৭ বছর পর ওয়াশিংটনে এমবিএস
দীর্ঘ সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা জোরদারের চেষ্টা করবেন। আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চাইবেন সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এই মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দুই নেতা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সৌদি আরবের এখনই রাজি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে যে অস্থিরতা তৈরি হয়, তার পর সৌদির প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ওয়াশিংটনভিত্তিক আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের আজিজ আলগাশিয়ান লিখেছেন, ‘এই সফরের লক্ষ্য তিনটি, সৌদি-মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উন্নীত করা, সুসংহত ও সহজতর করা।’
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি এজেন্টদের হাতে হত্যার পর সৃষ্ট উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক টালমাটাল হয়ে পড়ে। সেই ঘটনার পর এটাই যুবরাজের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বহু পুরোনো। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের রিয়াদ সফরে বিপুল বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ও রাজকীয় অভ্যর্থনায় তা আরও দৃঢ় হয়। তিন দিনব্যাপী এই সফর শুরু হবে সোমবার। মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে যুবরাজের। সৌদি শাসকদের সফর সাধারণত আগাম ঘোষণা করা হয় না। সফরকে ঘিরে ওয়াশিংটনে জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি বিনিয়োগ ফোরামও অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে মায়ামির এক ব্যবসায়ী সভায় ট্রাম্প বলেন, আরও দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিচ্ছে এবং ‘খুব শিগগিরই’ সৌদি আরবও যোগ দেবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রিয়াদ এখন কোনও ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। সৌদির অবস্থান স্পষ্ট, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আঞ্চলিক সংহতি সম্ভব নয়। বাহরাইনের মানামা ডায়ালগে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচক দলের প্রধান মানাল রাদওয়ান বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বহুবার জানানো হয়েছে, তবুও ‘একই প্রশ্ন বারবার করা হয়’।
সফরে যুবরাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবেন। কাতারের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দিয়েছেন, উপসাগরের অন্যান্য দেশও এমন প্রতিশ্রুতি চাইছে। উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও সৌদি আরবের আগ্রহ রয়েছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ক্ষমতার চিপ সংগ্রহে।
সৌদি আরব এখন তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে পর্যটন ও বিনোদন খাতে বড় প্রকল্প নিচ্ছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে তেহরানসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালু রেখেছে রিয়াদ। রাদওয়ান বলেন, ইরান ইস্যুতে সৌদি আরব তার ‘সদিচ্ছা কেন্দ্রিক ভূমিকা’ অব্যাহত রাখবে, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি আলোচনাই পারমাণবিক সংকট সমাধানের পথ।
কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, এই সফরের মূল প্রশ্ন হলো যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারেন কি না, যা ইরানের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং সৌদির ভিশন ২০৩০-কে সুদৃঢ় করবে। তার মতে, এর বিনিময়ে ওয়াশিংটন সৌদির সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত অগ্রগতি চাইবে।
ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম বিদেশ সফরে রিয়াদে গিয়ে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নজর কাড়ে। ট্রাম্প পরে জানান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রিয়াদে নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে তাকে রাজি করিয়েছিলেন যুবরাজ। ছয় মাস পরে আল-শারাকে হোয়াইট হাউজে স্বাগত জানানো হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
৭ বছর পর ওয়াশিংটনে এমবিএস
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা জোরদারের চেষ্টা করবেন। আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চাইবেন সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এই মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দুই নেতা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সৌদি আরবের এখনই রাজি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে যে অস্থিরতা তৈরি হয়, তার পর সৌদির প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ওয়াশিংটনভিত্তিক আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের আজিজ আলগাশিয়ান লিখেছেন, ‘এই সফরের লক্ষ্য তিনটি, সৌদি-মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উন্নীত করা, সুসংহত ও সহজতর করা।’
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি এজেন্টদের হাতে হত্যার পর সৃষ্ট উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক টালমাটাল হয়ে পড়ে। সেই ঘটনার পর এটাই যুবরাজের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বহু পুরোনো। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের রিয়াদ সফরে বিপুল বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ও রাজকীয় অভ্যর্থনায় তা আরও দৃঢ় হয়। তিন দিনব্যাপী এই সফর শুরু হবে সোমবার। মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে যুবরাজের। সৌদি শাসকদের সফর সাধারণত আগাম ঘোষণা করা হয় না। সফরকে ঘিরে ওয়াশিংটনে জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি বিনিয়োগ ফোরামও অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে মায়ামির এক ব্যবসায়ী সভায় ট্রাম্প বলেন, আরও দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিচ্ছে এবং ‘খুব শিগগিরই’ সৌদি আরবও যোগ দেবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রিয়াদ এখন কোনও ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। সৌদির অবস্থান স্পষ্ট, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আঞ্চলিক সংহতি সম্ভব নয়। বাহরাইনের মানামা ডায়ালগে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচক দলের প্রধান মানাল রাদওয়ান বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বহুবার জানানো হয়েছে, তবুও ‘একই প্রশ্ন বারবার করা হয়’।
সফরে যুবরাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবেন। কাতারের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দিয়েছেন, উপসাগরের অন্যান্য দেশও এমন প্রতিশ্রুতি চাইছে। উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও সৌদি আরবের আগ্রহ রয়েছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ক্ষমতার চিপ সংগ্রহে।
সৌদি আরব এখন তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে পর্যটন ও বিনোদন খাতে বড় প্রকল্প নিচ্ছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে তেহরানসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালু রেখেছে রিয়াদ। রাদওয়ান বলেন, ইরান ইস্যুতে সৌদি আরব তার ‘সদিচ্ছা কেন্দ্রিক ভূমিকা’ অব্যাহত রাখবে, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি আলোচনাই পারমাণবিক সংকট সমাধানের পথ।
কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, এই সফরের মূল প্রশ্ন হলো যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারেন কি না, যা ইরানের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং সৌদির ভিশন ২০৩০-কে সুদৃঢ় করবে। তার মতে, এর বিনিময়ে ওয়াশিংটন সৌদির সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত অগ্রগতি চাইবে।
ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম বিদেশ সফরে রিয়াদে গিয়ে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নজর কাড়ে। ট্রাম্প পরে জানান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রিয়াদে নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে তাকে রাজি করিয়েছিলেন যুবরাজ। ছয় মাস পরে আল-শারাকে হোয়াইট হাউজে স্বাগত জানানো হয়।