বিলুপ্তি ঠেকাতে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ
হেমন্তের শেষ দিকে আমনের গোছা গোছা থোকা এখন দুলছে মাঠে। হিমেল হাওয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর ও বিকেল শীতের প্রারম্ভিক বার্তা জানান দিচ্ছে কদিন ধরে। এরমধ্যে খেজুর গাছের পরিচর্যায় গাছীদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে আর কদিন পরেই মিলতে খেজুরের অমৃত রস। যা গ্রাম বাংলার অবশিষ্ট নিদর্শন হিসেবে এখনো অম্লান। তবে এই খেজুরের গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ায় এই রস আস্বাধনকারী ভোক্তা ও উপকারভোগীগন হতাশ। তবে প্রত্যাশার বিষয় এই যে সরকারি ভাবে ও উপজেলা কৃষি বিভাগ এখন থেকে খেজুর গাছ লাগানোর বিষয়ে কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে।
বাংলার ষড়ঋতুতে হেমন্তের রূপবৈচিত্রতায় প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিন্ন রকমের নান্দনিক সমৃদ্ধতা খুঁজে পান। না শীত, না গরমের মাঝে হিমেল হাওয়া কানের কাছে ফিসফিস করে বলে শীত আসছে। সঙ্গে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখি। খেজুর রসের অধ্যায় শীতকালে মুখ্য হলেও কার্তিক মাসেই দেখা যায় গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে হাড়ি দিচ্ছে গাছে। নতুন ধানের চাল, খেজুর রসে নবান্নের পিঠাপুলি যেন আলাদা মাত্রা পায়। ধোঁয়া ওঠা চুলোর পাশে মা খেজুর রসের হাঁড়ি বসান। শিশুরা চুলার তাপে হাত ঘঁষে উষ্ণতা খোঁজে। প্রতিবারের মতো এবার ও সবার আগে খেজুর গাছে হাঁড়ি বসানোর প্রস্তুতি নিতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত বগাচতর গ্রামের গাছীরা। মীরসরাই উপজেলার ডোমখালী ও বগাচতর গ্রামেই যেন সবার আগে গাছীদের ব্যস্ততা বাড়ে। তবে উদ্বিগ্নতার বিষয় এখানে ও দিনে দিনে কমে যাছে গাছের সংখ্যা।
ডোমখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নুরুজ্জমান (৫২) জানান আমরা কয়েকজন মিলে এই বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি রাস্তার ধানের শতাধিক খেজুর গাছে হাঁড়ি বসাই প্রতি বছর। কিছু টাকা গাছের মালিকদের খাজনা দিয়ে করি। এবার ও কমেছে কয়েকটি গাছ। তবু ও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো। এখন পরিস্কার করে নিচ্ছি গাছ। থালি তৈরি করে ফেলবো কয়েকদিনের মধ্যে আশা করছি আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে রস সংগ্রহ করতে পারবো।
মীরসরাই উপজেলার কিছু এলাকায় ও এখনো কিছু খেজুর গাছ রয়েছে কিন্তু তাও দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু-এক দশকের মধ্যেই শীত এলে আর কোথাও খেজুরের রস পাওয়া যাবে না। কারন গ্রাম বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহক এবং উপাদেয় সুস্বাধু খেজুরের রস প্রাপ্তির এই মাধ্যম ও বিলুপ্তির পথে। আর বনবিভাগ বা কৃষিবিভাগ কেউ এই গাছটির বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি বিগত দিনে। অথচ আমাদের বিস্তীর্ণ পাহাড়ী অঞ্চল, উপকূলসহ পাহাড়ের ঢালু ও পতিত জমিতে অনায়াশেই এই খেজুর গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
তবে প্রত্যাশার হলো বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি বিভাগ এবার পৃথক দুটি প্রকল্পে অন্তত কিছু খেজুর গাছ বিগত অর্থবছরে লাগিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন আমরা বিগত অর্থবছরের দুটি পৃথক প্রকল্পে উপকূলাঞ্চলে ২০০ টি ও ২০ টি খেজুর গাছের চারা রোপনের ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে আরো বেশি খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেও সাথে খেজুর গাছের একটি সম্পর্ক রয়েছে। আবার উপকূল ও পাহাড়ের পাদদেশে খেজুর গাছ লাগানোর পর্যাপ্ত সুবিধা ও রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৃষি কর্মশালা ও সেমিনারে খেজুর লাগানোর উপর সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাসহ খেজুরের চারা রোপন ও বিতরণের বিষয় ও উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন বিগত বছরগুলোতে খেজুর গাছ বিলুপ্তির যে আশংকা ছিল তা থেকে অন্তত লাঘব করা হয়েছে। ২০২৪ সালে আনুমানিক ১২ হাজার খেজুর গাছ ছিল। কিছু মরে যাবার পর ও এবছর ও সেই সংখ্যা ১২ হাজার রয়েছে। আশা করছি আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে এর সংখ্যা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বিলুপ্তি ঠেকাতে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
