আমরা কীভাবে চলবো, কে আমাদের দেখবে? আমাদের দাবি সরকার যেন আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। সরকার দায়িত্ব না নিলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।’
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রুকনুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যায় এসআই আব্দুল আলিম অজ্ঞাতদের আসামি
করে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ভোরে মাস্ক পরে তিন যুবক এসে বাসটিতে আগুন দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সিসিটিভি ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাসটি রাতে ঢাকা থেকে আসে। ঘটনার সময় বাসটিতে যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি (৪৫) অবস্থান করছিলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা বাড়ি যেতে পারেননি। ভোরে বাড়ি ফেরার আশায় বাসের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় মাস্ক পরিহিত তিন যুবক এসে আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি টের পেয়ে বাসের গ্লাস ভেঙে বাদশা এবং তার মা রুমকি বেরিয়ে আসেন। এ সময় পড়ে গিয়ে রুমকি মাথায় আঘাত পান। তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
চালক জুলহাস ঘুমিয়ে থাকায় বাসের ভেতরে আটকা পড়ে দগ্ধ হয়ে সেখানেই মারা যান বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নাশকতাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের কাজ চলছে।’
স্থানীয়রা বলেন, আগুন দেখে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফুলবাড়িয়া স্টেশনের অতিরিক্ত পরিদর্শক ইয়াসিন ইকবার বলেন, ‘বাসে তল্লাশি চালিয়ে সিটে পড়ে থাকা দগ্ধ একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে বাসযাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয়রা জানান, তিনি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামের বাসিন্দা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ময়মনসিংহে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে নিহত বাসচালকের মায়ের আহাজারি -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
বাসে অগ্নিসংযোগের পর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক জুলহাস মিয়ার মায়ের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ শোকবিহ্বল হয়ে উঠেছে। নিহতের মা সাজেদা বেগম কাদতে কাদতে সাবাইকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তাহলে কী কারণে তাকে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো?’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগের পর দগ্ধ হয়ে চালক জুলহাস মিয়া মারা যান। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। জুলহাসকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার পরিবারের সদস্যরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সাজেদা বেগম। তাদের সান্ত¡না দিতে এসে কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও।
জুলহাস (৪০) উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামের মো. সাজু মিয়ার ছেলে। জুলহাস দীর্ঘদিন যাবৎ বাস চালিয়ে আসছেন। বাসটি গভীর রাতে ঢাকা থেকে গিয়ে ফুলবাড়িয়ার ভালুকজান বাজারে পেট্রোল পাম্পে অবস্থান নেয়। সেখানেই ভোর রাতে মাস্ক পরা তিন যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দুপুরে সাংবাদিকরা জুলহাসের বাড়িতে যান। সেখানে আগে থেকেই প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। বাড়িতে কান্নার রোল। এর মধ্যেই জুলহাসের মা সাজেদা বেগম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তার তিন লাখ টাকা দেনা আছে। সে মাসে ১৫ হাজার টাকার কিস্তি চালায়। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি দেড় বছর আগে। সন্তান হওয়ার আগেই আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’
জুলহাসের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’
জুলহাসের বোন ময়না বেগম বলেন, ‘আমার ভাই সেই ছোট থেকে বাস চালায়। সে সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে আসত। আবার চলে যেত। ভাই বাসেই থাকত। আমার ছেলে-মেয়ে, মা, আমি তার উপার্জনের চলতাম। এখন আমরা কীভাবে চলবো, কে আমাদের দেখবে? আমাদের দাবি সরকার যেন আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। সরকার দায়িত্ব না নিলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।’
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রুকনুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যায় এসআই আব্দুল আলিম অজ্ঞাতদের আসামি
করে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ভোরে মাস্ক পরে তিন যুবক এসে বাসটিতে আগুন দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সিসিটিভি ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাসটি রাতে ঢাকা থেকে আসে। ঘটনার সময় বাসটিতে যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি (৪৫) অবস্থান করছিলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা বাড়ি যেতে পারেননি। ভোরে বাড়ি ফেরার আশায় বাসের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় মাস্ক পরিহিত তিন যুবক এসে আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি টের পেয়ে বাসের গ্লাস ভেঙে বাদশা এবং তার মা রুমকি বেরিয়ে আসেন। এ সময় পড়ে গিয়ে রুমকি মাথায় আঘাত পান। তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
চালক জুলহাস ঘুমিয়ে থাকায় বাসের ভেতরে আটকা পড়ে দগ্ধ হয়ে সেখানেই মারা যান বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নাশকতাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের কাজ চলছে।’
স্থানীয়রা বলেন, আগুন দেখে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফুলবাড়িয়া স্টেশনের অতিরিক্ত পরিদর্শক ইয়াসিন ইকবার বলেন, ‘বাসে তল্লাশি চালিয়ে সিটে পড়ে থাকা দগ্ধ একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে বাসযাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয়রা জানান, তিনি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামের বাসিন্দা।