নরসিংদী : ধান কাটার মহোৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী -সংবাদ
নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় এবছর আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার কাজ চলবে ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। কৃষকরা আশা করছেন, প্রকৃতির সহায়তায় এবারের ফসল হবে বাম্পার। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ধান কাটার মহোৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী। কেউ কাটায়, কেউ ঝাড়াই-মাড়াইয়ে ব্যস্ত। পলাশ উপজেলার দক্ষিণ পুরুলিয়া গ্রামের কাউাছার ও রাবান গ্রামের চাষিরা জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলনে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ বছর ধানের চাষাবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর ছিল ৪০ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি। যা গতবছরের তুলনায় বেশী।
এই চাষের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান লাগানো হয়েছে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে, উফশী জাত চাষ হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান লাগানো হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। প্রতি বিঘায় ফলন ধরা হয়েছে ১৭থেকে ১৮ মন। কৃষি বিভাগের সময়োপযোগী।
কৃষকদের পরামর্শ এবং সরকারের সার ও - বীজ সহায়তায় এবার ফলন - লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারীভাবে প্রতিমন ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা।
ইতোমধ্যে স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি আমন জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। নরসিংদী জেলার শস্যভা-ার খ্যাত রায়পুরা, মনোহরদী, বেলাব ও শিবপুর উপজেলার জমি থেকে কৃষকরা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত।
ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার সময় গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডেপুটি ডাইরেক্টর (শস্য) কেবিডি. সালাহ উদ্দিন টিপু ও অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ সুব্রত কান্তি দত্ত জানিয়েছেন, এবছর সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ধানের ফলন খুবই ভাল এর হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ র অধিদপ্তর জেলার প্রান্তিক কৃ ষকদের সার, বীজসহ সকল প্রকার সহযোগীতা ও মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে কৃ ব ষকদের উৎসাহিত করেছে।
নরসিংদী সদর উপজেলা রাজারদী গ্রামের কৃষক মতিন জানান, তিনি এক কানি জমিতে আমন ধান ফলিয়েছিলেন। জমিতে ফসলের উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ১৫ মন। ধানও খুব ভাল হয়েছিল। কিন্তু কপাল খারাপ ঈদুর তার, জমির ধান কেটে সর্বনাশ করে দিয়েছে। এখন তিনি ৭/৮ মন পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। পলাশ উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধান খুবই ভাল হয়েছে। সময়মত ধান তুলতে পারলে তিনি লাভবান হবেন। তার জমিতে ধান কাটার শ্রমিক নেত্রকোনা থেকে আগত উমেদ আলী জানান, ৬ শত টাকা রোজে তিনি ধান কাটার কাজ করছেন। এভাবে তিনি যতি দিন এখানে কাজ পাওয়া কাজ করবেন। তারপর বাড়িতে গিয়ে ইরি বোরো চাষ করে যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে আবার আসবেন।
শিবপুর উপজেলা কৃষক বাবু জানান, তার প্রায় ২ একর জমিতে বিভিন্ন - জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। প্রতি একর জমিতে ১০ থেকে ২০ মণ ফলনের আশা করছেন তিনি।
মনোহরদী উপজেলার কৃষক আতিক মিয়া বলেন, আমনে উচ্চ ফলনের কারণে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমার জমিতেও আল্লাহর রহমতে ভালই ফসল হয়েছে। আশাকরি খরচ বাদে ভালই লাভ হবে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটার পর কৃষকরা একই জমিতে স্বল্প মেয়াদি আলু, শীতকালীন সবজি ও অন্যান্য রবি ফসল রোপণ শুরু করেছেন। মাঠজুড়ে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অসংখ্য কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। রায়পুরা উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামের কৃষক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও কৃষক নূরু মিয়া বলেন, আমন ধান লাগানোর পর সময়মত বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়া পানি সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়নি। তার এক একর জমিতে সার, বীজ, কীটনাশকসহ ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। ওই জমিতে। ধান কাটতে আসা নেত্রকোনার ধান কাটার শ্রমিক বাবুল তালুকদার জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় আমার ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ি। লোক লজ্জার ভয়ে এলাকা ত্যাগ করে রায়-পুরাতে এসে জমির ধান কাটার কাজ শুরু করি। এতে তার পরিবারের কছুটা হলেও উপকার হবে। এমন সমস্যায় আসা আরো ৮/১০ জন ধান কাটার শ্রমিক তার সাথে নিজ এলাকা থেকে এসেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আজিজল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এ বছর আমন ধানের আবাদ ও ফলন দুটোই ভালো হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম ছিল। ফলে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো জেলায় পুরোদমে আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
