alt

আমতলীতে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধি, আমতলী (বরগুনা) : শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকারি বোরো ধান ক্রয় কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর, ধান ক্রয় কমিটি ও খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ যোগসাজশে ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারি নীতিমালা অনুসারে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে মণপ্রতি ১৪৪০ টাকায় ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে ‘আর্দ্রতা বেশি’ অজুহাতে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সিন্ডিকেট সদস্যরা বাজার থেকে মণপ্রতি ১১৪০ টাকায় ধান কিনে সেই ধান সরকারি গুদামে ১৪৪০ টাকায় বিক্রি করে প্রতি মণে ৩০০ টাকা করে মুনাফা করেছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ অনুযায়ী, এ বছর আমতলী উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের বোরো ধান ক্রয়ের কোটা ছিল ২১৯ মেট্রিক টন। কাগজপত্রে দেখা যায়, ৭৩ জন কৃষকের কাছ থেকে তিন টন করে ধান ক্রয় দেখানো হয়েছে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে অধিকাংশ কৃষকই ধান বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ফাতেমা রাইস মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা একটি সিন্ডিকেট গঠন করে এই ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করেন। ওই তালিকার অধিকাংশ নামই দেলোয়ার হোসেনের নিজ গ্রাম কড়াইবুনিয়া এলাকার হলেও বাস্তবে সেসব নামে কোনো কৃষক নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকার ৫, ১৩, ৩৪, ৩৭, ৩৯, ৪০, ৫২ ও ৬৪ নম্বর কৃষকের মোবাইল ফোন বন্ধ। আর ৪৪ নম্বরের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জে, আমি কখনো আমতলীতে ধান বিক্রি করিনি।

কড়াইবুনিয়া গ্রামের কৃষক শাহজালাল গাজী বলেন, আমি ১১৪০ টাকা মণে দেলোয়ার হোসেনের ফাতেমা রাইস মিলে ৪৫ মণ ধান বিক্রি করেছি। পরে তিনি ওই ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন।

কৃষাণী জাহানারা বেগম বলেন, ৭০ মণ ধান আমি মিলে বিক্রি করেছি। গুদামে যাইনি, দেলোয়ার নিজেই টাকা দিয়েছেন।

অন্যদিকে কৃষক নজরুল ইসলাম ও আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, আমরা গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা বেশি দেখিয়ে নেয়নি। পরে নিজেরাই টমটমে করে ধান ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

ফাতেমা রাইস মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন স্বীকার করে বলেন, আমার এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ধান কিনেছি এবং সেই ধানই গুদামে বিক্রি করেছি। পরে ওই ধান আবার আমার মিলে চাল করেছি।

ফলে দেখা যাচ্ছে, একই ব্যক্তি ধান ক্রেতা, বিক্রেতা ও মিলার— যা সরকারি ক্রয় নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রান্তিক কৃষকরা বলেন, সরকারি ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের দাবি ভুয়া কৃষক তালিকা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি ধান ক্রয় কার্যক্রমে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আমতলী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (এলএসডি) শান্তি রঞ্জন দাস এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি, এরপর কোনো মন্তব্য করেননি।

আমতলী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শারমিন জাহান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সরকারি নীতিমালা অনুসারেই ধান ক্রয় করা হয়েছে। তবে ক্রয় কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন না কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অল্প পরিমাণ ধান ক্রয় হওয়ায় তিনি নাও জানতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, আমি ধান ক্রয় কমিটির সদস্য হলেও ক্রয়ের বিষয়ে কিছুই জানি না। প্রান্তিক কৃষকরা গুদামে ধান নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আর্দ্রতার অজুহাতে ধান নেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রয় কমিটির সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছবি

টিকে আছে সৈয়দপুরের ঝুট শিল্প, স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় চাপে রপ্তানি

ছবি

দশমিনা থেকে হারিয়ে গেছে তাল-পিঠার উৎসব

ছবি

বাপ দাদার ঘোলের ঐতিহ্য আঁকড়ে ৩২ বছর ধরে সংগ্রামী গোপাল

ছবি

রায়গঞ্জে প্রতিবন্ধী কৃষকের জমির ধান লুটের অভিযোগ

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিনিবাসে আগুন

ছবি

ডিমলায় বুড়ি তিস্তার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

ছবি

মোহনগঞ্জে আমন ধান কাটা শুরু

ছবি

শাহজাদপুরে ঋণের দায়ে ব্যবসায়ীরআত্মহত্যা

ছবি

দেবহাটায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকান

ছবি

উখিয়ায় ৩৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার ১

ছবি

খেজুর রসের ঘ্রাণে শীতের বার্তা

ছবি

আত্রাইয়ে সুতি জালে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রবিশস্যের আবাদ

ছবি

ফকিরহাটের সড়ক দুর্ঘটনায় মটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

ছবি

সিরাজগঞ্জে লাভজনক ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

ছবি

সুনামগঞ্জে শর্টগানের ৯৫০ রাউন্ড কার্তুজসহ দুইজন গ্রেপ্তার

ছবি

নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবে সৌদি আরব, ইসরায়েল ইস্যুতে চাপ দেবেন ট্রাম্প

ছবি

গোপন টেন্ডারে ৭০টি গাছ বিক্রি কুষ্টিয়ায় গাছ কাটা নিয়ে মুখোমুখি সওজ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর

ছবি

দুর্গাপুরে ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন ফ্রি ফায়ার গেমস্