হেমন্তের শেষ দিকে আমনের গোছা গোছা থোকা এখন দুলছে মাঠে। হিমেল হাওয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর ও বিকেল শীতের প্রারম্ভিক বার্তা জানান দিচ্ছে কদিন ধরে। এরমধ্যে খেজুর গাছের পরিচর্যায় গাছীদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে আর কদিন পরেই মিলতে খেজুরের অমৃত রস। যা গ্রাম বাংলার অবশিষ্ট নিদর্শন হিসেবে এখনো অম্লান। তবে এই খেজুরের গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ায় এই রস আস্বাধনকারী ভোক্তা ও উপকারভোগীগন হতাশ। তবে প্রত্যাশার বিষয় এই যে সরকারি ভাবে ও উপজেলা কৃষি বিভাগ এখন থেকে খেজুর গাছ লাগানোর বিষয়ে কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে।
বাংলার ষড়ঋতুতে হেমন্তের রূপবৈচিত্রতায় প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিন্ন রকমের নান্দনিক সমৃদ্ধতা খুঁজে পান। না শীত, না গরমের মাঝে হিমেল হাওয়া কানের কাছে ফিসফিস করে বলে শীত আসছে। সঙ্গে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখি। খেজুর রসের অধ্যায় শীতকালে মুখ্য হলেও কার্তিক মাসেই দেখা যায় গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে হাড়ি দিচ্ছে গাছে। নতুন ধানের চাল, খেজুর রসে নবান্নের পিঠাপুলি যেন আলাদা মাত্রা পায়। ধোঁয়া ওঠা চুলোর পাশে মা খেজুর রসের হাঁড়ি বসান। শিশুরা চুলার তাপে হাত ঘঁষে উষ্ণতা খোঁজে। প্রতিবারের মতো এবার ও সবার আগে খেজুর গাছে হাঁড়ি বসানোর প্রস্তুতি নিতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত বগাচতর গ্রামের গাছীরা। মীরসরাই উপজেলার ডোমখালী ও বগাচতর গ্রামেই যেন সবার আগে গাছীদের ব্যস্ততা বাড়ে। তবে উদ্বিগ্নতার বিষয় এখানে ও দিনে দিনে কমে যাছে গাছের সংখ্যা।
ডোমখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নুরুজ্জমান (৫২) জানান আমরা কয়েকজন মিলে এই বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি রাস্তার ধানের শতাধিক খেজুর গাছে হাঁড়ি বসাই প্রতি বছর। কিছু টাকা গাছের মালিকদের খাজনা দিয়ে করি। এবার ও কমেছে কয়েকটি গাছ। তবু ও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো। এখন পরিস্কার করে নিচ্ছি গাছ। থালি তৈরি করে ফেলবো কয়েকদিনের মধ্যে আশা করছি আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে রস সংগ্রহ করতে পারবো।
মীরসরাই উপজেলার কিছু এলাকায় ও এখনো কিছু খেজুর গাছ রয়েছে কিন্তু তাও দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু-এক দশকের মধ্যেই শীত এলে আর কোথাও খেজুরের রস পাওয়া যাবে না। কারন গ্রাম বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহক এবং উপাদেয় সুস্বাধু খেজুরের রস প্রাপ্তির এই মাধ্যম ও বিলুপ্তির পথে। আর বনবিভাগ বা কৃষিবিভাগ কেউ এই গাছটির বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি বিগত দিনে। অথচ আমাদের বিস্তীর্ণ পাহাড়ী অঞ্চল, উপকূলসহ পাহাড়ের ঢালু ও পতিত জমিতে অনায়াশেই এই খেজুর গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
তবে প্রত্যাশার হলো বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি বিভাগ এবার পৃথক দুটি প্রকল্পে অন্তত কিছু খেজুর গাছ বিগত অর্থবছরে লাগিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন আমরা বিগত অর্থবছরের দুটি পৃথক প্রকল্পে উপকূলাঞ্চলে ২০০ টি ও ২০ টি খেজুর গাছের চারা রোপনের ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে আরো বেশি খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেও সাথে খেজুর গাছের একটি সম্পর্ক রয়েছে। আবার উপকূল ও পাহাড়ের পাদদেশে খেজুর গাছ লাগানোর পর্যাপ্ত সুবিধা ও রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৃষি কর্মশালা ও সেমিনারে খেজুর লাগানোর উপর সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাসহ খেজুরের চারা রোপন ও বিতরণের বিষয় ও উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন বিগত বছরগুলোতে খেজুর গাছ বিলুপ্তির যে আশংকা ছিল তা থেকে অন্তত লাঘব করা হয়েছে। ২০২৪ সালে আনুমানিক ১২ হাজার খেজুর গাছ ছিল। কিছু মরে যাবার পর ও এবছর ও সেই সংখ্যা ১২ হাজার রয়েছে। আশা করছি আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে এর সংখ্যা।