নরসিংদী : ধান কাটার মহোৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী -সংবাদ
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় এবছর আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার কাজ চলবে ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। কৃষকরা আশা করছেন, প্রকৃতির সহায়তায় এবারের ফসল হবে বাম্পার। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ধান কাটার মহোৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী। কেউ কাটায়, কেউ ঝাড়াই-মাড়াইয়ে ব্যস্ত। পলাশ উপজেলার দক্ষিণ পুরুলিয়া গ্রামের কাউাছার ও রাবান গ্রামের চাষিরা জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলনে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ বছর ধানের চাষাবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর ছিল ৪০ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি। যা গতবছরের তুলনায় বেশী।
এই চাষের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান লাগানো হয়েছে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে, উফশী জাত চাষ হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান লাগানো হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। প্রতি বিঘায় ফলন ধরা হয়েছে ১৭থেকে ১৮ মন। কৃষি বিভাগের সময়োপযোগী।
কৃষকদের পরামর্শ এবং সরকারের সার ও - বীজ সহায়তায় এবার ফলন - লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারীভাবে প্রতিমন ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা।
ইতোমধ্যে স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি আমন জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। নরসিংদী জেলার শস্যভা-ার খ্যাত রায়পুরা, মনোহরদী, বেলাব ও শিবপুর উপজেলার জমি থেকে কৃষকরা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত।
ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার সময় গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডেপুটি ডাইরেক্টর (শস্য) কেবিডি. সালাহ উদ্দিন টিপু ও অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ সুব্রত কান্তি দত্ত জানিয়েছেন, এবছর সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ধানের ফলন খুবই ভাল এর হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ র অধিদপ্তর জেলার প্রান্তিক কৃ ষকদের সার, বীজসহ সকল প্রকার সহযোগীতা ও মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে কৃ ব ষকদের উৎসাহিত করেছে।
নরসিংদী সদর উপজেলা রাজারদী গ্রামের কৃষক মতিন জানান, তিনি এক কানি জমিতে আমন ধান ফলিয়েছিলেন। জমিতে ফসলের উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ১৫ মন। ধানও খুব ভাল হয়েছিল। কিন্তু কপাল খারাপ ঈদুর তার, জমির ধান কেটে সর্বনাশ করে দিয়েছে। এখন তিনি ৭/৮ মন পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। পলাশ উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধান খুবই ভাল হয়েছে। সময়মত ধান তুলতে পারলে তিনি লাভবান হবেন। তার জমিতে ধান কাটার শ্রমিক নেত্রকোনা থেকে আগত উমেদ আলী জানান, ৬ শত টাকা রোজে তিনি ধান কাটার কাজ করছেন। এভাবে তিনি যতি দিন এখানে কাজ পাওয়া কাজ করবেন। তারপর বাড়িতে গিয়ে ইরি বোরো চাষ করে যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে আবার আসবেন।
শিবপুর উপজেলা কৃষক বাবু জানান, তার প্রায় ২ একর জমিতে বিভিন্ন - জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। প্রতি একর জমিতে ১০ থেকে ২০ মণ ফলনের আশা করছেন তিনি।
মনোহরদী উপজেলার কৃষক আতিক মিয়া বলেন, আমনে উচ্চ ফলনের কারণে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমার জমিতেও আল্লাহর রহমতে ভালই ফসল হয়েছে। আশাকরি খরচ বাদে ভালই লাভ হবে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটার পর কৃষকরা একই জমিতে স্বল্প মেয়াদি আলু, শীতকালীন সবজি ও অন্যান্য রবি ফসল রোপণ শুরু করেছেন। মাঠজুড়ে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অসংখ্য কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। রায়পুরা উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামের কৃষক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও কৃষক নূরু মিয়া বলেন, আমন ধান লাগানোর পর সময়মত বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়া পানি সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়নি। তার এক একর জমিতে সার, বীজ, কীটনাশকসহ ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। ওই জমিতে। ধান কাটতে আসা নেত্রকোনার ধান কাটার শ্রমিক বাবুল তালুকদার জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় আমার ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ি। লোক লজ্জার ভয়ে এলাকা ত্যাগ করে রায়-পুরাতে এসে জমির ধান কাটার কাজ শুরু করি। এতে তার পরিবারের কছুটা হলেও উপকার হবে। এমন সমস্যায় আসা আরো ৮/১০ জন ধান কাটার শ্রমিক তার সাথে নিজ এলাকা থেকে এসেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আজিজল হক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এ বছর আমন ধানের আবাদ ও ফলন দুটোই ভালো হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম ছিল। ফলে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো জেলায় পুরোদমে আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে।