হবিগঞ্জ জেলায় দিন দিন বাড়ছে আখ চাষের পরিমাণ। লাভজনক এই ফসলটি এখন জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাঙ্গেরগাঁও এলাকাজুড়ে আখ চাষে নতুন আশার আলো দেখছেন কৃষকরা। বিশেষকরে চুনারুঘাট উপজেলায় আখ চাষ করে গুড় তৈরি করছেন চাষিরা? এই গুড় বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা? এতে একদিকে যেমন কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারেও বাড়ছে আখের চাহিদা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে হবিগঞ্জ জেলায় ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুরাদ আহমেদ জানান, এ বছর জেলায় প্রায় ১৮ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জের মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকরা এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই ফসলের প্রতি। সঠিক পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে আখ হতে পারে কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার বিরামচর গ্রামের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, জমি জুড়ে আখগাছ দুলছে হালকা বাতাসে। ওই গ্রামের জগন্নাথপুর মহল্লার কৃষক শহিদ মিয়া নিজ উদ্যোগে দেড় একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। প্রায় এক বছর ধরে শ্রমিক দিয়ে জমি পরিচর্যা ও আগাছা দমন করে তিনি এখন ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শহিদ মিয়া বলেন, প্রথমে ভাবিনি এত ভালো ফলন হবে। আমি মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে শ্রমিক এনে আখ লাগিয়েছি। খরচ অনেক হয়েছে, তবে ফলন দেখে মনে হচ্ছে কষ্ট সার্থক হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই নিজের উদ্যোগে চাষ করেছেন। তবে ভবিষ্যতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে আখ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে এই এলাকায় ধান, ভুট্টা ও সবজির চাষ বেশি হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আখ চাষে ভালো ফলন ও লাভজনক দাম পাওয়ায় অনেকেই এখন আখের আবাদে ঝুঁকছেন। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এখন আখের মাঠের বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, আখ একটি লাভজনক নগদ ফসল। তুলনামূলক কম জমিতে বেশি উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে এ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। যদি সরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার সরবরাহ আরও সহজলভ্য করা যায়, তবে হবিগঞ্জ জেলায় আখ হতে পারে কৃষির নতুন সোনালী খাত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক দিপক কুমার পাল বলেন- হবিগঞ্জের মাধবপুর, বাহুবল, চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জে আাখ চাষ করা হয়? তারমধ্যে চুনারুঘাটের আখ চাষ থেকে গুড় তৈরি করা হয়? এই গুড় এখন বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা? হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রিসার্চ ও ট্রিনিং সেন্টার রয়েছে? আগ্রহী আখ চাষিরা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন তাহলে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা ও আখ চাষ সম্পর্কে আরো ট্রেনিং ও পরামর্শ দেয়া হবে? যাতে লাভজনক এই আখ চাষ করে কৃষকরা বানিজ্যিকভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন? সঠিক পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে হবিগঞ্জে আখ চাষ কৃষকদের জন্য আরও বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
হবিগঞ্জ জেলায় দিন দিন বাড়ছে আখ চাষের পরিমাণ। লাভজনক এই ফসলটি এখন জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাঙ্গেরগাঁও এলাকাজুড়ে আখ চাষে নতুন আশার আলো দেখছেন কৃষকরা। বিশেষকরে চুনারুঘাট উপজেলায় আখ চাষ করে গুড় তৈরি করছেন চাষিরা? এই গুড় বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা? এতে একদিকে যেমন কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারেও বাড়ছে আখের চাহিদা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে হবিগঞ্জ জেলায় ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুরাদ আহমেদ জানান, এ বছর জেলায় প্রায় ১৮ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জের মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকরা এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই ফসলের প্রতি। সঠিক পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে আখ হতে পারে কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার বিরামচর গ্রামের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, জমি জুড়ে আখগাছ দুলছে হালকা বাতাসে। ওই গ্রামের জগন্নাথপুর মহল্লার কৃষক শহিদ মিয়া নিজ উদ্যোগে দেড় একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। প্রায় এক বছর ধরে শ্রমিক দিয়ে জমি পরিচর্যা ও আগাছা দমন করে তিনি এখন ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শহিদ মিয়া বলেন, প্রথমে ভাবিনি এত ভালো ফলন হবে। আমি মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে শ্রমিক এনে আখ লাগিয়েছি। খরচ অনেক হয়েছে, তবে ফলন দেখে মনে হচ্ছে কষ্ট সার্থক হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই নিজের উদ্যোগে চাষ করেছেন। তবে ভবিষ্যতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে আখ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে এই এলাকায় ধান, ভুট্টা ও সবজির চাষ বেশি হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আখ চাষে ভালো ফলন ও লাভজনক দাম পাওয়ায় অনেকেই এখন আখের আবাদে ঝুঁকছেন। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এখন আখের মাঠের বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, আখ একটি লাভজনক নগদ ফসল। তুলনামূলক কম জমিতে বেশি উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে এ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। যদি সরকারিভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ ও সার সরবরাহ আরও সহজলভ্য করা যায়, তবে হবিগঞ্জ জেলায় আখ হতে পারে কৃষির নতুন সোনালী খাত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক দিপক কুমার পাল বলেন- হবিগঞ্জের মাধবপুর, বাহুবল, চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জে আাখ চাষ করা হয়? তারমধ্যে চুনারুঘাটের আখ চাষ থেকে গুড় তৈরি করা হয়? এই গুড় এখন বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা? হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রিসার্চ ও ট্রিনিং সেন্টার রয়েছে? আগ্রহী আখ চাষিরা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন তাহলে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা ও আখ চাষ সম্পর্কে আরো ট্রেনিং ও পরামর্শ দেয়া হবে? যাতে লাভজনক এই আখ চাষ করে কৃষকরা বানিজ্যিকভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন? সঠিক পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে হবিগঞ্জে আখ চাষ কৃষকদের জন্য আরও বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।