ছবি

হেফাজতে থাকা আসামির গণমাধ্যমে বক্তব্য: পুলিশ কমিশনারকে তলব করল আদালত

ছবি

প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে যুবক খুন

ছবি

তাহিরপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে তিন বাংলাদেশি আটক

ছবি

কাতালগঞ্জে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে প্রতিপক্ষের হয়রানি

ছবি

হারিয়ে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের বিলাস নদী

ছবি

নুরাল পাগলার দরবারে হামলার দুই মাস পর আদালতে নতুন মামলা

ছবি

মামলা করায় নারী শিল্পীকে মারধর, মুখে কালি ও চুল কেটে নির্যাতন

ছবি

পাচার হচ্ছে বিরল প্রজাতির লেমুরসহ বণ্যপ্রাণী, সঙ্গে যাচ্ছে কচ্ছপের হাড়ও

ছবি

মালয়েশিয়া কেড়ে নিলো ১৮ বছর, ফিরে দেখেন স্ত্রী অন্য সংসারে, বাবা-মা পরপারে

ছবি

শনিবার ভয়াল সিডর দিবস, এখনও সিডরের ক্ষত উপকূলে

ছবি

শুক্রবার ও বিভিন্ন জায়গায় পোড়ানো হয় যানবাহন

ছবি

রাজশাহীতে বিচারকের ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মামলা

ছবি

সিরাজগঞ্জে জমে উঠেছে মানুষ বিক্রির হাট

ছবি

বিপন্ন প্রজাতির ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণে বিমোহিত পথচারী

ছবি

মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কমলা চাষ

ছবি

ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা কর্মকর্তার ডিমোশন

ছবি

লাখাই উপজেলায় আমন ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায়

tab

আমতলীতে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধি, আমতলী (বরগুনা)

শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকারি বোরো ধান ক্রয় কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর, ধান ক্রয় কমিটি ও খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ যোগসাজশে ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারি নীতিমালা অনুসারে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে মণপ্রতি ১৪৪০ টাকায় ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে ‘আর্দ্রতা বেশি’ অজুহাতে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সিন্ডিকেট সদস্যরা বাজার থেকে মণপ্রতি ১১৪০ টাকায় ধান কিনে সেই ধান সরকারি গুদামে ১৪৪০ টাকায় বিক্রি করে প্রতি মণে ৩০০ টাকা করে মুনাফা করেছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ অনুযায়ী, এ বছর আমতলী উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের বোরো ধান ক্রয়ের কোটা ছিল ২১৯ মেট্রিক টন। কাগজপত্রে দেখা যায়, ৭৩ জন কৃষকের কাছ থেকে তিন টন করে ধান ক্রয় দেখানো হয়েছে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে অধিকাংশ কৃষকই ধান বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ফাতেমা রাইস মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা একটি সিন্ডিকেট গঠন করে এই ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করেন। ওই তালিকার অধিকাংশ নামই দেলোয়ার হোসেনের নিজ গ্রাম কড়াইবুনিয়া এলাকার হলেও বাস্তবে সেসব নামে কোনো কৃষক নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকার ৫, ১৩, ৩৪, ৩৭, ৩৯, ৪০, ৫২ ও ৬৪ নম্বর কৃষকের মোবাইল ফোন বন্ধ। আর ৪৪ নম্বরের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জে, আমি কখনো আমতলীতে ধান বিক্রি করিনি।

কড়াইবুনিয়া গ্রামের কৃষক শাহজালাল গাজী বলেন, আমি ১১৪০ টাকা মণে দেলোয়ার হোসেনের ফাতেমা রাইস মিলে ৪৫ মণ ধান বিক্রি করেছি। পরে তিনি ওই ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন।

কৃষাণী জাহানারা বেগম বলেন, ৭০ মণ ধান আমি মিলে বিক্রি করেছি। গুদামে যাইনি, দেলোয়ার নিজেই টাকা দিয়েছেন।

অন্যদিকে কৃষক নজরুল ইসলাম ও আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, আমরা গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা বেশি দেখিয়ে নেয়নি। পরে নিজেরাই টমটমে করে ধান ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

ফাতেমা রাইস মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন স্বীকার করে বলেন, আমার এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ধান কিনেছি এবং সেই ধানই গুদামে বিক্রি করেছি। পরে ওই ধান আবার আমার মিলে চাল করেছি।

ফলে দেখা যাচ্ছে, একই ব্যক্তি ধান ক্রেতা, বিক্রেতা ও মিলার— যা সরকারি ক্রয় নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রান্তিক কৃষকরা বলেন, সরকারি ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের দাবি ভুয়া কৃষক তালিকা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি ধান ক্রয় কার্যক্রমে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আমতলী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (এলএসডি) শান্তি রঞ্জন দাস এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি, এরপর কোনো মন্তব্য করেননি।

আমতলী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শারমিন জাহান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সরকারি নীতিমালা অনুসারেই ধান ক্রয় করা হয়েছে। তবে ক্রয় কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন না কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অল্প পরিমাণ ধান ক্রয় হওয়ায় তিনি নাও জানতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, আমি ধান ক্রয় কমিটির সদস্য হলেও ক্রয়ের বিষয়ে কিছুই জানি না। প্রান্তিক কৃষকরা গুদামে ধান নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আর্দ্রতার অজুহাতে ধান নেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রয় কমিটির সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

back to top